নদী (৮ম পর্ব)

ইঞ্জা ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১১:১৪:৩৭অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

images-1

 

 

 

এক সপ্তাহ পর সন্ধ্যায়ঃ

জীবন আপনি কষ্ট করছেন কেন, নদী বাধা দিলো জীবনকে।
জীবন হেসে বললো, আপনার যা অবস্থা আপনি এইসব ঘুচিয়ে নিতে পারবেন।
হাঁ পারবো, হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে নদী এগিয়ে এলো।
ঠিক আছে আপনি চেষ্টা করে দেখুন আর আমি আসছি আপনার বিল সেটেলমেন্ট করে, বাই দা ওয়ে আপনার হেলথ ইন্সুরেন্স কার্ডটা দিন।
নদী ব্যাগ খুলে কার্ডটা এগিয়ে দিলে জীবন সেইটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
জীবন বিলিং সেকশনে গিয়ে নদীর রিলিজ নোটটা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো, একটু পর জীবনকে ডেকে নদীর হেলথ ইন্সুরেন্স কার্ড নিয়ে বিল করা শুরু করলো।
সব মিলিয়ে পনেরো মিনিট লাগলো সব ফর্মালিটি শেষ করতে এরপর নদীকে ফাইনাল রিলিজ দিয়ে কাগজপত্র আর প্রেস্ক্রাইব মেডিসিন লিষ্ট দিয়ে দিলো, জীবন সব কাজ সেরে নদীর রুমে ফিরে এসে নদীকে জিজ্ঞেস করলো সব গুছানো শেষ?
জি।
তাহলে আমরা বেরুতে পারি।
চলুন।
জীবন নদীর হুইল চেয়ারটা টেলে নিয়ে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে আর এগুলো মেইন একজিটের দিকে।

জীবনের বাসার সামনে এসে গাড়ী থেকে জীবন নেমে এসে পাশের দরজাটা খুলে ধরে নদীকে নামিয়ে আনলো ধিরে সুস্থে এরপর আগে থেকে নামিয়ে নেওয়া হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিলো আর এগিয়ে গেল বাসার দরজার দিকে আর দেখলো নাভিলা দরজা খুলে এগিয়ে এসে নদীর কাছে আসলো।
হ্যালো আন্টি, হাও আর ইউ টুডে, নাবিলা জিজ্ঞেস করলো।
মাচ মোর বেটার, তুমি কেমন আছো সুইটি?
অনেক খুশি আজকে, এই প্রথম কেউ আসলো আমাদের সাথে থাকতে, ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো নাবিলা।
তুমি খুশি?
অবশ্যই খুশি, এখন থেকে আমি তোমার সাথে খেলতে পারবো, গল্প করতে পারবো, গল্প শুনবো, জানো ড্যাড একদম গল্প বলতে পারেনা।
নদী হেসে দিয়ে বললো, তাই?
হুম একদম না।
জীবন নদীকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে হুইল চেয়ার থেকে উঠিয়ে সোফায় আরাম করে আধা শোয়ানো করে দিল আর পিঠে বড় একটা কুশন দিয়ে দিলো।
কম্ফর্টেবল, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ ঠিক আছে, এইদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো নদী।

আপনার বাসাটা খুব সুন্দর, কয়টা রুম এই বাসায়, নদী জিজ্ঞেস করলো।
দুইটা বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিচেন এক সাথে, বেডরুম গুলো উপরে।
রান্না বান্না কে করে, আপনি?
আর কে করবে বলুন,আচ্ছা শুনুন, প্রতিদিন আপনাকে ওয়াকিং হুইলের সাহায্যে হাটার চেষ্টা করতে হবে আর মেডিসিন আমি নিয়ে এসেছি, ওগুলো নিয়মিত খাবেন।
ওকে বস।
বস নয় জীবন, জাস্ট জীবন।
নদী মিষ্টি হাসি দিলো।
সুইট হার্ট তোমার আন্টিকে টিভি রিমোর্ট দাও আর তোমার হোম ওয়ার্ক কি শেষ?
ইয়েস ড্যাড।
ওকে তুমি আন্টির সাথে থাকো, নদী কি খাবেন এখন?
অনেকদিন কোক খাইনা, খাওয়াবেন?
আচ্ছা দিচ্ছি সাথে কি কিছু খাবেন?
না না আর কিছুনা।
ডিনারে কি খেতে চান?
আপনি যা রান্না করবেন তাই খাবো।
মাছ মাংস?
এনিথিং।
ওকে তাহলে আজ চিকেন করছি সাথে বয়ল্ড সতে ভেজ।
অনেক, নদী হেসে জবাব দিলো।

জীবন রাতের খাবার রেডি করে টেবিলে দিয়ে নদীকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এলো, জীবনের পাশের চেয়ারে যত্নের সাথে বসিয়ে দিলো আর নিজেও বসে প্লেটে ফ্রাইড রাইস, চিকেন আর ভেজিটেবেল বেড়ে দিলো সাথে মেয়েকে দিয়ে নিজে নিলো।
নদী কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে খেতে বললো, বাহ দারুণ রান্না করেন আপনি।
তাই?
খুব ভালো রান্না, আসলেই।
আরেকটু দিই।
আমি নেবো, আগে এগুলো শেষ করে নিই, অনেকদিন ভালো করে খাইনা।
কেন আপনি নিজে রাঁদতেন না?
তা রাঁদতাম কিন্তু মনে যে শান্তি ছিলোনা।
ওহ।
আপনার বাবা আর কি বললো, কথা ঘুরালো জীবন।
বাবা বললো দ্রুত ডিভোর্স করে দেশে ফিরে যেতে।
তাই?
হুম কিন্তু আমি চাইনা আর বাবার উপরে গিয়ে উঠতে।
বুঝলাম না, জীবন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
মানে হলো আমি এখানকার সিটিজেন আর আমি সুস্থ হয়ে উঠে আবার চাকরি করবো, নিজে স্টাব্লিস হবো আর বাবার উপর বোঝা হবোনা।
একলা একটা মেয়ে এই দেশে কিভাবে থাকবেন, এই দেশে তো আপনার কোন পরিচিতও নেই।
আছে।
আছে, কারা?
আপনি আছেন, আমার এই মাটা আছে আর কাকে চাই বলুন।
জীবন হেসে দিলো।

চলুন আপনাকে উপরে দিয়ে আসি, নাবিলার সাথে ঘুমাবেন আপনি।
কি করে উঠবো উপরে?
ওয়েট, বলেই জীবন গিয়ে একটা ক্রাচ নিয়ে এলো আর তা দেখে নদী অবাক হয়ে বললো, এইটা আবার কোথায় পেলেন?
গাড়ীতেই রেখেছিলাম আপনার জন্য, নামাতে ভুলে গিয়েছিলাম, আসুন এইটা ধরে উঠার চেষ্ঠা করুন কিন্তু ভুলেও ডান পায়ে চাপ দেবেন না, ওইটা জোর চাপ নিতে পারবেনা।
নদী ক্রাচটা ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বিফল হওয়ায় হাল ছেড় দিলো দেখে জীবন হেল্প করলো নদীকে উঠে দাঁড়াতে, নদী উঠে দাঁড়িয়ে ক্রাচটা ডান পাশে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করতে লাগলো আর পাশাপাশি জীবনও থাকলো, অনেক কষ্ট করে নদী উপরে উঠে এলো হাফাতে হাফাতে, আগে থেকেই নাবিলা দরজা খুলে ধরাই নদী ভিতরে প্রবেশ করে এইদিক ওদিক তাকালো।
জীবন নদীকে জানালার পাশের বেড দেখিয়ে বললো, ওই বেডটা আপনার।
নদী এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে পড়লো আর বললো, আপনাদের অনেক কষ্টে ফেলে দিলাম না?
নাবিলা নদীর পাশে বসে বললো, আন্টি ডোন্ট এভার সে ড্যাট, ইট'স আওয়ার প্লেজার টু হ্যাভ ইউ উইত আস।
নদী নাবিলার গালে একটা চুমু খেয়ে বললো, ইউ আর সো সুইট মা।
আমি তোমার মা না, আমি তোমার ফ্রেন্ড, নাবিলা বললো।
ওকে ওকে তুমি আমার বন্ধু মা, ওকে?
ওকে, নাবিলা হেসে বললো।

নদী, পাশের ওই দরজাটা বাথরুম, সেখানে ব্রাশ সহ যাবতীয় সব পাবেন আর এই আলমিরাতে আপনার জন্য কিছু কাপড় পাবেন, নতুন কিনে এনেছি, জীবন বললো।
এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো, নদী বললো।
আপনার রেগুলার কাপড় তো দরকার, এক কাপড়ে কয়দিন থাকবেন, জীবন হাসতে হাসতে বললো, আর কিছুর দরকার হলে জানাবেন প্লিজ।
আপনার ঋণ কিভাবে শেষ করবো জানিনা।
আপনার আর শোধ করা লাগবেনা, গুড নাইট।
গুড নাইট।
বেবি গুড নাইট, প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব ইউর আন্ট।
ওকে ড্যাড গুড নাইট।
জীবন রুমের দরজা বন্ধ করে নিজ রুমে চলে এলো, ড্রেস চেইঞ্জ করে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো, বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা বেডে শুয়ে পড়লো।
ফোনটা নিয়ে দেশের বাড়ীতে ফোন দিলো, অপর পাশ থেকে ওর মার গলা ভেসে এলো, হ্যালো।
মা কেমন আছো?
আছিরে বাবা, তুই কেমন আছিস?
আছি মা, শুনো আজকে দুই লাখ টাকার সমান পাউন্ড পাঠিয়ে দিয়েছি মিনার একাউন্টে।
খুব ভালো করেছিস, এইসময় টাকা গুলার দরকার ছিলো।
তোমার শরীর ভালো তো?
হাঁ বাবা ভালো, তুই কখন আসবি?
জানিনা মা আসতে পারবো কিনা এইখানে অনেক কাজ।
চেষ্টা করিস আসার জন্য, তুই বড় ভাই, না আসলে চলবে?
দেখি মা, আজ রাখি।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।

................... চলবে।
ছবিঃ Google

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ