আমাদের দেশে নারীদের অবস্থান অনেক পিছে। প্রকৃতিগত কারনেই নারী পুরুষের থেকে দুর্বল। আর তার এই দুর্বলতার সুযোগ যুগ যুগ ধরে পুরুষেরা গ্রহণ করছে, নারীকে পীড়ন করছে। নারীর কাজ, পেশা সবকিছুতেই অবজ্ঞার দৃষ্টি। যেমন- গৃহিণী নামক পেশা কে কেও পেশাই ভাবে না।

বরং এক্ষেত্রে অনেক পুরুষের কমন অভিযোগ- সারাদিন ঘড়ে থাকো কিছুই টের পাওনা।

আসুন দেখি, কথাটা কতখানি সঠিক বা ভুল?

একজন স্ত্রী তার সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করে থাকেন। সেই শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের কদর কতখানি পায় সে??

বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তাই এই অধিকাংশ পরিবার গুলোর স্ত্রীরা কম বাজেটে সারা মাস সংসার চালায় ও এর মাঝে সন্তানের আবদারও পূর্ণ করে। এভাবে কখন যে সে তার নিজেকে হারিয়ে ফেলে তাও জানেনা। কিন্তু তবুও মেলেনা স্বীকৃতি!!!

একটা সংসার চালানো মানে অনেক কিছু। এখানে যেসব কাজগুলো করতে হয়

*টাইম মেইনটেইন করে ৩ বেলার খাবার রেডি করা।

*ঘড়ের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।

*টাকা পয়সা সুষম ভাবে খরচের জন্য সারা মাসের বাজেট তৈরি করা।

*সন্তানদের লালন পালন করা।

*আত্নিয় স্বজনদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা।

*মেহমান আসলে তাকে আপ্যায়ন করা।

*স্বামী অসুস্থ হলে তাকে সেবা করা।

*ভালোবাসা, বিশ্বাস ইত্যাদি আবেগের যথাযোগ্য মুল্যায়ন করা।

*ধৈর্য ধারন করে উত্তপ্ত, প্রতিকুল পরিবেশ অনুকুলে আনা।

*শ্বশুর বাড়ির লোকদের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করা।
ইত্যাদি ইত্যাদি...............।

তাহলে বলা যায় একজন স্ত্রী হল- একজন রাধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, রিসিপসনিস্ট, আয়া, ট্রেজারার, ম্যানেজার, কাওন্সেলর ইত্যাদি ইত্যাদি।একটা সংসার একটা রাষ্ট্রের মিনি কপি বললে ভুল হবে না। অথচ সংসার চালানোর যোগ্যতা কে কোন পেশা হিসাবে সন্মান দেয়া হয় না। গৃহিণী মানে স্বামীর অন্নগ্রহণকারী পরনির্ভরশীল স্ত্রী!!!

এই আচরণ করে পুরুষরা নারীদের দমাতে গিয়ে এখন নিজেরাই ফাদে পড়ে গেছে। এখন আর নারীরাও সংসার করাটা জীবনের প্রধান বিষয় মনে করেনা। ফলে সন্তানের কেয়ারিং, স্বামীর সেবা, সংসারের পরিচালনা ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছে বর্তমান সমাজ ও সংসার। একথাই অনেক আগে প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন তার নারী কবিতায়-

নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা ঐ কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!
যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।

শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!

 

তাই নারীকে সন্মান ও মর্যাদা দিতে হবে পুরুষের নিজের সুখ তথা সুস্থ সমাজ নিশ্চিত করার জন্যই। নারীর কাজ কে কাজ বলতে হবে।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ