iDxJmGLYdGEv

শহীদ সাহেব শাসন চালাবেন, মুসলমানদের রক্ষা করবেন, না ইলেকশন নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন! সিলেটের গণভোটেও শহীদ সাহেবকে যেতে হল। আমাদের মত হাজার হাজার কর্মীকে সিলেটে পাঠালেন। টাকা বন্দোবস্ত করতে হয়েছিল তাঁকেই বেশি। এস. এম. ইস্পাহানী সাহেব বেঙ্গল মুসলিম লীগের কোষাধ্যক্ষ হিসাবে বহু টাকা দিয়েছিলেন, আমার জানা আছে। কারণ, শহীদ সাহেব তাঁর সাথে যখন আলোচনা করেন ৪০ নম্বর থিয়েটার রোডে, তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। আমরা যখন সিলেটে পৌঁছালাম এবং কাজের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লাম, তখন শহীদ সাহেব সিলেটে আসেন। আমার সাথে তাঁর সাক্ষাত হয় করিমগঞ্জ মহকুমায় এক বিরাট জনসভায়। আমিও সেই সভায় বক্তৃতা করেছিলাম।

মওলানা তর্কবাগীশ, মানিক ভাই (ইত্তেফাকের সম্পাদক), ফজলুল হক ও আমি পাঁচশত কর্মী নিয়ে একদিন সিলেটে পৌঁছি। আমাদের জন্য সিলেটের গণভোট কমিটির কিছুই করতে হয় নাই---শুধু কোন এলাকায় কাজ করতে হবে, আমাদের সেখানে পৌঁছিয়ে দিতে হয়েছে। যাবতীয় খরচপত্রের ব্যবস্থা শহীদ সাহেব করে দিয়েছিলেন। কারো মুখাপেক্ষী আমাদের হতে হবে না। শামসুল হক সাহেব ঢাকা থেকেও বহু কর্মী নিয়ে সেখানে পৌঁছেছিলেন। শহীদ সাহেবের অনুরোধে দানবীর রায়বাহাদুর আর.পি. সাহা হিন্দু হয়েও কয়েকখানা লঞ্চ সিলেটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এই লঞ্চগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল মুসলিম লীগ কর্মী ও পাকিস্তানের পক্ষে। কারণ, যানবাহন খুবই প্রয়োজন ছিল। শহীদ সাহেবের বন্ধু ছিলেন রায়বাহাদুর, তাঁর কথা তিনি ফেলতে পারেন নাই। রায়বাহাদুর আজও পাকিস্তানী। মির্জাপুর হাসপাতাল, ভারতেশ্বরী হোমস গার্লস হাইস্কুল, কুমুদিনী কলেজ তাঁরই দানে টিকে আছে।

সিলেট গণভোটে জয়লাভ করে আমরা কলকাতায় ফিরে এলাম। দেখি, মুসলিম লীগের এক দল ঠিক করেছেন নাজিমুদ্দিন সাহেবকে শহীদ সাহেবের সাথে নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাবেন। কেন্দ্রীয় লীগ দিল্লি থেকে হুকুম দিয়েছেন ইলেকশন করতে। জনাব আই আই চুন্দ্রিগড় কেন্দ্রীয় লীগের পক্ষ থেকে এই নির্বাচনে সভাপতিত্ব করবেন। এদিকে দু'দেশের সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে যে গোলমাল চলেছে, সেদিকে কারো খেয়াল নাই। নেতা নির্বাচন নিয়ে সকলেই ব্যস্ত। নাজিমুদ্দিন সাহেব নির্বাচনের সময় নমিনেশন দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন লন্ডন ও দিল্লিতে। শহীদ সাহেব সমস্ত নির্বাচনটা নিজে চালিয়েছিলেন, টাকা পয়সার বন্দোবস্ত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি একদিনের জন্যও বিশ্রাম পান নাই। কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহারের দাঙ্গা বিধ্বস্তদের সহায়তা দান, মুসলিম লীগের সংগঠন, দিল্লি, কলকাতা দৌড়াদৌড়ি সকল কিছুই তাঁকে করতে হয়েছিল। আর যখন পাকিস্তান কায়েম হয়েছে তখন নেতা হবার জন্য আরেকজনকে আমদানি করা যে কত বড় অন্যায় সেকথা ভবিষ্যৎ বিচার করবে। শহীদ সাহেবের বিরোধীদের প্রপাগান্ডা হল তিনি পশ্চিম বাংলার লোক; তিনি কেন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হবেন?

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৭৫ ও ৭৬)

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী (পর্ব-৬২)

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ