এই ব্লগে অনেক জ্ঞানীগুণীজন রয়েছেন,যাঁরা আজকালকার শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত।তারপরো আমি কিছু লেখার সাহস দেখালাম। ত্রুটি বিচ্যুতি মার্জনা করবেন আশা করি।

আমাদের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি নাকি সৃজনশীল। সৃজনশীলতার নামে আমাদের পিঠে চাপানো হয় একগাদা কাগজের বোঝা,যাতে কিছু সূত্র,সূত্রের প্রমাণ, কুকুরের এক লাফ,বানরের তিন লাফের মত অংক। কিংবা, লগারিদম, সমাকলন আরো কত কি! কিন্তু এসব অংকের বাস্তবিক ব্যবহারটা কোথায় তা আমি কোন গণিতের স্যারকে জিজ্ঞেস করে কোনদিন জানতে পারি নি। মাঝি যখন নৌকা চালান,তাকে কখনো অণুকূলে কত মিটার, প্রতিকূলে কত ইত্যাদি হিসেব করে মাঝির ট্রেনিং নিতে দেখিনি। প্যাসকেলের সূত্র পড়ব ভাল কথা, কিন্তু এই সূত্র প্রয়োগ করে বাস্তবে আমরা কি নতুন জিনিস উদ্ভাবন করতে পেরেছি,তা কেন দেখা হবে না? নিউটনের গতির সূত্র, প্যাসকেলের সূত্র প্রমান কেন শুধু বইয়ের পাতায় আর পরীক্ষার খাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে? তাহলে এসব সূত্র পড়ে আমাদের কি লাভ? আমাদেরকে কেন শেখানো হবেনা E=mc² এর প্রয়োগ কিকরে করা যেতে পারে? আমরা আইনস্টাইন হতে না পারলেও তার অনুসারী তো হতে পারতাম অন্তত।

আমি দেখেছি, এমন অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে রয়েছে যারা নানা রকম নতুন জিনিস নিজে নিজে বানিয়ে তাক লাগিয়ে দেয়। যেমন, ১২ বছরের একটি ছেলে একটি অত্যন্ত সুন্দর টেবিল ল্যাম্প বানিয়েছিল নিজে নিজে। তারপর সেটা তার ঘরের কোনায় পরে থাকত, কেউ বেড়াতে এলে তার মা সকলকে দেখাত। কিন্তু এমন যদি কোন বিষয় থাকতো যেখানে গতির সূত্র, জড়তার সূত্র, রসায়নের নানা বিক্রিয়া সব পড়ার পর প্রতিটি টপিকের ওপর কে কি বানাতে পারল, বাস্তবে কে কিভাবে সেটাকে ব্যবহার করতে পারল, তার ওপর একটা মজাদার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো, তাহলে ছেলে মেয়েরা অনেক উৎসাহিত হতো। যেমন পারো তেমন বানাও, এরকম কিছু হলে ছাত্ররা পুঁথীগত বিদ্যার ব্যবহারিক দিকটাও চর্চা করতে পারতো, জানতে পারতো। তবে হ্যাঁ বর্তমানে আমাদের দেশে ব্যবহারিক পরীক্ষা যদিও চালু রয়েছে, তথাপি তাতে নেই সত্যিকারের সৃজনশীলতা বা নিজে কিছু সৃষ্টি করার স্বাধীনতা। আলুর অভিস্রবন এসেছে প্রশ্নে, কাট আলু। কিংবা লবন পানি,বালির মিশ্রণ থেকে পৃথক কর সব উপাদান। বায়ুর অনুনাদ মাপ, যন্ত্র যেন না ভাঙে, তাহলে ভর্তুকী তোমাদেরকেই দিতে হবে! এর নাম সৃজনশীলতা!

যাক, অনেক বড় বড় কথা বলে ফেললাম। এবার তাকাই সাহিত্যের দিকে। দেখি আমাদের সাহিত্য পাঠের কি অবস্হা। আমাদেরকে ঘাড় ধরে পড়ানো হয়, বলা ভাল, গেলানো হয় সিলেবাসের গদবাঁধা কিছু গল্প,কবিতা। বাংলা হোক বা ইংরেজি হোক, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে একই অবস্থা। অনেক সনেট পড়ানো হয়, চতুর্দশপদী কবিতা পড়ানো হয়, কবিতার চরিত্রের নাড়ী নক্ষত্র, কোন কবির নানার বাড়ি কোথায় এসব কতশত সৃজনশীল মুখস্থ করানো হয়। কিন্তু শেখানো হয় না,কিভাবে লিখতে হয় সনেট।

গল্প, উপন্যাস পড়ে তার লাইনের ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে, কোন চরিত্র কোন জ্বীন পরীর দীঘিতে স্নান করতে নেমেছিল, কার কপোলে কটা কালো তিল ছিল, কোন কবি পানিতে ডুবে মারা গেছিল সব মুখস্থ করানো হয়। কিন্তু শেখানো হয় না সাহিত্য রচনার নিয়মাবলী, কোনটা কবিতা হল,কোনটা হল না, কেন হলনা ইত্যাদি।

তার চেয়েও বড় কথা হলো, এত এত সনেট, ছোট গল্প, বড়গল্প, মহা গল্প তথা উন্যাস, মহাকাব্য, এপিক,ট্রাজেডি,কমেডি এসব পড়ে আমরা নিজেরা কিছু শিখতে পারলাম কিনা,নিজেরা একটা কিছু রচনা করতে পারললাম কিনা, পারলে সেটা কতটা মান সম্পন্ন এটুকু বিবেচনা করার জন্য একটা সাবজেক্ট দেয়া হল না চার বছর মেয়াদী অনার্স কোর্সে। আর ১ বছরের মাস্টার্স কোর্সে তো সেটা আশাই করা যায় না। অর্থাৎ আমরা আজীবন কীটস, শেলী, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল মুখস্থ করেই যাব। নিজেরা কিছু লিখতে পারলাম কিনা, তা দেখার বিষয় নয়। নিজে কিছু লিখলেও তার কোন স্বীকৃতি মিলবে না। নিজে কে কি লিখল তা তার নিজ দায়িত্ব।

আর এভাবেই বেকার তৈরির কারখানাতে প্রতিবছর তৈরি হচ্ছে শত শত বইয়ের পাতা গিলে খাওয়া বেকার। কেউ পাতা খেয়ে হজম করতে পারছে, কারো বা বদহজম হচ্ছে। কিচ্ছু বলার নেই।

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ