পর্বতকন্যের ইতিকথা

প্রদীপ চক্রবর্তী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার, ০২:০২:০৮অপরাহ্ন উপন্যাস ১৭ মন্তব্য

#পর্ব_৪৬

রক্তমাংসে গড়া নবীন কিশোর যৌবনের যার পদার্পণ,
উদাসী ষোড়শ শতকের বৈধব্য সমাজে যেন কালপেঁচার আত্তীকরণ। বুকে চন্দনের গন্ধ আর ষোড়শীর ভেজা চুলে পুরো শহর ঘুরে অনেক পার্বতী পাওয়া যাবে। কিন্তু  পাওয়া যাবেনা তার মতো করে হেমবতী ষোড়শী,যার কাছে রয়েছে নীললোহিত অপরাজিতার মোহনীয়তা আর মৃগ কস্তূরীর মুগ্ধতার গন্ধ ছোঁয়া।
নিরন্তর স্বপ্ন আর গন্তব্যহীন পথিক হয়ে গন্তব্যপথে পৌঁছানো দুরূহ। সকলকিছু উপেক্ষা করে যেতে হবে তার কাছে একদন্ড ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।
বেনামি আর বিদ্রোহের লকারে বন্ধি হলেও বয়স প্রায় একবিংশ সেখানে কেটে যাবে। খুঁজতে হবে আমায় কিছু নিরবতা আর একাকীত্বে নিজেকে টিকিয়ে রাখার রসদ। জীবন যুদ্ধে স্বপ্নকে বিসর্জন দিতে গিয়ে হাতের বারুদটাও নিজের দিকে এসে পড়ে। হিমালয় বেয়ে গন্ধক নামলেও যে তার অস্তিত্ব আঁকড়ে ধরা যাবেনা স্বপ্নটা পথে নিমিষ হয়ে গেলেও যে তার চলার গতিপথ থমকে যায়না। সে কথা অনুসরণ না করে অনুকরণ করতে লাগলাম। গন্ধক হিমালয় কেনা যাবে কিন্তু তার অস্তিত্বকে ধরে রাখার সক্ষমতা আমার নেই। স্কাইলাইটের ভেতর উত্তপ্ত লাভার ভয়াবহ স্রোত এই স্রোতকে উপলব্ধি করতে হলে তার বাহিরের উত্তপ্তা সংবরণ করতে হবে।
মাটির গায়ে সন্ন্যাসী বসন স্তব্ধবাকের মৌনমুখর পাহাড়িয়া সুবর্ণের রৌদ্রের আমেজতায় একদিন পেয়েছিল সে কাঞ্চনজঙ্গা পাদদেশের রূপ।
যেখানে আজও লুকিয়ে আছে বাঙালির অজস্র মহাকাব্য আর শ্রুতি নাট্য। কালের অবদ্ধি থেকে বঙ্গীয় সাহিত্য সমাজের লেখকগণ এই পাদদেশের কাছে ঋণি। মহাশূন্য জুড়ে মহাশূন্যচারীরা কতবার চাঁদকে ছোঁয়েছে আজও অব্ধি কাঞ্চনজঙ্গা পাদদেশের লুকিয়ে থাকা মহাকাব্য অক্ষিপটে অগোচরে লুকিয়ে আছে।
অভিমানে ঘেরা আর নক্ষত্ররাজীর ছায়াতে যার মোহনীয়তা অমরত্ব লাভ করেছি।
রাতের আকাশের গায়ে যে বাঁকা চাঁদ সে চাঁদ পূর্ণিমা রাত্রিতে ছিলো ষোড়শী। আর পুলকিত নয়নে স্বপ্নাবেশে  আমি যাকে দেখেছিলাম সে অষ্টাদশী পার্বতী।
উত্তপ্ত মধ্যদুপুর কৃষ্ণনগর থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
হাঁটতে হবে প্রচুর কোথাও নির্দিষ্ট প্লাটফর্ম নেই।
বলা যেতে পারে দিকশূন্য যানবাহনহীন রাস্তা।
রাখালিয়া বাঁশিতে উদাসী কিশোর মগ্ন গানের কত রাগরাগিণী নিয়ে। বুকের মধ্য শিহরিত হচ্ছে উদাস ভাবের ভরদুপুরে উদাস সুর।

#পর্ব_৪৭

শহরের গায়ে তৃষিত অধিবাস ব্যাপিত হয় গুরুগম্ভীর নিরুত্তাপে। প্রেমিক যখন মহাজন হয় কত কলি যে খরতাপে পুড়ে মরে। অন্ধ প্রেমিক জানেনা এই খরতাপের উষ্ণতা। গঙ্গার অববাহিকায় সরস্বতীর শ্বেত রূপে কত অর্গলিত স্বপ্ন বয়ে চলে,আজও গঙ্গা জানেনা তাহা।
আমি বারবার তাহার ললাটে টিপ আর ঠুটের কাজল কালো নয়নের মায়ায় পড়েছি। এসব জেনে সে আমায় রাখে কত অজস্র অভিমানের কালোছায়ায়। অনুসরণ,অনুকরণে নয় সুপ্তিকালীন স্তব্ধতা আঁকে রোজ আমার বুকে। শরতের শেষে কাশফুল ঝরে পড়লেও তার মুকুলাবদ্ধে মোহনীয়তার আভাস বয়ে।
আত্নবিলাসে রোজ আমি বোহেমিয়ান হই যখন সে আমার থেকে অনেকদূর চলে যায়। আমার কবিতারা বনলতা আর জীবনানন্দকে তরুলতার প্রাচীর বেয়ে গিয়ে ছুঁতে পারেনা।
যেমন করে অশোক গাছের পাতা ঝরে পড়লে পঁচে যায়,নিচের জলাধারে শেওলারা সেথায় আগন্তুক নয় তাই পাতার প্রশংসা করে না। না আমি তার কাছে রোজকার দিনের মত প্রশংসিত হতে চাই না। একটু ভালোবাসার খানিক ছোঁয়া পেতে চাই। সে আমার হৃদপিন্ডের শতভাগ জায়গা দখল করুক তার প্রতি থাকবেনা কোন কারফিউ। নির্ঘুম আর ছায়াপথের অক্ষিপটে ঝরে পড়া শিউলি শিহরিত হউক ভোরের প্রকাশিত উদ্ভাসে।
যেমন করে রোজ অভিসারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুজন কথা বলতাম,ফুল,প্রকৃতি আর আকাশের শেষ তারা গুলো কে অনুভব করতাম। কত দুঃখকষ্টের ভাগিদার হতাম একে অপরের।
অপার মোহনীয়তা আর স্নিগ্ধতার সুবর্ণ আলোতে আমাদের নদী যেমন করে রোজ বিমোহিত হত তেমনি  করে তোমার ভ্রুযুগলে আমি রোজ রোজকার বিমোহিত ও আপ্লুত হতাম। অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম তোমার বেবাক শহরের একপাশে। একদন্ড ভালোবাসা আর তোমার মিষ্টি হাসির কল্পিতা অনুক্ষণে রোজ আমি মোহিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।

.

ক্রমশ...

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ