দেয়াল ০১

সৌবর্ণ বাঁধন ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৫:২৫অপরাহ্ন কবিতা ২১ মন্তব্য
(১)      
ইটের নিবিড়তম দেয়ালে চাপা পড়ি প্রতিদিন,
রক্তাক্ত খোলার মতো, বৃদ্ধ পরিব্রাজকের মতো
অনন্ত আকাঙ্ক্ষা আর সীমাহীন পথ
থেমে যায়! 
বিস্ময়বোধক চিহ্নের সাথে হতবাক অনুভূতি
ওলন্দাজ আমলের বেতবনে লুকানো আলোর
মতো আমাকে নিভিয়ে ফেলে,
আটকে দেয় মরা মগডালে,
জ্বলার অপেক্ষায় হিসহিস করে দেশালাইয়ের
সালফার;
প্রেম দিলে বদলেছে কবে আগুনের প্রকৃতি?
রাণীর খোঁপায় ভালোবাসা ফুল নয়,
স্রেফ বিষধর কাঁটা হয়ে জনান্তিকে শোকগাঁথা
গায়,
আমার চারিদিকে ক্রমবর্ধমান দেয়ালের গর্জন
প্রাচীন বেতারের মতো টংকার দিয়ে যায়!
আমি শোকগ্রস্ত বিড়াল! আমি বিষণ্ণ বেতাল,
সারারাত কেঁদে চলা বিষাদগ্রস্ত সারমেয়,
স্প্যানিয়ার্ড চাঁদ যাকে রেখেছে ওয়াইনের বোতলে
ভরে কয়েক শতাব্দী কাল,
চারিদিকে লকলকে জিহ্বায় পরিস্ফুট জীবন্ত দেয়াল!

(২)
মৌর্য গুপ্ত কনিষ্কের আমলের পুরাতন ইট সুড়কির ভিড়,
অসমাপ্ত মোঘল দূর্গের পাটাতনের প্রসন্ন প্রস্তর,
খাঁচা ভাংগা বুনো পাখিদের ঝড় হয়ে
প্রতিটি আশাহত বিকেলে যায় কোণঠাসা করে দিয়ে,
আমি শেষ উপকূলে বিবদমান আহত শ্বাপদ!  
পাঁচটি দেয়াল পঞ্চমীর রাতে পঞ্চভূত থেকে আবির্ভূত! 
কতোগুলো কাঁটাতার রক্তাক্ত সীমান্তের মতো,
ক্রমাগত আটকে দিচ্ছে এখন! 
দশদিক থেকে গুণে গুণে দশটি ধাবমান অন্ধকার,
আসক্ত নারীর মতো পেঁচিয়ে রাখে পুরোটা শরীর,
লতায় আঙ্গুরের মতো ঝুলে থাকা বিষ,
ধীরে ধীরে ঢলে পড়ে চামড়ার মৃত কোষে,
তীব্র যন্ত্রণার চিৎকার ঢেলে দেই পৃথিবীর কানে! 
আমিতো দেয়ালে বন্দী পতঙ্গ,
মানুষেরা বুঝবেনা এই শব্দের কোন মানে,
অক্সিমিটারে নেমে যাচ্ছে অক্সিজেনের অমূল্য ঘনত্ব! 
হাঁসফাঁস করে ক্ষুধার্ত ফুসফুস! হৃদপিণ্ডটা আরবীয়
ঘোড়ার অবাধ্য ক্ষুরের মতো দোর্দন্ড প্রতাপে
লাফাতে লাফাতে… মনে হয় থামবে না আর!  
মৃন্ময়ী অরূণা দূরের গলিতে,
আমিতো ঘুড়ি হতে গিয়ে ভুলেছি আকাশের ঠিকানা,
তবুও প্রাণপণে দেয়াল সরাই,
পবিত্র পানীয়ের এতো কাছে এসে একবার গেলাসটা
ঠোঁটে ছোঁয়াবো না?
তবুও যাচ্ছে সরে শেষ ভোজনের মাঠ
অদৃশ্য আংগুরলতা,  
ক্রমশ অপসৃয়মান ছায়াটির নাম কাংখিত দয়িতা!
0 Shares

২১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ