আহত অজ্ঞান নদী পড়ে রইল নিজ ঘরে, চোখ একটা ফুলে কালো ভুশির বলের মতো ফুলে গেছে, চোখ মুখ কেটে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে, হঠাৎ কেঁপে উঠলো ও, ককিয়ে উঠলো, ব্যাথায় কুঁকড়ে গেল আরো বেশি এরপর চুপচাপ কোন সাড়া নেই, আবার নড়ে উঠলো নদী, চোখ খোলার চেষ্টা করে যখন দেখলো একটা খুলেছে বাকিটাতে সাড়া নেই, পড়ে থাকা অবস্থায় এক চোখে তাকালো এইদিক ওইদিক, দূরে পড়ে থাকতে দেখলো ওর ব্যাগ আর জিনিষপত্র, ও উঠবার চেষ্টা করলো কিন্তু পুরা শরীরের ব্যাথা আঁ আঁ করে উঠলো মনে মনে বললো, আমার বাঁচতে হবে।
আবার চেষ্টা করলো উঠতে কিন্তু ব্যাথা ওকে উঠতে দিতে চাইনা, কিছুক্ষণ ওভাবে পড়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর কঁকাতে কঁকাতে হামাগুড়ি দিতে লাগলো আর ব্যাথায় শুয়ে পড়তে লাগলো আর এইভাবেই ব্যাগের কাছে গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে কিছুক্ষণ দম নিলো এরপর আসতে করে ব্যাগের ভিতরে হাত দিয়ে হাতড়াতে লাগলো আর অনেক কষ্টে ফোনটা নিয়ে নিজের চোখের সামনে ফ্লোরে রাখলো এরপর ডায়াল ওপেন করেই প্রথম ডায়ালে চাপ দিলো, রিংয়ের শব্দ হচ্ছে শুনে স্পিকার ফোনে চাপ দিলো অপর পাশ থেকে কেউ হ্যালো বলতেই নদী বললো, হেল্প কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বেরুলোনা, আবার বললো, হেল্প এরপর জ্ঞান হারালো আবার।
জীবন ঘরে ফিরে ড্রেস চেইঞ্জ করে ড্রয়িং রুমে এসে মেয়ের সাথে গল্প করছিলো আর এর মধ্যে ছোট বোন মিনা কল করলো।
ভাই কেমন আছো তুমি?
ভালো আছিরে, তুই কেমন আছিস?
ভালো নেই ভাই, সামনে বিয়ে আর তুমি নেই।
তাতে কি হয়েছে, অন্যরা আছেনা?
ভাই, বাবার পর সব তুমি আর তুমি না এলে আমি বিয়ে করবোনা।
আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে, এখনো তো সময় আছে, আমি চেষ্টা করবো আসতে কিন্তু কথা দেবোনা, ঠিক আছে?
ঠিক আছে ভাইয়া আর শুনো,
কি বল?
মা যে টাকা চেয়েছে তা তুমি দিওনা।
কেন কি হয়েছে?
বাবা অনেক টাকা রেখে গেছে এরপরেও ভাইরা মাকে বলে টাকার জন্য বলছে তোমাকে।
বড় একটা নিশ্বাস ফেললো জীবন এরপর বললো, শুন আমারো কিছু দায়িত্ব আছে নাকি, থাক ওইসব কথা আমি কিন্তু খুব টায়ার্ড, তোর সাথে পরে কথা হবে।
ঠিক আছে ভাই, আল্লাহ্ হাফেজ।
আল্লাহ্ হাফেজ বলে জীবন কল কেটে দিয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো আর মেয়ের মাথায় বিলি কাটলো, আর সেই মুহুর্তে ফোনের রিং বাজতে লাগলো এতে জীবন বিরক্ত হয়ে বাম পাশের সাইড টেবিলে রাখা ফোনের দিকে তাকালো আর অবাক হলো নদীর ফোন দেখে কারণ এইসময় নদী ঘরে, এরপরও ফোনটা উঠিয়ে হ্যালো বললো।
অপর পাশ থেকে খুব ছোট একটা শব্দ এলো যা জীবন বুঝতে না পেরে আবার হ্যালো বললো আর শুনলো খুব কষ্টে বলা একটা শব্দ, "হেল্প" তারপর সব চুপচাপ আর এইদিকে জীবন হ্যালো নদী নদী কি হয়েছে কি হয়েছে করে চিৎকার করতে লাগলো কিন্তু অপর পাশ থেকে আর কোন শব্দ নেই কিন্তু ফোনও কাটেনি নদী।
জীবন ততক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠে পড়লো আর মেয়েকে বললো, সুইট হার্ট আমি বেরুচ্ছি তুমি দরজা লক করে বসে থাকো, ফ্রিজে খাবার আছে খেয়ে নিও, ওকে?
ওকে ড্যাড।
জীবন দ্রুত ওভার কোট গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দৌড়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠে স্টার্ট দিলো ইঞ্জিন আর টার্ন করে গাড়ী টান দিলো।
নদীর বাসার সামনে আসতে পনের মিনিটের মতো লাগলো, গাড়ী থেকে দ্রুত নেমে নদীর বাসার সামনে এসে দরজার কলিংবেল বাজালো দুই তিনবার, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চাপলো কলিংবেল সাথে দরজার নব ঘুরালো, অবাক হলো দরজা খুলে গেল দেখে, জীবন দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে দিয়ে বললো, হ্যালো কেউ আছেন ভিতরে আর ঠিক সেই সময় চোখ গেল সামনে ড্রয়িং রুমের আলো আধারিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে নদী, জীবনের বুক ধক করে উঠলো, দ্রুত এগিয়ে গেল সে নদীর কাছে, নিজে হাটু গেড়ে বসে নদীকে তুলে নিলো নিজের কোলে, দেখলো নদীর জ্ঞান নেই, নাকে দুইটা আঙ্গুল দিয়ে দেখলো শ্বাস আছে কিনা তারপর এইদিক ওদিক তাকালো কেউ আছে কিনা আর নিজের পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করে 911 এ কল দিয়ে বললো, প্লিজ হেল্প, ইট'স ইমার্জেন্সি এরপর বললো কি হয়েছে আর ঠিকানা দিলো।
দশ মিনিটও লাগলোনা এম্বুলেন্স আসতে, ইমার্জেন্সির জন্য থাকা সাথের ডাক্তার দ্রুত এসে নদীকে চেক করে একটা ইঞ্জেকশন দিলো, কোমর, ঘাড়ে প্রটেকশন দিলো এরপর স্ট্রেচারে উঠিয়ে বের করে আনলো বাসা থেকে।
যখন এইসব হচ্ছিলো তখন সাথে আসা পুলিশ জীবনের স্টেইটমেন্ট নিলো আর এম্বুলেন্স ছেড়ে দিলে পুলিশও পিছে পিছে চলে গেলো, জীবন দ্রুত নিজের গাড়ীতে এসে স্টার্ট দিয়ে এম্বুলেন্সকে ফলো করলো।
কে করলো এমন জঘন্য কাজ, মেয়েটাকে তো মেরেই ফেলেছে, নিশ্চয় ওর হাসবেন্ড এই অবস্থা করেছে নদীর, নদী খুব ভয় পেতো ওর হাসবেন্ডকে, ভাবলো জীবন। পুলিশও জিজ্ঞেস করেছিলো, ও কে, কিভাবে জানলো নদীর এই অবস্থা, কে মেরেছে এমন করে, ও নদীর কি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি, জীবনও দেখিয়েছিলো নদীর কল, দিয়েছিলো নিজের বিজনেস কার্ড আর রেসিডেন্স কার্ড আর এতে সন্দেহ প্রশমিত হওয়ায় ওরা ছেড়ে দেয় জীবনকে।
হাসপাতালের সামনে এসে দ্রুত গাড়ী পার্ক করে দ্রুত এগুলো ইমার্জেন্সির দিকে, ইমার্জেন্সিতে পোঁছেই দেখলো ডাক্তাররা নদীকে বহন করা স্ট্রেচার নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
জীবন কিছুক্ষণ পায়চারি করলো এরপর সামনে রাখা সোফায় গিয়ে বসে পড়লো, হঠাৎ মেয়ের কথা মনে পড়াই ফোন বের করে কল দিলো মেয়েকে।
হ্যালো ড্যাড, ওয়ের আর ইউ?
সুইট হার্ট আমি এখন হসপিটালে।
ওয়াই, কি হয়েছে ড্যাড, এনিথিং সিরিয়াস?
ইয়াপ, আমার একক বন্ধু সিরিয়াসলি ইঞ্জার্ড আর এইই জন্যই আমাকে আসতে হয়েছে।
তুমি কি আজ রাতে আসবেনা, আদুরে গলায় বললো নাবিলা।
তুমি কি বলো সুইটি?
বেটার ইউ লুক আফটার ইউর ফ্রেন্ড, আই উইল গো ফর স্লিপ, ডোন্ট ওরি।
বেটার আমি তোমার সোহেল চাচুকে কল করে বলছি যেন উনি আর তোমার আন্টি সহ সবাই বাসায় আসবে আর তোমার সাথে থাকবে, ওকে ডিয়ার?
ড্যাটস বেটার।
ওকে বেবি আমি এখন রাখছি আর দরকার হলে আমাকে কল দেবে।
ওকে ড্যাড বাই।
বাই বেবি।
জীবন ফোন কেটে দিয়ে ওর বন্ধু ও জুনিয়র কলিগ সোহেলকে ফোন দিয়ে সব বুঝিয়ে বললো আর ওর বাসায় যেতে বললো।
ঘন্টা খানেক পর ডাক্তার বেড়িয়ে এলে জীবন জিজ্ঞেস করলো ইংরেজিতে, সে কেমন আছে ডক?
লুক মিস্টার।
জীবন।
ইয়েস মি. জীবন, কেউ ওকে খুব হিংস্রতার সাথে এমন মার মেরেছে এতে ওর নেক, বেক এন্ড চেস্ট বোন ভেঙ্গে গিয়েছে, একটা পা ভেঙ্গেছে, চোখের ভিতরে আঘাত লাগলেও চোখ ঠিক আছ বাট ওর ইন্টারনাল ইঞ্জুরি আছে যা খুবই ডেঞ্জারাস, আমরা মেডিসিন দিয়েছি বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে, ল্যাটস প্রে ফর হার এন্ড হোপ দা বেষ্ট, বলেই ডাক্তার আবার ভিতরে গেল।
দুইদিন পর যমে মানুষে টানাটানির পর নদী একটু সুস্থ হলো, জ্ঞানো ফিরে এসেছে, পুলিশ এলো স্টেইটমেন্ট নিতে আর জীবন কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে দিন রাত হাসপাতালেই ছিলো।
মিস আপনার কোন সমস্যা হবে তো স্টেইটমেন্ট দিতে, পুলিশের সার্জেন্ট জিজ্ঞেস করলো।
ওকে, মাথা নাড়ানোর চেষ্টা করলো নদী কিন্তু বিফল হলো ঘাড়ের গার্ডারের কারণে।
আপনার এই অবস্থা কি ভাবে হয়েছে, ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো পুলিশ।
আমার হাসবেন্ড এমন করেছে আর বিস্তারিত খুলে বললো নদী।
এর মানে হলো তোমার হাসবেন্ড তোমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে?
নদী কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, মে বি।
আরো কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ চলে গেলে, নদীর রুমে এলো জীবন।
কেমন আছেন এখন?
নদী পাল্টা প্রশ্ন করলো, আপনিই আমাকে নিয়ে এসেছেন এইখানে, খুব আসতে আসতে বললো?
হাঁ।
কি ভাবে জানলেন?
কেন আপনার মনে নেই?
না!
আপনিই কল দিয়েছিলেন।
কিন্তু আমি নাকি অজ্ঞান ছিলাম?
হাঁ আপনি কল দিয়ে জাস্ট বলেছিলেন, "হেল্প"।
................. চলবে।
ছবিঃ Google.
১৮টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
চালিয়ে যান।
ইঞ্জা
পাশে থাকবেন আপু। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
এত্তো বড়ো একটা এক্সিডেন্ট করলাম ইস কোনো জীবনের দেখা পেলাম না। এরচেয়ে দুঃখের আর কি আছে? ;( ;( ;( ;(
ইঞ্জা
লে বাবা, উনার দুক্কু হয় দেহি, আফা দুলাভাই কই?
নীলাঞ্জনা নীলা
দুলাভাই তো আছে, কিন্তু জীবন তো নাই। ;(
ইঞ্জা
আপাতত দুলাভাইরে লইয়া জীবন জীবন খেলেন। :p
ব্লগার সজীব
রনির চামড়া ছিরে মরিচের গুরো আর লবন মাখিয়ে দেয়া উচিৎ। ইতর বদমাশ এর চরিত্রের দু একজন জানোয়ারের কথা শুনেছি আমি। আজ পড়লাম আপনার লেখায়। কঠিন শাস্তি হওয়া উচিৎ রনির।
অপেক্ষা করছি পরের পর্বের।
ইঞ্জা
এইসব জানোয়াররা আমাদের আশে পাশেই আছে আর নদীরা নির্যাতিত হচ্ছে বারে বারে আর এদের শাস্তি সহজে হয়না কারণ এরা যেমন দুঃশচরিত্র তেমনই শৃগালের মতো চতুর হয়।
নিহারীকা জান্নাত
কিচ্ছু বলার নেই।
ইঞ্জা
অবশ্যই আছে দাদী, পাল্টা আঘাত রয়ে গেছেনা?
নিহারীকা জান্নাত
সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
;?
ছাইরাছ হেলাল
পাল্টা আক্রমন চলবে,
একটু ধীরে হলে কেমন হয়!!
ইঞ্জা
অবশ্যই হবে পাল্টা আঘাত কিন্তু আরো গল্প যে রয়ে গেছে ভাইজান।
শুন্য শুন্যালয়
জীবন হচ্ছে নদীর মতো, কোথায় কখন বাঁক নেবে ঠিক নেই। কখনো উজান, কখনো ভাঁটা।
ইঞ্জা
সুন্দর বলেছেন মিষ্টি আপু।
মৌনতা রিতু
ভাগ্য ভাল ঐ মুহূর্তে নদী জীবনকে ফোন করে।
আছে অনেকে এমন নির্মম। গতবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টিচারকে এমন করতে দেখেছি টিভিতে।
এগুলোই আসলে সমাজের কীট।
চলুক ভাই
এবার পাল্টা আঘাত হবে।
ইঞ্জা
আপু দেশে বিদেশে এমন অনেক ঘটনা হচ্ছে তার থেকে অল্প কয়টি আমরা জানতে পারছি বাকি সব অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যাচ্ছে।
পাল্টা আঘাত হবে অবশ্যই আপু, দোয়া রাখবেন।