একটি হিন্দি সিনেমার কল্যানে মর্তের রাজা “পুরর্বা” ও স্বর্গ অপ্সরা “উর্বসী” এর প্রেম কাহিনী প্রায় সবার জানা । আসুন আজকে আমরা গ্রীক মিথোলজির “অর্ফিউস”(Orpheus) ও “ইউরিদাইস” এর প্রেম কাহিনী শুনি ।
গ্রীক পুরান মতে “অর্ফিউস” হচ্ছেন উপদেবী ক্যালিওপীর পুত্র । “অর্ফিউস” সংগীতের দেবতা অ্যাপোলোর কাছ থেকে একটি বীনা উপহার পান । এবং তাতে এমন সুর তুলতেন যে মানব,দানব,জীবযন্তু,গাছপালা সবাই বিমোহিত হয়ে পড়ত । এই সংগীত প্রতিভার কারণেই “অর্ফিউস” এর প্রতি প্রেমাসক্ত হয়ে পড়ে বনপরী “ইউরিদাইস” এবং প্রেম একসময় বিয়েতে গড়ায় । “অর্ফিউস” ও “ইউরিদাইস” বেশ সুখে শান্তিতেই বসবাস করতে থাকেন । কিন্তু মৌমাছির দেবতা “অ্যারিস্টিউস” “ইউরিদাইস” এর প্রতি কাম আসক্ত হয়ে তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয় । “ইউরিদাইস” এই দেবতার হাত থেকে পালাতে গিয়ে সর্প দংশনে মৃত্যু বরণ করে । শোকার্ত “অর্ফিউস” তাঁর বীণা বাজাতে বাজাতে পাতালপুরীতে মৃতের দেশে উপস্থিত হন এবং বীণা বাজিয়ে পাতালের রাজা রানীকে সন্তুষ্ট করে “ইউরিদাইস” কে মর্ত্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান । কিন্তু “অর্ফিউস” কে শর্ত দেওয়া হয় যে, পাতালপুরীর পথ শেষ না হয়া পর্যন্ত “অর্ফিউস” তাঁর পত্নীর দিকে তাকাতে পারবে না । আর যদি তাকায় তাহলে “ইউরিদাইস” কে চিরতরে হারাতে হবে । “অর্ফিউস” এই শর্ত মেনেও নেয় ।
কিন্তু পাতালপুরীর পথ শেষ হওয়ার কিছু আগে “অর্ফিউস” দুর্বলতা বসত তাঁর পত্নীর দিকে তাকিয়ে বসেন । ফলাফলে শেষ বিদায় জানিয়ে “ইউরিদাইস” মৃত্যুর রাজ্যে চিরকালের মতো হারিয়ে গেলো ।
“পুরর্বা” ও স্বর্গ অপ্সরা “উর্বসী” এর প্রেম কাহিনী মোটামুটি অনেকেই জানেন,এর বাইরে জিশান ভাই এই ব্লগেই বিষয়টি নিয়ে লিখেছিল। তাই আমি নতুন করে আর কিছু লিখছি না । সেই গল্পের ফিনিসিং টাও প্রায় এরকম । স্বর্গের দেবতারা মর্তের মানুষের সাথে তাদের ভোগের সামগ্রী “উর্বসী”র প্রেম মেনে নিতে না পেরে শর্ত জুড়ে দিয়েছিল যে এরা কেউ কাউকে সুর্যের আলোয় উলঙ্গ দেখতে পারবে না । শর্ত মেনেই “পুরর্বা” ও “উর্বসী” এর রাত্রিকালীন বিহার চলছিল । কিন্তু কূট দেবতারা এই দুজনের প্রেম মেনে নিতে পারছিল না । ফলে ছল করে মধ্য রাতে সুর্য দেব কে উদিত হতে বাধ্য করেন । এবং সেই আলোয় পুরর্বা ও উর্বসী একে অপরকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলেন । ফলে উর্বসী চিরকালের জন্য পুরর্বার কাছ থেকে হারিয়ে যায় ।
দুইটিই পৌরাণিক গল্প । এর মধ্যে সত্যের গন্ধ খুজতে যাওয়া বোকামি । কিন্তু দুইটি গল্পেরই এন্ডিং এক রকম ।
(প্রেম তখন যেমন ছিল, এখনও আছে। তখন যেমন প্রেমে দুঃখ,কষ্ট,বেদনা ছিল। এখনও তেমন আছে। সময় বদলে গেছে,কিন্তু প্রেম একই ধারায়,একই বেগে বহমান।)
৮টি মন্তব্য
নিহারীকা জান্নাত
প্রেমে বাধা আসবেই।
এটিই নিয়ম।
বায়রনিক শুভ্র
হ্যা ।
জিসান শা ইকরাম
পড়লাম, সংক্ষেপে ভালই উপস্থাপনা বলা যায়।
একটা বিষয় অবাক হই, এই যে পৌরণিক কাহিনী বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এসব কিছুটা ভিন্ন হলেও এক দেশের কাহিনী অন্যর সাথে মিলে যায়। কিভাবে সম্ভব হয়েছে এটি? ভারতবর্ষ আবিস্কারের পূর্বেতো কেহ এদিকে আসেনি। তাহলে ভারতবর্ষের কাহিনী গ্রীক বা মিশরের সাথে কিভাবে মিলে যায়?
বায়রনিক শুভ্র
এই বিষয়টা আমাকেও ভাবায় । কে কার টা কপি করেছে এটা জানতে ইচ্ছা করে ।
শুন্য শুন্যালয়
যাক বাবা এই গল্প দুটাতে তো অন্তত দুই নারী মরলো, সবসময় পুরুষরাই তাইলে মরে না 🙂
প্রেম আছে কিনা জানিনা, তবে প্রেমের গল্প আছে আর পড়তেও বেশ লাগে 🙂
বায়রনিক শুভ্র
বেহুলারা বাংলায় কখনও বিধবা হয় না । কিন্তু লক্ষ্মীন্দরেরা ঠিকই মরে ।
উর্বসী কিন্তু মারা যায় না । তাকে স্বর্গে চিরতরে নির্বাসিত করা হয় ।
নীলাঞ্জনা নীলা
পড়লাম এবং জানলামও।
বায়রনিক শুভ্র
🙂 🙂 🙂 🙂 🙂 🙂