ছেলেটা এমন কেন !

রিমি রুম্মান ২ জুন ২০১৬, বৃহস্পতিবার, ০৮:৪৯:৫৩অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৫ মন্তব্য

দ্বিতীয়বার মা হবার সময়কার কথা।

শুরু থেকেই ভীষণ অসুস্থ আমি। দু'পায়ে অস্বাভাবিক ব্যথা। স্বাভাবিক চলাফেরা প্রায় অসম্ভব হলো। পৃথিবী ছোট হতে হতে শেষে বেডরুমটিই হয়ে উঠলো আমার পৃথিবী। সাত বছরের রিয়াসাত আমার রুমেই হোমওয়ার্ক করে, কিংবা কম্পিউটারে গেইম খেলে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর আমি যখন শোয়া থেকে উঠে বসার চেষ্টা করতাম, কোন এক দুর্বোধ্য কারনে ছোট্ট রিয়াসাত গেইম খেলা বাদ দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াতো। দৌড়ে নিচে গিয়ে পানি এনে দিতো। কখনো চাকাওয়ালা চেয়ারটি এনে বিছানার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকতো। কষ্টে সৃষ্টে চেয়ারটিতে বসলে সেটি ঠেলে সে ওয়াশ রুমের দরজা অবধি নিয়ে যেতো। এবং সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতো, আমি বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত। অতঃপর আবারও চেয়ারে বসা আমায় ঠেলে বিছানার সামনে নিয়ে আসতো, এবং গেইমে মনোনিবেশ করতো। এতোটুকুন মানুষটির মাথায় মা'কে সাহায্য করার, কিংবা যত্ন নেবার এই বোধটুকু কেমন করে এলো, সেটি আজো আমার কাছে সেরা বিস্ময় হয়ে রইলো। 

একদিন দেশে আমার বাবা মারা গেলেন। দু'বছর বাদে মা ও। হাজার হাজার মাইল দূরে আটলান্টিকের এই পাড়ে বসে যখন আমার চোখের জলেই চোখ ভেসে যাচ্ছিলো প্রতিক্ষণ, ছোট্ট রিয়াসাত পাশে বসে থাকলো। ওইটুকুন আঙুলের স্পর্শে বারংবার চোখ মুছে দিলো। খাবার সামনে এনে ছলছল চোখে বলল, " আম্মু, না খেলে তোমার শরীর খারাপ করবে "।

এরপর অনেকটা সময় গড়ালো। এমন অসাধারন আরও অনেক "বোধ" এর গল্প জমা হলো।

আজ তাঁর তের'তম জন্মদিন। ভোরে স্কুলে যাবার আগে জড়িয়ে ধরে বলল, আজ আমার বার্থডে। আমি বলি, " আজ তুমি যা কিছু খেতে চাইবে, যা কিছু উপহার নিতে চাইবে, সব দিবো, স-ব "। জানালো, সে স্পেশাল কিছুই খেতে চায় না কিংবা কোন উপহারও নিতে চায় না। অতঃপর স্কুলের উদ্দেশ্যে যাবার সময়টাতে বাসে উঠবার আগ মুহূর্তে ইংরেজিতে যা বলল, তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় __ তুমি পৃথিবীর সেরা মা, আমার সেরা উপহার।

আমার ভীষণ আনন্দিত হবার কথা। অথচ দু'চোখ ভিজে আসে বার বার ! কেবলই বুক ভেঙে কান্না পায়...

0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ