গত জুলাইতে মাননীয় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনিকে নিয়ে একটি লেখা ফেইসবুকে পোষ্ট করেছিলাম “একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী” শিরোনামে।
শুরুতে বলেছিলাম ‘যোগ্যতা প্রমান করতে নারীকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। একটু এদিক সেদিক হলেই আঙ্গুল ওঠে যায়।’............................................

খুব খারাপ লাগে, যখন দেখি ঈর্ষান্বিত হয়ে মানুষ মানুষের চরিত্রের উপর আক্রমন শুরু করে দেয়। আর সে মানুষটি যদি হয় কোন নারী তাহলে তো কথাই নেই! পারলে একবারে কাপড় খুলেই ছাড়ে।

হ্যাঁ, অনলাইনে এরকম বিভিন্ন চটিপেজ আছে যেগুলো এরকম নোংরা ভাষা ব্যবহার করে সমানে চারদিকে নোংরামি ছড়াতে থাকে। ওগুলো নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। কারন ওগুলো যারা পরিচালনা করে তারা তাদের মান অনুযায়ী কাজ করবে এইতো স্বাভাবিক। কিন্তু গায়ে লাগে যখন দেখি অনেক সুকুমার বোধসম্পন্ন লোকেরাও এগুলোকে অতি উৎসাহিত হয়ে সমর্থন করে যায়।

বিরোধিতা মানে তো এই নয়, যে নোংরামিকেও প্রশ্রয় দিতে হবে। বিরোধিতা মানে যৌক্তিক সমালোচনা করা। সমাজের সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজের মান-সন্মান বজায় রেখে চলার পাশাপাশি অন্যের মান-সন্মানের ব্যাপারেও যত্নবান হওয়া উচিৎ। অহেতুক জেনেবুঝেও কেনো আমরা শুধুমাত্র বিরোধিতার প্রয়োজনে নোংরামিকে প্রশ্রয় দিয়ে যাবো?

কিছুদিন আগে আমার নজরে এলো জুবাইদা রহমানকে নিয়ে লেখা এক চটিগল্পের বিরোধিতা করে একজন লেখিকা তাঁর একটি লেখায় আচ্ছাসে ধোলাই দিয়েছেন। তিনি নিজেই নিজেকে শেখ হাসিনার চামচা বলে পরিচয দেন। সে হিসাবে তিনি তা এড়িয়ে যেতেই পারতেন যেহেতু বিরোধী পক্ষের নেতার পুত্রবধুকে নিয়ে এমন লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু না, তিনি তা এড়াতে পারেননি। এজন্য পারেননি যে, জেনেবুঝে একজন মানী লোকের মান হরন করাকে প্রশ্রয় দিতে পারেননি। কারন লেখাটি ছিলো নিতান্তই নোংরা গসিপ।

আজই নজরে আসলো ”বাকশাল” নামের একটি পেজে মাননীয় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনিকে নিয়ে লেখা একটি গসিপ। আর তাতে ‘লাইক’ দিয়ে সমর্থন করে গেলেন আমারই বন্ধুতালিকার এক বন্ধু। আগে মাঝেমধ্যে এমন লেখা দেখলে হয় মনে হতো ঘটনা কি আসলেই সত্যি? না হয় মনে হতো আমার নিউজফিডে এমন লেখা আসলো কি করে? খুব লজ্জা পেতাম (তখনও অনলাইনের কুটিনাটি বিষয়গুলো সেরকমভাবে বুঝতে পারতাম না/জানা ছিলো না)। কিন্তু ফেবুর নিউজফিড তো বন্ধুদের ক্রিয়াকর্মকেই তুলে ধরে। আর তাই ”বাকশাল” পেজ এর লেখাটি আজ নজরে আসলো।

ফেবুতে আমার লেখালেখি অনুপাতে বন্ধুতালিকা খুবই ছোট। বন্ধুতালিকা মেনটেইনের ব্যাপারে আমি হয়তো একটু বেশিই রক্ষণশীল। সেটা দোষের কতোটুকু জানিনা। কেনো জানি অহেতুক উল্টাপাল্টা কর্মকান্ডকে হজম করতে পারিনা। এক্ষেত্রে আমি ’দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো’ নীতিতে বিশ্বাসী।

যাহোক, ভুল করে বা সাময়িক ক্ষোভ থেকে রাগান্বিত হযে আমার মনে হয় আমাদের এমন অনৈতিক ক্রিয়াকর্মগুলোকে একেবারেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয় যা সমাজে কেবল কালিমাই ছড়ায়।
-----------------------------------------------------------------------

**** গত জুলাইয়ে ফেবুতে পোষ্ট করা লেখাটি এখানেও শেয়ার করলাম।****

একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী!!!

যোগ্যতা প্রমান করতে নারীকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। একটু এদিক সেদিক হলেই আঙ্গুল ওঠে যায়।

গত সরকারের শেষ পর্যায়ে আমাদের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দিপুমনিকে নিয়ে একটি কথা বাজারে বেশ চাউর হয়েছিলো, তিনি নাকি দিল্লিতে ব্রেকফাস্ট সারলে; লাঞ্চ সারেন ফ্রান্সে আর ডিনার করেন আমেরিকায়। অর্থাৎ প্লেনে উড়ে উড়েই তাঁর সময় কাটে। এ নিয়ে খরচের একটা পরিসংখ্যানও দেয়া হয়েছিলো। সমালোচনার ঢংটা এমন ছিলো যে, কাজের কাজতো কিছুই না; ঘুরে বেড়ানোই যেনো সার। ভাবখানা এমন, আগে যারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তারা জানি কতো সম্মান আদায় করে এনেছিলেন দেশের জন্য; যা দীপুমনি পারছেন না।

অথচ আজ যখন ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি ঘটেছে তখন একটিবারের জন্যও দীপুমনির নাম কারো মুখে এ পর্যন্ত শুনা যায়নি, যেখানে দীপুমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৮ সালে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে অগ্রগতি না হওয়ায় বাংলাদেশ সালিশী আদালতে মামলা দায়ের করে। ফলাফল; রায় জিতে সমুদ্রসীমার ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশেরে একচ্ছত্র অধিকারে আসে যা মূল ভূখন্ডের দ্বিগুন পরিমান। একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে পারদর্শীতা না থাকলে কি এই অর্জন এতোসহজে সম্ভব হতো?

প্রধান মন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় তিনি শুধু মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত হননি; রায়ের ফলাফল যাতে বাংলাদেশের অনুকূলে আসে তার জন্য নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সমুদ্র আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদান, এমনকি এমন সব মানচিত্র সরবরাহ করেন আদালতে যার সঠিক জবাব দেয়া মিয়ানমার এবং ভারতের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সেই সুত্র ধরে তো এই বলা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসে ডাঃ দীপুমনিই সবচেয়ে সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কিন্তু হায় নারী! যোগ্যতার মানদন্ড বিচারে তোমার নিজেকে কতভাবেই না প্রমান করতে হয়!!!

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ