বাতাসে শীতের গন্ধ জানান দেয় পৌষ মাসের।পৌষ এলেই হিমেল হাওয়া খবর নিয়ে আসে শীতের ।কুয়াশার চাদরে মোড়া ভোর বেলায় উঁকি দেয়া  সূর্যের আলো শিশির ভেজা ঘাসের আলিঙ্গনে দারুণ এক শোভা ছড়াতে ছড়াতে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে অপরূপ সৌন্দর্য্যে।ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে সোনালী রোদ্দুর উঁকি দিয়ে জানান দেয় সৃষ্টিকর্তা কত সুন্দরই না করেছেন শীতের সকাল।ভোরের আলো না ফুটতেই কানটুপি আর শীতের কাপড় পরে দ্রুত পায়ে কর্মব্যস্ত মানুষ। বাড়ির বউ-ঝি রাও ব্যস্ত ঘরের কাজে..।যদিও লেপের নিচ থেকে উঠতে ইচ্ছে করেনা কারো। কিন্তু রান্নাঘর থেকে পিঠার সুগন্ধ বিছানা ছাড়তে বাধ্য করে। কোন রকমে কাঁপতে কাঁপতে উঠে চুলার পাশে গিয়ে বসলে আগুনের তাপে শরীরটাও যে ওম পায়!নারকেল,গুড় মেশানো ভাপা আর খেজুরের  রসে ডুবানো চিতই মাথা উঁচিয়ে জানান দেয় তার স্বাদ আর সুঘ্রাণ! সেই সুঘ্রাণ পাশের বাড়ি ওব্দি পৌছুতে দ্বিধা করে না।কাছের প্রতিবেশির কাছেও পৌছে যায় পিঠের থালা।এ যেন এক উৎসব। বাঁকে করে খেজুরের রসের হাঁড়ি নিয়ে এখনও কি গাছিরা আসে? আর সেই হিম শীতল খেজুরের মিষ্টি রস শরীরকে আরো হিম করার জন্য এখনও কি মানুষ উন্মুখ থাকে?

ভোরের শিশির গায়ে মাখতে মাখতে,শিশির ভেজা ঘাসে পা মাড়িয়ে ক্ষেতের আইল ধরে শিশুদের দল কোলাহল করতে করতে মেতে ওঠে দূরন্তপনায়।মায়ের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে হীম ঠান্ডায় শিশুদের দূরন্তপনার শেষ নেই যেন! শীতের সকালে মক্তবে মিহি সুরে শিশুদের মুখে একতালে সুর করে কোরআন পাঠ.. মুগ্ধ করে অনেককেই।কাছে পিঠেই খড়-কুটো দিয়ে আগুনের কুন্ডলি আর তার চারপাশে বসে ছেলে- বুড়ো আদূল গায়ে আগুনের তাপ পোহায় শীত থেকে বাঁচার জন্য।সেখানে জায়গা করে নেয় বাড়ির পোষা প্রাণীটিও।

পৌষ মানেই পৌষ মেলা।পৌষের মেলার আমেজটাই যে অন্যরকম! মাটির হাঁড়ি,কলস,বাঁশের ঝুড়ি,কুলা সহ প্রয়োজনীয় আর ঘর সাজানোর নানা দ্রব্য পাওয়া যায় এই মেলায়।ছাঁচে তৈরী চিনির হাতি,ঘোড়া অথবা কদমা,বাতাসা আর গুড়ের তৈরী গজা আজো শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু!পৌষ মেলা যেন প্রাণের মেলা। ছোট- বড় সবাই যেন অকৃত্তিম এক মেলবন্ধনে আবদ্ধ থাকে।

আস্তে আস্তে দিন শেষে রাতের আগমন ঘটে। সন্ধ্যা না হতেই নিরবতার চাদরে ঢেকে যায় চারিদিক। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসে এশার আযানের সুর। মুয়াজ্জিনের সুমধুর আযানের সুরে এক মায়াবি পরিবেশে আচ্ছন্ন হয় চারপাশ।

ইট,কাঠ পাথরের শহরে, শহুরে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ জীবনেও কান পাতলে শোনা যায় গাছের পাতায় শিশির পড়ার শব্দ,অনুভব করা যায় শিশির ভেজা ঘাসে পা ভিজে যাচ্ছে,চোখ বুজলে দেখতে পাওয়া যায় কুয়াশা ঘেরা ভোরে সূর্যের লুকোচুরি।পৌষ এলেই মন হয়ে যায় হলুদ সরিষা ক্ষেতে উড়ন্ত রঙিন প্রজাপতির মত। শীতের পাখিরা যেমন সেই সুদূর দেশ থেকে এদেশে ভীড় করে,ঠিক তেমনই মনটাও ওদের মত উড়ে চলে এদিক- ওদিক।বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সব জায়গায় পৌষ ধরা দেয় অন্য রূপে,যা অন্য সব ঋতু থেকে ভিন্ন।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ