প্রিয় নারগিস কেমন আছো।
গাজিপুরে চাকরি করার সময় হঠাৎই রংনাম্বারে পরিচয় হয় নারগিস নামক মেয়েটার সাথে। তারপর চলে কথার ফুলঝুরি, ঘন্টার পর ঘন্টা চলে সত্য মিথ্যার রসকথা।
তবে সে হয়ত সত্য বলত। বাড়িটা শেরপুরে বাবাকে সে দেখে নাই নারগিস তার মার পেটে থাকতেই বাবাটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। তারপর চলে নারগিসের মার জিবন যোদ্ধের মাঠে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার লড়াই।
নারগিসের বয়স যখন ২বছর তখনই চলে আসে মালিবাগ ওয়ারলেসে। সেখানেই তার শৈশব থেকে কিশোরী হওয়া। বয়সটা যখন ১৫ ছুঁই ছুঁই তখনই তার রং নাম্বারে পরিচয় হয় আমি নামক চিটারের সাথে। আমার সকল সত্য মিথ্যার মায়াজালে সে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ফেলে নিজেকে। আমার মন রক্ষার জন্য জিবনটাকে একদম সার্কাস বানিয়ে ফেলে সে।
শ্যামলা বর্নের মেয়েটা কি না করেছে আমার জন্য। ৫বার সেই মালিবাগ থেকে সে গাজীপুর চলে এসেছে আমার ডাকে সারা দিয়ে।
প্রথম যেদিন তাকে বল্লাম আমি খুব অসুস্থ তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে সেদিন তার মার সাথে একরকম ঝগড়া করেই চলে এসেছিল। গাজীপুর চৌরাস্তায় নেমে আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল আমি এসে গেছি তুমি কোথায়??? আমি তখন অফিস থেকেই মিথ্যা কথা বলেছিলাম আমি তো অসুস্থ বাসায় শুয়ে আছি। ৫মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি। একটা মেয়ে চলে এসেছে অনেক ভেবে চিন্তে আধাঘন্টা পর গিয়েলাম চৌরাস্তায়। তারপর আরো কতবার ফোন করে নাটক করে যাচাই বাছাই করে তার সামনে গিয়েছিলাম।
সামনে দাঁড়াতেই অকপটে বলতে লাগল এতো সময় লাগে তোমার আসতে??? তোমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন??? ঔষধ খেয়েছো??? একদমে কত কিইনা বলে ফেলেছিল সেদিন কালো মেয়েটা। আমি শুধু আনমনে চেয়ে থাকা ছাড়া জবাব দেওয়ার ভাষা ছিলনা সেদিন তার সামনে ।
হটাৎ আমার হাতে একটা বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বল্ল নাও এইগুলা তোমার জন্য। তাকে আগেই মিথ্যা কথার চলে বলেছিলাম খাসির মাংসের বিরিয়ানি আমার খুব ফেবারিট। আর পাগলিটা আমার আধাঘন্টা লেটে আসায় চৌরাস্তা কাঁচাবাজার থেকে খাসির মাংস পোলাওয়ের চাল। শশা টমেটো ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছুই কিনে ফেলেছে।
তাকে বলেছিলাম ব্যাচেলার থাকি চারজন একসাথে। অনেক্ষন অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকার পর বলেছিল এই কালো চেহারাটা দেখলেই কি হবে বাসায় যেতে হবেনা???
তারপর বাসায় আনলাম নিজ হাতে আমার অপ্রিয় খাসির মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করল। আমরা সবাই একসাথে খেলাম । খাওয়া শেষে বলেছিল মার সাথে ঝগড়া করে এসেছি মা কিছুতেই আসতে দিতে চাইছিলনা আমি জোর করে এসেছি এবার যেতে হবে সেদিনের মত বিদায় দিয়েছিলাম ।
তারপর আরো চারবার আমার জন্য সে গাজীপুর এসেছিল আমার কথা রাখতে ওর চাকরির ক্ষেতামুড়ি দিয়ে।
ও একবার খুব রিকোয়েস্ট করেছিল ওর বাসায় যেতে, কিন্তু আমি কিছুতেই যেতামনা ভয়ে। কারন আমি চিন্তা করতাম যদি ওর বাসায় যাই তারপর যদি জোর করে ওকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেয় বা কোনো ফিটিংয়ে পরি।
একবার ওর কথা কোনোক্রমেই ফেলতে পারলামনা যেতেই হবে। বলেছিলাম হাতে ভাড়ার টাকা নাই উত্তরে সে বলেছিল কারো কাছ থেকে ধার করে নিয়ে আসো আমি তোমাকে তোমার যত টাকা লাগে দিয়ে দিব। বলেছিলাম আমি অসুস্থ সে বলেছিল তোমার প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে এসো আমি ঔষধ কিনে দিব।
যা থাকে কপালে নারগিসের পাঁচবারের প্রতিউত্তরে আমি ছেলে হয়ে একবার যেতে বাধ্য হলাম। মালিবাগ মোড়ে গাড়ি থেকে নেমেই দেখি পাগলিটা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে সেদিন খুব খুশি হয়েছিল নারগিস।
খুব জোরাজোরি করেছিল বাসায় যেতে কিন্তু আমি ভয়ে যাইনি। সে বলেছিল কেউ যদি তোমাকে চুল পরিমাণ কথাও বলে আমার নিজের জিবনটা শেষ করে দিব হাসতে হাসতে। তবুও তুমি বাসায় আসো আমার মা তোমাকে একটিবার দেখুক। মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলাম আরেকবারের কথা বলে।
মাসের অর্ধেক ওর হাতে টাকা নেই আর আমিও যেভাবে ফকিন্নির মত বলেছি আমার কাছেও টাকা নেই। সে ওর পুরাতন কিনা স্মার্ট ফোনটা ১৫শ টাকায় বিক্রি করে ৪শ টাকা দিয়ে একটা নকিয়া ফোন কিনেছে। আমার হাতে দিয়েছিল ১হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া আর ঔষধ কিনার জন্য।
বাসায় নিতে ব্যার্থ হওয়ায় ওর হাতের একশ টাকা দিয়েই আমাকে মালিবাগ মোড়ে খিচুড়ি খাইয়েছিল। তারপর অনেক সময় ঘুরলাম রাজারবাগ পুলিশ লাইনের আশেপাশে।
সে শুধু বলত তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর প্লিজ তোমার পায়ে পড়ি আমার সাথে যোগাযোগ করোনা। বা আমাকে সময় থাকতেই ত্যাগ কর। দেখো আমি তোমার প্রতি এতটাই দুর্বল হয়ে যাচ্ছি দিন দিন তুমি যদি চাও হাসতে হাসতে জিবনটাকেও হারমানিয়ে দিতে পারি তোমার কাছে।
আমি শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিতাম এভাবে অনেকদিন চল্ল। সত্য মিথ্যার ভন্ড প্রেমের খেলাটা যখন পুরনো হয়ে গেল। তখনি তাকে ভুলতে বসতে শুরু করলাম। একটা সময় নাম্বার টা বন্ধ করে পুরোপুরি যোগাযোগ টা বন্ধ করে দিলাম।
প্রায় ৩বছর পর সীমটা খুল্লাম যখন আমার নিজেরই মনে নেই নারগিস নামে কারোসাথে আমার প্রেম ছিল। সীমটা খোলার ৩/৪ দিন পর নারগিসের ফোন ফোনটা রিসিভ করতেই কি কান্নাকাটি তুমি কেমন আছ?? কি করছো?আমাকে কেন ভুলে গেলে?আমি অনেক চেষ্টার পরও সুসাইড করতে পারিনি এই সেই অনেক কিছু।
জানতে পারলাম তার বিয়ে হয়েছে একটা ভেনচালকের সাথে। একটা মেয়ে হয়েছে। কিন্তু সংসারে অশান্তি, জামাইটা নেশাখোর আগের একটা বৌ আছে এবং দুটো বাচ্চা আছে। নারগিস টা এখনো গার্মেন্টসে ট্রিমিংমেন্ডিংয়ে কাজ করে।
তারপর আরো অনেকদিন কেঁটে গেল প্রায় ২বছর পর একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন, হ্যালো বলতেই কান্নাজরিত কন্ঠে বলতে লাগল আমি নারগিস আমার মেয়েটা খুব অসুস্থ আমাকে কিছু টাকা দিবে মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য???
আর আমি তখন বাড়িতে বসে আছি কোনো কাজ কাম নেই টই টই করে ঘুরি ফিরি। হাতের অবস্থা খুবই নাজুক, এই মুহূর্তে নারগিস কে টাকা দিব কোথা থেকে আস্তে করে নিশ্বব্দে ফোন টা কেঁটে দিয়েছিলাম সেদিন।
তারপর ব্যাবসা করেছি অনেকদিন। আর কোনোদিন নারগিসের ফোন আসেনি। এখন প্রবাসে থাকি যতই কষ্ট করিনা কেন মাস শেষে কিছু টাকা পাই। অনেকের চাহিদাই মিটাতে পারি, আর মোটামুটি অনেকটাই সুখে আছি। বিয়ে করেছি, দুটো ছেলের বাপ হয়েছি সবমিলিয়ে চলছে জিবনটা কোনোমতো।
কিন্তু এতকিছুর পরও নারগিসের অভাবের দিনে তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য টাকা চাওয়ার সৃতিটা কোনোভাবেই ভুলতে পারিনা। মাঝে মাঝে ভাবি জিবনে আর একবার যদি নারগিস কে পেতাম, তাহলে যেভাবেই হোক হাতে পায়ে ধরে হলেও ক্ষমা চেয়ে নিতাম।
আজ অফিস থেকে এসে রান্না করে খেয়ে ঘুুুুমাতে আসলাম। কিন্তু বিধিবাম কিছুতেই ঘুুুম আসছেনা নারগিসের কথা শুুধ মনে পরছে, আর এপাশ ওপাশ করছি ।
সবশেষে প্রিয় নারগিস জানিনা কোথায় আছো। কেমন আছো। বা আমাকে মনে আছে কিনা। যদি পারো আমায় ক্ষমা করে দিও।
৪টি মন্তব্য
আলমগীর সরকার লিটন
আমরা সত্যকারের ভালবাসা কে চিনি না অবহেলা করি কিন্তু একসময় ঠিকই বুঝি তখন কিছু করার থাকে না শুধু নিজের কাশে বেঈমান সাজতে হয়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এই আপনাদের মতো স্বার্থপর, মিথ্যেবাদীদের জন্য কত জীবন শেষ হয় , কত মেয়ে অন্যায় ভাবে অন্যকে ব্যবহার করে, প্রতারিত করে; শেষপর্যন্ত ছেলেদের কাছে ঠক, বাটপার, বেশ্যা গালি শুনে।সত্যিকার ভালবাসা আমরা চিনতে ভুল করি বা অবহেলা করি। ভালো লাগলো স্মৃতিকথা। শুভ কামনা রইলো
আরজু মুক্তা
ছেলেদের বাটপারি ভালোই ফুটে উঠেছে গল্পে।
বানান প্রচুর ভুল, সম্পাদন করিয়েন।
আসল ভালোবাসা, শান্তিতে থাকতে দিবেনা। খচখচানি থাকবেই। প্রেম এমনি
শামীম চৌধুরী
বাহ!! চমৎকার। আপনার স্মৃতিকথায় নার্গিসকে জানলাম।