প্রিয়তমেষু

তৌহিদুল ইসলাম ৯ অক্টোবর ২০২০, শুক্রবার, ১১:১৩:১৮অপরাহ্ন চিঠি ৩৩ মন্তব্য

প্রিয়তমেষু!

পত্র প্রারম্ভেই মন উজার করিয়া ভালোবাসা জানাইয়া দিলাম। পরে যেন বলিতে না পারো বারংবার রসকষহীন পত্র দিয়া আমি তোমার ভালোবাসাকে খাটো করিতেছি। অবশ্য নারীর মন বুঝিতে কোন পুরুষই বা পাইয়াছে! কেমন আছ তুমি?

ভালো যে আছ তাহা পাশের বাড়ির নিমাইয়ের কথা হইতেই জানিতে পারিয়াছি। তোমাকে নিতাইগঞ্জার হাটে সদাই করিতে দেখিয়াছে নিমাই। ঠোঁট লাল করিয়া আলতারাঙা পায়ে পায়েলের ধ্বনিতে কোমর দুলাইয়া তোমার হাঁটাচলা অদ্যাপি আমি নিজেই শতভাগ চাক্ষুষ করিনাই অথচ নিমাই সেই সুযোগ আমার পূর্বেই পাইয়া গেলো! ইহাতে ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণ হইয়াছি।

যাহা হউক, পরসামাচার হইতেছে তোমার অনুপস্থিতিতে দিনকাল সম্মুখবিচারে ভালো মনে হইলেও আমি কিন্তু মোটেও ভালো নাই। কার্যকারনহেতু আমি কথা বলিনা এইটা তুমি ভালো করিয়াই অবগত আছো। ছেলেমি করিয়া পত্র লিখিতে কিঞ্চিত লজ্জা পাইতেছি। মনের কথা দু'কলম না লিখিলে আজ রাত্রিতে নিদ্রা যাওয়া আমারপক্ষে এককথায় অসম্ভব।

দীর্ঘ পাঁচটি মাস তুমি মাতুতালয়ে অবস্থান করিতেছ কেন তাহা আমার সঠিক বোধগম্য হইতেছেনা। তুমি কি আপন শ্বশুরালয়ের পথ ভুলিয়া গিয়াছ? তোমার কি একবারও আমার কথা মনে পড়ে না প্রিয়ে! তুমিহীনা দিবারাত্রির এই পরিবর্তন আমার চউক্ষে রোদজ্বলা ধুসর মরুভূমির উপলক্ষ্য হইয়া ধরা দিয়াছে। তোমার পথপানে জানালার ধারে বসিয়া ধূলিময় মেটোপথের দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে আমার চোখে চশমা উঠিয়াছে তাহা বোধকরি তোমার জ্ঞাত হইবার কথা নয়। তুমি যেনো দিনকেদিন আমার কাছে মরীচিকার ন্যায় প্রতিভাত হইতেছো।

তোমার প্রাক্তন পাণিপ্রার্থী প্রেমিক সেই স্কুলমাস্টার গতকল্য আমাদিগের বাসায় আসিয়া তোমার খোঁজ করিতেছিলো। তাহাকে দেখিয়া তৎক্ষণাৎ আমার মাথায় খুন চড়িয়া গিয়াছে। অবশ্য মায়ের নিকট হইতে জানিতে পারিয়াছি মাষ্টার নাকি তোমায় আশির্বাদ করিতে আসিয়াছিলো। যদিও মানুষটাকে ভালোই মনে হইয়াছে তবুও আমার মনে খানিক কিন্তু রহিয়াই গিয়াছে। ভুলিয়া যাইওনা, আমি বনেদি ঘরের পুত্র। বাঘে ছাগলে একঘাটে পানি গলাধঃকরণ করাইতে সিদ্ধহস্ত। মাষ্টারকেও তাহা বুঝাইয়া দিও।

বোধকরি শুনিয়াছ ভিনদেশী করোনা নামক এক মারণব্যধি অনেকের প্রাণনাশের হেতু হইয়াছে। করোনাকালে আমি নরসুন্দরের নিকট যাইতে পাইনাই বলিয়া চুলদাড়ি লম্বা হইয়া জট পাকাইয়া যাইতেছে। চুলে না হয় কাঁচি চালাইলাম কিন্তু জানোইতো নিজের দাঁড়ি কামানো আমার পক্ষে খুবই ভীতিকর, গাল কাটিয়া রক্ত ঝরে। শাশুড়ি আম্মাকে বলিয়া দিও আরও কয়টা মাস এই দাড়িওয়ালা জামাইকেই মানিয়া লইয়া আদর আপ্যায়ন করিতে হইবে। ইহাতে তাহার কি অভিব্যক্তি তাহা লিখিয়া জানাইও।

তুমিও মাঠেঘাটে, বনেবাঁদারে অযথা ঘুরাফিরা বন্ধ করিয়া দিও। অবশ্যই বড় করিয়া ঘোমটা দিয়া নাক, মুখ ঢাকিয়া রাখিও। করোনার জীবানু নাক, মুখ দিয়াই ছড়ায় বলিয়া জ্ঞাত হইয়াছি। হাত বারেবারে সাবানপানি দিয়া ধৌত করিও। আর হ্যা, ইদানিংকালে এদেশে কিছু পথভ্রান্ত কুলাঙ্গার সমাজের নারী মাতৃগণকে খুবজোর অসম্মান করিতেছে। নারীদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিতে হইবে। কোথাও কেহ নিরাপদ নহে। পারিলে বগুড়ার মরিচগুড়ার একটা পুঁটলি সবসময় হাতের কাছে রাখিবে। যাহাতে সময়ে দুষ্টু পুরুষের চোখেমুখে উহা ব্যাবহার করিতে পারো।

আগামী শুক্লাদ্বাদশে তোমার জন্য পালকী পাঠাইয়া দিবো। সুন্দর মতন চলিয়া আসিও। আমি সেখানে আসিবো কিনা তাহা শাশুড়ি মায়ের দাড়ি বিষয়ক উত্তর পাওয়ার পরেই ভাবিয়া দেখিবো। আমি এক কন্যার এক জামাই। এখনো শ্বশুরমশাই ইলিশ আপ্যায়ন করেননাই দেখিয়া মর্মাহত হইয়াছি। ইহাও না আসার অন্যতম কারন বৈকি! নচেৎ আমি ওবাড়িমুখো হইবোনা এই বলিয়া দিলাম।

ইদানীন্তনকালে খুব চিন্তায় আছি তোমাকে নিয়া। আশাকরি পত্র পাওয়ামাত্র উত্তর জানাইয়া পত্র পাঠাইবে। বড়দের সবাইকে কদমবুসি আর ছোটদের আমার স্নেহ জানাইয়া দিও। দীর্ঘদিন তোমায় কাছে না পাইয়া আমিও মান্দারগাছের শুকনা ডালের মতন চুপসিয়া গিয়াছি। এই বক্ষে জল ঢালিবার ব্যবস্থাদি তড়িৎ করিতে তোমার মর্জির পথপানে দিনগুনিয়াচলা তোমারই-

ফণিমনসা

পুনশ্চঃ - পত্রবাহক মারফত বগুড়ার মরিচগুড়ার পুঁটলি আর তোমার পছন্দের বাতাসা পাঠাইলাম। বাতাসাগুলি আমাকে ভাবিতে ভাবিতে একা একা খাইও। নচ্ছার দুষ্ট শালা-শালীদের জন্য পাঁপর আর আমের আঁচারও পাঠাইয়াছি।

পুনঃপুনশ্চঃ - লেখায় পালকির ছবিখানি আমার প্রাক্তন প্রেমিকা নিজ হাতে আঁকাইয়া তোমাকে তাহার ভালোবাসার উপহারস্বরুপ পাঠাইয়াছে। তোমার মনে কোন প্রকার অমূলক সন্দেহ বা দ্বিধা না রাখিয়া ইহাকে তাহার সৎ পাত্রে ছবিদান হিসাবে গ্রহণ করিও।

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ