নদী (৪’থ পর্ব)

ইঞ্জা ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১২:১৬:১৫পূর্বাহ্ন গল্প ৩০ মন্তব্য

images-6

 

 

জীবন জীবন, বাবা কেমন আছিস, বিদেশে কোন সমস্যা হচ্ছেনা তো তোর?
না বাবা ঠিক আছি।
আয় ওখানে বসি, বাপ ছেলে সামনের বারান্দার চেয়ারে গিয়ে বসলো, তোর মার খবর নিসতো ঠিক মতো?
বাবা মা যেন কেমন হয়ে গেছে।
কি করবি বাবা , নে বাদাম গুলো খাঁ।
দাও বলেই জীবন হাত বাড়ালো আর ওর বাবা অনেক গুলো বাদাম দুই হাতে ঢেলে দিলো আর বললো, মেয়েটা কে?
বাবা বাবা আমতা আমতা করতে লাগলো জীবন এরপর মিটমিট করে চোখ খুললো, এইদিক ওদিক তাকালো, আবার চোখ বন্ধ করলো কিছুক্ষণ, ভাবতে লাগলো কি দেখলো ও সপ্নে আবার চোখ খুললো।
বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে বাথরুমে গিয়ে ব্রাশ করে নিয়ে গরম পানির শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে গোসলটা সেরে নিয়ে বেরিয়ে এলো, রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো জীবন, কিচেনে গিয়ে ব্রেড বের করে নিয়ে টোস্টার মেশিন অন।করে ব্রেড দিতে লাগলো সাথে ডিম ভেঙ্গে অমলেট করতে লাগলো, মেয়েকে নামতে দেখে প্লেটে করে টোস্ট ব্রেড আর অমলেট প্লেইটে দিয়ে নিয়ে এলো ডাইনিং টেবিলে, বাবাকে আসতে দেখে নাবিলা বললো, গুড মর্নিং ড্যাড।
গুড মর্নিং বিউটিফুল, তুমি কোন জ্যাম নেবে?
ক্রানবেরি।
জীবন কিচেনে গিয়ে ক্রানিবেরি জ্যাম এনে দিলো মেয়েকে আর নিজে ব্রেডে বাটার লাগিয়ে খেতে শুরু করলো।

ড্যাড টুমরো ওয়াট ইউ উইল প্রিপেয়ার ফর ব্রেকফাস্ট, নাভিলা জিজ্ঞেস করলো?
ওয়াট ইউ ওয়ান্ট?
তুমি খুব ভালো লতপতি বানাও ড্যাড।
ওইটা লতপতি না কিউটি লটপটি।
লতপতি, মেয়ের মুখে এলোনা টিক মতো।
নেভার মাইন্ড, জীবন হেসে বললো।
হাঁ ওইটাই তুমি কুক করবে, ওইটা টেস্টি এন্ড ডিলিশাস।
ওকে আই উইল, ইউ ফিনিসড?
ইয়াপ।
ওকে তুমি ওয়েট করো আমি গুছিয়ে রেখে আসছি, টিসু দিয়ে মেয়ের মুখটা মুছে দিলো জীবন।
সব গুছিয়ে রেখে জীবন বেড়িয়ে এসে মেয়েকে গাড়ীতে উঠালো আর সিটবেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
স্কুলে পোঁছে দিয়ে জীবন কাছের একটা অটোমেটেড কার ওয়াসে চলে এলো আর ফাঁকা পেয়ে গাড়ী নিয়ে ঢুকে পড়লো, পাঁচ মিনিটেই গাড়ী ওয়াস হয়ে বেড়িয়ে এলে গাড়ীতে গ্যাস (সুপার পেট্রল) ভরে নিয়ে পে করে এলো আর রওনা দিলো নিজের ব্যাংকের উদ্দেশ্যে।
ব্যাংকে এসে নিজের কেবিনের দিকে এগুতে গেলে জীবন খেয়াল করলো নিচতলায় এক একজিকিউটিভের সামনে নদী বসে আছে আর তা দেখে জীবন নিজের রুমে এসে সেই একজিকিউটিভকে ইন্টারকমে রিং দিয়ে বললো, হাই টনি হাউ ইজ গোয়িং?
এভরি থিং ইজ ওকে মি. জীবন।
গুড, ওকে লিসেন, যে ল্যাডি তোমার সামনে আছে উনার কাজ শেষ হলে আমার কেবিনে পাঠিয়ে দিও।
ওকে স্যার।

দশ মিনিট পর দরজায় নক শুনে জীবন বললো, ইয়েস প্লিজ কাম ইন।
দরজা খুলে নদী প্রবেশ করে জীবনকে দেখে অবাক হলো আর বললো, এইখানে আপনাকে দেখবো ভাবিনি।
আসুন আসুন প্লিজ বসুন।
নদী এসে চেয়ারে বসলে জীবন বললো, কফি চলবে?
জি।
জীবন উঠে গিয়ে কফি মেসিন থেকে কফি নিলো দুই কাপে, সাথে নিলো সুগার আর পাউডার মিল্কের পেকেট আর প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম ছোট চামুচ আর তা এনে টেবিলে রাখলো নদীর সামনে আর নিজেরটা নিয়ে বসলো নিজের চেয়ারে।
বলুন কেমন আছেন?
জি ভালো, আপনার মেয়ে কেমন আছে?
হাঁ ও ভালো আছে, এখন স্কুলে।
তা কি জন্য এসেছিলেন এইখানে?
আমাদের শপের একাউন্ট আছে আপনাদের ব্যাংকে, একটু ইতস্তত করলো নদী তারপর বললো, আপনি এই ব্যাংকে আছেন জানতাম না।
কেন আপনাকে আমার বিজনেস কার্ড দিয়েছিলাম, দেখেননি?
কফিতে চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রেখে নদী বললো, আসলে খেয়াল করিনি তেমন করে।
আসলে সেইসিন জীবন চলে যাওয়ার পর নদী কার্ড আর ফুল গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিলো পাছে যদি রনি দেখে ফেলে তাই।
তা আপনার কাজ শেষ?
জি।
কাল তো উইকলি হলিডে, কি প্রোগ্রাম আপনার?
না তেমন কিছু নয় ঘরেই থাকবো।
তাহলে আসুন না কাল একসাথে দুপুরের লাঞ্চ খায়।
না না থাক আরেকদিন হবে না হয়,কাল ঘরের অনেক কাজ আছে, ওগুলো সারতে হবে কাল।
ঠিক আছে, আপনার যখন সময় হয় তখন হবে নাহয়।
জি ঠিক আছে, এখন আমায় উঠতে হবে, মালিক নিশ্চয় অপেক্ষা করে করে মেজাজ করছে।
ঠিক আছে আসুন।
জি আসি।
আগে আমার নাম্বার সেইভ করে নিন বলেই জীবন নাম্বার বললো।
নদী জীবনের নাম্বার সেইভ করে নিলো মিসেস গিল্ডার্স নামে যা জীবন জানেনা, নদী একটা রিং দিলো জীবনকে, জীবনও সেইভ করে রাখলো।

সন্ধ্যায় ফিরার আগে নদী বেতন পেলে ব্যাগে রেখে রওনা হলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে,বাস স্টপে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো বাস আসার আর এই সময়েই কল এলো রনির, ফোন রিসিভ করলে রনি জিজ্ঞেস করলো, কোথায় তুমি?
বাস স্টপে।
বেতন পেয়েছো?
হুম পেয়েছি।
ঠিক আছে আসো বলেই রনি ফোন কেটে দিলো।
ঘড়ি দেখলো নদী আর ঠিক সে সময় বাস এসে হুস করে আওয়াজ দিয়ে দাঁড়ালে নদী সহ আর কয়েকজন বাসে উঠে পড়লো, নদী বাসের ভিতরে এগিয়ে গিয়ে জানালার পাশের এক সিটে বসে পড়লো, বাসে ছয় সাতজন প্যাসেঞ্জার আছে আর বাকিটা খালি।
হঠাৎ আবার ফোন আসাতে একটু বিরক্তই হলো, বেতন পাওয়ার পর রনি পাগল হয়ে যায় পাউন্ড গুলো হাতে পাওয়ার জন্য, নদী সেলফোন উঠিয়ে স্ক্রিনে তাকালে দেখলো জীবনের কল, রিসিভ করে হ্যালো বললো।
জি নদী সরি কল করতে হলো, আমার অফিসের টেবিলে একটা চাবি পেলাম, আপনি কি ফেলে গিয়েছিলেন?
দেখি ওয়েট বলেই নদী ব্যাগ খুলে খুঁজে দেখে চমকে উঠলো, ভয়ও পেলো ঘরের চাবি ফেলে এসেছে বলে, তোতলাতে তোতলাতে বললো, হাঁ আমি চাবি ফেলে এসেছি।
বাসায় ঢুকতে পারবেন?
নাহ।
আপনি কই এখন?
আমি বাসে, টুটিং বাস স্টপে নামবো আরর পনেরো ষোল মিনিট পর।
ঠিক আছে চিন্তার কিছু নেই আমি আসছি বাসায় পোঁছে দিলে হবে?
না না প্লিজ বাসায় না, ও মানে আমার হাসবেন্ড খুব রাগি মানুষ।
ঠিক আছে ঠিক আছে আমি আসছি বাস স্টপে, একটু অপেক্ষা করুন।
নদী থরথর করে কাঁপতে লাগলো।

জীবন বাস আসার আগেই পোঁছে গেল, গাড়ীটা পার্কিংয়ে রেখে অপর পাশে যাওয়ার জন্য সামনের ওয়াক লাইটের উদ্দেশে হেটে গেল আর সিগনালের জন্য বোতামে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো, ওয়াক সিগলান উঠলে হেটে অপর পাশে এসে বাস স্টপের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাস একটু পরে এসে দাঁড়ালে প্রথমে এক নিগ্রো মহিলা নেমে এলো আর এরপরে নদীকে নামতে দেখে এগিয়ে গেল।
হাই।
হাই সরি সরি আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
আরেহ নাহ কোন সমস্যা নেই আমি অফিস থেকে এই পথ দিয়েই বাসায় যায়, কথা বলতে বলতে দুজনেই এগুলো।
এই নিন আপনার চাবি।
ধন্যবাদ বড় বিপদ থেকে বাঁচালেন।
ওয়েলকাম, জবাবে জীবন বললো।
রাস্তা পার হয়ে দুজনেই গাড়ীর পাশে এসে দাঁড়ালো।
আসি তাহলে, নদী বিদায় চাইলো।
আরেহ কই যান আসুন আমি নামিয়ে দিই।
না না করে প্রতিবাদ করে উঠলো নদী।
ভয়ের কিছু নেই বাসার থেকে দুরেই নামিয়ে দেবো, হাসতে হাসতে বললো জীবন।
ইতস্তত করে নদী বললো, আচ্ছা চলুন।
জীবন ড্রাইভিং সিটের উল্টা পাশের দরজা খুলে ধরলে নদী উঠে বসলো আর জীবনও ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ী স্টার্ট দিয়ে এগুতে শুরু করলো।
নদীর বাসা থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটা পথ থাকতেই নদী বিদায় নিয়ে নেমে গেল আর জীবন গাড়ী নিয়ে এগুলো নিজের বাসার উদ্দেশ্যে।

নদী বাসায় পোঁছে দরজা খুলতে গেলে রনি ঝট করে দরজা খুলে দিলো আর বললো, আসো আসো আজ এতো দেরি কেন?
বাস আসতে একটু দেরি করেছে, নদী ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো।
রনি ঝট করে নদীর কাছ থেকে হাত ব্যাগটা কেড়ে নিলো আর ব্যাগ খুলে পাউন্ড সব নিয়ে নিলো।
নদী ওভারকোট খুলে রেখে কিচেনের দিকে এগুতে গেলে হটাৎ চুলে ঠান খেলো আর ব্যাথায় আঁ আঁ করে উঠলো, রনি ওর চুল ধরে ধাক্কা দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
রনি রনি আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
হারামজাদি কার সাথে এসেছিস?
না না কারো সাথে আসিনি।
ধাই করে কোমর থেকে একটা ঘুসি খেলো নদী আর ঘুসির আঘাতে নদীর মুখ দিয়ে সব বাতাস বেড়িয়ে এলো।
★★ বলে একটা বিশ্রী একটা গালি দিলো রনি আর চুল ধরে মারতে মারতে নিয়ে গেল ড্রয়িং রুমে এরপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে মুখে হাঁকাতে লাগলো একটার পর একটা ঘুসি, নদী মার খেতে খেতে ফ্লোরে পড়ে গেলে লাথির পর লাথি দিতে লাগলো রনি আর একটাই জিজ্ঞাসা কে সে তোকে নামিয়ে দিয়ে যায়, তোর প্রেমিকের নাম কি, বল বল আজ তোকে বলতেই হবে।
এক সময় খেয়াল করলো নদী আর নড়ছেনা তখন থামলো সে এরপর টলতে টলতে কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা মদের বোতল বের করে ঢাকনা খুলে ঢকঢক করে নিজ গলায় ঢাললো বেশ কিছু এরপর বোতল নিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে।

__________ চলবে।
ছবিঃ Google.

0 Shares

৩০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ