নদী (১৬তম পর্ব)

ইঞ্জা ৯ এপ্রিল ২০১৭, রবিবার, ১০:৫৯:৫৪পূর্বাহ্ন গল্প ৪২ মন্তব্য

images-23

 

 

সকাল সকাল নদী ফ্রেস হয়ে, নাবিলাকে উঠিয়ে বাথরুমে পাঠিয়ে নিজে বের হলো নিজ রুম থেকে, নিচে নেমে এসে ঝটপট কিছু ভেজিটেবেল কেটে নিলো, তাই দিয়ে মিক্সড ভেজিটেবেল আর ভেকিটেবেল স্যুপ বানালো, রেডি হতে না হতেই জীবনকে দেখলো রেডি হয়ে নিচে নামতে আর তা দেখেই নদী রে রে করে উঠলো।
কি ব্যাপার, আপনি রেস্ট না করে রেডি হয়ে কই যান।
জ্বর তো নেই, জবাবে জীবন বললো।
দেখি বলে নদী কপালে হাত দিলো, হাত সরিয়ে নিয়ে বললো, হাঁ জ্বর তো নেই দেখছি।
হুম কাল রাত থেকেই জ্বর নেই।
তবুও আজ রেস্ট করতে পারতেন।
না সম্ভব নয়, কাল ব্যাংকে যায়নি, আজ যেতে হবে।
আচ্ছা আপনি বসুন, আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি, বলেই ভেজিটেবেল, টরটিলা আর স্যুপ নিয়ে জীবনের সামনে দিলো।
আপনি খাওয়া শুরু করুন, আমি নাবিলাকে রেডি করে নিয়ে আসছি।
ওকে যান।
নদী দ্রুত উপরে গিয়ে নাবিলাকে রেডি করে নিজেও রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।
আপনি খুব ভালো স্যুপ বানান, জীবন বললো।
নদী একটা মিষ্টি হাসি দিলো।
আচ্ছা শুনুন, আপনি অফিস থেকে কিছুক্ষণের ছুটি নিতে পারবেন?
জানিনা।
ঠিক আছে আমি ডিনকে ফোন দিয়ে বলবো, আপনি এসে আপনার একাউন্ট খুলে চেকটা জমা করে যাবেন।
ঠিক আছে।

দুপুরের পর নদী ব্যাংকে এলো, নিচের রিসেপশনে জীবনের কাছে এসেছে বলাতে রিসেপশনিস্ট জীবনকে কল দিয়ে জানালো, এরপর ফোন রেখে নদীকে ইংরেজিতে বললো, ম্যাম, আপনি বসুন, মি. জীবন আসছেন একটু পর।
ওকে বলে নদী গিয়ে সামনে রাখা সোফায় গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো, কিছুক্ষণের মধ্যে জীবন এসে নদীকে ডেকে নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে নিয়ে গেলো একাউন্ট খোলার জন্য, অফিসারের কাছ থেকে ফর্ম চেয়ে নিয়ে নদীকে দিলো ফিলাপ করে দিতে।
নদী ফিলাপ করতে করতে অফিসার উঠে গিয়ে নিজেই কফি নিয়ে এলো, জীবন ব্ল্যাক কফি নিল, নদীকে বললো, কফি নিন।
নদী ফর্ম ফিলাপ করে সাইন করলো, এরপর অফিসারকে দিয়ে নিজের কফি তুলে নিলো।
দশ মিনিটের মধ্যে একাউন্ট ওপেন করে নদী কাউন্টারে গেল চেক জমা দিতে, জমা দিয়ে এসে জীবনের পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো, জ্বরের কি অবস্থা?
মনে হয় আবার জ্বর উঠছে।
তাহলে আপনি ছুটি নিয়ে নিন, বাসায় চলেন।
কেন আপনার অফিস আছেনা?
না আজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে আমাকে।
তাই, আচ্ছা চলুন আমার অফিস রুমে যায়।
চলুন।
জীবন নিজের রুমে এসে নদীকে বসতে বলে নিজের সামনে রাখা ফাইল গুলো ঝটপট দেখা শেষ করে ইন্টারকমে ব্রাঞ্চ ইনচার্জকে ফোন দিয়ে নিজের অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়ে নিলো আর নদীকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
গাড়ীতে উঠেই নদী বললো, চলুন আগে ডাক্তার দেখাই।
আরেহ না না, মাত্র দুইদিনে জ্বরে ডাক্তার দেখায় নাকি?
নাহ এরপরেও দেখিয়ে নিন।
আচ্ছা চলুন, আমার এক ডাক্তার বন্ধু আছে, তাকেই দেখিয়ে নিই।
চলুন।

ডাক্তার চেক করে বললো, ওয়েদার চেইঞ্জ হচ্ছে বিধায় জ্বর হয়েছে, একটা মেডিসিন লিখে দিয়ে বললো, এইটা খাও, সেরে যাবে।
মেডিসিনের নাম দেখে জীবন বললো, গতদিন থেকে খাচ্ছি।
তাহলে আর চিন্তা কি, টেইক কেয়ার।
নদীকে নিয়ে জীবন বেড়িয়ে এসে বললো, দেখলেন, অযথায় এলাম।
অসুবিধা কি, নিজের মনে তো শান্তি এলো, বলেই ফিক করে নদী হেসে দিলো।
আচ্ছা চলুন কিছু মার্কেটিং করতে হবে, কাল আমার কিছু বন্ধু তাদের ওয়াইফ আর বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় আসবেন।
কি বলেন, এতো শর্ট নোটিসে।
কি আর করা, ওরা আমাকে জানিয়েছে কয়েক ঘন্টা আগে।
তাহলে চলুন, মার্কেটিং সারা যাক।
জীবন নদীকে নিয়ে নদীর পুরনো শপটাতে চলে এলো, দুজনে নেমে ভিতরে এলে, শপের মালিক মহিলা নিজেই এলো নদীকে দেখে।
হ্যালো হ্যালো নদী, তুমি কেমন আছো এখন, অনেকদিন পর দেখছি তোমাকে।
আমি ভালো আছি, তুমি ভালো আছো?
হাঁ আমিও খুব ভালো, শপিং করতে এসেছো?
হাঁ।
ওকে তাহলে শপিং করো আর সামনের ফ্রিজ থেকে দুইটা ড্রিংকস নিয়ে নাও কম্পলিমেন্ট হিসাবে, চুমুক দিতে দিতে কেনাকাটা করো, ওকে ডার্লিং।
ধন্যবাদ তোমাকে।
ইউ আর ওয়েলকাম ডিয়ার।
নদী জীবনকে নিয়ে সামনে এগুলো, ফ্রিজ খুলে নদী একটা সোডা ওয়াটার নিলো আর জীবনকে বললো, কি নিবেন আপনি?
জীবন জিজ্ঞেস করলো, বিয়ার নেবো?
আপনি খান?
খায় তবে মাঝে মাঝে।
নদী হেসে বললো, আপনার না জ্বর?
এখন নিই, গরম হয়ে এলে খাবো।

নদী আর জীবন এগুলো প্রথমে মাছ মাংস নিতে, নদী বেছে বেছে দুইটা রেড স্যানাইপার নিলো, চারটা চিকেন, গরুর মাংস, ফ্রেস ভেজিটেবেল, বড় বড় দেখে তিন কেজির প্রণ নিলো, সাথে নিলো বিভিন্ন ধরণের ফ্রুটস, দুধ সহ আনুষঙ্গিক জিনিষপত্র, ব্রান্ড দেখে দেখে মসলা, মরিচ, টমেটো ক্যাচাপ, ওয়েস্টার সস, ভিনেগার ইত্যাদি নিলো, জীবন এক ক্রেইট বিয়ার নিলো বন্ধুদের জন্য, সাথে নিলো আউস্ক্রিম আর পুডিং, এরপর কাউন্টারে এসে বিল মিটিয়ে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠলো।
এখন বিয়ারটা খাই, জীবন অনুমতি চাইলো।
খেয়ে নিন।
জীবন বিয়ার খুলে চুমুক দিলো আর নদী নিজের সোডা ক্যান খুলে চুমুক দিতে লাগলো।
খাওয়া শেষে খালি ক্যান দুইটা নদী গিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে এলো।
বাসায় যাওয়ার পথে নাবিলাকে উঠিয়ে নিলো সোফিয়ার বাসা থেকে, বাসায় পোঁছে নদী নাবিলাকে নিয়ে নিজ রুমে চলে গেল ফ্রেস হতে।
ফ্রেস হয়ে এসে নদী নিজেদের জন্য কফি রেডি করে নাবিলাকে ফ্রেস অরেঞ্জ জুস করে দিলো, জীবন নিচে নেমে এলে জিজ্ঞেস করলো, জ্বর কি বেশি?
না, জ্বর নেই এখন, মেসিনে চেক করলাম, 98 মাত্র।
হুম, বলেই নদী ফ্রিজে সব কিছু তুলে রাখতে লাগলো, জীবনও হাত লাগালো, ফ্রিজে তুলে রেখে নদী বললো, আপনি নাবিলার হোম ওয়ার্ক গুলো করে দিন, এইদিকে আমি সব সামলাছি।
ওকে বলেই জীবন মেয়েকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে গেল, নদী বসে গেলো সবজি, মাছে মাংস কাটাকুটিতে।

পরদিন খুব সকাল সকাল নদী রান্নাবান্নায় লেগে গেল, মেহমানরা দুপুরেই খাবে।
নদী রান্নার সাথে সাথে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে লাগলো, আজ রবিবার বলেই কারো অফিস স্কুল নেয় বিধায় জীবন আর নাবিলা একটু দেরি করেই নিচে নেমে এলো আর এসেই জীবন অবাক হয়ে গেল।
কি ব্যাপার, আপনি কখন নেমেছেন?
এই ঘন্টা দেড়েক হয়।
তাই তো দেখছি, আপনি তো রান্নায় শুরু করে দিয়েছেন, তা কি কি রেডি হচ্ছে?
রেড স্যানাইপার উইথ ওয়েস্টার সস, কিছু মিটবল বাকিটা দিয়ে বিফ সাসলিক, প্রণ কম গ্রেভি দিয়ে ঝাল ঝাল দেশি স্টাইল, চিকেন উইথ জিনজার, চিকেন সুইট এন্ড সাওয়ার, চাইনিজ ভেজিটেবেল, চিকেন ভেজিটেবেল স্যুপ থাই স্টাইল।
বাহ দারুণ তো, এতো রান্না জানেন?
মার কাছে শিখেছিলাম বলেই নদীর মন ভারি হয়ে উঠলো, তা দেখে জীবন কথা ঘুরালো।
ডেজার্ট কি হবে?
নদী ব্রেকফাস্ট টেবিলে দিতে দিতে বললো, ফ্রুট কাস্টার্ড করছি, আইসকক্রিম ফালুদা হবে সাথে।
অবাক স্বরে জীবন বললো, এতো কিছু রান্না করবেন?
গতকালই ফ্রুট কাস্টার্ড আর ফালুদা রেডি করে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি আর বাকিটা করতে হয়তো আর দেড় দুই ঘন্টা লাগবে।
আসুন ব্রেকফাস্ট করে নিই।
নদী হাত ধুয়ে নিয়ে নিজেও এসে ব্রেকফাস্ট করতে বসে পড়লো।

দুপুর থেকেই গেস্ট আসা শুরু করলো, গেস্ট আসার আগেই নদী নাবিলাকে নিয়ে রেডি হতে গেল, নিচে এসে দেখে সোফিয়া ভাবী, উনার হাসবেন্ড বাচ্চাদের নিয়ে আসছেন, সোফিয়া এসেই নদীর সাথে কিচেনে ব্যস্ত হয়ে গেলো, একে একে বাকি গেস্ট এসে পড়লে জীবন সবার সাথে নদীকে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলো, পরিচয় শেষে সবাই আড্ডায় মজে গেল।
সবাই হাসি ঠাট্টা করছে, কেউ বিয়ার খাচ্ছে, কেউ ফ্রেস জুস।
নদী সোফিয়া ভাবীকে নিয়ে চলে গেল কিচেনে, টেবিলে খাবার সাজাতে, মানুষ বেশি বলেই বুফে কিরে দিলো, দেওয়া শেষে সবাইকে আমন্ত্রণ জানালো খাবার রেডি হয়েছে বলে।
সবাই এসে প্লেটে করে নিজ নিজ খাবার নিয়ে খাবার শুরু করলো, নদী নাবিলা সহ বাচ্চাদের খাবার নিতে সাহায্য করতে লাগলো, বাচ্চাদের নিয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো আর তখনই জীবনের বন্ধু শীতিল বললো, বন্ধু সব রান্না কি উনিই করেছেন?
হুম, আমি তো এইসব রাঁদতে জানিনা, নদীই রেঁধেছে।
একা এতোগুলা রান্না, তাও এতো টেস্টি!
হুম খুব ভালো রান্না জানে ও।
নদী এসে সবার কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলো, কেমন হয়েছস রান্না, কারো কিছু লাগবে?
সবাই সমস্বরে বললো, খুব মজাদার রান্না, সবাই খুব সুনাম করতে লাগলো।
খাওয়া প্রায় শেষ হতে চললো, তখন নদী সবার জন্য ফ্রুট কাস্টার্ড আর আইসক্রিম ফালুদা রেডি করে দিলো আর তা দেখে তো সবার চোখ ছানাবড়া, একজন বললো, গত এগারো বছরে এই খাওয়া চোখেই দেখিনি, মার হাতে শেষ খেয়েছি।
আপনারা খান, আমি বাচ্চাদেরকে দিয়ে আসছি, বলেই নদী চলে গেল।
এই মেয়ে দেখি সর্ব গুণে গুণান্বিত, ইফতি বলে উঠলো।
আসলেই নদীর গুণ অনেক, জীবন স্বগতোক্তি করলো।

................. চলবে।
ছবিঃ google.

0 Shares

৪২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ