ছেলেবেলার সকাল

প্রদীপ চক্রবর্তী ৯ ডিসেম্বর ২০২০, বুধবার, ০৮:৩২:২৫অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

পশ্চিমা সূর্য ডুবে গেলে ঐ দূর হতে ভেসে আসে ধরণীর লালিত সুগন্ধি। ধূলি উড়িয়ে এক ঝাঁক মহিষের দল ঘরে ফেরে।
সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলার গায়ে পশ্চিমা সূর্য ডুবে। অর্জুন গাছে চাঁদ এসে লুকোচুরি খেলে।

পাড়ার দ্বার দিয়ে বয়ে গেছে ছোটখাটো গেরুয়া নদী।
সে নদীতে কত মাছ খেলা করে।
জোনাকি পোকার আলোতে রাতের সন্ধ্যা মাখে উড়ে বেড়ানো রঙিন প্রজাপতি। সে রাতে আকাশের চাঁদকে সাক্ষী রেখে কত অজস্র প্রজাপতির বিয়ে হয়।

প্রিয়তমের গ্রন্থিবন্ধন শেষে অভিসারের চাঁদ ডুবে।
মাটির দেওয়ালে জুড়ে ভোরের আলো ছড়িয়ে আছে। সবুজাভ অরণ্য জুড়ে কেবল ঘন কুয়াশার চাদর।

সে ভোরের কুয়াশা মাড়িয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় ফুল কুড়ানো আর মাটির হাঁড়িতে গরম গরম খেজুরের রসে হেমন্তের শীত সকাল।

অজস্র ফুল ফুটে আছে কাননে কাননে।
এ ফুল আজ দেবতার।
তাই দেবতার পায়ে লুটিবার তরে প্রাণ খুলে হাসছে।

মাঠ জুড়ে ধান ক্ষেতের কুয়াশা ভেজা আলপথ মনে করিয়ে দেয় আমাদের ছেলেবেলা কত সুন্দর ছিলো।
সুন্দর ছিলো পদ্মফুলের উপর ভ্রমরের উড়ে বেড়ানো দৃশ্য। সুন্দর ছিলো দূর্বাঘাসের উপর রাখাল ছেলের গরু চরানো।

গাছের তলায় পড়ে থাকা অজস্র হরিতকি।
আর মিষ্টি সকালে জারুলের ডালে বসে শালিক পাখির কুঞ্জন। এ দুই নিরবে নিভৃতে শব্দের সন্ধানে ছুটে বেড়ায়।

গোয়ালঘর হতে একে একে ধেয়ে আসা গাভীর হাম্বা হাম্বা ডাক। এ ডাক মনে করিয়ে দেয় দুধ দোহন করার কথা। দইয়ের ভার কাঁধে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। এসব জানান দেয় আমরা অতীতে খাঁটিত্ব ছিলাম।

আমাদের ছেলেবেলা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে এসব আর উপভোগ করা হয়নি।
সে স্মৃতি গুলো যেই লিখতে যাই সবকিছু তখন ভুলে যাই। নিয়মমাফিক করে আজকাল কিছুই লিখতে পারিনা। স্মৃতি যে কখনো ভুলে থাকা যায়না।

আজও এ পাড়া ও পাড়ার পাশ দিয়ে হেঁটে চললে ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে।

.

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ