প্রাপক শিশির

তৌহিদুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার, ০৯:৩৩:৫২অপরাহ্ন চিঠি ২৮ মন্তব্য

আমার শিশিরকণা,

সোনেলার আনন্দ বেদনার বার্তাবাহক মারফত আজই জানতে পারলাম এখন থেকে সোনেলায় চিঠি বিভাগ চালু হয়েছে। জানি, এতদিন তোমার কাছে চিঠি পৌঁছানোর কোন মাধ্যম না পেয়ে যারপরনাই বঞ্চিত হতে হয়েছে তোমাকে। তাই তোমার কাছে প্রথম চিঠি লেখার এ সুবর্ণসুযোগ আমি কিছুতেই হেয়ালিপনায় হারাতে চাইনি। আমার প্রেমাবেগ আর বিরহবার্তার যাঁতাকলে পিষে তুমি মরিয়া হয়েছো বারংবার। আমার উপস্থিতি তুমি হয়তো বুঝতে পারোনা, আমার স্পর্শ অনুভব করতেও পারোনা। কিন্তু আমি এখান থেকে তোমাকে দেখতে পাই, তোমার দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই। তোমার বিরহবেদনার অবসান ঘটাতে তাই আজ সোনেলার মাধ্যমেই তোমার কাছে এই চিঠি লিখছি। তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, জেনেরেখো অশ্রুসিক্ত নেত্রে আমি ওপর থেকে তোমায় দেখছি আর তোমার আমার ভালোবাসাবাসির স্মৃতিমধুময় সে ক্ষণগুলোর কথা চিন্তা করে আপ্লুত হচ্ছি বারংবার।

প্রিয়তমেষু, এই চিঠির প্রতিটি ভাঁজে শরতের নীল আকাশে ভাসমান মেঘের ভেলায় লুকোচুরি করা সূর্যের আলোরছটাকেও পাঠিয়ে দিলাম তোমার ঠিকানায়। আমি জানি জানালার ধারে এলোকেশী তুমি অপলক নয়নে চেয়ে আছো সামনের লালচে মেঠোপথের দিকে। কবে আসবো কখন আসব সে ভাবনায় দিশেহারা তোমাকে উপর থেকে দেখছি আর ভাবছি কি বোকা তুমি? যে চলে যায় সে কি আর ফিরে আসে? এমন ভালোবাসা পাবার অধিকার যে আমার আর নেই।

প্রিয়তমা, অন্ধ মোহাচ্ছন্নের মিথ্যে আবেশতায় নিমগ্ন ছিলাম আমি। ভাবতাম এপারেই রয়েছে সকল সুখ। তুমি ডেকেছো বারংবার, ফেরাতে চেয়েছো আমায়। পদে পদে জলাঞ্জলি দিয়েছিলে নিজের হৃদয়বীণার মন্ত্রকেও। কিন্তু আমি সেদিন পিছু ফিরতে পারিনি, কেউ পারেওনা। নিজের অজান্তেই আমার জীবনে কারণে আর অকারণে মাঝেমধ্যে কিছু ক্ষ্যাপা ধূমকেতু এসে পড়েছিলো। তুচ্ছ তুচ্ছ প্রলাপের লাগামহীনতায় তারা পুচ্ছে দিয়েছিলো অশান্তির আলাপন। সে অনলে দগ্ধ আজ আমি হয়েছি ছারখার, হয়েছি ভস্মীভূত। তুমি হয়তো দেখতে পারবেনা সে নোনাজল, শুনতেও পারবেনা আমার বিদীর্ণ আহাজারি। পারবেইবা কেমন করে? তারাতো দেয়নি আমার সে কথাগুলো তোমার কাছে পৌঁছাতে।

ওগো জানো, তারা এখানে নিয়ে এসে আমায় কৌতুকের বাক্স উপহার দিয়েছে? র‍্যাপিং পেপারে মোড়ানো আমি হয়েছি উপহাসের পাত্র। আমার খেয়ালী স্রোতের ধারায় তোমার স্মৃতিরা সব দুঃখের সাগরে ডুবছে আর ভাসছে। তোমার মনে আছে দুজনে মিলে নদীর পাড়ে যে প্রেমযমুনার ঘাট বানিয়েছিলাম তার কথা? সময় পেলে সেখানে এসে মাঝে মধ্যে দাঁড়িও। দেখবে ভালবাসার সেইসব স্মৃতিরা এসে ভীড়ে আছে সেই ঘাটে।

প্রিয়ংবদা , আমি এখানে যে নৌকায় ভাসমান তার ছই নেই গলুই নেই। তবু নৌকাখানিকে যত্নে রেখেছি। তোমার কাছে পৌঁছোবার সেই ভেলাকে আমি সাজিয়েছি আমাকে বলা তোমার পুরনো সে কথামালা দিয়ে। আমি ভালো নেই প্রিয়, আমার যন্ত্রণারা এখানে বিবর্ণ। ব্যথাহীন হয়ে পড়েছে আমার আবেগ অনুভূতিরা। তোমার দোয়েল, শ্যামারা কেমন আছে? তারা কি এখনো গান শোনায়? নাকি আমার বিরহে তারাও কাতর? অপেক্ষায় আছো জানি, কিন্তু আমিও যে মানবসত্তা! অসীমের অংশ দেহে ধারণ করেছিলাম কিছুকাল। সৃষ্টিকে সম্পন্ন করবার জন্যই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। সবাইকেই আসতে হয়। এই অমোঘতা বিসর্জন দেবার শক্তি যে কারোরই নেই।

প্রাণপ্রেয়সী, সুযোগ পেলে একদিন যাব হয়তো তোমার কাছে, স্বশরীরে না হলেও আমার কায়া হয়ে। বাতাসে শিস কেটে সে মর্মর ধ্বনি পৌঁছে দেবো তুমি কান পেতে শুনে নিও। নিজের সাধনাকে বিসর্জন দিয়ে তোমার সীমানায় একবারের জন্য হলেও আমি আসবো প্রিয়। সত্যিই তোমায় নিতে আমি আসবো সেই লালচে মেঠোপথের শেষ সীমানায় সন্ধ্যের জোনাকির আলো হয়ে। সেদিন জানালার ধার ছেড়ে বাইরে এসো কিন্তু?

যদি কখনো অসহায় মনে হয়, যদি কখনো একাকী মনে হয় তোমার দুঃসময়- তুমি স্মরণ করো আমায় আমি আসবো। আর হ্যা, এখন আমার ঠিকানা হয়েছে সোনালি আকাশ। এই ঠিকানায় সোনেলার চিঠি বিভাগে চিঠি লিখলেই আমি ঠিক পেয়ে যাবো। তোমার চিঠির অপেক্ষায় পথচেয়ে রইলাম।

ইতি,
তোমার আমি।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ