তা কতদিন ধরে আছেন এইখানে, জীবন জিজ্ঞেস করলো নদীকে।
দেড় বছর হয়, নদী জবাব দিলো।
তাতো বেশি দেরি হয়নি।
স্যার আপনার একশ বিশ পাউন্ড পঁচিশ সেন্ট হয়েছে, কম্পিউটারে দেখে নদী জানালো।
ওকে, পকেট থেকে কার্ড বের করে দিলো জীবন।
নদী মেসিনে পাঞ্চ করে রিসিট আর কার্ড দিলো আর জীবন রিসিটে সিগ্নেচার করে দিয়ে কার্ড মানিব্যাগে রাখতে রাখতে বললো, আরেকটা কথা আমি আসলেই ঋণী রয়ে গেলাম আপনার কাছে জানিনা শোধ করতে পারবো কিনা আর আপনি আমাকে স্যার স্যার করলে মনে কষ্ট পাবো, আপনার অসুবিধা না থাকলে আমাকে জীবন নামেই ডাকবেন, খুব খুশি হবো।
ধন্যবাদ স্যার সরি জীবন, নদী একটু হাসিমুখ করতে চাইলো কিন্তু কেন জানি সেই হাসি এলোনা।
ওকে ভালো থাকুন আসি বলেই জীবন ব্যাগ ভর্তি জিনিষ পত্র নিয়ে এগুলো দরজার দিকে আর নদী অপলক চেয়ে রইল জীবনের গমন পথে।
নদী বাসায় ফেরার আগে দেশে ইমো দিয়ে কল দিলো, অপর পাশ থেকে ওর মার কণ্ঠ বেসে এলো, নদী মা, ও মা কেমন আছিস তুই?
হাঁ মা খুব ভালো আছি, তুমি কেমন আছো, বাবা কেমন আছে, চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো নদীর।
আমরা সবাই ভালো, জামাই কেমন আছে?
খুব ভালো মা।
আল্লাহর রহমত এমন ভালো একটা জামাই পেয়েছিস, ওকে খেয়াল রাখিস।
ঠিক আছে মা, বাবা কোথায়?
এই নে কথা বল বাবার সাথে নাকি কথা বলবে।
হ্যালো নদী কেমন আছিস, নদীর বাবা ফোন ধরেই জিজ্ঞেস করলো।
জি বাবা ভালো আছি, তুমি কেমন আছো, তোমার হার্টের রেগুলার চেক করতো নাকি হেলাফেলা করছো, ঔষধ গুলো ঠিক মতো খাওয়া হয় নাকি খাওনা।
সব ঠিকঠাক চলছে মা কোন অসুবিধা নাই, হাসতে হাসতে জবাব দিলেন নদীর বাবা।
তুমি কিন্তু ভুলো মন, তুমি কিন্তু ঠিক মতো মেডিসিন খাবে।
তুই ওইসব চিন্তা করিসনে মা, আমি ঠিক আছি।
ঠিক আছে বাবা আমি এখন রাখি বাসায় ফিরতে হবে।
ঠিক আছে মা সাবধানে যাবি, আল্লাহ্ হাফেজ।
আল্লাহ্ হাফেজ বাবা, গলা ধরে এলো নদীর, ফোন কেটে দিয়ে দোকানের মহিলা মালিককে বলে সে বেড়িয়ে এলো, নদীর হাসবেন্ড ওর সাথে কি করে এইসব সে বাড়ীতে কাউকে বলেনা কারণ এইসব শুনলে নদীর বাবা হার্টের রুগী উনার অসুবিধা হতে পারে।
বাসায় দরজার চাবি বের করে দরজা খুলে প্রবেশ করলো, ভিতরে এসে নিজের কোটটা হ্যাংগারে রেখে ব্যাগটা নিয়ে ডুপ্লেক্স বাড়ীর উপরে নিজ রুমে চলে এলো, ব্যাগ রেখে কাপড় চোপড় চেইঞ্জ করে নিচে এসে কিচেনে এলো আর ফ্রিজ থেকে মাছ আর কিছু সবজি নিয়ে টেবিলে বসে পড়লো, সেইখানেই বসেই সব কেটে কুটে রেডি করলো রান্নার জন্য, বেসিনে নিয়ে গিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে রান্না চড়ালো এরপর ময়লা গুলো ময়লার ব্যাগে পুরে রেখে দিলো ডাস্টবিনের ভিতরে, রান্না শেষে সেগুলো নামিয়ে রেখে টেবিলে পরিস্কার প্লেট দিয়ে রাখলো যেন রনি এলে খাওয়া দিতে দেরিনা হয়, এরপর নিজে গিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলো টিভি ছেড়ে।
টিভি দেখতে দেখতে কখনো যে সোফার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে ও খেয়াল করেনি, হটাৎ কলিং বেলের আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠলো আর পড়িমরি করে গিয়ে দরজা খুললো আর দরজা খুলতেই রনি চিৎকার শুরু করলো।
কি মহারাণী ভিক্টোরিয়া দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে নাকি নাগরকে নিয়ে শুয়ে ছিলে?
তুমি এইসব কি বলছো?
ঠিকই বলছি, একশোবার বলবো, হাজার বার বলবো, বললে তোর বাপের কি?
দেখো তুমি এইখানে আমার আব্বার কথা আনছো কেন?
বলা শেষ করতেই পারেনি ঠাশ করে কষে চড় খেলো নদী আর রনি খারাপ গালি দিয়ে বললো, ধুর হয়ে যা আমার সামনে থেকে।
নদী কাঁদতে কাঁদতে উপরে চলে গেল নিজ রুমে।
ঘন্টা খানেক পর রনি এলো, এসেই বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো আর বললো, এই শুনো আজকে আমার খুব ইচ্ছে করছে তুমি রেডি হও।
না না আজ আমি পারবোনা, আমি অসুস্থ ফিল করছি।
ধুরর বলে একটা খারাপ গালি দিলো আবার আর নদীর কাছে এসে চেপে ধরলো, নদী বুঝতে পারলো ওর কোন কথারই দাম নেই তখন সে সব অত্যাচার সহ্য করতে লাগলো চুপচাপ আর নিজের হাসবেন্ডের কাছে নিজেই ধর্ষিত হতে লাগলো, রনি শেষ করে এক পাশে এলিয়ে পড়লো আর নদী কোঁকাতে কোঁকাতে বাথরুমে গেল, বাথরুমের দরজা বন্ধ করেই পানি ছেড়ে দিলো বেসিনের আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, নিজের কপাল নিজে চাপড়িয়ে কাঁদতে লাগলো নদী, অনেকক্ষণ কান্নার পরে গরম পানিতে গোসল করে বেড়িয়ে এলো আর সোজা বিছানায় গিয়ে একপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো আর রনি তখন নাক ডাকছে।
পরদিন সকালে উঠে টেবিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করে বসে আছে আর রনি কাজে বের হওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে এসে ব্রেকফাস্টের জন্য বসলো, নদী ডিমের অমলেট আর ব্রেড এগিয়ে দিলে রনি ব্রেডে মাখন লাগিয়ে আয়েশ করে খেতে লাগলো।
আমি একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম, নদী নিচু স্বরে বললো।
কি বলার বলে ফেলো।
আমি একটু বাড়ী যেতে চাইছিলাম।
না এখন নয় আর তুমি একা যেতেই পারবেনা, আমি যখন যাবো তখন তুমি আমার সাথে যাবে তার আগে নয়।
নদী চুপ করে গেলো।
রনি বেড়িয়ে গেলে নদীও ওর চাকরীস্থলে রওনা হয়ে গেল, শপে পোঁছেই কাজে নেমে পড়লো।
সন্ধ্যার কিছু আগে জীবন এলো মেয়েকে নিয়ে, ওর মেয়ে বায়না ধরেছে কিছু জুস আর চকলেট কিনবে আর তাই নিয়ে আসা, মেয়েকে নিয়ে ও প্রথমে চকলেট কাউন্টারে গেলো আর ওর মেয়ে নাবিলা ঘুরে ঘুরে কিছু চকলেটে, ওয়েফারস আর জুস কিনলো এরপর দুজনে মিলে কাউন্টারে এলো পে করার জন্য আর কাউন্টারে নদীকে দেখে জীবন অবাক হলো আর বললো, হাই আপনাকে আজও দেখবো কল্পনায় করতে পারিনি, আপনার হয়ত আট ঘন্টার শিফট?
আসলে আমি বারো ঘন্টা করি, তা আজকে এলেন?
আর বলবেন না মেয়ে আমার কতো যে বায়না ধরে, আজ চকলেট আর জুস নিলো বলেই হাতের ঝুড়িটা কাউন্টারের উপর রাখলো।
তা আপনার ওয়াইফ আসেননি সাথে?
একটু ইতস্তত করলো জীবন, তারপর বললো আসলে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আর মেয়েকে আমার কাছে রেখে গেছে।
ওহ সরি আমি হয়তো আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
না না ঠিক আছে।
তা মামনি তোমার নাম কি, এইদিক আসো এইদিক আসো বলেই মেয়েকে নিয়ে গেল কাউন্টারের পিছে, তা নামটা কি বললেনা?
আমার নাম নাবিলা চৌধুরী, তোমার নাম কি, আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো নাবিলা।
আমি, আমি হলাম নদী, হেসে দিলো নদী, ড্রয়ার খুলে বেশ কিছু চকলেট দিলো নাবিলাকে আর বললো এই নাও এগুলো সব তোমার।
আরে আরে কি করছেন, জীবন বলে উঠলো।
না না তেমন কিছু নয়, মেয়েটি আপনার খুব লক্ষি, আজ অনেকদিন পর নদী হাসছে মন খুলে।
.................. চলবে।
ছবিঃ Google.
২৫টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
রনিকে যদি আমি পেতাম ব্যাটাকে এমন শাস্তি দিতাম যে না মরতে পারতো, না বাঁচতে। :@
ইঞ্জা
আপু কেমন আছেন এখন, ব্যাথা কি বেশি, আপু মন থেকে দোয়া করছি যেন আমার বোনটা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে তারপর বিচার করবো অন্য মনস্ক হয়ে রাস্তা কেন পার করেছে।
রনির মতো মানুষ আমি একটা পেয়েছিলাম আএ তাদের ডিভোর্স করানোর আগে চড় থাপড় দেওয়াতে মুরুব্বি (তার পক্ষের) খুব ক্ষেপায় বলেছিলাম “এই সব গুলারে এক রশিতে বাইন্দা পিটা”।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাই আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারী। অনেকদিন হুইল চেয়ারে ছিলাম, তারপর ওয়াকার। এখন বাসায় কোনোকিছু ছাড়াই হাঁটতে পারি। তবে বাইরে গেলে ওয়াকার নেই। ভালো আছি ভাইয়া। যে অবস্থা থেকে এই এখন আমি এসেছি, এমন যেনো কারো জীবনে না আসে। অসম্ভব শক্ত মন আমার, যে কোনো বিপদে ভাঙ্গি না, আবার মোচড়াইও না। প্রার্থনা করবেন যেনো খুব তাড়াতাড়ি নাচতে পারি দাঁড়িয়ে। বসে বসে শুধু হাত নাচিয়ে নৃত্যু অসহ্য। 😀
পরের পর্ব কবে আসবে?
ইঞ্জা
কি বলেন আপু, আমি তো শুনলাম এই কয়েকদিন আগে, এরপরেও আপনার ব্যাথাটা যেন দ্রুত সেরে যায় এই দোয়া মন প্রাণ থেকে রইল বিধাতার কাছে, আজকালকের মধ্যেই পাবেন পরের পর্ব।
ছাইরাছ হেলাল
এগুলো সবই জীবনে প্রতিচ্ছবি, আমরা জানি বা জানি না।
চলুক, আছি সাথে।
ইঞ্জা
প্রতিদিন হাজারো নদী এইভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন যেখানে যেমন কেউ পায় কেউ পায় না, কেউ পেয়ে হারায়।
কেউ উপলধ্বি করতে পারে কেউ পারেনা, জথা অজথায় হারায়।
কেউ আঁকড়িয়ে জিবন্টাকে মানিয়ে নিতে চায় কিন্তু সেটা বৃথায় ।
ইঞ্জা
যথার্থ মন্তব্য করেছেন ভাই। (y)
মৌনতা রিতু
একেকটা জীবন একেক রকম। রনিরা হলো পুরুষ নামের জালিম পুরুষ।
এ জীবন খুবই ছোট। কেন যে এরা এই সম্পর্কগুলোতে তিক্ততা নিয়ে বেঁচে থাকে!
গল্প ভালো হচ্ছে। জীবনের কঠিন কিছু দিক উঠে এসছে।
ইঞ্জা
একটু খুঁজে দেখলে এমন রনি আমাদের আশে পাশেই পাবেন আপু আর এদের কাছে নারীরা কিট মাত্র।
মোঃ মজিবর রহমান
অভাব নায়।
ইঞ্জা
জি মজিবর ভাই, অভাব নেই, রন্দে রন্দে আছে এরা।
জিসান শা ইকরাম
ভদ্র মানুষের মুখোশ পড়া এমন অনেক পশু আছে যারা রনিরই মত স্ত্রীর উপর পশুত্ব ফলায়,
এরা একজন জানোয়ার, এদের মুখোশ খুলে দেয়া উচিৎ।
গল্পের এই পর্বটি যেন বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি।
ইঞ্জা
এরপরেও রনিরা যুগে যুগে নদীদের লাঞ্ছিত করে যায়, নিষ্পেষিত করে আর আমাদের সমাজের উচিত এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নদীদের রক্ষা করা, দোয়া রাখবেন ভাইজান যেন এই গল্পটি ভালোভাবে শেষ করতে পারি।
জিসান শা ইকরাম
এই ধরনের মানুষরুপী কয়েকজন পশুর কথা আমি জানি। ইচ্ছে করে চাবকিয়ে এদের গায়ের চামড়া উঠিয়ে লবন দিয়ে দেই।
এদের ফটো সহ অপকর্ম এবং নির্যাতনের কথা প্রকাশ করা যায় কিনা ভাবছি। আইনগত কোন বাধা না থাকলে প্রকাশ করে দেব।
ইঞ্জা
সামাজিক ভাবে হলে বেশি ভালো হতো ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
আপনার পোষ্ট পড়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, ব্যাক্তিগত ভাবে যে সব ঘটনা জানি তা নাম পালটিয়ে পোস্ট দেব,
অন্তত সবাই জানুক এমন ঘটনা আমাদের আশেপাশেও ঘটছে, যা কল্পনা বা গল্প নয়, বাস্তব।
ইঞ্জা
দারুণ হবে ভাইজান, মানুষ জানুক, বুঝুক, হয়ত এইসব লেখা পড়ে জানোয়াররা বুঝবে তাদের দিন ঘনিয়ে আসছে, শুভকামনা জানবেন।
নীরা সাদীয়া
তাই করুন দাদা। আমরাও জানতে চাই।
শুন্য শুন্যালয়
নদী আর জীবনের বারবার দেখা হয়ে যাচ্ছে!! 🙂
একটা কথা বলতাম ভাইয়া। লেখায় যাকে ভালো চরিত্রের দেখাচ্ছেন, সে খুবই ভালো, যে খারাপ সে খুবই খারাপ। মিশ্র চরিত্রের হলে লেখা বেশি বাস্তবিক মনে হবে, এমনটা আমার মনে হয়। কিছু মনে করলেন নাতো?
লেখা কিন্তু সবগুলো পড়া শেষ 🙂
ইঞ্জা
আপু একটা মানুষ বদের বদ হতে পারলে নায়ক ভালোর ভালো হতে পারা উচিত যেমন আপনার এই cool ভাইটা। 😀
মিশ্র চরিত্র নিয়ে লিখতে গেলে আপু আমিই না তালগোল পাকিয়ে ফেলি তাই ওইদিকে যেতে চাইনা।
অনেকদিন পর আপনার কমেন্ট পেয়ে যারপর নাই আমি মহা খুশি \|/ ধন্যবাদ আপু।
নীরা সাদীয়া
ছোট বাচ্চা আর পোষা প্রানি, কেবল এদের নিষ্পাপ মুখের দিকে চেয়েই মন খুলে হাসা যায়।
ইঞ্জা
মার্চে কমেন্ট করেছেন কিন্তু আমি কোন নোটিফিকেশনই পাইনি, আজ আরেক ভাই কমেন্ট করাতেই বিষয়টি ধরা খেলো আপু, ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
মা বাবা মনে করছে নদী ভালো জামাই পেয়ে সুখেই আছে। অথচ ওর কষ্টের শেষ নেই।
ছেলে মেয়েরা ছোট থাকলে মা বাবা তাদের দুঃখের কথা ছেলেমেয়েকে বলে না। কারণ এতে ছেলেমেয়ের মনে নেতীবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আবার ছেলেমেয়েরা বড় হলে বাবা মাকে তাদের দুঃখ বুঝতে দেয় না। কারণ তাতে অসুস্থ বাবা মার ক্ষতি হতে পারে।
গল্প চলুক…….
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অশেষ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।