জন্ম-রাতের অনুভূতি-

সাবিনা ইয়াসমিন ১৩ জুলাই ২০২০, সোমবার, ০৩:৪২:৪৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ৩৭ মন্তব্য

বহু যুগ আগে জন্মদিনের সারাদিন পেরিয়ে রাত্রি বারোটার পরেই শুরু হয়েছিলো আমার  জন্মরাত। সেদিন কি করছিলাম, কি ভাবছিলাম আজ তার কিছুই স্মরণে নেই। মানুষের স্মরণশক্তি কতো অদ্ভুত! বড়ো-বড়ো ঘটনা থেকে শুরু করে তুচ্ছতম সব স্মৃতি, ভালো লাগা, মন্দ লাগা,, কতোকিছু তারা মনে রাখতে পারে, স্মরণে রাখে। অথচ পৃথিবীতে আসার মূহুর্তে কি অনুভব/উপলব্ধি করেছিলো সেটাই মনে থাকেনা! অথবা মৃত্যুর আগ মূহুর্তে কেমন লাগছে, তা-ও কি কাউকে বলে যেতে পারে?!

ছোট থাকতে পেতাম ভূতের ভয়। ভুত আছে কি নেই এতোসব বোঝার আগেই ভয় পাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিলো। ঠাকুমার ঝুলি থেকে বাস্তবে যেন উঠে আসতো গল্পের সব অতিশয় রাক্ষস, ভূত, দৈত্য-দানব।

কিশোরী বেলায় ধরলো অন্যরকম ভয়। প্রেমে ডোবা দৃষ্টি, উগ্রতায় ঢুলু-ঢুলু বদন , কখনো ভীষণ লাল রঙা চোখগুলো পথে-ঘাটে একা চলার সাহস দিতো না। কারো মিষ্টি-বাঁকা কথার তোরে উচ্ছন্নে  যাবার ভয় গুটিয়ে রাখতো আমায়  আর-সব সমবয়সী কিশোরীর মতন। দলবেঁধে হেটে যেতে আসতেও ভয়, এই বুঝি আরেকটা ঢিল কেউ ছুড়ে মারলো! ঢিল ছোড়াছুঁড়িটাও খুব ভয়ের ছিলো, হোক তা ফুলের অথবা এক লাইনে লেখা কোন চিঠির ভাঁজে জড়ানো ছোট্ট একটুকরো ইট-পাথরের।

নতুন জীবনে পা দেয়ার মুহুর্তে যে ভয়টা শুরু হলো সেটা আজও কাটেনি। দিনের পর দিন, মাস-বছর কেটে যাচ্ছে ভয়ে। নিজেকে প্রমাণ করতে করতেই। স্ত্রী-মা-ভাবী-বেয়াইন-মামী-চাচী শত-শত সম্বোধন, সম্বোধনের কর্তব্য-মর্যাদা রক্ষায় প্রচেষ্টা চলে অবিরাম। অন্যমনস্ক হবার উপায় নেই, ভয় হয় যদি নিজের অযোগ্যতা ধরা পরে যায়!

পরিবারের এক আত্মীয়ার মৃত্যু হলো। মৃত দেহটাকে গোসল দিতে গিয়ে হঠাৎ অনুভব করলাম আমি আর ভয় পাচ্ছি না। একটা সময় ছিলো যখন কেউ মরে গেলে তার লাশ দেখতে যেতেও ভয় পেতাম। আশেপাশের বাড়ির কেউ মারা গেলে প্রবল আতঙ্ক চেপে ধরতো। ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না, সন্ধ্যার পর ওয়াশরুমে যেতাম ভাইবোনকে নিয়ে দলবেধে। আর রাত বেশি হয়ে গেলে পাহারাদার হতেন মা,বাবা অথবা  বড়ো কেউ।

ইদানীং হারানোর ভয় পাই। স্বযতনে রাখা স্মৃতি, সাধনার প্রাপ্তি, আরাধ্য আরাধনায় যা কিছু পাওয়া সব যেন কেউ নিয়ে যাচ্ছে। অলক্ষ্যে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীর আক্ষেপ টের পাই। ভয় পাই তার নির্মম ইংগিত।

মানুষের মনে একেক সময় একেক রকমের ভয় বাসা বাধে। ভয়ের কারণ-ধরণ যেমনই হোক ভয়ের অনুভব বেশ তীব্রভাবে মনে-মস্তিস্কে উপলব্ধ হয়। সময়ের সাথে-সাথে কিছু ভয় দূর হয়ে যায়, আবার কিছু ভয় আরও ভয়াবহ রুপে প্রকাশিত হয়। মানুষ সেই ভয়কে জয় করে, নয়তো আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু আসলেইকি সব ভয় জয় করা যায়? এক ভয় থেকে নিস্কৃতি পেলেও আরেক ভয় সেই স্থান দখল করে নেয়।

জ্ঞান হবার পর থেকে কেন জানি না এই রাতটা এলেই আমি অন্যমনস্ক হয়ে পরি। সারাদিনের আনন্দ, সমস্ত দিনের ভালোবাসার প্রাপ্তিময় সারাক্ষণ গুলো একে-একে  ভেসে উঠে মনে-চোখের পর্দায়। আর কি পাবো এমন রাত, আগামীকালও কি বেঁচে থাকবো সবার দোয়া-ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে? নাকি  চলে যেতে হবে অনুভূতিহীন কোনো জগতে...

সোনেলা পরিবারের প্রতি আমার যত ভালোবাসা, আকুলতা সবই সোনেলার সোনালী বন্ধুদের জন্যে। তারা ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছিলেন বলেই, আমি সোনেলাকে ভালোবাসতে পেরেছি। সবার প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাই আজকের এই দিনে। ভালো থাকুক সোনেলার সবাই। সোনেলার নিরন্তর সফলতা কামনা করি।

 

 

0 Shares

৩৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ