পর্বতকন্যের ইতিকথা

প্রদীপ চক্রবর্তী ২৩ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার, ০৬:৫৪:৫৩অপরাহ্ন উপন্যাস ১৫ মন্তব্য

#পর্ব_৬৩

বৃষ্টিভেজা হেমন্তের রাত্রি।
চোখে ঘুম নেই। চাদর গায়ে দিয়ে বারান্দায় একলা বসে জোনাকি দেখছি। রাত যত গভীর হচ্ছে কুয়াশা ততো শহরে নিমজ্জিত হচ্ছে। কনকনে শীতের আমেজ বেড়ে চলছে।
দুচোখ চিন্তার ঘুমে মগ্ন। পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে বৃষ্টি।
যতদূর চোখ যায় ততো দূর দৃষ্টি মোহাচ্ছন্ন। কয়েকদিন থেকে ঘুম নেই। তবুও অতন্দ্র প্রহরীর সাজে পার্বতীর ভালোবাসায় এমন করে আমার রাত্রি কাটে।
হেমন্তের কুয়াশা আর একাকীত্বের নিদ্রা যাপনে গোপনে পার্বতী আমার ছায়া খুঁজে কত প্রহরের পর প্রহর।
রাতের ঘুমঘোরে মানুষ কত স্বপ্ন দেখে।
কেউ তার প্রিয়জনকে দেখে,কেউবা দেখে পাহাড়সম ভালোবাসার মানুষকে। আমরা রোজ স্বপ্ন দেখতাম।
আর এ স্বপ্নের ঘোরে মোহিত হতাম। যেমন করে সবুজাভ অর্কিডের পাতায় অজস্রতার অনুভবের সন্ধি বহে। পার্বতীকে ভালোবেসে একা থেকে সহস্রে পথে উত্তরণ হয়েছি। যদিও আমি কোন কাল একা ছিলাম। তবে শূন্যের মাঝে আমার এক গভীর দীর্ঘশ্বাস আছে,সেটা কবিতায় থাকুক কিংবা উপন্যাসে।
প্রিয়তম পার্বতীকে নিয়ে আমি লিখতে পারি রোজ হাজারো কাব্যউপন্যাস।
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ঘিরে তীরের ধংসলীলা।
দেখেছি আমি জীবন সমুদ্র থেকে পাতার উপর নির্ভর করে পিঁপড়ের আত্মরক্ষা। তোমাকে ভালোবেসে যেমন করে রোজ তোমার উপর মোহিত হয়েছি।তেমনি ক্ষুধার্ত মানুষের দ্বারেদ্বারে গিয়ে তাদের ভালোবাসায় নিজের অনুভবকে মোহিত করেছি।
এই বিশ্বজগতে মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। আর এ ভালোবাসার পেছনে কাজ করছে স্বার্থসিদ্ধ,সেটা পূরণ হয়ে গেলে মানুষ হয়তো ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যাবে। কিন্তু সবাই স্বার্থসিদ্ধি আদায় করারর জন্য ভালোবাসে না। একে অপরকে চিরজীবনের সঙ্গী কররে নেয়।
আমরা একে অপরকে বেশ ভালোবাসি যে ভালোবাসায় নেই কোন আকাশচুম্বী স্বার্থসিদ্ধির আবেগের ঘ্রাণ। আছে জন্মজন্মান্তরের ভালোবাসা ও পাশে থাকার অগ্নি সাক্ষী।  এই পার্থিব জগতে মানুষের ভালোবাসায় অপার্থিব অশুভ শক্তি কাজ করে আসছে বহুকাল ধরে,হয়তো আমাদের পার্থিব জগতে পবিত্র ভালোবাসায় অপার্থিব শক্তি আমাদেরকে অতলে নিমজ্জিত যাতে না করে সেজন্য আমরা নিয়তি আর অগ্নিকে সাক্ষী রেখে একে অপরকে পাশে থাকার শপথ নিয়েছি।
নিয়তি আমাদেরকে অথৈ সাগরে রাতের আঁধারে অতল থেকে তুলে নিয়ে এসেছে। আমরা দুজন নিয়তির কাছে বিশ্বাসী। যেমন সূর্য পুষে রাখে চাঁদ।
পাহাড়সম ভালোবাসায় পার্বতী ছিলো কখনো রক্তকরবী কখনো বা হিজলের ডাল। তার ভালোবাসায় ডুবেছি কখনো ফুলের ঘ্রাণে কখনো বা ডাহুক বসা পাখির ডালে।
পার্বতীকে ঘিরে আছে অপার স্নেহের বাতাস।
গোপনে ধরে রেখেছি আমি তার শীতল পরশের স্নেহের বাতাস। বেসেছি ভালো তারে দিবসরজনীর চিরকুটে।

#পর্ব_৬৪

ঘনঘন কুয়াশা আর বৃষ্টিভেজা রাত্রি পেরিয়ে অবশেষে দেখা মিললো শুভ সকালের রবিরশ্মি। আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত পুরো শহর,গ্রাম।
যদিও শীতের ক্ষণক্ষণে আমেজ। কুয়াশা ডাকা পাহাড় থেকে নামছে বন্যহরিণী ছাপোষা সাথে করে,গাত্র শোকাচ্ছে রৌদ্রতাপে। প্রেমিকের বাগানে ফুটেছে অস্ফুট কলি। কবি সেজে প্রেমিক লিখে যাচ্ছে অকবিতা।
অক্ষিপটে যার রয়েছে স্নেহাস্পর্শ মায়াবী ভালোবাসা তাকে ঘিরে আমার কতনা কাব্যউপন্যাস।
প্রেমিক জন্মান্ধ তাহাতে কি?
বিশ্বাস তাহার যাকে ঘিরে আছে অজস্র ভালোবাসা জড়িয়ে।
সুবর্ণ রোদেলা আমেজে ধমকা হাওয়ায় উদ্ভাসিত সবুজাভ পাতারা। যমুনাতীর ধরে দক্ষিণার হিমেলে উড়ছে নৌকার পাল। পরাণ মাঝি অনায়াসে ধরেছে মনের সুখে ভাটিয়ালি গান।
মিষ্টি সকাল সোনালী রৌদ্র প্রাণের স্পন্দনে উঠেছে জেগে ডাহুক আর কোকিল। সবুজে আচ্ছাদিত কলকাতার সুবর্ণময়ী গ্রাম। গ্রামের সুবর্ণখচিত রবিশস্যে মৌমাছির আনাগোনা।
বলরাম দাদার বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে সুবর্ণ গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ লোক কুটিরশিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
তাঁদের শৈল্পিক কাজ দেখার জন্য আমি আর বিনোদ বেরিয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছেছি আমরা সুবর্ণ গ্রামে। গ্রামের চারপাশ ঘিরে কয়েক জাতের বাঁশঝাড়। এই বাঁশ থেকে তারা নানান ধরণের ফুলের জুড়ি,চেয়ার,মাদুর,ম্যাপ, ওয়ালম্যাট ইত্যাদি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। তাঁদের শৈল্পিক কাজের দক্ষতা দেখে নির্দ্বিধায় পঞ্চমুখে প্রশংসা করতে হয়। পুরো শৈল্পিক পাড়া ঘুরে দেখলাম। আমাদের সাথে ছিলেন এই গ্রামের একজন কুটিরশিল্পী। যিনি দীর্ঘ চল্লিশ বছর থেকে এ কুটিরশিল্পের কাজের সাথে জড়িয়ে আছেন। উনার কাছ হতে এই গ্রামের কিছু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরে অনেকটা ভালো লাগলো।
গ্রামের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে সবাই কুটিরশিল্পের কাজে জড়িত। আর এ কুটিরশিল্পে তাঁদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।
যদিও প্রাতভোজনের হালকা খাবার বলরাম দাদার বাড়ি থেকে খেয়ে বের হয়েছি। সুবর্ণ গ্রামে এসে সকালবেলার গরমগরম আত্মীয়তা গরমগরম ডিমভাজি,পরটা সাথে সবজি এসব দেখে বিনোদের মন ভরপুরে। যদিও আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই তবে অতিথির আত্মীয়তার সুবাদে খেতে হয়। আমার জানা ছিলো না যে কলকাতার ন্যায় এতো বড় শহরে সুবর্ণ গ্রামের লোক এতো অতিথিপরায়ণ।
তাঁদের অতিথিপরায়ণতা আপ্যায়ন দেখে আমি আর বিনোদ মুগ্ধ। নির্দ্বিধায় বলতে পারি কলকাতা শহর আমাকে অনেককিছু দিয়েছে। মানুষের ভালোবাসা আর মানুষের আশীর্বাদ আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছে।
কলকাতা শহরে এসে যার আঁখিপানে আমার আঁখি পড়েছিল সে এই শহরের পর্বতকন্যের পার্বতী।
যার কাছে রয়েছে পর্বতসম ভালোবাসা আর জন্মজন্মান্তরে পাশে থাকার শপথ। আজও সে পর্বতসম ভালোবাসা ও পাশে থাকার শপথ নিয়ে চেয়ে আছে নিয়তির কাছে।
জানি সব ঝিনুকে মুক্ত থাকেনা তাই সবার কাছে ভালোবাসা পাওয়া যাবেনা।
ভালোবাসা কারো কাছ হতে ভিক্ষা করে আদায় করা যায়না। যদি মন থেকে ভালো না বাসে।
আমাদের ভালোবাসাতে কমতি ছিলোনা।
আমরা ঈশ্বরের আশীর্বাদে পরিপুষ্ট হয়ে নিয়তিকে সামনে রেখে অগ্নিহোমে আমাদের ভালোবাসার বন্ধনকে পবিত্র করতে চাই।

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ