বিদেশে এসে আজ কলংকিত।

তবে কেন ব্যাংকের মাধ্যমে আমি টাকা পাঠাব???

গৌরীপুর জনতা ব্যাংকের এসি শাখাতে সাইন করা চেক নিয়ে গেলে বলে সাইন মিলেনা, আপনার আম্মারে নিয়া আসেন। এই চেকে টাকা দেওয়া যাবেনা। আম্মা মুর্খ মানুষ একবার নাম লিখতে গেলে তিনবার কলম ভেঙ্গে ফেলে।

৩০/৪০ হাজার টাকা পাঠালে তিনদিন পর সব কাজ ফেলে টাকা তুলতে চলে যায় একদিন। আর বৃহস্পতিবার শুক্রবার হলে তো এই টাকা তুলতে লাগে একসপ্তাহ।

গৌরীপুর ইসলামি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং কিছুদিন ভালো সার্ভিস দিয়েছিল কিন্তু এরাও এখন ভংচং শুরু করছে।

ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করতে গিয়ে ১৮ হাজার টাকায় কন্টাক্ট করতে হয় ময়মনসিংহ পাসপোর্ট অফিসের দালালের সাথে। তাও ২১দিনের জায়গায় ৩২দিন লেগেছিল। আর দালাল ছাড়া করলে তো এই জিবনে হাতে পাসপোর্ট পাবো কিনা সন্দেহ ছিল।

গৌরীপুর থানা থেকে হটাৎ একদিন ফোন আসলো আপনার পাসপোর্ট ক্লিয়ারেন্সের কাগজ আসছে এখনি দেখা করেন। গেলাম থানায় সরাসরি বল্লো ১হাজার টাকা দেন সাথে টাকা না থাকায় তাৎক্ষণিক বিকাশে এনে দিতে হলো। এরমধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্টে টাকা,ট্টেনিংয়ে টাকা, ভাড়া এই সেই কত কি।

৪লাখ ২০ হাজার টাকায় সৌদি গেলাম তারপর এর সাথে মেডিকেল ৬হাজারের জায়গায় ১৭হাজার টাকা, এয়ারপোর্টে ২০হাজার টাকা সহজে ইমিগ্রেশন পার করে দেওয়ার জন্য,  সবমিলিয়ে ৫লাখের উপর চলে গেল সবটা টাকাই ধারদেনা, এনজিও এবং সুদি করে নেওয়া। কোনো একটা ব্যাংক এগিয়ে আসেনি, কত ব্যাংকের সাথে  যোগাযোগ করছি তারা এমন এমন শর্ত দেয় গরিবের মধ্যে তিন নাম্বারের বাচ্চা হওয়ায় সেইসব শর্তগুলো পুরন করতে আমি ব্যার্থ ।

সবশেষে ৫লাখ টাকার উপরে খরচ করে ভাঙাচোরা বিমানে চলে আসলাম সৌদি, ১৭ঘন্টা এয়ারপোর্টে বসে থাকার পরও একবেলা খাবারতো জুঠেইনি আরো খবর নিয়ে দেখলাম আমাদের কোনো কোম্পানিই নেই। মোটকথা দালালের খপ্পরে পরে একটা খারাপ ভিসায় এসেছি সৌদি আরব। তারপর যেভাবেই হোক সেই দালালের হাত ধরেই ১৭ঘন্টা পর খাবার জুটেছিল পলিথিনে।

এক দালালের হাত ধরে গেলাম রিয়াদে, ঐ দালাল বিক্রি করে করলো জেদ্দায়, ওরা দিল হাইলে,তারপর আবার জেদ্দা, তারপর আবার আলজৌফ, তারপর আবার জেদ্দা, এভাবে চলে গেল তিনমাস, হাতে আকামা পেলাম পালিয়ে চলে গেলাম তায়েফ,সেখানে কাজ পোলামনা চলে গোলাম আলজৌফ, সেখানে পালিয়ে কাজ করলাম প্রায় তিনবছর।

এরমধ্যে পুলিশের কাছে ধরা খেলাম প্রায় ১৪বার, ১৫ বারের মাথায় ৪১দিন জেল খেটে দেশে ফেরত এসেছিলাম পাগলের মত হয়ে। জেলে কত যন্ত্রণা সহ্য করেছি আল্লাহ মালুম, এরমধ্যে এম্বাসির সাথে যোগাযোগ করেছি কতবার কিন্তু ওরা ফোনটাও ধরেনা। যদিও কখনো ধরে অনেক রাগ দেখায় ধমকায়, গালাগালি করে। এবং আউটপাসের জন্য দেড়লাখ টাকা চায়। সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগে তখন যখন পাড়াপ্রতিবেশিরাও বলে আমি জেল খেটে দেশে ফিরেছি। আমি  যদি এতই ভালো হতাম তবে জেল খাটলাম কেন।

তারপর ৪১দিন জেল খেটে বাংলাদেশে গেলাম ৪৫দিনের মাথায় আবার দুবাই চলে আসলাম। এখানেও কাজের অবস্থা ভালোনা। বাঙালী বেশি, কাজ নাই, কত সমস্যার মধ্যে দিনাতিপাত করছে বাঙালিরা।

বাংলাদেশটা আমাকে কি দিয়েছে? স্বাধীনতা, এবং একটা ভাষা আর কিছুই দিতে পারেনি। এমন একটা স্বাধীনতা দিয়েছে যে শুধু নামেই আমরা স্বাধীন আর সবকিছুই চলে দুর্নীতির উপর, আমাকে এমন একটা ভাষা দিয়েছে যে এই ভাষায় আমি বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কারনে আর কোনো ভাষা আমি জানিনা বিদেশে আমি কাজও পাইনা। হই পদে পদে বঞ্চিত,এমন একটা ভাষার বেশি গুরুত্ব দেওয়াও যে একটা বোকামি ছিল এটা এখন হারে হারে ঠের পাচ্ছি।

আমি সবসময় টাকা পাঠাই বিকাশে, হুন্ডিতে সবসময় রেট বেশি পাই, আমি দিরহাম দেওয়ার আগেই বাড়িতে টাকা হাতে পেয়ে যায়, কোনো টেনশন নাই। আজকে যদি মুখ দিয়ে হুন্ডির কাছে ভাবটা প্রকাশ করি বাড়িতে টাকা লাগবে বিকালেই ওরা ফোন দেয় বলে ভাই ১লাখ দিয়া দিছি বাড়িতে, যদি বলি আমার কাছে তো টাকা নাই কেন দিলেন। ওরা বলে কোনো সমস্যা নাই যখন পারেন দিয়েন। তারপর ১০/২০দিন একমাসও চলে যায় এই টাকা দিতে তাও কোনো সমস্যা নাই।

বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক কি আমাকে ১ঘন্টা আগে টাকা দিবে?

আমাকে বাংলাদেশের সরকার কোনোভাবে কি সাহায্য করেছে?

বাংলাদেশের এই দুর্দিনের জন্য আমি কি কোনোভাবে দায়ী?

তবে কেন আমাকে এই দুর্দিনে দেশের পানে চেয়ে ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে আমার লস করবো?

দুর্নীতি করবা তোমরা,টাকা পাচার করবা তোমরা, প্রবাসীদের শোষণ করবা তোমরা, আর এর ভাগ নিব আমরা???

তারপরও দেশকে ভালোবাসি, এই দেশটা শ্রীলংকা হয়ে যাক তা চাইনা।

তবে আমাদের সংশোধন হতে হবে।

প্রিয় প্রবাসী ভাইয়েরা ব্যাংকে টাকা পাঠান,

দেশের অর্থের চাকা সবল রাখুন

0 Shares

৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ