প্রেমের কবুতর!

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৭ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার, ১২:৪৪:২৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২১ মন্তব্য

প্রেমী কবুতর না কাক?

"বুদ্ধিমানরা প্রেমে পরে একবার, বোকারা প্রেমে পরে দুইবার আর চরিত্রহীনরা প্রেমে পরে বারবার"।

কবুতরের নাম প্রেমের কবুতর কেন? কিংবা আমরা কোন চমৎকার জুটি দেখলে কেন বলিজোড়া কবুতর। কারন তো অবশ্যই আছে। কবুতর প্রেমিক পাখি, একসময়ের প্রেমের চিঠিবাহকও ছিল ।

প্রেমের ব্যাপারে সে এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ। প্রেমের যত ছলাকলা সবই তার জানা এবং মানুষের প্রেমঘটিত বিষয়গুলি কবুতরের সাথে মিলে যায়। কবুতরদের প্রায়ই দেখা যায় গায়ে গা লাগিয়ে বসে থাকে। একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কি যেন বলাবলি করে। প্রেমের কথাই বলে হয়ত তোমাকে ছাড়া আমার একমুহুর্ত কাটেনা, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না এসব। জন্মদানেও বেশ পটু, অতিসেক্সুয়াল পাখি। বসবাসের পরিবেশ চাই প্রেমের মতই চমৎকার!

এবার আসি বাচ্চা লালন পালনে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হবার পর বাচ্চাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব দুজনের। বেশ দুজনেই একসাথে চলাফেরাও করে। খাবার সংগ্রহে বের হয় একসাথে শুধু স্থান আলাদা থাকে। কারন সব জায়গায় খাবার সমান নাও মিলতে পারে। যার যার মত নিয়ে এসে বাচ্চাদের খাওয়ায়। সমস্যা একটা সেটা হল মাকে বাচ্চাদের ওম দিতে হয়। ওম দেবার সময় ছেলে কবুতর ভীষন একা বোধ করে, মন খারাপ থাকে। সে তখন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। অন্য কবুতরের দলে যায় গল্প টল্প করে চলে আসে!

ডিম দেবার আগে মেয়ে কবুতর দেখতে খুব টুসটুসি হয়। কেমন গ্লেজি গ্লেজি শরীর, কামনা, আবেদনে ভরপুর। একা থাকা পুরুষ কবুতরের এ সময় আবার প্রেম হয়। ভালো লেগে যায় কাউকে। গুনগুনিয়ে গান গায়- ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি। খাবার খুঁজতে গিয়ে, কিংবা দিশেহারা ঘুরতে ঘুরতে হয়ে গেল কোন কবুতরের সাথে চোখে চোখ। পুরুষ কবুতর বেমালুম বউ বাচ্চার কথা ভুলে গিয়ে এই টুসটুসির পেছনে দেয় ছুট। প্রেমের পটু পুরুষ কবুতর টুসটুসির পেছনে তার সমস্ত ভান্ডার উজার করে দেয়। এ সময় লুচ্ছা টুসটুসিও পটে যায় নতুন স্বাধের আশায়, নতুন ওমের আশায়, নতুন ঠোঁটের আশায়। দুজনে এক হয়ে; হয়ে যায় একেবারে দেশান্তরী। কারন টুসটুসীর পুরুষ তখন দা/কুড়াল নিয়ে তাকে খুঁজছে, লাম্পট্যের শেষ দেখতে!

এদিকে মা কবুতরের দুইবাচ্চাকে খাওয়ানো অসম্ভব হয়ে পরে। এ বয়সী বাচ্চাদের প্রচুর মায়ের ওম দরকার হয়। মা কবুতর না পারে পেট ভরে খাওয়াতে না পারে বাচ্চাদের ওম দিতে। পরিনতি হয় খুবই খারাপ বাচ্চারা মারা যায়। বাচ্চাদের শোকে কান্নাকাটি করে মা কবুতর অসুস্থ হয়ে যায়। আর বেঁচে থাকলে আবার নামে সঙ্গী খুঁজতে। কারন কবুতররা একা থাকতে পারে না।

 

এবার আসি কালো কাকের কথায়-

কোকিলা কালো বলে গান শোনে না কে? সবাই গান শোনে কিন্তু ভালোবাসে কজন। কাক/কোকিল এসব কুৎসিত পাখি। কাক তো রুচিহীন যাচ্ছেতাই অবস্থা। যত পঁচা ময়লা ঘেঁটে ঘুটে খায়। শহরের আবর্জনা পরিষ্কার হয় তাতে কি? প্রশ্ন হল রুচির। কবুতর যেমন তেমন খাবার খায়না। ময়লার তো ধারে কাছেও যায় না। কাক সারাদিন কা কা করে। বড় কোন খাবার পেলে কা কা করে কান ঝালাপালা করে অন্যদের ডাকে তারপর মিলেমিশে খায়। থাকার সঠিক জায়গা তো নেই। কারেন্টের তার, মরা গাছ এসবে থাকে। ঝড়, তুফান, শীতে টুপ করে মরেও যায়। দুজনে একসাথে মরতে না পারলেও শেষ সময়ে একসাথেই থাকে। সঙ্গীকে কবর দেবার গল্পও আমরা জানি। পুরুষ কিংবা মেয়ে যে কেউ একজন মরে গেলে শোকে অনেকদিন খাবার খায়না। একা একা বসে থাকে এবং বাকি জীবন সঙ্গী হীন একা কাটিয়ে দেয়।

এটি ভালোবাসার রুপক গল্প। ভালোবাসা অনেক মূল্যবান একটি জিনিস। নিবেদন, সমর্পণ যেটাই হোক বাহ্যিক চাটুকারীতা, সৌন্দর্য দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না। ভুল হলে কষ্টই পেতে হয়। জীবনে সঠিক মানুষটা আসা খুব জরুরি, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিজেকে বিচক্ষণ হতে হবে। জীবনে ভুল মানুষ,ভুল সিদ্ধান্ত,ভুল বিশ্বাস, ভুল সম্পর্ক পৃথিবীর সবকিছুর উপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে দেয়। বেঁচে থাকার সমস্ত উপাদান বিষময় করে তোলে।

আমরা অহেতুক অন্যের বিশ্বাস নিয়ে খেলবো না। আজ যেটা মজা, যেটা খেলা বা পরিস্থিতির সামাল দেয়া। কারও হয়ত সেটা সারাজীবনের তিল তিল করে গড়ে তোলা , জমানো ভালোবাসা। আপনার কাছ থেকে পাওয়া আঘাত, অবজ্ঞা, মজা কারও বিশ্বাস ভাঙ্গার কারন যেন না হয়! হয়ত বিশ্বাস ভাঙা মানুষটা কষ্ট পেয়ে গুমরে গুমরে মরবে। এছাড়া আর কিছুই করতে পারবেনা। কিন্তু সারাজীবনের জন্য আপনি হয়ে থাকবেন এক মন নষ্টকারী হায়েনা!

সবাই ভালো থাকুন। প্রেমময় হোক সবার জীবন।🌹🌹

 

0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ