রোমান মিথোলজির ঊষাদেবীর নাম “আরোরা”(Aurora) . আরোরা দেবী হলেও রূপ যৌবনে মুগ্ধ হয়ে তিনি বিয়ে করেন “টিথোনাস” কে । যে ছিল পৃথিবীর সাধারণ একজন মানুষ ।
প্রতিটা মিথোলজিতেই দেব-দেবীরা অমর এবং চিরযৌবনা । সেই হিসাবে দেবী আরোরাও অমর। কিন্তু আরোরা যুবক প্রেমিক টিথোনাস একজন সাধারণ মানুষ,সুতরাং দেবী আরোরা যদি যুবক টিথোনাস কে বিয়ে করেন তাহলে সে বিয়ে পর হয়ত খুব বেশি হলে ৩০/৪০ বছর বাঁচবে । আর মনের মানুষই যদি মারা যায় তাহলে আরোরা বেঁচে থেকে কি করবে ?? এসব ভেবেই দেবী আরোরা দেবরাজ “জিপুটার/জিউস” এর কাছে টিথোনাসের অমরত্ব বর চেয়ে নেন । দেবরাজও নবীন প্রেমের নিষ্পাপতা মেনে নিয়ে “টিথোনাস” এর অমরত্ব মঞ্জুর করেন ।
“টিথোনাস” ও “আরোরা” বিয়ে করে দেবরাজ এর আনুকূল্যে সুখে শান্তিতেই জীবন কাটাতে লাগলেন । দেবী “আরোরা” ছিলেন ঊষার দেবী । প্রতিদিন ঊষা কালে তিনি ১৬ বছরের নারীর মত নতুন করে রূপ যৌবন লাভ করতেন । আর এখান থেকেই “টিথোনাস” ও “আরোরা” এর সংসারে দুঃখের আগুন লাগা শুরু হয় ।
“আরোরা” দেবরাজ এর কাছে অমরত্ব প্রার্থনা করেছিলেন । কিন্তু অক্ষয় যৌবন প্রার্থনা করেননি । ফলাফলে “টিথোনাস” বেঁচে থাকলেও প্রকিতির স্বাভাবিক নিয়মে ধীরে ধীরে বৃদ্ধ থেকে বৃদ্ধতর হতে থাকে । একসময় সে চলৎশক্তিহীন জীবন্ত পদার্থে পরিণত হন । “১৬ বছরের পুর্ন যৌবন প্রাপ্ত নারীর বৃদ্ধ স্বামী” একবার ভেবে দেখুন দুইজনের অবস্থা । একদিকে আরোরা তাঁর মনোদৈহিক চাহিদা বঞ্চিত হয়ে বৃদ্ধ স্বামীর বোঝা বইছে । অন্যদিকে স্বাভাবিক শক্তিহীন হয়ে “টিথোনাস” দিন যাপন করছে নিদারুণ কষ্টে । ভুগতে ভুগতে মানুষ একসময় মারা যায় । কিন্তু “টিথোনাস” এর মরে যাওয়ার সুযোগও নেই । কারণ জিউসের বরে সে অমরত্ব লাভ করেছে । আর দেবতারা একবার বর প্রদান করলে তা ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা স্বয়ং দেবতারও নেই । অন্যদিকে প্রদানকৃত বরের সুবিধা কম বেশি করারও সুযোগ নেই ।
টিথোনাসের এই করুণ অবস্থা নিয়ে কবি টেনিসন “টিথোনাস” শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছেন । সেই কবিতায় একটি লাইন আছে “Me only cruel immortality” । এই একটি লাইন দ্বারাই বোঝা যায় “টিথোনাস” অমরত্বের কি নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করছিল ।
মোরাল অফ দ্যা স্টরিঃ
১। সাপে বর যেমন হয় , বরেও তেমনি সাপ হয় ।
২। সমানে সমান না হলে অন্তত সংসার করার স্বপ্ন দেখা উচিৎ না ।
১৬টি মন্তব্য
রুম্পা রুমানা
গ্রীম মিথ পড়তে ভালো লাগে। অমরত্ব যে পীড়াদায়ক তা টিথোনাসকে দিয়ে বুঝা যায় ।আপনার মোরাল অব দ্য স্টোরি ঠিকই ।
বায়রনিক শুভ্র
হ্যা । বেঁচে থাকাই মুখ্য নয়।
শুন্য শুন্যালয়
Tuck everlasting movie টা দেখে অমরত্বের জীবন কতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে বুঝতে পেরেছিলাম। গল্পটা পড়ে বোঝা যাচ্ছে কেমন হতে পারে এই নিষ্ঠুরতা। অতএব বর চাইবার আগে বুঝেশুনে, দাঁড়িকমা সহ চাইতে হবে। 🙂
সমানে সমান টা শুধু বয়স আর ফিজিক্যাল ফিটনেস দিয়ে মাপা যায় কী?
বায়রনিক শুভ্র
আমি বর টর চাই না। আপাতত বউ হলেই চলবে । :p
সমান হয়া বলতে আমি সব দিকই বুঝেয়েছি।
ইকরাম মাহমুদ
দুটি মানুষের পাশাপাশি চলার জন্য সমান মানসিকতার দরকার। বয়স, যোগ্যতা উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যায় মানুষের মন।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি সমান মানসিকতার অধিকারিনী আসুক আপনার জীবনে।
বায়রনিক শুভ্র
শুভ কামনা।
নিহারীকা জান্নাত
ভয়াবহ ব্যাপার।
বায়রনিক শুভ্র
আসলেই।
মিষ্টি জিন
হ্যা সংসার করতে গেলে সামনে সমান হতে হঁয় বিশেষ করে কালচারের দিক দিয়ে। মানসিকতার দিক দিয়ে।
বায়রনিক শুভ্র
সেটাই।
আবু খায়ের আনিছ
অসম অবস্থানে কোন সম্পর্কই স্থায়ী হয় না।
বায়রনিক শুভ্র
একদম ঠিক বলেছেন ।
মৌনতা রিতু
গ্রক মিথ পড়ে জানলাম অনেক কিছু।
হুম, গ্রাম্য একটা শোলোক আছে,’ যেমন যেমন তেমন তেমন কান তপালে বোঁচা ঢাহন’।
সমানে সমানে না মিশলে মনের মিল না হলে সংসার আর সংসার থাকে না। আমি মনে করি প্রেমিক পরবর্তিতে স্বামী না হওয়াই ভাল। অন্তত এতে মনের প্রেমটা মরে না।
বায়রনিক শুভ্র
কিন্তু প্রেমিকাকে ছেড়ে যাওয়া । প্রেমিকাকে অন্যের শয্যায় চিন্তা করা জেনেটিকালিই প্রেমিকের পক্ষে কঠিন ।
নীলাঞ্জনা নীলা
গ্রীক মিথ খুব পছন্দ করি পড়তে। আরোও লিখুন।
বায়রনিক শুভ্র
ধন্যবাদ । 🙂