নীল ডায়েরী

ছারপোকা ১৭ অক্টোবর ২০১৪, শুক্রবার, ১১:৪৭:৪২পূর্বাহ্ন বিবিধ ৬ মন্তব্য

তিন চার বার কলিংবেলটা চেপেই
যাচ্ছে শায়লা বেগম ।ঘরের ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না । না পেয়ে দরজার লক টা মোচড় দিতেই খুলে যায় দরজা ।ঘরে ঢুকেই দেখতে পেল নিধির নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে ।মাথার কাছে একটা নীল ডায়েরি
পড়ে আছে ।দৌড়ে নিধির কাছে যায় শায়লা বেগম ।নিধির মাথা ফ্লোর থেকে উঠিয়ে কোলের উপর রেখে হাত বুলায় আর লক্ষী মা আমার ,তোর কি হইছে ?
বলে ডাকতে থাকে শায়লা বেগম ।
আজ আবার কোন কান্ড
ঘটিয়েছে চিন্তায় পড়ে যায়
শায়লা বেগম ।কেন এমন
পাগলামী করিস তুই মা ?চোখের
পানি পড়তে থাকে শায়লা বেগমের ।ফ্লোর থেকে উঠিয়ে কোনমতে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় ।সারা বাড়ি নিস্তব্দ । শায়লা বেগম কিছুটা ভয় ও পাচ্ছিলো তার এখন কি করা উচিত । সে কি ডাক্তার আনতে যাবে ?
নাকি মেয়েটার পাশে থাকবে ।
ভাবতে চেষ্টা করছে আর দিক বেদিক তাকাচ্ছে এমন সময় চোখ
পড়লো ফ্লোরে পড়ে থাকা নীল
ডায়েরির পাতার ওপর ।
ডায়েরীটা নিচ থেকে তুলে বিছানায় উঠিয়ে নিয়ে চোখ বুলাতেই থাকে ডায়েরীতে ..হঠাত্ চোখ আটকে যায়
একটা লেখায় ,বাবা তোমাকে আজ কত বছর দেখি না কই
তুমি তো আমার কাছে ধরা দাও না । কেন লুকিয়ে থাকো ?কত
করে বলি ,একটু দেখা দাও , আমার সাথে কেন দেখা দাও না ?
তুমি কি রাগ করে আছো বাবা ?কিছু বলো না কেনো বাবা ?
তুমি কি দেখতে পাও না তোমার
মামনি টা একা একা বসে থাকে
সারাদিন অন্ধকার ঘরে ।যখন
আমি বুঝতাম না তখন তুমি আমার কত টেককেয়ার করতে ।আর তখন আমি বুঝতে পেতাম না বাবার ভালবাসা টা কি জিনিস ।বারবার বলতাম তোমায়
আমাকে একা থাকতে দাও তারপরে ও তুমি মামনির মুখ টা দেখার জন্য আমার রুমে উঁকি দিতে ।আর আজ যখন আমি বুঝতে পেরেছি বাবার ভালবাসা টা কি তখন তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছো রূপকথার
দেশে ।এখন সবাই বলে আমি নাকি তোমার মত হয়েছি ।
আমার চেহারার মাঝেই না কি তোমার মুখ টা খুঁজে পাওয়া যায় ।কিন্তু আমি যে তোমার
ভালবাসা ছাড়া নিজেকে অসহায়
লাগছে জীবন টা ।লেখাগুলো পড়তেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারলেন না শায়লা বেগম ।এখন আসলে কি হয় বাবা ?কেন মামনি বলে ডাকো না ? কেন বলো না কাঁদছিস কেনো মা ? কেন মুছে দাও না আমার চোখের পানি গুলো । আবার আদর করে যাও না বাবা ।এই কান ধরে উঠবস করছি আর রাগ
করে থেকো না আরেকবার
এসে দেখে যাও না মামনি টা কে ।এখন আর তোমাকে ফিরিয়ে দিবো না বাবা সারক্ষন
তোমার সাথে গল্প করবো ।
জানি আসবে না তুমি । তুমিতো ঘুমিয়ে পড়েছো অন্ধকার
কবরে ।জানো বাবা তোমার
স্মৃতি গুলো আজ ও আমায়
তাড়া করে বেড়ায় । আমাকে ক্ষনেক্ষনে কাঁদায় শুধু বাবা ।তোমার দেয়া সে নীল
ডায়েরী টা এখন আমায় খুব আপন করে নিয়েছে ।সারাটিক্ষন আমার অন্ধকার রুম আর তোমার ডায়েরীটা সময় দেয় আমায় । জানি আমি চাইলে ও
পারবে না বাবা বাবা বলে ডাকতে
তোমায় ।চাইলে ও তোমাকে দেখতে পাবো না তোমার সেই
মায়াবী মুখ ।ড়ায়েরির পাতার
কালো অক্ষরের লেখাগুলো পড়তেই ভাসতে থাকে চোখের জলে । স্বামীকে হারিয়ে অনেক
কেঁদেছে শায়লা বেগম ।কিন্তু আজকের কান্না ঐ সময়ের কান্নার মতো না , ফুঁপিয়ে কাঁদছে শায়লা বেগম এ যেন অনেক দিনের চাপা কষ্ট বুক ফেড়ে বেরিয়ে আসছে ।অন্ধকার ঘরে একা একা বসে এভাবেই স্মৃতির পাতায় জাগিয়ে তুলে বাবা কে নিধি । আর কষ্ট
গুলোকে কালো কালিতে বসিয়ে দেয় বাবার দেয়া নীল ডায়েরীতে ।।

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ