নিজের চড়কায় তেল জরুরি

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৯ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:১৮:০০পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

এক লোক কলা মাথায় বাজারে যাচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন জিজ্ঞেস করছিল, ভাই কই যান?  মাথায় কি নিয়া যান?

উত্তর দিতে দিতে বেচারা কাহিল। এমনি মাথায় একগাদা কলা তারউপর হেঁটে বাজারে যেতে হবে। শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার। আবার একজন জিগায়,"ভাই কই যাও?মাথায় কি?"

উত্তর,"কলা যাই? মাথায় বাজার।"

হি হি করে হেসে আবার প্রশ্ন‘  "ভাই কলা নিয়া বাজারে যাও। উল্টা পাল্টা বকতেছ কেন? মাথা ঠিক আছে তো"?

এটা আমাদের সমাজ। আপনি যাবেন কই? যেটাই করবেন বিরাট সমালোচনা। অন্যের মনমত হওয়া বা তাদের মত চলা কি যায়? কিংবা চলাটা খুব জরুরী? আমার তো মনে হয় ছোটছোট কিছু স্বাধীনতা আমাদের থাকা উচিত।

যুগের পর যুগ পুরুষরা বিড়ি, সিগারেট, হুক্কা, তামাক, গুল, জর্দা সবই খায়। কোন সমস্যা নেই শুধু নারী খেলে সমস্যা। আর তা যদি রাস্তায় হয় আরও সমস্যা। হেনস্তা করার জন্য পুরো সমাজ দাড়িয়ে যাবে। কোনকালে কি কোনো পুরুষ সিগারেট খাবার জন্য হেনস্তা হয়েছে? প্রকাশ্যে ধূমপান সবার জন্যই মানা। অথচ বেয়ারা নারী তাকে বাঁধতেই হবে।

সমীকায়সার বিয়ে করেছে বুড়োকে। তার ভালো লেগেছে করেছে। এটাতেও সবার সমস্যা। কেন সমস্যা তুমি কি বিয়ে করতা? না তোমার কেউ ছিল বিয়ে করানোর মত? সমস্যা সেটা না, সমীকায়ছার সুখী হোক এটা আমরা চাই না। চাই বাকিজীবন একা একা দুঃখী দুঃখী ভাব করে; সতীসাধ্বী হয়ে কাটিয়ে দিক। আমরা তখন সহানুভূতির আহা! উহু! পসরা ছড়াতাম।

বিউটি পার্লারে আমরা নারী পুরুষ সবাই যাই। চুল কাটাসহ সব কাজই করি। তাছাড়া বউ বর সবাই না সাজলে বিয়েই হয়না। আনন্দ অপূর্ণ থাকে। বিউটিশিয়ান যেহেতু সাজায় তাই ফিটফাট হয়ে থাকাটা তার জরুরী। সেজেগুজে, চুল কালার টালার করে থাকে। আমরা সাজগোজ শেষ করে বাইরে বের হয়ে বলি, পার্লারের মেয়েরা নষ্ট হয়। তারা ভালো না, ওদের বিয়ে করা অনুচিত। আবার পত্রিকা ম্যাগাজিন সব খানে বিউটি টিপস থাকে।সেখানে বিভিন্ন স্বনামধন্য বিউটিশিয়ানদের ভরপুর সাক্ষাতকার। তাদের এওয়ার্ডও দেওয়া হয়। সেগুলো হা করে গিলে হলুদ বাটতে বসে যাই।

ভারতের বিখ্যাত বিউটিশিয়ান পুরুষ,তাকে একবার বাংলাদেশ ভাড়া করে অতিথী বানিয়ে নিয়ে এল।তার কাছে নাকি শেখার আছে। শত শত মেয়ে তার হেয়ার স্ট্যাইল দেখে, সৌন্দর্য দেখে পাগল হয়ে গেল। বেচারা মধ্যবয়সী বুড়ো বিউটিশিয়ান সে তো নাপিতই। ভাড়া করা নাপিত বলে তার মূল্য বেশি। আর দেশী নাপিত বিয়ে করা অন্যায়? এটা কেমন।

আচ্ছা ভাবুনতো, এই নাপিত না থাকলে কি যে হতো চুলের অবস্থা। তাই প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের সমালোচনা করার আগে ভাবা উচিত।

সাঁইত্রিশ বিসিএস থেকে আনসার ক্যাডারে ট্রেনিংয়ে থাকামেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। তাতেও সমস্যা। মেয়েটি নিশ্চয়ই খারাপ ছিল, বদচরিত্র ছিল। না হলে এমন জাহান্নামের কাজ কেন করে? কিন্তু একবারও ভাবিনা সে সকল সফলতা শেষে কেন এ কাজ করল? আমাদের সহানুভূতির দুয়ার কারও জন্যই খোলা নেই।কেউ কিছুই করতে চায় না। সবাই চায় নিজের মত করে স্বাধীনতায় বাঁচতে, আমরা দেইনা। তাকে বিভিন্ন মানষিক যন্ত্রণা দেই। কেউ সব সহ্য করে বেঁচে থাকে আর  কেউ পারেনা বলেই আত্মহত্যা করে।

রাজনীতি ভালো না কিংবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেউ ভালোনা। এ কথা অতি সত্য। পলিটিক্যাল সায়েন্স এর স্টুডেন্ট বলে আমার রাজনীতি কখনোই টানেনা। নিজের পেট পুজা করি। তারপরও মনে করি অবশ্যই আমাদের আলোচনা-সমালোচনা থাকা উচিত। তাহলে অন্যায়-অনাচার কম হবে। কিন্তু যেটা নিখুঁত ভালো কাজ সেটারও তো সুনাম করা দরকার। আমরা তা করবনা, কষ্ট হবে? পদ্মা সেতুর কাজ হবেই না, হতেই পারে না এমন কথা শুনে শুনে সেতুর নির্মাণ শেষ। শুরু হলো পিলার খোঁড়াখুঁড়ি ভেজাল আছে কিনা। কিংবা অতি দ্রুতই এ সেতু ভেঙে পরবে।

আমাদের নিজের পাছায় ‘হাগু‘ নিয়ে অন্যের পাছা শুঁকে বেড়ানো বন্ধ করা দরকার। নিজের স্বাধীনতায় অন্যের ক্ষতি না করে কেউ বাঁচলে বাঁচুক। এটা তার অধিকার! কেন অযথা সেটা নিয়ে হইচই। গ্রামে প্রবাদ আছে, " কাম নাই যে কুত্তার, সে ঘোরে আইলে আইলে"। সবশেষে এটাই সত্য।

আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সবার জন্য শুভ কামনা।🌹🌹

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ