থাক না!! শিরোনাম দিয়ে কি হবে?

আহমেদ মারুফ ৩১ মার্চ ২০১৪, সোমবার, ১২:০৪:৪৬পূর্বাহ্ন বিবিধ ৪ মন্তব্য

নীলা সন্ধ্যে বেলা একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছে। এখন রাত একটা। এখনও ঘুম আসে নি। নীলার খুব বিরক্ত লাগছে। আজ রাতে ঘুম হওয়াটা খুব দরকার। কাল তার বিয়ে। আর ঘুম না হলে বিয়ের দিন তাকে নেশাখোরের মত লাগবে। এক রাত ঘুম না হলে তার চোখের নিচে কালি পড়ে। কপালে ও গায়ে তেলতেলে ভাব চলে আসে। যেকোন মুল্যে তাকে ঘুমুতে হবে কিন্তু ঘুম আসছে না।

নীলা কি করবে বুঝতে পারছে না। “ আচ্ছা রাহাত কে ফোন দিয়ে বলব ঘুম আসছে না! কাল আমাকে দেখতে আশি বছরের বুড়ির মত লাগলে সে বিয়েতে কোন আপত্তি করবে কি না?” নিজ মনে ভাবতে থাকে নীলা।

না! রাহাত কে ফোন দেয়া যাবে না। সে নিশ্চই ঘুমাচ্ছে! বিয়ের আগের রাতে সে ঘুম ছেড়ে নীলার সঙ্গে কথা বলতে বসে থাকবে কেন। আর এত রাতে ফোন দিয়ে এসব কথা বললে সে খুব হাসবে। সে হাসি আর থামানো যাবে না। রাহাত অকারণে হাসে। আর একবার হাসতে শুরু করলে সারা রাত জেগে কাটাতে হবে।

নীলা আবার ঘুমের চেষ্টা শুরু করলো। সে টিক করলো আধাঘণ্টার মধ্যে ঘুম না আসলে আরেকটা ঘুমের ট্যাবলেট খাবে সেটায় কাজ না হলে আরেকটা। দানে দানে তিন দান!!

ফোন বেজে উঠল। এমন সময় ফোন আসাটা তার কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। ভার্সিটির বন্ধুরা গভীর রাতে ফাজলামি করতে ফোন দেয়। কিন্তু আজও কেন ফোন দিতে হবে তাদের? নীলা খুব বিরক্ত হচ্ছে।

একবার ফোন বেজে বন্ধ হল। আবার ফোন বাজছে। বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নিতেই নীলা একটা ধাক্কা খেল। রাহাত ফোন দিয়েছে! এত রাতে রাহাতের ফোন দেয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। দু’বছরের পরিচয়ে/প্রেম একদিন ও যে কাজটা হয় নি সেটা আজ কিভাবে সম্ভব। রাহাত রাত জাগতে পারে না। সে পৃথিবীর ঘুমন্ত শ্রেণীর জীবদের একজন। তবে সেটা শুধু রাতের বেলায়।। নীলার স্পষ্ট মনে আছে; একদিন সে রাহাতের সঙ্গে কথা বলে সারা রাত চাঁদ দেখবে টিক করেছিল। কিন্তু রাহাত ফোনে দশ মিনিটের বেশি কথা বলতে পারেনি। সে রাতে রাহাত বারান্দার মেঝেতেই ঘুমিয়েছে। সেই রাহাত এত রাতে কেন ফোন দিল? সে নিশ্চই কোন বিপদে পড়েছে। এসব ভাবতে ভাবতে তৃতীয় বার ফোন বেজে উঠল। রিসিভার চেপে ফোন কানে নিল নীলাঃ

হ্যালো
এই ঘুমুচ্ছ?
না।
তাহলে ফোন রিসিভ করতে এত দেরী হল যে?
না এম্নিতেই!
ঘুম আসছে না?
হু!
আমারও!
কেন? তোমার শরীর খারাপ? গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা বেড়েছে?
কোনটাই না। কেন জানি ঘুম আসছে না। তোমার কথা শুনতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আমার এখন ঘুমুতে ইচ্ছা করছে।
আচ্ছা। আমি তাহলে ঘুমুতে গেলাম। শুভ রাত্রি

ফোন রেখে দিল রাহাত। নীলার খুব মন খারাপ হয়ে গেল। রাহাত কেন ফোন রেখে দিল। তার উচিত ছিল জোর করে নীলাকে কথা বলতে বাধ্য করা। কিন্তু সে কখনোই নীলাকে জোর করে না, নীলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে না। দু’বছরের ঘটর ঘটরে রাহাতকে খুব ভালো ভাবেই চিনে ফেলেছে নীলা। তার ভালো খারাপ সব ধরনের অভ্যাস নীলার জানা । তবু তার আজ এভাবে ফোন রেখে দেয়াটা নীলার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু রাহাতের উপর তার রাগ পাচ্ছে না। সে নিজেকে এর জন্যে দায়ী করছে। একটু কথা বলতেই তো চেয়েছিল। আর নীলা এভাবে তাকে তাড়িয়ে দিল!!

পর্দার ফাঁকে চাদের আলো নীলার বিছানায় পড়ছে। আকাশের চাঁদটা আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নীলা আর বিছানায় থাকতে পারল না। বারান্দায় রকিং চেয়ারে গিয়ে বসল সে। আজ আর ঘুমাবে না। কাল তাকে দেখতে উলুম্বুষের মত লাগুক; তবু কিছু আসে যায় না তার। আজ সারা রাত সে জেগে থাকবে; চাঁদের সঙ্গে ।

https://www.facebook.com/rockstaah.maruf/posts/625460654203397?notif_t=like

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ