(ডায়রীর পাতা থেকে)

পেয়ারা খাওয়া হলো না সেবার


১৯৮১ সালের কোন একদিন। সেসময় আমি ৬ষ্ট শ্রেণিতে পড়াকালিন সময় বাড়ি থেকে রাগ করে একবার পালিয়ে গিয়েছিলাম (কেন পালিয়ে গিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমার আরেকটি লেখা আছে)। চট্টগ্রাম শহরে থাকলে পরিবারের লোকেরা ধরে নিয়ে আবার স্কুলে পাঠাবে এই ভয়ে চলে গিয়েছিলাম সকলের গন্ডির বাইরে একেবারে রাজধানী ঢাকায়।

যাবার সময় বড় বড় বাসগুলো কিভাবে জাহাজে (ফেরী) করে বিশালাকার নদী পাড় হয়েছিলো সে অভিজ্ঞতার কথাও পরে লিখবো।

ঢাকায় গুলিস্তানের ‘বরিশাল বোডিং’ এ ১০ টাকা দিয়ে রাত কাটিয়েছিলাম। সেখানে বোডিং এ একটি ঘটনা হয়েছিলো। কাউন্টার থেকে ম্যানেজার আমায় বলেছিলো টাকাসহ দামী কিছু থাকলে যাতে ক্যাশে জমা দিই। আমার তেমন কিছু ছিলো না বলে জমা দিইনি। তাছাড়া ভয় ছিলো যদি সকালে না দেয়। ঘুমাবার সময় অল্প যা ছিল বেডের নীচে লুকিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে বেডের নীচে হাত দিয়ে দেখি কিছুই নেই। ভালো করে খুঁজে দেখি সেখানে তক্তা-ই নেই। আছে ফাক ফাক করে গাছের বাটাম। পরাণটা ছোৎ করে উঠলেও পরক্ষণে দেখি খাটের নীচে ফ্লোরে পড়ে আছে।

পরদিন হেটে হেটে ঢাকা শহর ঘুরে দেখেছিলাম। হাটতে হাটতে ফুটপাতে খুব সুন্দর এবং বেশ বড় সাইজের পেয়ারা দেখে খেতে ইচ্ছে হলো। তাই পেয়ারা ওয়ালাকে জিঙ্গেস করলাম ভাই পেয়ারা জোড়া কত?

সে বলল, হালি তিন টাকা।

আমি বুঝতে না পেরে আবার জিঙ্গেস করলাম ভাই পেয়ারার জোড়া কত?

সে আবার বলল, হালি তিন টাকা।

এবারও আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না । সে ঠিক কতটি পেয়ারার দাম তিন টাকা চাইছে সেটা বুঝতে না পারার কারণ হচ্ছে তখনও পর্যন্ত আমি হালি’র সাথে পরিচিত ছিলাম না। শুধু হালা’র সাথে পরিচিত ছিলাম, মানে জোড়া’র সাথে।

আমি এবারও বুঝতে না পেরে তাকে বললাম ভাই আমি জিঙ্গেস করছি জোড়া কত? আর আপনি এসব কি বলছেন! আমাকে বলুন এক জোড়া গয়ামের দাম কত?

সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, কোত্থেকে নামছেন?

আমি ভেবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, জঙ্গল থেকে। এটা বলে সোজা হাটা দিলাম ।

সেবার আর আমার পেয়ারা খাওয়া হয়নি।

(ডাপা= ডায়রীর পাতা)

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ