চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা

সাবিনা ইয়াসমিন ২২ এপ্রিল ২০২১, বৃহস্পতিবার, ০২:০৬:২০অপরাহ্ন মুভি রিভিউ ২৪ মন্তব্য

❝মনটা যদি খোলা যেতো সিন্দুকেরই মতো দেখাইতে পারিতাম তোমায় ভালোবাসি কত ❞

অথবা
❝আমি তোমারই প্রেমো ভিখারি ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরানে গো❞
এই গানগুলো কারো মন কেড়ে নেয়নি এমন মানুষ কমই আছে।
আরও আছে, আইলো দারুণ ফাগুনরে লাগলো মনে আগুনরে একা একা ভালো লাগে না...

খুনসুটি দিয়ে প্রবাসী প্রেমিককে বাড়িতে ফেরাতে এই গান অনেকেই এখনো গায়, ❝তিরিশ তিরিশ তিন তিরিশে মাস যে হবে তিন খানা এখন আমার দিন কাটে না একখানা ❞!

"সোহাগ চাঁদ বদনীধ্বনি নাচোতো দেখি" সোশ্যাল মিডিয়ায় নাচ-গানের কমেডি স্ট্যাটাসে এই গানটির যথেষ্ট সমাদর ইদানীং সময়ে দেখতে পাচ্ছি।

আরও আছে বনমালী তুমি, লীলাবালী লীলাবালী বরজবতীর গানের ভিন্ন উপস্থাপন।

বলছিলাম আশি শতকের অন্যতম ব্যবসা সফল বাংলা ছায়াছবি চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা " ছবির শ্রুতিমধুর গানগুলোর কথা।
১৯৮৪ সালে মুক্তি প্রাপ্ত এই ছবিটি আমার জন্মের পরপরই সিনেমা হলে প্রদর্শিত হওয়ায় তখন আমি দেখতে যেতে পারিনি, আফসোস।
কারণ ঐ বয়সে এই সিনেমা দেখলেও কিছুই বুঝতাম না।

আমরা যারা সিনেমার গান শুনতে পছন্দ করি, পছন্দের গানের তালিকায় বাংলা গানকেই প্রাধান্য দেই তাদের কাছে চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা ছবির গানগুলো অবশ্যই ভালো লাগার।

গত লকডাউনের সময় ছবিটি আমি দেখেছিলাম। ছবিটি আমার কাছে বিশেষ ভালো লেগেছে। আমি চলচিত্র বোদ্ধা নই, তাই গভীরে না ঢুকে কেবল ভালোলাগা টুকুকে বুঝে নিই।

★ কাহিনি সংক্ষেপ- আরাকান রাজ্যের সুদর্শন হবু যুবরাজ অস্ত্র শিক্ষা সমাপ্ত করে নিজ রাজ্যে ফিরে আসার পরেই এই ছবির গল্প শুরু। সুন্দর চরিত্রবান পুরুষের দিকে খারাপ উদ্যেশ্য নিয়ে হাত বাড়ানোর লুচ্চা নারীর অভাব দুনিয়ায় নেই। দুনিয়ায় পরীরাও থাকে, আর পরীরাও লুচ্চামিতে কম যায় না এটা এই সিনেমায় প্রকটভাবে প্রমাণ করা হয়েছে।

মায়াপরী মোহিনীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করার অপরাধে যুবরাজ নওশাদ তার দুইচোখ হারিয়ে চন্দন দ্বীপের বনে-বাদাড়ে ঘুরতে থাকে। রাজকন্যা দিলরুবা সেই বনে শিকার করতে এসে যুবরাজকে উদ্ধার করে নিজের প্রাসাদে নিয়ে রাজার (বাবার) সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। রাজা রাজকন্যার ভালোবাসাকে সমর্থন দিয়ে তাদের বিয়ের ব্যাপারে রাজী হয়। সেনাপ্রধান রাজকন্যাকে আগে থেকেই চাইতো, সে এটি মেনে নিতে পারেনি, শুরু হয় সংঘাত, কুটিল, জটিল চক্রান্ত।

অবশেষে পরাজিত হয় শত্রুর প্রতিহিংসা , ডাইনি বিদ্যার। জয়ী হয় পশু প্রেম। ( এই ছবিতে হাতী সহ আরও কিছু পশু পাখি অভিনয় করেছে)।★★

নোংরা পোশাক, অশ্লীলতার জন্যে যেখানে নব্বইয়ের পরবর্তী ছায়াছবি গুলো একেএকে মুখ থুবড়ে পড়ছিলো, সেখানে আশির দশক ছিলো বাংলা চলচিত্রের সুবর্ণ অধ্যায়। চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা ছবিতে চিত্র নায়িকা অঞ্জু ঘোষের পোশাক বর্তমান ছবির তথাকথিত নায়িকাদের লজ্জিত করবে। ব্যবসায়িক ছবিতে খোলামেলা হতে হয় কিন্তু কতটুকু খোলামেলা হয়ে নিজেকে আইকন হিসেবে উপস্থাপন করা যায় তার নমুনা ছিলো রাজকন্যা দিলরুবা চরিত্রে অঞ্জু ঘোষ।
চিত্র নায়ক ওয়াসিম তার সময়ে কেন এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সেসব জানার জন্যও এই ছবিটি উত্তম।

আমরা বাংগালী, আমাদের দেশ বাংলাদেশ। আমাদের নিজস্ব লোকালয় আছে, নিজস্ব সাংস্কৃতিক মহল আছে। আছে উল্লেখ করার মতো ছায়াছবি, গান। আলোচনা করার মতো ছায়াছবি অনেক রয়েছে আমাদেরও। যে সিনেমার গল্পে মাটির কথা বলে,যেসব ছায়াছবির গান গুলো সাধারণ মানুষের মনে-মুখে যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছে, আসুন আমরা সেইসব ছবি দেখি, দেখাই।

 

ছবি সম্পর্কিত তথ্য (নেট থেকে নেয়া)

ছায়াছবি- চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা
অভিনয়- ওয়াসিম, অঞ্জু ঘোষ, জাবেদ, সওকত আকবর, রাজ সহ আরও অনেকে
সংগীত- আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
কণ্ঠ শিল্পী - সৈয়দ আবদুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, রুণা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর
চিত্রনাট্য, সংলাপ, পরিচালক - ইবনে মিজান
প্রযোজনা ও পরিবেশনা - লীনা ফিল্মস।

0 Shares

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ