চায়না ভ্রমণ (৫ম এবং শেষ পর্ব)

ইঞ্জা ৮ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ০৯:৫০:২২অপরাহ্ন ভ্রমণ ২৮ মন্তব্য

 

 

 

 

খাওয়ার পর্ব শুরু হলো মাত্র, আমাদের স্যামন খাওয়া চলছে এরি মধ্যে কুক খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এসে চুলা (সামনের ধাতবপাত) রেডি করে প্রথমে ছোট ছোট অক্টোপাসের বাচ্চা বের করে তেলের উপর ফ্রাই শুরু করলো, অক্টোপাসের বাচ্চা গুলো আগে থেকে ব্যাটারে ডুবানো ছিলো।
আমি দেখে আৎকে উঠলাম, তাকালাম ইস্টেফেনের দিকে, ইস্টেফেন বললো, চিন্তা করোনা, এর টেস্ট চিংড়ি মাছের মতো।
কুক প্রথমে ভাজা অক্টোপাস আমাকে সার্ভ করার পর বাকি সবাইকে দিলো।
উল্লেখ্য যে কোরিয়ান যেকোন খাবার খাওয়ার নিয়ম হলো, যত বড়ই না খাবার হয়, তা একবারেই মুখে পুরে খেতে হবে, ভেঙ্গে ভেঙ্গে না, যদি ভেঙ্গে খান তা হবে অস্মানের।
সবাই যার যার প্লেট থেকে স্টিক দিয়ে একটা একটা অক্টোপাস মুখে পুরছে আর চাবাচ্চে, কি আর করা যখন এসেছি মোঘলের কাছে এই ভেবে একটা মুখে পুরে চাবাতাম লাগলাম, মনে মনে বলছি, চিংড়ি না ছাই যেন রাবার চিবুচ্ছি, এক পিছ খেয়েই রণে ভঙ্গ দিয়ে দিলাম।
এরপর ভাজা হলো বিফ, কচি বাঁশ এবং কিছু ভেজিটেবল এক সাথে, যা খেলাম তৃপ্তির সাথে, এলো চিংড়ি, এলো চিকেন, খেলাম বেশ মজা করে, সাথে কিছুক্ষণ পর পর চলছে রেড ওয়াইন।

এরপর যা এলো দেখেই বেহুঁশ, আমি তো খাবোইনা, অনেক খেয়েছি আমি সারেন্ডার।
মি. ডেভিড বললো, স্কুইড খেতে খুবই টেস্টি, তুমি এ না খেলে তোমার সব কিছুই মিস মনে করো, এরপরে তোমাকে আমাদের বেস্ট কুজিন খাওয়াবো।
সেই কুজিনটা কি শুনি?
সাপ।
শুনেই লাফ দিলাম, অস্মভব আমি সাপ খাবোইনা, মরে গেলেও না।
ওকে তাহলে স্কুইড খাও।
অসম্ভব, আমাকে ক্ষমা করো তোমরা।
শেষে ওরাই ইস্তফা দিয়ে নিজেরা স্কুইড খেলো, আমি দাঁত মুখ খিঁচে ওদের খাওয়া দেখতে লাগলাম।
খাওয়া শেষে এলো ডেজার্টের পালা, সাথে কোরিয়ান ভদকা টাইপের পানিয়।
রাত দশটা পর্যন্ত আমাদের খাওয়া দাওয়ার উৎসব চললো, এরপর ফেরার পালা।

গাড়ীতে ইস্টেফেনকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তোমরা এতো খাবারের অর্ডার করো, লাঞ্চে দেখলাম প্রচুর খাবার নষ্ট হলো, এখনো দেখলাম প্রচুর খাবার, ঘটনাটা খুলে বলবে?
ইস্টেফেন বললো, আমরা যখন কোন গেস্ট নিয়ে খেতে বসি তখন প্রচুর খাবার দাবাড়ের এরেঞ্জ করা হয়, যার মধ্যে বেশিরভাগ খাবার খাওয়ায় হয়না, এইটাই আমাদের ট্রেডিসন, এতে আমরা বুঝাতে চাই আমাদের প্রচুর আছে, যা কখনোই শেষ হবেনা।
আমি অবাক হলাম, এরা কি কি ভাবে, এরা বিশ্বকে বুঝাতে চাই তাদের কিছুরই অভাব নেই, সত্যিই তাই।
আবার আমরা উল্টা কি করি, আমরা বিশ্বকে বলি আমাদের নেই, কিছুই নেই, আমাদের দাও, ভরিয়ে দাও, পারলে সব দাও।
চায়না নিজেই সয়ং সম্পূর্ণ, তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনশক্তি, যাকে তাদের সরকার খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করছে।

পরদিন আমার ফেরার পালা, দুপুরে আমার ফ্লাইট, ইস্টেফেন তার বান্ধবী সিন্ডিকে নিয়ে এসেছে, আমাকে পিক করে এয়ারপোর্ট নিয়ে গেল, আমার লাগেজ চেকইন থেকে শুরু করে বোর্ডিং কার্ড, গেইট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সব কিছুই ওরা করে দিলো।
বিদায় বেলায় সিন্ডি, ইস্টেফেন জড়িয়ে ধরলো, সিন্ডি সকাল থেকেই আমাকে ভাই ডাকছে, কারণ ওর কোন ভাই বোন নেই, আমি হলাম ইস্টেফেনের শালাবাবু। 😜
আমি গেইট ধরে এগুতে লাগলাম ওরা আমাকে যতক্ষণ দেখা গেছে ততক্ষণ ঠাই দাঁড়িয়েছিল।
কুংমিং ফিরেই শুরু হলো আমার অপেক্ষার পালা, আমার ফ্লাইট ডিলে, ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের এই সমস্যা আছে যা বিরক্তিকর, অথচ সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের এমন সমস্যা কখনো দেখিনি।
রাত নয়টায় শুরু হলো চেকইন, সিকিউরিটি চেক, ডিসএম্বারকেশন, সব করে ভিতরে এসে বসলাম, কিছুক্ষণ পর আবার ফ্লাইট ডিলে হলো, এর মধ্যে চায়না ইস্টার্নের কিছু অফিসার এসে সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পাসপোর্ট দেখছে এবং সবাইকে একশ বিশ ডলার করে ফেরত দিচ্ছে তাদের ফ্লাইট ডিলের কম্পেন্সেশন হিসাবে, এরপরে এলো আমাদের প্রতিক্ষিত ফ্লাইট টাইম, একে একে এগিয়ে গিয়ে ফ্লাইটে উঠে পড়লাম।
আমাদেরকে নিয়ে চায়না ইস্টার্নের প্লেন উড়ে চললো আমার মাতৃভূমির উদ্দেশে।

সমাপ্ত।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ