দেশে গণহারে গায়েবানা জানাযা পড়া হচ্ছে অথচ এ ব্যাপারে আলেমগন চুপ থাকছেন কেন? জানাযা নামাজ নিয়ে এ ধরনের যাচ্ছে তাই করার ব্যাপারে আলেমরা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর গায়েবানা জানাযা পড়ার হিরিক দেখে মনে হলো গায়েবানা জানাযা যেন ইসলাম র্ধমের একটি বড় অঙ্গ। অথচ এ ব্যাপারে ইসলাম র্ধর্মে স্পটই বলা আছে যে জানাযা ছাড়া কারো দাফন হলে শুধু তার জন্যা গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে। অন্যথায় পড়া জায়েজ হবে না। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম সেটা হচ্ছে গায়েবানা জানাযা নামাজের নামে জামাত ধর্মকে আরেক দফা রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলেঅ তারা দেশের যে সব এলাকায় গায়েবানা জানাযা পড়েছে সেখানেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে। জামাত এভাবেই দিনের পর দিন ইসলামে মওদুদী বাদ ঢুকিয়ে ধর্মটাকে নস্ট করার চেস্টায় লিপ্ত। ধর্মপ্রান মানুষ তাদের ধাপ্পাবাজিতে পড়ে নাজায়েজ বিষয়গুলোকে ধর্মীয় বিষয় হিসেবে গ্রহন করছে।
এবার আসুন আলোচনা করা যাক গায়েবানা জানাযার বিধান কী? যে কোন মৃত ব্যক্তির গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে কিনা?

গায়েবানা জানাযার ব্যাপারে হুকুম হলো--যার জানাযা পড়া হয়নি, কেবল তার ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কারো গায়েবানা জানাযা শরী‘আত সম্মত নয়। যেমন, কেউ যদি কাফের রাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানে তার জানাযা পড়া না হয়, তাহলে মুসলিম রাষ্ট্রে অবস্থানরত তার আত্মীয়-স্বজনগণ তার গায়েবানা জানাযা পড়তে পারেন। কিন্তু যার নিয়মতান্ত্রিকভাবে জানাযা পড়া হয়েছে, তার গায়েবানা জানাযা শরী‘আতসম্মত নয়।

রাসুল সা. এর জীবদ্দশায় একটি ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে আবিসিনিয়ার শাসক নাজাশীর ইন্তেকাল করলে । সাহাবীগণ আবিসিনিয়ায় হিজরত করলে তাঁদের সংস্পর্শে এসে তিনি ইসলাম গ্রহন করেন । তাঁর দেশে আর কেউ ইসলাম গ্রহন করেনি। যেদিন নাজাশী ইন্তেকাল করেন। সেই দিনই রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর ছাহাবীগণকে তাঁর ইন্তেকালের সংবাদ প্রদান করেন এবং গায়েবানা জানাযার নামাজ আদায় করেন। কারণ, তার জানাযা তার দেশে সম্পন্ন হয়েছিলো না। কিন্তু এ ছাড়া অন্য কারো গায়েবানা জানাযার কথা হাদীসে আসেনি। বাদশা নাজাশীর গায়েবানা জানাযা করার ঘটনাটি একান্তই রাসূল সা. এর সাথে বিশেষায়িত। কেননা রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় তাঁর অগণিত সাহাবী , আত্নীয়স্বজন ও আপনজন মৃত্যু বরণ করেছেন। অনেকেই তাঁর থেকে দূরে জিহাদের ময়দানে, বন্দি অবস্থায় বা দূরের কোন শহরে বা গ্রামে অবস্থান কালে ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের গায়েবানা জানাযা পড়েছেন বলে কোন হাদীসে নেই। কেউ তাঁর কাছে থেকে ইন্তেকাল করলে তিনি সাধারনত তাঁর জানাযা পড়তেন। তিনি কখোন কারো মৃতদেহের অনুপস্থিতিতে তার জানাযা পড়াননি। গায়েবানা জানাযার ব্যাপারে একটি মাত্র হাদিস রয়েছে-
عن أبي هريرة رضي الله عنه: أن النبي صلى الله عليه وسلم نعى النجاشي في اليوم الذي مات فيه، وخرج بهم إلى المصلى فصف بهم وكبر عليه أربعاً.
অর্থঃ “আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণীত, নবী সা.নাজাশীর মৃত্যুর দিন তার মৃত্যুর সংবাদ সাহাবীদেরকে জানালেন এবং তাদেরকে নিয়ে ঈদগাহে বের হলেন এবং তাদেরকে নিয়ে কাতার সোজা করে তার জানাযার নামাজ আদায় করলেন।”
[সূত্র : সহীহ বুখারী, জানাযা অধ্যায়, হাদীস নং ১৩১৩২৭/ সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায়, হাদাীস নং ৯৫১]

এছাড়া আর কোন হাদিসে গায়েবানা জানাযার ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই। এমনকি এ ব্যাপারে কোরআনে কোন আয়াত বর্ণিত হয়নি। মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামের মতে ব্যক্তি যদি এমন দেশে মৃত্যু বরণ করে যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই সেক্ষেত্রে তার জানাযার নামাজ পড়া যাবে, অন্যথায় নয়। এ মত গ্রহন করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ ও তাঁর ছাত্র ইবনে কায়্যিম রহঃ। ইবনে কায়্যিম রহঃ তাঁর ” যাদুল মা’আদ” নামক প্রসিদ্ধ কিতাবে বলেন
وقال شيخ الإسلام ابن تيمية: الصواب أن الغائب إن مات ببلدٍ لم يصلَّ عليه فيه، صلي عليه صلاة الغائب، كما صلى النبي صلى الله عليه وسلم على النجاشي لأنه مات بين الكفار ولم يُصلَّ عليه، وإن صلي عليه حيث مات لم يصلَّ عليه صلاة الغائب، لأن الفرض قد سقط بصلاة المسلمين عليه.
অর্থঃ ” শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন: সঠিক কথা হল, অনুপস্থিত ব্যক্তি যদি এমন দেশে মারা যায় যেখানে তার জানাযার নামাজ পড়ার মত কেউ নেই তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে। যেমন রাসূল সা. নাজাশীর জন্য পড়েছিলেন।কেননা তিনি কাফেরদের মাঝে মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং তার জানাযার নামাজ পড়া হয়েছিলো না।আর যদি ব্যক্তি যেখানে মৃত্যুবরণ করে সেখানে তার জানাযার নামাজ পড়া হয় তাহলে তার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়া হবে না।কেননা অন্যান্য মুসলমানরা তার জানাযার নামাজ পড়ার কারণে অন্যদের উপর থেকে ফরযিয়্যাত রহিত হয়ে গেছে।” বাব, আস সালাত আলাল জানাইয, খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৫০০ (শামিলা)

এবার দেখা যাক মাজহাব কি বলে?
চার মাজহাবের মধ্যে তিন মাজহাবে এ ধরনের জানাযাকে না জায়েজ বলা হয়েছে। কারন যে সাহাবারা এ নাজাশীর জানাযার বর্ণনা দিয়েছেন তাদের কেউ জীবদ্দশায় কোনদিন গায়েবানা জানাযা পড়েননি। হানাফি মাজহাবে এধরনের জানাযাকে নাজায়েজ উল্লেখ করা হয়েছে। হানাফি মাজহাবের মৌলিক গ্রন্থাবলীর মধ্যে সার্বধিক গ্রহযোগ্য গ্রন্থ ইমাম সারাখসী রচিত আল-মাবসুতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে 'লাশ শহরের ভেতরে থাক বা বাইরে থাক, কবরে দেয়ার আগে হোক বা পরে হোক, কখনই গায়েবানা জানাযা জায়েজ নয়।'

সুতরাং যার নিয়মতান্ত্রিক জানাযা পড়া হয়েছে, তার গায়েবানা জানাযা পড়া যাবে না। পড়লে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শবিরোধী ও শরীয়তপরিপন্থী কাজ হবে।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ