প্রথম পর্বের লিঙ্ক

দ্বিতীয় পর্ব
অনেকেই লেখেন- (সাধুভাষার ”লিখেন” নয়) ”সাহিত্য চর্চা” (হবে সাহিত্যচর্চা) ধীরেধীরে ডিজিটালাইজড হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে ভাষার ব্যকরণ বিদ্যার (হবে ”ব্যাকরণবিদ্যার”) প্রতি বেখবর অনেক মানুষ নিজের অনুভূতি প্রকাশ (হবে অনভূতিপ্রকাশ) করতে পারছে সহজেই। সামাজিক যোগাযোগের তথ্য প্রযুক্তিয়ানের (হবে তথ্যপ্রযুক্তিয়ানের) ফলে আজ অনেক অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন মানুষও তাদের ভাব বিনিময় (হবে ভাববিনিময়) করছেন সহজেই। মনে হয় অদূর ভবিষ্যতে (অদূরভবিষ্যতে) শুদ্ধ/অশুদ্ধনির্ণয়ের জন্য নতুন কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করার প্রয়োজন হতে পারে।

আমাদের মত (হবে মতো/মতোন) অনেক আনাড়ি লোকরাও (ডবল বহুবচন নয়, হবে ”লোক”) আজ ব্লগিং,ফেইসবুকিংয়ের সুবাদে লেখালেখির সাথে জড়িত হয়ে গেছি। যদিও প্রচলিত সাহিত্য বিচার বিশ্লেষণের (সাহিত্যবিচার-বিশ্লেষণের) ক্ষেত্রে আমাদের লেখাগুলো বিচার্য কোন সাহিত্যপাদান (হবে সাহিত্যোপাদান) নয়। তার পরেও (হবে তারপরেও) আমরা ফ্রি ল্যান্সিংয়ের (হবে ফ্রিল্যান্সিংয়ের) সুযোগে নিজের অনুভুতিগুলো প্রকাশ ও প্রচার করেই যাচ্ছি। আজকাল মোবাইল কোম্পানীগুলো তো আরো কয়েক ধাপ (হবে কয়েকধাপ) এগিয়ে ইংরেজী (হবে ইংরেজিঅক্ষর) অক্ষর দিয়ে আমাদেরকে (হবে আমাদের) বাংলা বানান (হবে বাংলাবানান) শিখাতে দায়িত্ব কাধে তুলে নিয়েছেন! অথচ তারা গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন চটকদার অফারগুলো (ডবল বহুবচন নয়, হবে ”অফার”) সরাসরি বাংলাতেই বার্তা আকারে পাঠাতে পারতেন। কিন্তু তারা সেদিকে আগ্রহী না।”

আসলে ওপরের (সাধুতে ”উপরের” নয়) এসব কথায় যুক্তি আছে এবং বাংলাএকাডেমীর উচিত সেটাও আমলে নেয়া এবং বানানে আরো সহজপদ্ধতি চালু করা, যাতে একই রীতি চালু থাকে। নতুবা বাংলাভাষাও আঞ্চলিক ভাষায় রূপান্তরিত হতে বেশী (প্রমিত বানান হবে বেশি) দেরী (প্রমিত হবে দেরি) নেই।
অনেকের মতে, ”বাংলা বানান (হবে বাংলাবানান) নিয়ে খুব টেনশানে আছি । আমার মনে হয় অনলাইনে বাংলা বানানের উপর (চলিতরীতিতে হবে ওপর) পাঠশালা থাকা দরকার।” আমিও একথার সাথে একমত; আসলে আমাদের বাংলাবানানরীতি এবং বাংলিশ থেকে আমাদের নবপ্রজন্মকে বাঁচাতে বাস্তবে এবং অনলাইনে পাঠশালা থাকলে মন্দ হয়না (এভাবেও লেখা যায় ”হয় না”);

আমি নিজেই অবশ্য এমন একটা সাইট শীগগির চালু করার কথা ভাবছি। বাংলাবানান নাকি হবে বাংলা বানান? যেমন ”বাংলাবানান” সঠিক তেমনই সঠিক বানান হচ্ছে-”বাংলাদেশ।” বাংলাদেশ একটিমাত্র শব্দে গঠিত মনে হলেও আসলে কি তাই? বাংলাবানান (বাংলা+বানান) যেমন একটি নয় দু’শব্দে গঠিত তেমন বাংলাদেশও দু’শব্দে গঠিত (বাংলা+দেশ)।

শব্দগঠন
শব্দগঠন হয় অনেকভাবে; কারক, উপসর্গ, সমাস, সন্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন পন্থায়। আমি শব্দগঠন বানান লিখেছি যা সঠিক। এটা সমাস এর নিয়মে হয়েছে যেমনঃ শব্দের গঠন এর ”এর” বিভক্তিটি (ষষ্ঠি তৎপুরুষ) লোপ পেয়ে হয়েছে শব্দগঠন। তেমনই বাংলা এবং দেশ পৃথকপৃথক দুটো শব্দ মিলেই ”বাংলাদেশ” হয় এবং এটি এভাবেই একটিমাত্র শব্দে রূপান্তরিত হয়েছে।” তেমনই কলেজছাত্র, (কলেজের ছাত্র), বিমানবন্দর (বিমানের বন্দর), মহা যে সাগর=মহাসাগর, বাংলার বানান=বাংলাবানান ইত্যাদি গঠিত হয়েছে।

এখানেই বলে রাখি-একাধিক বর্ণের অর্থবোধক মিলনে যেমন শব্দ গঠিত হয় তেমনই একাধিক শব্দ মিলেও কিন্তু একটি শব্দ গঠিত হয়, যা আমরা খেয়াল করিনে। যেমন আবার অনেকেই একটি নামবাচক শব্দ বা নাউনকে বিভক্ত করেন এভাবে–এল্ডার ব্রাদার মানে বড় ভাই (হবে বড়ভাই); এর মানে দাঁড়ায় যে, একজন বড়ভাইকে আমরা দ্বিখণ্ডিত করে বড় ও ভাই আলাদা করে দিলাম আরকি? যেমন বড়মা, ছোটমা, বউমা, একটাকা, এককাঠা, মন্তব্যকারী, অর্থবোধক, নামবাচক, নারীনেতৃত্ব ইত্যাদি সঠিক একাধিক শব্দে গঠিত শব্দ।

আমার লেখার বিষয়ে এবার একজনের একটি মন্তব্য দেখুন- ”৯০-এর দশক থেকে দেশে চালু হয়েছে নারী নেতৃত্ব (হবে নারীনেতৃত্ব); আর সে কারণে হাদীসের বাণী অনুযায়ী দেশে বিশৃংখলা বেড়েছে চরম আকারে। আর তার-ই (হবে তারই ) সাথে বানানের-ও (হবে বানানেরও) দুর্গতি বেড়েছে কিনা কে জানে? সাধারণত: এই ধরণের মৌসুমী লেখা বছরের একটা বিশেষ সময়ে-ই (হবে সময়েই) দৃষ্টিগোচর হয়। এপ্রিল যাই যাচ্ছি করছে আর এমন (অ)সময়ে আপনার বানান নিয়ে দু:শ্চিন্তা (হবে দুশ্চিন্তা) আপনার ভাষার প্রতি মমত্ববোধকে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে ! আপনি যে ভুল লিখতে গিয়ে “ভূল” করেননি সেজন্য সাধুবাদ না জানিয়ে পারছি না। অনেকের কম্পিউটারে কিছু বিশেষ বাংলা শব্দ (হবে বাংলাশব্দ) কম্পোজের অক্ষমতা, অজ্ঞতা, যুক্তাক্ষর বর্জন (হবে যুক্তাক্ষরবর্জন) প্রবণতা এমনকি দ্রুত লেখার প্রচেষ্টা-ও (হবে প্রচেষ্টাও) বানানের ধর্ষণযজ্ঞ বাড়িয়ে দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হবে না। যেমন, উৎপাদন হয়ে গেছে উতপাদন।

কোথায় স, শ, ষ লিখতে হবে আমাদের সে জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পেয়েছে । ড. না ডঃ হবে সে ঘূর্ণিপাকে আমরা এখনো চক্কর খাচ্ছি। মাদ্রাসা পড়ুয়ারা (হবে মাদ্রাসাপড়ুয়ারা) অনেকে খোদ তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মাদরাসা লিখছে এবং লেখাপড়ার (চলিতভাষার শব্দ) বদলে লিখাপড়া (সাধুভাষায়) করছে ! চন্দ্রবিন্দু তো হারিয়ে যাবার পথে…সামনের দিনগুলোতে হিন্দীর প্রভাবে পড়ে বাংলার অপভ্রংশ হিসেবে বাংদী নামক শংকর জাতীয় (হবে শংকরজাতীয় ) ভাষা ও বানানের উদ্ভব হলে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না।”

আমি এখানে অবশ্য কীবোর্ড/কিবোর্ডের টাইপজনিত ভুলের কথা বলিনে। সাধু-চলিতমিশ্রণের বিষয় তেমন দূষণীয় নয়। কিন্তু আমি একটা শব্দকে বিভক্ত করার বিষয়টিকেই জোর দিয়েছি, যেমন হবে শংকরজাতীয়, ভূমিসংক্রান্ত, নথিসংক্রান্ত, সংশ্লিষ্ট নথি, জাতীয় ঘটনা ইত্যাদি যার ফারাক আমরা করতে পারিনে। একশব্দের কিছু বানান দেখুন এবার-প্রশান্তমহাসাগর, ভারতমহাসাগর, মৃত্যুসংবাদপ্রাপ্তিসাপেক্ষে,কিংকর্তব্যবিমূঢ়, যা ডিকশনারিতেও পাবেন খুঁজে।

একাত্ম শব্দ
কিছু শব্দ আছে যা দু’টি শব্দসহযোগে গঠিত হয় যদিও মনে হয় একটি শব্দ। পাশাপাশি দু’টি শব্দের আগেরটির শেষের বর্ণটি লোপ পেলেই দু’টি শব্দকে একাত্ম করে লেখা যায়। তবে লোপ পাওয়া বর্ণটির স্থলে (‘) এফোস্ট্রপি কমা দিতে হয়। যেমনঃ দু’টি (দুইটি), শ’খানেক (শত খানেক), ন’মাস (নয়মাস) ইত্যাদি। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে (ক্ষেত্র মানে এখানে জমি নয়) দু’শব্দ একাত্ম হলেও এফোস্ট্রপি কমার প্রয়োজন পরেনা। যেমনঃ জানিনে, মানিনে, পারিনে ইত্যাদি। আবার কিছু শব্দ বা পদ আছে, যারা পাশাপাশি ব্যবহৃত হতেও পারে আবার একাত্মও হতে পারে। তবে একাত্ম করলেই পূর্ণ অর্থপ্রকাশিত হয়। যেমনঃ আমিতো সেকথা জানিনে ভাই, এতোদ্বারা জানানো যাচ্ছে ইত্যাদি। (চলবে)

0 Shares

৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ