এক সপ্তাহ পর সন্ধ্যায়ঃ
জীবন আপনি কষ্ট করছেন কেন, নদী বাধা দিলো জীবনকে।
জীবন হেসে বললো, আপনার যা অবস্থা আপনি এইসব ঘুচিয়ে নিতে পারবেন।
হাঁ পারবো, হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে নদী এগিয়ে এলো।
ঠিক আছে আপনি চেষ্টা করে দেখুন আর আমি আসছি আপনার বিল সেটেলমেন্ট করে, বাই দা ওয়ে আপনার হেলথ ইন্সুরেন্স কার্ডটা দিন।
নদী ব্যাগ খুলে কার্ডটা এগিয়ে দিলে জীবন সেইটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
জীবন বিলিং সেকশনে গিয়ে নদীর রিলিজ নোটটা দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো, একটু পর জীবনকে ডেকে নদীর হেলথ ইন্সুরেন্স কার্ড নিয়ে বিল করা শুরু করলো।
সব মিলিয়ে পনেরো মিনিট লাগলো সব ফর্মালিটি শেষ করতে এরপর নদীকে ফাইনাল রিলিজ দিয়ে কাগজপত্র আর প্রেস্ক্রাইব মেডিসিন লিষ্ট দিয়ে দিলো, জীবন সব কাজ সেরে নদীর রুমে ফিরে এসে নদীকে জিজ্ঞেস করলো সব গুছানো শেষ?
জি।
তাহলে আমরা বেরুতে পারি।
চলুন।
জীবন নদীর হুইল চেয়ারটা টেলে নিয়ে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে আর এগুলো মেইন একজিটের দিকে।
জীবনের বাসার সামনে এসে গাড়ী থেকে জীবন নেমে এসে পাশের দরজাটা খুলে ধরে নদীকে নামিয়ে আনলো ধিরে সুস্থে এরপর আগে থেকে নামিয়ে নেওয়া হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিলো আর এগিয়ে গেল বাসার দরজার দিকে আর দেখলো নাভিলা দরজা খুলে এগিয়ে এসে নদীর কাছে আসলো।
হ্যালো আন্টি, হাও আর ইউ টুডে, নাবিলা জিজ্ঞেস করলো।
মাচ মোর বেটার, তুমি কেমন আছো সুইটি?
অনেক খুশি আজকে, এই প্রথম কেউ আসলো আমাদের সাথে থাকতে, ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো নাবিলা।
তুমি খুশি?
অবশ্যই খুশি, এখন থেকে আমি তোমার সাথে খেলতে পারবো, গল্প করতে পারবো, গল্প শুনবো, জানো ড্যাড একদম গল্প বলতে পারেনা।
নদী হেসে দিয়ে বললো, তাই?
হুম একদম না।
জীবন নদীকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে হুইল চেয়ার থেকে উঠিয়ে সোফায় আরাম করে আধা শোয়ানো করে দিল আর পিঠে বড় একটা কুশন দিয়ে দিলো।
কম্ফর্টেবল, জীবন জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ ঠিক আছে, এইদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো নদী।
আপনার বাসাটা খুব সুন্দর, কয়টা রুম এই বাসায়, নদী জিজ্ঞেস করলো।
দুইটা বেডরুম, ড্রয়িং, ডাইনিং কিচেন এক সাথে, বেডরুম গুলো উপরে।
রান্না বান্না কে করে, আপনি?
আর কে করবে বলুন,আচ্ছা শুনুন, প্রতিদিন আপনাকে ওয়াকিং হুইলের সাহায্যে হাটার চেষ্টা করতে হবে আর মেডিসিন আমি নিয়ে এসেছি, ওগুলো নিয়মিত খাবেন।
ওকে বস।
বস নয় জীবন, জাস্ট জীবন।
নদী মিষ্টি হাসি দিলো।
সুইট হার্ট তোমার আন্টিকে টিভি রিমোর্ট দাও আর তোমার হোম ওয়ার্ক কি শেষ?
ইয়েস ড্যাড।
ওকে তুমি আন্টির সাথে থাকো, নদী কি খাবেন এখন?
অনেকদিন কোক খাইনা, খাওয়াবেন?
আচ্ছা দিচ্ছি সাথে কি কিছু খাবেন?
না না আর কিছুনা।
ডিনারে কি খেতে চান?
আপনি যা রান্না করবেন তাই খাবো।
মাছ মাংস?
এনিথিং।
ওকে তাহলে আজ চিকেন করছি সাথে বয়ল্ড সতে ভেজ।
অনেক, নদী হেসে জবাব দিলো।
জীবন রাতের খাবার রেডি করে টেবিলে দিয়ে নদীকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এলো, জীবনের পাশের চেয়ারে যত্নের সাথে বসিয়ে দিলো আর নিজেও বসে প্লেটে ফ্রাইড রাইস, চিকেন আর ভেজিটেবেল বেড়ে দিলো সাথে মেয়েকে দিয়ে নিজে নিলো।
নদী কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে খেতে বললো, বাহ দারুণ রান্না করেন আপনি।
তাই?
খুব ভালো রান্না, আসলেই।
আরেকটু দিই।
আমি নেবো, আগে এগুলো শেষ করে নিই, অনেকদিন ভালো করে খাইনা।
কেন আপনি নিজে রাঁদতেন না?
তা রাঁদতাম কিন্তু মনে যে শান্তি ছিলোনা।
ওহ।
আপনার বাবা আর কি বললো, কথা ঘুরালো জীবন।
বাবা বললো দ্রুত ডিভোর্স করে দেশে ফিরে যেতে।
তাই?
হুম কিন্তু আমি চাইনা আর বাবার উপরে গিয়ে উঠতে।
বুঝলাম না, জীবন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
মানে হলো আমি এখানকার সিটিজেন আর আমি সুস্থ হয়ে উঠে আবার চাকরি করবো, নিজে স্টাব্লিস হবো আর বাবার উপর বোঝা হবোনা।
একলা একটা মেয়ে এই দেশে কিভাবে থাকবেন, এই দেশে তো আপনার কোন পরিচিতও নেই।
আছে।
আছে, কারা?
আপনি আছেন, আমার এই মাটা আছে আর কাকে চাই বলুন।
জীবন হেসে দিলো।
চলুন আপনাকে উপরে দিয়ে আসি, নাবিলার সাথে ঘুমাবেন আপনি।
কি করে উঠবো উপরে?
ওয়েট, বলেই জীবন গিয়ে একটা ক্রাচ নিয়ে এলো আর তা দেখে নদী অবাক হয়ে বললো, এইটা আবার কোথায় পেলেন?
গাড়ীতেই রেখেছিলাম আপনার জন্য, নামাতে ভুলে গিয়েছিলাম, আসুন এইটা ধরে উঠার চেষ্ঠা করুন কিন্তু ভুলেও ডান পায়ে চাপ দেবেন না, ওইটা জোর চাপ নিতে পারবেনা।
নদী ক্রাচটা ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে বিফল হওয়ায় হাল ছেড় দিলো দেখে জীবন হেল্প করলো নদীকে উঠে দাঁড়াতে, নদী উঠে দাঁড়িয়ে ক্রাচটা ডান পাশে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করতে লাগলো আর পাশাপাশি জীবনও থাকলো, অনেক কষ্ট করে নদী উপরে উঠে এলো হাফাতে হাফাতে, আগে থেকেই নাবিলা দরজা খুলে ধরাই নদী ভিতরে প্রবেশ করে এইদিক ওদিক তাকালো।
জীবন নদীকে জানালার পাশের বেড দেখিয়ে বললো, ওই বেডটা আপনার।
নদী এগিয়ে গিয়ে বেডে বসে পড়লো আর বললো, আপনাদের অনেক কষ্টে ফেলে দিলাম না?
নাবিলা নদীর পাশে বসে বললো, আন্টি ডোন্ট এভার সে ড্যাট, ইট'স আওয়ার প্লেজার টু হ্যাভ ইউ উইত আস।
নদী নাবিলার গালে একটা চুমু খেয়ে বললো, ইউ আর সো সুইট মা।
আমি তোমার মা না, আমি তোমার ফ্রেন্ড, নাবিলা বললো।
ওকে ওকে তুমি আমার বন্ধু মা, ওকে?
ওকে, নাবিলা হেসে বললো।
নদী, পাশের ওই দরজাটা বাথরুম, সেখানে ব্রাশ সহ যাবতীয় সব পাবেন আর এই আলমিরাতে আপনার জন্য কিছু কাপড় পাবেন, নতুন কিনে এনেছি, জীবন বললো।
এতো কিছু করার কি দরকার ছিলো, নদী বললো।
আপনার রেগুলার কাপড় তো দরকার, এক কাপড়ে কয়দিন থাকবেন, জীবন হাসতে হাসতে বললো, আর কিছুর দরকার হলে জানাবেন প্লিজ।
আপনার ঋণ কিভাবে শেষ করবো জানিনা।
আপনার আর শোধ করা লাগবেনা, গুড নাইট।
গুড নাইট।
বেবি গুড নাইট, প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব ইউর আন্ট।
ওকে ড্যাড গুড নাইট।
জীবন রুমের দরজা বন্ধ করে নিজ রুমে চলে এলো, ড্রেস চেইঞ্জ করে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো, বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সোজা বেডে শুয়ে পড়লো।
ফোনটা নিয়ে দেশের বাড়ীতে ফোন দিলো, অপর পাশ থেকে ওর মার গলা ভেসে এলো, হ্যালো।
মা কেমন আছো?
আছিরে বাবা, তুই কেমন আছিস?
আছি মা, শুনো আজকে দুই লাখ টাকার সমান পাউন্ড পাঠিয়ে দিয়েছি মিনার একাউন্টে।
খুব ভালো করেছিস, এইসময় টাকা গুলার দরকার ছিলো।
তোমার শরীর ভালো তো?
হাঁ বাবা ভালো, তুই কখন আসবি?
জানিনা মা আসতে পারবো কিনা এইখানে অনেক কাজ।
চেষ্টা করিস আসার জন্য, তুই বড় ভাই, না আসলে চলবে?
দেখি মা, আজ রাখি।
আল্লাহ্ হাফেজ।
আল্লাহ্ হাফেজ।
................... চলবে।
ছবিঃ Google
২৩টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ঘটনা কি? ;?
ডাল মে কুছ কালা তো নেহি হ্যায় হ্যান্ডপাম্প ভাই? :p 😀
ইঞ্জা
আপু ঘটনা আবার খারাপ কই দেখলেন, ঝেড়ে কাশেন তো একটু। 😮
নীলাঞ্জনা নীলা
খারাপ কোথায় দেখলাম আমি? বলেছি জীবন আর নদীর মধ্যে ইয়ে-টিয়ে সম্পর্ক হবে নাকি? সেটাই মনে হচ্ছে। 😀
ইঞ্জা
আপনাদের জ্বালায় গল্প লেখাটাই বিপদ, আগে থেকেই রাজ্জাককে মেরে ফেলেন আমার আম্মার মতো, হুম নতুন কিছু ভাবতে হবে।
মোঃ মজিবর রহমান
ঘটনা কি ঘটে দেখি গল্প দারুন লাগছে। বস।
ইঞ্জা
ঘঠনা কি ঘটবে আমি জানিনা, শুধু জানি নদী এখন বহতা আর তার সামনে যা আসে ছিঁড়ে চ্যাপ্টা করে দিয়ে যাবে।
নিহারীকা জান্নাত
আচ্ছা ভালো, ভালো।
ইঞ্জা
দাদীও কি সব কন না, কিচ্ছু বুঝিনা, বুঝায় দেন দেহি। 😮
নিহারীকা জান্নাত
এখন মিল মিল। কোন মারামারি নাই। \|/
ইঞ্জা
\|/
ছাইরাছ হেলাল
নদী আপাতত থাকুক এখানেই,
পরের চিন্তা পরেই হবে।
ইঞ্জা
তাই তো, নদী থাকুক এইখানে বাকিটা পরে লিখবো। 😀
অনিকেত নন্দিনী
আগের পর্বগুলি পড়িনি কিন্তু ঘটনা আঁচ করতে পারছি। জীবন বস আর নদী তার সহকারী। ওদের দুজনের মাঝে কিছু একটা গড়ে ওঠছে যেকারণে জীবন তাকে বিদেশে একা ফেলে মিনার বিয়েতে পর্যন্ত যাচ্ছেনা। নাবিলাকে এই গল্পের অনুঘটক মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ও ঘটনাপরম্পরা ত্বরান্বিত করবে।
ইঞ্জা
আপু আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই পর্বটি পড়ার জন্য, নদী স্বামী দ্বারা নির্যাতিতা আর মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে আসা নারী আর জীবন তার কাছে ঋণী কারণ নদী জীবনকে আহত অবস্থায় উদ্ধারে সহয়তা করেছিলো।
গল্পটি আসলে স্বামী দ্বারা নির্যাতিত নারীর গল্প যার স্বামী লোভী ও কুঠিল চরিত্রের।
আশা করি এই গল্প নির্যাতিতা নারীদের পথ দেখানোর চেষ্টা করবে।
মৌনতা রিতু
থেকে যাক নদী। দেশে গিয়ে অযথা ওর ঝামেলা হবে। এ প্রশ্ন সে প্রশ্ন। এখানে স্বাধীনভাবে অনেক কিছু করতে পারবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
চলুক।
ইঞ্জা
নদীর রুখে দাঁড়ানোর গল্প, সুতরাং নদীকে অবশ্যই নিজের সুন্দর জীবন বেচে নিতে হবে আপু।
জিসান শা ইকরাম
জীবন নদীর গল্প আগাচ্ছে ভালভাবেই।
চলুক, অপেক্ষা পরের পর্বের জন্য।
ইঞ্জা
নদীরা এগিয়ে যাবেই, তাদের কোন কিছুই থামাতে পারেনা, এই গল্প নদীদের প্রেরণা যোগাবে এই তো চেষ্টা, দোয়া রাখবেন ভাইজান।
মিষ্টি জিন
দেখি না কি হয়.., 🙂
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ্ পার্টনার গল্প ভালোভাবেই এগুবে শুধু আপনারা পাশে থাকবেন এই কামনা।
শুন্য শুন্যালয়
নদীকে বেশ লাকীই মনে হচ্ছে, সে জীবনকে পেয়েছে। বাস্তবতায় নদীরা ফ্লোতেই চলে বেশি। দেখি কোথায় যায় গল্প।
ইঞ্জা
আপু জীবন তার জীবনদাতাকে হেল্প করছে আর ভবিষ্যৎ কি হবে আল্লাহই জানে। -{@
নীরা সাদীয়া
নদী কি তাহলে থেকেই যাবে?