পা ফোলার গল্প

তৌহিদুল ইসলাম ৪ জুন ২০১৮, সোমবার, ১০:৫০:৩০অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৭ মন্তব্য

গতকাল ফার্নিচার সরাতে গিয়ে আঙুলে আঘাত পেয়েছিলাম, আঙুল ফেটে গিয়ে সে এক রক্তারক্তি কান্ড। তাই কারো রিপ্লাই দিতে পারছিলাম না। ভাগ্যিস ইফতারের পরের ঘটনা না হলে রোজাটাই যেত। আজ ডিসপেনসারি থেকে আঙুলের ব্যান্ডেজ খুলে আসার পথে বাম পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পেয়ে পা ফুলে ঢোল হয়ে আছে। ব্যাথায় দাঁড়াতে পারছিনা এমনকি বড়টা করতে গিয়েও বহুত ঝামেলা হচ্ছে।

ইয়া আল্লাহ্‌ শনির দশা থেকে আমাকে উদ্ধার করুন।

আমার ফোলা পা নিয়ে খুঁড়িয়ে হাটা দেখে আপনাদের ভাবি অস্থির হয়ে গেছে। বার বার জিজ্ঞেস করছে কিভাবে আঘাত পেলাম। শুধু বলেছি উঁচু নীচু জায়গায় পা পড়েছিল তাই এমন হয়েছে। পায়ে আঘাত পাওয়ার আসল ঘটনা বউরে জানালে সে মন খারাপ করবে তাই বলিনি।

আজ বিকেলে ডিসপেনসারিতে আঘাতপ্রাপ্ত আঙুলের ব্যান্ডেজ খুলে বাসায় আসছি দেখি বাসার মোড়ে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে জটলা করছে। এক রিক্সাওয়ালা আমার প্রতিবেশী এক নানাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। কারন ছিলো, নানা মটর সাইকেলে বাসায় আসার পথে সেই রিক্সার সাথে একটুর জন্য এক্সিডেন্ট হতে গিয়েও হয়নি। রাস্তার মাঝখানে রিক্সাটা দাঁড়িয়ে ছিল দেখে নানা তাকে বললেন - বাবাজি, তোমার রিক্সাটা একটু সাইড করে রাখো। এখনিতো একটা বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেত। এই কথা শুনে সেই রিক্সাওয়ালা নানাকে উচ্চস্বরে বলতে লাগলো - ওই শালা তোর বাপের রাস্তা?

তখন নানা বললেন আমি তোমার বাবার বয়সী মানুষ, আমাকে এভাবে বলা তোমার ঠিকনা। এরপর নানাকে রিক্সাওয়ালা শালা চুদির ভাই বলে গালি দেয়াতে আশে পাশের মানুষজন তাকে উত্তম মধ্যম দিতে গেলে সে রিক্সা নিয়ে সটকে পড়তে উদ্যত হয়। ঘটনার এ মুহুর্তেই আমার আগমন। একটু দূর থেকে দেখছি রিক্সাটাকে ধরার জন্য সবাই সেটার পিছনে দৌড়াচ্ছে। আর রিক্সাটাও যাবে আমার সামনে দিয়ে তাই ভাবলাম, কিরে! সবাই এই রিক্সার পিছনে দৌড়ায় কেন? সে কি কাউকে এক্সিডেন্ট করে নাকি কিছু চুরি করে পালাচ্ছে? আমার সামনে দিয়ে যাবার সময় তার রিক্সার হ্যান্ডেল টান দিয়ে ধরি আর আমার বাম পা দ্রুতগতির ব্যাটারি চালিত রিক্সাটার চাকার নীচে পড়ে আঘাত পায়। সে সময় বুঝিনি, সেটা পরে বুঝেছি। যা হোক, তাকে হ্যাচকা টান দিয়ে রিক্সা থেকে নামাতেই পিছনের দৌড়ানো সবাই তাকে যথেষ্ট উত্তম মধ্যম দিতে গিয়েও আমার বাঁধা দেয়ার কারনে সবাই ক্ষান্ত হয়। কারন আমি কোন গরীব রিক্সাওয়ালাকে মারার পক্ষে নই। সব শুনে তাকে নানার কাছে ক্ষমা চাইতে বললে সে আমাকেও উলটা ঝাড়ি মারা শুরু করলে আমার অতি শুভাকাঙ্ক্ষী পাড়ার দুই ছোট ভাই মুহুর্তেই কিছু উত্তম মধ্যম দেয় তাকে। উত্তম মধ্যম খেয়ে এবার রিক্সাওয়ালা ছেলেটার হুঁশ কিছুটা ফিরে আসে। সে নানার কাছে যেচে ক্ষমা চায়, কান ধরে উঠবস করে। আমি উত্তেজিত লোকদের শান্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে রিক্সাওয়ালাটাকেও বিদায় করে দেই।
পরে বাসায় এসে ইফতারি করে দেখি নামাজে দাঁড়াতে পারছিনা। বাঁ পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে। সব শুনে গিন্নী রেগে ভোম হয়ে আছে। তাকে শুধু বললাম বাবার বয়সী কেউ অন্যায় করলেও তাকে মারা বা তাকে গালিগালাজ করাটা অন্যায়। এটা আমি জীবনে কোনদিন নিজে করিনি আর কাউকে করতে দেখলেও মাথায় আগুন লেগে যায়, স্থির থাকতে পারিনা। আর রিক্সাওয়ালা যা করেছে সেটা অবশ্যই অন্যায় কিন্তু তারমানে এই নয় যে রিক্সাওয়ালাকেও মারতে হবে। এটাও অন্যায়। একজন অন্যায়কারীকে কখনওই আরেকটা অন্যায় দিয়ে সংশোধন করা যায়না, সম্ভব না। বউ আপাতত চুপচাপ আছে সেটাই ভরসা তবে আমি জানি সে পরে আমার সাথে এটার হিল্লে করবে। কোন মা'ই তার ছেলের গায়ে এবং কোন স্ত্রী'ই তার স্বামীর শরীরে আঘার পেলে স্থির থাকতে পারেনা। এটাই ভালোবাসা, এটাই স্বর্গীয় প্রেম।
তবে পরে চিন্তা করে দেখলাম এতো রিস্কিভাবে রিক্সাটাকে আমার দাঁড় করানো উচিত হয়নি, বড় এক্সিডেন্ট আমারো হতে পারতো। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।

এখন ওষুধ খাচ্ছি, আল্লাহ ভরসা।

0 Shares

৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ