বর্তমানের এই আধুনিক সময়ে "খাবার" টপিকটা শুধু মাত্র 'খেয়ে ফেলার' মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন এর সাথে আরও অনেক বিষয় যুক্ত হয়েছে। আর সেই বিষয় গুলি আবার যতটা না খাবার 'খাওয়ার' সাথে সম্পর্কিত তার চেয়েও বেশি সম্পর্ক রাখে "যা খেলাম" তার স্মৃতি ধরে রাখায় পদ্ধতি ও প্রকাশের সাথে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন হরহামেশাই দেখতে হচ্ছে খাবার এবং খাবার খাওয়ার সাথে যুক্ত নানান ঘটনার সাক্ষী হিসেবে স্থির চিত্র।

আবার এদিকে আমাদের অনলাইন নিউজ পোর্টাল গুলি এখন নিয়মিত বিভিন্ন ধরণের আজব টিপস টপিক প্রকাশ করে যাচ্ছে তাদের সাইটে। যেমন- "পাত্র হিসেবে কেমন ছেলেকে পছন্দ করা উচিৎ" কিংবা "স্ত্রী হিসেবে কেন আবেগী মেয়েরা ভালো" অথবা "বিবাহের পূর্বে যে সকল বিষয় মাথায় রাখা উচিৎ" টাইপের বিভিন্ন চটকদার হেডিং সমৃদ্ধ টপিক। সেই ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে "মজাদার খাবার খাওয়ার সহিহ্‌ তরিকা" হেডিং দিয়েই যে কোন পোষ্ট প্রকাশ করা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়!

তো চলুন একটু ধারণা নিয়ে নেই, অদূর ভবিষ্যতে যদি এমন পোষ্ট প্রকাশ করা হয় কোথাও, তাহলে তার ভেতরকার কন্টেন্ট কেমন হতে পারে।

 

 

 

খাবার ঘরের তৈরি হলেঃ

  • প্রথমে মজাদার খাবারটি সুন্দর পরিপাটি করে প্লেট / পিরিচ / ট্রে-তে নিন। খাবার ঝোল যুক্ত হলে তা খুব সাবধানে নিতে হবে। কোন কারণে বাটি / পিরিচ / ট্রে / প্লেটের অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে ঝোল পড়লে তা টিস্যুর দ্বারা ঝকঝকে-তকতকে রূপে পরিষ্কার করে নিন।
  • তারপর তার পাশে আরও কিছু খাবার উপকরণ, সালাদ, হাবিজাবি, ঘাস, লতা, পাতা দিয়ে খাবারকে ঢেকে ফেলুন। তবে এই ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, খাবারের উপরের দিকটা যাতে সুবিধাজনক ভাবে হলেও কিছুটা দেখা যায় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • খাবারের রং মন মত না হলে প্রয়োজনে আলাদা রং দিয়ে কিংবা তার পরিবর্তে সস দিয়ে ঢেকে দেবার চেষ্টা করুন। রং যেমনই হোক, আপনার মনের মাধুরী মিশিয়ে তাতে আপনার ভেতরকার সুপ্ত শিল্পকলার জ্ঞান ফুটিয়ে তুলুন।
  • এইবার খাবারের পরিমাণ বুঝে তার পাশে টেবিল চামচ, কাটা চামচ, নাইফ সাজিয়ে রাখুন। প্লেটে নিয়ে খাবার মত হলে তার পাশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্লেট সাজান, যাতে সবাই বুঝতে পারে খাবারটি খাওয়ার জন্যে সবাই মুখিয়ে আছে।
  • এইবার উন্নত মানের একটি ক্যামেরা খুঁজে নিয়ে আসুন। মোবাইলের ক্যামেরা হলেও চলবে, তবে খাবার অতিরিক্ত দামি এবং ট্রেন্ডফুল হলে ক্যামেরার কোয়ালিটিও ভালো হওয়া বঞ্চনীয়। প্রয়োজন পড়লে মোড়ের স্টুডিওর দোকান থেকে ক্যামেরা সহ ক্যামেরাম্যান ভাড়া করে নিয়ে আসতে পারেন।
  • সব শেষে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে খাবারের ছবি তুলুন। প্রতি এঙ্গেল থেকে অন্তত ১৩ টি করে ছবি অবশ্যই তুলবেন। যাতে সবচেয়ে সুন্দর ছবিটাকে সিলেক্ট করা যায়। অবশ্য বেশি ছবি তোলার আরও অনেক সুবিধা আছে। প্রয়োজনে পরে সেই সব ছবি আবারও ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • ছবি তোলা শেষে এইবার সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই সব ছবি থেকে বাছাইকৃত ছবি গুলি পোষ্ট করুন। অবশ্যই পোষ্ট করার সময় গণ্ডা-খানিক লোকজনদের ট্যাগ করতে ভুলবেন না। সাথে কোথায়, কোন অবস্থানে, কিভাবে, কার হাতের রান্না খাবার খেয়েছেন তার লোকেশন যুক্ত করুন। আর সাথে খাবারকে ঘিরে বেশ কিছু #হ্যাশট্যাগ যুক্ত করুন।
  • মূল কাজ সম্পন্ন, এইবার খাবারের স্বাদ যেমনই হোক চোখ বুজে দ্রুত সেটা সাবাড় করুন। তবে এখানেও লক্ষণীয় যে, খাবার যদি স্বাদযুক্ত এবং দৃষ্টিনন্দন হয় তাহলে খাবার এক কামড় করে খাওয়ার পর পর একটি করে শট নিয়ে রাখুন। এটি পোষ্ট হিসেবে ব্যবহার যোগ্য না হলেও মন্তব্যের ঘরে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে খাবারের বাহ্যিক রূপ তেমন আকর্ষণীয় না হলে এই স্টেপটি ফলো করা থেকে বিরত থাকুন।

 

 

 

 

খাবার বাইরের তৈরি কিংবা রেস্টুরেন্টে হলেঃ

  • রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করা মাত্রই একটি চেক-ইন দিন। যাতে আপনার ফ্রেন্ডস ফলোয়ার সবাই বুঝতে পারে কিছুক্ষণের মাঝেই আপনি আপনার খাবারের সেই মহামূল্যবান পিকটি পোষ্ট করতে যাচ্ছেন।
  • প্রাইমারি স্টেপ হিসেবে চেক-ইন দেবার পর যদি হাতে সময় থাকে তাহলে মেনু কার্ড, রেস্টুরেন্ট কিংবা যেখানে খাবারের কার্য সংঘটিত হবে সেই স্থানের দুই লাইনে একটা বর্ণনা দিয়ে আরও একটি স্ট্যাটাস দিতে পারেন। সাথে ইন্টারেস্টিং কিছু চোখে পড়লে সেটার পিক যুক্ত করতে পারেন।
  • আপ্পি সমাজ এর পর মেনু থেকে কিছু খাবারের নাম লিখে তা নিয়ে একটি পোষ্ট দিন। কোনটি রেখে কোনটি খাবেন বা খেতে চান এমন একটা সিদ্ধান্তহীনতায় যে আছেন সেটা বোঝাতে চেষ্টা করুন। এতে আপনার ফ্রেন্ডস এবং ফলোয়ারদের মাঝে কিছুটা উত্তেজনার সৃষ্টি হবে। আর আঙ্কেল সমাজ এই স্টেপে সরাসরি আপ্পি সমাজকে ফলো করতে যাবেন না। আপনাকে এই ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। আপনাকে আগে থেকে জানতে হবে কোন খাবারের ট্রেন্ড বর্তমানে বেশি। পাশাপাশি কোন খাবারটা অন্যটার বিপরীতে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। তবে অবশ্যই এই ক্ষেত্রে দামের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। কম দামী খাবার, তা যতই দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় হোক না কেন এই স্টেপে এসে তা এড়িয়ে যেতে হবে। সব চেয়ে দামী না হলেও মোটামুটি দামী খাবার গুলিকে এই স্থানে অবস্থান দিতে হবে। তারপর আপনি কি কি অর্ডার করতে চাইছেন তার একটা ধারণা দিয়ে পোষ্ট দিন। এই ক্ষেত্রেও আপনার ফ্রেন্ডস এবং ফলোয়ারদের কাছে আপনার রুচি এবং পছন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। তবে মনে রাখতে হবে, আপনি যদি শুধুমাত্র 'চা' কিংবা 'কফি'-র অর্ডারও করেন, তাহলে সেখানেও আপনাকে এই রুচির পূর্ণ প্রকাশ দেখাতে হবে।
  • এইবার অর্ডার কৃত খাবার সার্ভ করার পর তাকে টেবিলের সুবিধাজনক অবস্থানে রাখুন। এরপর ভাল করে লক্ষ করুন যে আপনার আশে পাশে যথেষ্ট লাইটিং এর সুবিধা রয়েছে। আর তেমন না হলে টেবিল কিংবা নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে জানালার পাশে কিংবা ভালো আলোক সুবিধা পাওয়া যাবে এমন অবস্থানে চলে আসুন।
  • এই বার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপটি আপনাকে পার করতে হবে। আপনার কিংবা আপনার বন্ধুর দামী মোবাইল ফোনের ক্যামেরা দিয়ে মোবাইলের মেমরি কার্ড অর্ধপূর্ণ হবার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে থাকুন।
  • ছবি তোলা শেষে কিছু অংশ খাবার পর আবার ছবি তুলুন। এরপর আবার খেতে থাকুন। তারপর আবার থামুন, আবার ছবি তুলুন। আবার খেতে শুরু করুন........ এভাবে যতক্ষণ একেবারে খাবারটি শেষ না হয়, থেমে থেমে ছবি তুলতে থাকুন। শুধু আপনার খাবারের ছবি তুললেই হবে না। বন্ধুদের নিয়ে গেলে তাদের খাবারের ছবিও তুলতে হবে একই পদ্ধতিতে।
  • এইবার এতক্ষণ ধরে যেইসব ছবি তুললেন তার থেকে বেঁছে বেঁছে অনেক গুলি ছবি আপনার সোশ্যাল একাউন্ট, গ্রুপ, কিংবা পেইজে আপলোড করুন। খাবার যেমন স্বাদেরই হোক না কেন এটাই যে এই রেস্টুরেন্টের সবচেয়ে বেশি স্বাদযুক্ত খাবার কিংবা এর চেয়ে ভালো স্বাদের খাবার যে এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া সম্ভব না তার বর্ণনা স্বল্প আকারে প্রকাশ করুন। প্রয়োজনে খাবার প্রস্তুতকারী সেফ / রাঁধুনির ছবি তুলুন এবং সংক্ষিপ্ত আকারে তার পূর্বের কাল্পনিক ইতিহাস সমৃদ্ধ একটি প্রশংসা মূলক বর্ণনাও দিতে পারেন। এরপর এইবারও পোষ্টের সাথে গন্ডাখানিক ফ্রেন্ড ফলোয়ারদের ট্যাগ করুন। আর অতি অবশ্যই পোষ্টে কমপক্ষে অর্ধশত #হ্যাশট্যাগ দিতে ভুলবেন না।

 

আশা করছি উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি মজাদার, দামী ও বিশেষ স্বাদযুক্ত দেশি বিদেশি খাবার সহিহ্‌ পদ্ধতিতে খেতে পারবেন। এমনই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সোশ্যাল মিডিয়া পাড়ার অজ্ঞাত রিসার্চ ফেসেলিটির অহেতুক এক পরীক্ষার ফলাফলে। উক্ত রিসার্চ চালানোর সময় বিভিন্ন উপমহাদেশের হাজার হাজার সোশ্যাল একাউন্ট থেকে তাদের মতামত ও গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন নেয়া হয়। এবং এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে বেশি কার্যকর কোন পদ্ধতি, যা অনুকরণ করে আপনি মজাদার সব খাবার সহিহ্‌ পদ্ধতিতে খেতে পারবেন।

 

 


 

পোষ্টটি আধা বর্তমান আর আধা কাল্পনিক ধারণার উপর ভিত্তি করে লেখা। তবে অদূর ভবিষ্যতে এটি পূর্ণ বাস্তবসম্মত পোষ্ট হিসেবে প্রকাশ পাবে অখ্যাত খেতে বিখ্যাত সব নিউজ পোর্টালে।

 

আর ইহা আমার ধারনা নহে, ইহাই আমার বিশ্বাস  :p

 

 

 

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ