নদী (প্রথম পর্ব)

ইঞ্জা ১০ জানুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:২২:৩১পূর্বাহ্ন গল্প ৩১ মন্তব্য

images-11

 

 

প্রায় নয়টা, নদী হেটেই ফিরছিলো ওর চাকরীস্থল থেকে, নদী এসেছে লন্ডনে বিয়ের ছয় কি সাত মাস পর, ওর হাসবেন্ড লন্ডনে থাকে আর সেই সুবাদেই নদীর সংসার লন্ডনেই, নদী যেমন শিক্ষীতা তেমনই সুন্দরী, লন্ডনে আসার পর ওর হাসবেন্ড উপরি ইনকামের জন্য ওকে এক গ্রোসারি শপে চাকরী করিয়ে দেয় আর সেইখান থেকেই ফিরছিলো সে, কিছুদূর এগিয়ে গেলেই তার বাসা কিন্তু বড় একটা কিছু পড়ে থাকতে দেখে সে প্রথমে আঁতকে উঠলো, ভালো করে ঠাহর করে দেখতে লাগলো কি জিনিষ সেইটা, আসে পাশে আলো কম থাকায় সে বুঝে উঠতে পারছেনা কি ওইটা, দ্রুত নিজের ব্যাগ খুলে ছোট টর্চ লাইটটা বের করে অন করে আলো ফেললো জিনিষটার উপর, দেখলো একটা মানুষ পড়ে আছে, সে আসতে আসতে একটু কাছে গেল আর নিরাপদ দূরত্ব রেখে ইংরেজিতে বললো, হ্যালো হ্যালো, স্যার আর ইউ ওকে?
মানুষটা হাল্কা নড়ে উঠলো আর একটা গোঁগানির মতো আওয়াজ করলো তারপর বললো, হেল্প।
নদী আরেকটু এগিয়ে গেল সাহস করে বললো, আপনার কি হয়েছে?
প্লিজ হেল্প, আবার বললো লোকটা আর কষ্ট করে একটা হাত তুললো তারপর গুগিয়ে উঠে বাংলায় বললো, ও মা।
নদী বাংলা শব্দ শুনে দ্রুত কাছে গিয়ে মানুষটিকে ধরলো আর বললো, আপনি বাঙ্গালী?
প্লিজ কল 911
নদী দ্রুত ব্যগ থেকে সেলফোন বের করে ৯১১ এ কল দিলো আর সাহায্য চাইলো।
মিনিট পাঁচ সাতেকের মধ্যে এম্বুলেন্স আর একটি পুলিশের গাড়ী এসে হাজির হয়ে প্রথমে মানুষটিকে এম্বুলেন্সে উঠালো, এম্বুলেন্স চলে গেলে নদীকে পুলিশ জিজ্ঞসাবাদ করে ছেড়ে দিলো, তার আগে নদীর নাম ঠিকানা ঠুকে নিলো।

বাসায় ফিরে চাবি দিয়ে খুলতে গেলে হঠাৎ দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালো ওর হাসবেন্ড রনি আর খুলেই জিজ্ঞেস করলো, কি সমস্যা, কোথায় গিয়েছিলে, এতক্ষণ কেন, কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো।
নদী ভয়ে জড়সড় হয়ে গেল, বললো হেটে আসতে দেরী হয়ে গেল, আসল ঘঠনা বললোনা, জানে বললে আরো খেপবে ও।
কেন পায়ে কি বেড়ী লাগিয়েছো নাকি, হাটতে সমস্যা হয় যে আধা ঘন্টার হাটা পথ দেড় ঘন্টা লাগে?
আর দেরী হবেনা সরি।
সরি টরি বলে ক বুঝাতে চাও তুমি, আর কখনো দেরী করেছো তো চাবকিয়ে তোমার চামড়া তুলে ফেলবো, এই তোমার লাস্ট ওয়ার্নিং, এখন যাও রান্না শেষ করো, বলেই রনি গিয়ে টিভি অন করে বসে পড়লো ড্রয়িং রুমের সোফায়।
নিজের ব্যাগ আর গরম কাপড় দ্রুত খুলে রেখে নদী রান্নার কাজে লেগে গেল, প্রায় এক ঘন্টা পর রান্না করা শেষ হলে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিতে লাগলো আর ডাক দিলো, খাবার দিয়েছি আসো।
রনি টিভি বন্ধ করে এসে টেবিলে বসলো, খাওয়া শুরু করেই বললো কি সমস্যা তোমার, এইসব কি ছাইপাঁশ রান্না করেছো?
কি হলো?
মাংসে লবণ দাওনি কেন, চিল্লাইয়ে উঠলো রনি।
সরি হয়তো কিছু কম হয়েছে, একটু লবণ দিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
সাট আপ তুমি আমাকে শেখাও কি করতে হবে?
না না আমি তো এমনেই বলছিলাম, নদী আঁতকে উঠে বললো।
তুমি দূর হও আমার সামনে থেকে, গেট আউট।
নদী আর ভাত খেতে পারলোনা দ্রুত উঠে চলে গেল বাথরুমে, বাথরুমের দরজার বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।

এক সপ্তাহ পর

কলিং বেলের শব্দ শুনে চমকে উঠলো নদী, মনে মনে ভাবলো নিশ্চয় রনি ফেরত এসেছে বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে, প্রতি রবিবার রনি সকাল সকাল বেড়িয়ে যায় আর আসে অনেক রাতে, নদী দ্রুত উপর থেকে লাফাতে লাফাতে নামলো আর দ্রুত দরজা খুলে দিলো আর ভয় মিশ্রিত চোখে তাকালো আর অবাক হলো এক আগন্তুককে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
আগন্তুক সালাম দিয়ে বললো, সরি আমি একটু বিরক্ত করবো, মিসেস নদীর কাছে এসেছিলাম, বাংলায় বললো।
আপনি?
আসলে উনি আমাকে বাঁচিয়ে ছিলেন এই কয়দিন আগে।
ও আচ্ছা আচ্ছা আপনিই সেই।
আপনিই কি নদী?
জি।
নিন আপনার জন্য বলেই ফুলের বুকেটা বাড়িয়ে দিলো।
ইতস্তত করে নদী বুকেটা নিয়ে বললো সরি আমার হাসবেন্ড জানেন না বিষয়টা, প্লিজ কাউকে বলবেন না প্লিজ, আকুতি ঝড়ে পড়লো চোখে মুখে।
আরেহ না না ঠিক আছে, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বাঁচানোর জন্য, সাত আটজন সাদা একা পেয়ে এমন মার মেরেছিলো নড়তেই পারছিলাম না।
আপনি আমার ঠিকানা কোথায় পেলেন?
হাসপাতালের রেজিস্টারে পুলিসই লিখে দিয়েছিলো, এনিওয়ে আমি জীবন চৌধুরী, এই নিন আমার কার্ড, আসলে আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো বুঝতে পারছিনা, আমি ঋণী হয়ে থাকলাম।
না না অসুবিধা নাই, ভালো থাকবেন।
জি আরেকটা কথা, আপনার বা আপনার হাসবেন্ডের যখনই কোন দরকার হয় আমাকে স্বরণ করবেন এই অনুরোধ রইল, আসি সালামালেকুম, জীবন বিদায় নিয়ে উঠোন পেড়িয়ে এসে গাড়ীতে উঠলো।
নদী দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলো ওই মানুষটার গাড়ীতে খুব সুইট একটা বাচ্চা বসে আছে, নিজের মনটা একটু ভারি হয়ে উঠলো।

জীবন চৌধুরী মানে জীবন ছাত্র অবস্থায় ইংল্যান্ডে আসে পড়াশুনার জন্য পড়াশুনা শেষে এইখানেই বড় একটা ব্যাংকে চাকরী পেয়ে যায় আর বর্তমানে সেই ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে আছে, বিয়ে করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েকে যে জম্মসূত্রে ইংল্যান্ডের নাগরিক যে ছয় বছরের মেয়েকে রেখে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় এক পাকিস্তানির সাথে পরে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়, এখন বাবা মেয়েকে নিয়ে একলায় থাকে টুটিংয়ের নিজস্ব বাড়ীতে, মেয়ে এখন স্টান্ডার্ড টুতে পড়ে।
প্রতি রবিবারই মেয়েকে নিয়ে বের হয় জীবন, কখনো কখনো মেয়েকে নিয়ে শহর ছেড়ে দূরে চলে যায় বাবা মেয়ের পিকনিক করতে, না হয় চলে যায় দূরের কোন রেস্টুরেন্টে, এইভাবেই চলে বাবা মেয়ের সংসার। আজ যাচ্ছে কাছের একটা রেস্টুরেন্টে যেখানে খাবে এরপর মেয়ের বায়না মতো ওর বান্ধবীর বাসায় পোঁছে দিয়ে কিছু গ্রোসারি কিনতে যাবে জীবন এরপর এইদিক ওইদিক ঘোরা ফেরা করে মেয়েকে পিক করে বাসায় ফিরে যাবে।
কি খেতে চাও আজ, মেয়েকে জিজ্ঞেস করলো জীবন।
ড্যাড চলনা আজ পিজ্জা খাই।
ওকে ল্যাটস গো ফর দা পিজ্জা।
এয়েএএএএএএ করে মেয়ে চিয়ার আপ করলো।
মেয়েকে নিয়ে পপুলার এক রেস্টুরেন্টে গেল, বাপ বেটি একটা টেবিল দখল করে বসে পড়লে এক ওয়েট্রেস এসে মেনু দিলো জীবনকে আর জীবনের মেয়ের চিবুক ধরে জিজ্ঞেস করলো, হাই সুইটি তোমার নাম কি?
মাই নেম ইজ নাবিলা।
জীবন পিজ্জার অর্ডার দিলো সাথে কি কি টপিং দিতে হবে বলে দিলো সাথে ফ্রুট জুসের অর্ডার দিলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে মেয়েকে বললো, বেবি তোমার বন্ধুর বাসায় যাবে যখন কিছু চকলেট নিয়ে যাও, ওয়েট জাস্ট সিট টাইট আই এম কামিং ব্যাক সুনেস্ট পসিবল, বলেই জীবন রেস্টুরেন্টের পাশের সপে চলে গেল আর সেইখান থেকে অনেক গুলো চকলেট নিয়ে এলো এরপর বিল মিটিয়ে দিয়ে দুজনেই বেড়িয়ে এসে গাড়ীতে চেপে বসলো।
মেয়েকে ওর বন্ধুর বাসায় ড্রপ করে জীবন গাড়ী ড্রাইভ করে তার বাড়ীর কাছের গ্রোসারি শপে চলে এলো, গাড়ীটা পার্কিং লটে রেখে এগিয়ে গেল শপের দিকে, অটোমেটিক দরজা খুলে গেল ও দরজার কাছাকাছি এলে, ভিতরে প্রবেশ করে জীবন একটা ট্রলি নিয়ে এগুলো, প্রথমেই পড়লো সফট ড্রিনক্স আর এলকোহলের ভেন্ডার মেশিন, জীবন পকেট হাতড়ে কয়েন বের করে একটা মেসিনে দিয়ে একটা সোডার ক্যান নিলো তারপর খুলে নিয়ে চুমুক দিতে দিতে এগুলো এরপর যথারীতি দরকারি জিনিষ গুলো খুঁজে খুঁজে ট্রলিতে ভরতে লাগলো আর একদম শেষে নিলো দুই বোতল ভদকা, নিয়ে এগুলো কাউন্টারের দিকে, কাউন্টারে গিয়ে বললো হাই, শপের মেয়েটা কম্পিউটারে কাজ করছিলো মাথা তুলতে তুলতে বললো, হাই তারপর চমকে উঠলো আর জীবনও অবাক হলো কাউন্টারে নদীকে দেখে এরপর বললো, রিয়েলি ইটস স্মল ওয়াল্ড।
নদী নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
জীবন সব গ্রোসারি আইটেম একে একে তুলতে তুলতে বললো, আপনি এইখানে জব করেন?
জি।
গুড গুড।

...............চলবে
ছবিঃ Google.

 

 

 

 

 

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ