বহু বছর হয়ে গেল কলেজে নির্বাচন হচ্ছে না।একদলীয় ব্যাবস্থায় চলছে কলেজ সংসদ।কলেজটির স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র জয়।বরাবর তার মেধা ব্যাবহার কথা বার্তায় সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট ক্রমশতঃ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।বাদ পড়েনি বর্তমান ক্ষমতাসীন সংসদের ভিপি ও অন্যান্যদের চোঁখও।

জয়ের একটি গ্রুপ কলেজের প্রিন্সিপলের সাথে দেখা করে কলেজের সংসদ নির্বাচনের দাবী করে আসলেন।খবরটি ভাইরাল হয়ে কানে যায় বর্তমান ভিপি বদির ও বাহিরের এক সন্ত্রাসীর গড ফাদার কালা রমজানের নিকট যার দখলে এই কলেজ প্রাঙ্গনটি।তার সাথে আছে দেশের বৃহৎ একটি দলের বিশেষ ঘনিষ্টতা।এ শহরে এই কালা রমজান কাউকে ভয় পায় না,কেবল মাত্র এক জনকে ছাড়া সে হল অপজিট পাটির এক দূদর্ষ সন্ত্রাসী ধনবান রজব খান।রমজানের যদি থাকে কামান চালানোর লোক তার থাকে মিসাইল চালানোর লোক।এছাড়াও অর্থের দিক দিয়ে রমজানের আছে চাঁদাবাজীর টাকা রজব খানের আছে এক পতিতালয়েরই দৈনিক লক্ষ কোটি টাকার ইনকাম।কেবল মাত্র রজব খান এ কলেজটিতে প্রভাব খাটাতে পারছে না,এছাড়া শহরে আর কোথাও কালা রমজানের প্রভাব লক্ষনীয় নয়।

কালা রমজানের ফোন এলো জয়ের মোবাইলে।অচেনা নম্বর তাই ধরতে একটু দেরী হওয়াতে ঐপাশে কালা রমজানের পিএস এর রাগ হল।
-কিরে উঠতি হিরো খুব ব্যাস্ত নাকি।
-না ভাই,কে বলছেন?
-গলার আওয়াজ হুইন্নাও বুঝস নাই।
-না ভাই,যদি কিছু মনে না করেন আপনার পরিচয়টা দিবেন।
-আরে রাখ তোর শুদ্ধ বাঙ্গালী…নে,,বড় ভাই তোর লগে কথা কইব।
হতভম্ব জয়!অপর দিকে নামদারী কালা রমজান ওরফে বড় ভাই সোফায় বসা টি টেবিলের সামনে মোবাইলটা লাউড স্পিকারে রাখল।অপর প্রান্ত হতে জয় হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে।বড় ভাই বড় ভাইয়ের ভাব নিয়া বলতে লাগলেন।
-কিরে জয় কেমন আছস?
-জি ভাল।আপনে?
-আমারে আর ভাল রাখলি কই!হুনলাম তোরা নাকি কলেজে নির্বাচন চাস?
-যদি কিছু মনে না করেন আপনার পরিচয়টা দিলে কথা বলতে সুবিদা হত….
জয়ের প্রশ্ন শেষ হতে না হতেই অপর প্রান্ত হতে অকথ্য রাবিস কথা ভেসে এলো।
-ঐ শুয়োরের বাচ্চা… তোরে না কত দিন কইছি কাউরে ফোন করলে সুন্দর ভাবে আমার পরিচয় দিবি…এই এই কুত্তার বাচ্চা দিমু একটা কানে বনচটকানা…সবাইরে যে এই কালা রমজানরে চিনতে হইবো তার কি কোন নিয়ম আছে।

জয় অনেকটা অপ্রস্তুত ছিল এমন অকথ্য ভাষা শুনার কিন্তু কালা রমজানের নামটি শুনার সাথে সাথে ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিল।
-অআলাইকুম সালাম।তুমি ভয় পেয়ো না আমি যে কতগুলো কুত্তার বাইচ্চা পালছি ওরা আজও শিখলো না কার লগে কি ভাবে কথা কইতে হয়।যাগগে এবার কাজের কথা বলি।তোমরা যা ভাবছো তা কি সঠিক হল।
-জি ভাইয়া তাতে মনে হয় আপনার জন্যও ভাল হবে।কারন এখন যুগ পাল্টাইছে দেশ দিন দিন ডিজিটাল হচ্ছে এখন আর কোন কিছুই লুকানোও যায় না- লং টাইম ধইরা রাখাও ঠিক না।তাতে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিতে পারে।
-হ্যা তাতো দেখলাম !এ যাবৎ যে কলেজে আমার দল ছাড়া কেউ মিছিল সমাবেশ করতে সাহস পায় নাই সেখানে বিশাল দলবল নিয়ে নির্বচনের দাবীতে প্রিন্সিপ্যালের দরজায় হাজির।তা প্রিন্সিপ্যাল স্যার কি বলল?
-তাতো ভাই আপনারও জানার কথা!
-গুড ইনটিলিজেন্ড!তা কি ভাবছো তোমরা?
-অবস্থা দেখে যা বুঝলাম এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
-হুম!!ঠিক আছে।তোমার আশে পাশে কেউ আছে?
-না,
-কালকে তুমি ঠিক দুপুর সময় তোমরা কয়েকজন আমার অফিসে আসো কথা বলব বিস্তারিত।
-ঠিক আছে-ডান।

আজ প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেল জয়ের চোঁখে চন্দ্র সূর্য্যের আলো পড়েনি।গভীর অন্ধকার ঘরে একদম একা।তার কাছে কেবল টাইম মত খাবার আসা ছাড়া অন্য কোন কিছুই তার চোঁখে পড়ে না।অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশীই আজ তার মায়ের মুখটি কেবলি মনে পড়ছে।তাকে না পেয়ে না জানি মা তার কেমন আছেন!কি করছেন!না জানি তাকেঁ খুজতেঁ তার মা পাগলের মতন দারে দারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন!

শেষ বারের মতন যদি তার মায়ের সাথে দেখা করতে পারতেন তবে মায়ের কাছে কান ধরে ক্ষমা চেয়ে বলতেন-মাগো!তুমি না করেছিলে রাজনিতীতে জড়াইস না,আমি তোমার কথা শুনিনি।তুমি বলেছিলে আমাদের মতন লোকদের জন্য এদেশের রাজনিতীর অপর নাম জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া-আমি বুঝিনি,আমি মানিনি!দেশপ্রেম!এ দেশের মানুষকে ভাল কিছু দেয়ার মোহেঁ আমি অন্ধ ছিলাম।জানি না এখান থেকে আমি কখনো মুক্ত হতে পারব কি না!যদি কখনো মুক্ত হতে পারি তখন ভাববে এ দেশে আলো জ্বলবেই,ঘূণে ধরা রাজনিতীর এ হিংসাত্বক সন্ত্রাসী ধারা পাল্টাবোই।আর যদি মুক্ত হতে না পারি তবে ভেবে নিও তোমার একমাত্র সন্তানটিও সেই বর্বর পাকিদের ২৫ মার্চ কালো রাত্রীতে বুলেটের গুলিতে শহীদ হয়েছিন।

হঠাৎ কড়কড় করে বিশাল লোহার গেইট খোলার শব্দ।এক সাথে বেশ কয়েকটি তীক্ষ্ণ লাইটের আলো গিয়ে পড়ল জয়ের চোখে মুখে।সে দুহাত দিয়ে চোখে হঠাৎ আলোর অসহ্যতা রক্ষায় চেষ্টা।জয় বুটের শব্দ ও লাইটের আলো দেখতে পেয়ে বুঝতে পারল বেশ কয়েকজন সিপাহী তার দিকে এগিয়ে আসছে।দু'জন তার দুটো হাত ব্যাক পিঠে নিয়ে শক্ত করে বেধে ফেলল,একজন কালো কাপড় দিয়ে তার চোখ দুটোকে বেঁধে ফেলল।এরপর এক সিপাহী বলল-এই চল।

Rab অফিসের একটি জিজ্ঞাসাবাদের ঘরে প্রবেশ করিয়ে জয়কে একটি চেয়ারে বসিয়ে হাতের বাধন খুলে ফের হাত দুটোকে চেয়ারের সাথে বেধে ফেলল খুব দ্রুততার সহিত।চোঁখের কালো কাঁপড়ের বাঁধন খুলে দিয়ে সিপাহীরা প্রস্থান নিল।জয় মাথাটা ঝাকুনি দিয়ে চোঁখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করল।বহু দিন অন্ধকারে থাকা চোখ দুটো আজ স্বাভাবিক আলোকে সহ্য করতে পারছে না।সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগল।আশপাশে তাকিয়ে দেখল সব কিছুই যেন তার কাছে সদ্য ভুমিষ্ঠ নবজাতকের চোখের ন্যায় লাগছে।

Rab জিজ্ঞাসাবাদ এর এক কর্মকর্তা ভিতরে ঢুকল।জয় একটু মাথা উচু করে তার দিকে তাকাল।ঠিক চেনা চেনা লাগছে-কোথায় যেন দেখেছি…নাহ্ মনে করতে পারছে না চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
-কিরে আর কতদিন থাকবি এখানে,তুইতো কবেই নদীর জলে ভেসে উঠতি যদি তোর কাছ হতে মেমোরিটা পাওয়া যেত।আজও যদি মেমোরিটা কোথায় আছে না বলিস তবে তোর উপর কী সর্বোনাসা নেমে আসবে আমার জানা নেই।
জয়ের মুখটি চেপে ধরে….
-এখনো সময় আছে বলে দেয়-মেমোরিটা কোথায়?কার কাছে রেখেছিস?
জয় এবার বুঝতে পারলো- এই সেই অফিসার যিনি সন্ত্রাসী গডফাদারের সাথে হাত মিলিয়ে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করে।জয় একটু মুচকি হাসল।
-তুইতো আমারে ভাল করে চিনিস,আমি কোন চিজ!দেশ ও দশের ক্ষতিকারক একটারেও আমি ছাড়ুমনা।নিশ্চয় তোদেরই কেউ না কেউ আমারে সহযোগিতা করবে।
বেত দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করল ওর শরিরে।ঝিম মেরে খিচকে রইল জয়।এবার হাতের আঙ্গুলগুলোতে সুইঁ ঢুকানোর অর্ডার দিল।সিপাহীকে লক্ষ্য করল সে সুইঁ গুলো হাতে নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
ঠিক সেই সময় Rab এর উর্ধোতন কর্মকর্তার মাইদুল সাহেব এর প্রবেশ।জয়ের সাথে এমন অমানবিক কার্য্যকলাপ করায় অফিসারটিকে শেষ বারের মতন শাসাল। মাইদুল সাহেবের হাতে থাকা জয়ের ডায়রীটি সামনের একটি টেবিলে রাখলেন।জয়কে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন খুব ভদ্র ভাষায়।জয় অবাক হল।এ দিকে সেই অফিসারটিকে রুম ত্যাগ করার আদেশ দিলে সে স্যালুট দিয়ে চলে গেল।
-ডায়রীটিতো আপনার তাই না?যদিও পুরো ডায়রীটি আমার পড়া হয়নি তবুও আমার কেন যেন মনে হল আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করাটা প্রয়োজন।ডায়রীটিতে যে বর্ননা আছে তাতে কিছুটা বুঝতে পারলাম আপনি ছিলেন একজন ভিন্ন ধারার রাজনিতীবিদ,আপনার উপর দেয়া মামলার ধারার সাথে ডায়রীর লেখাগুলোর অর্থ অনেকটা অমিল।

এ ছাড়াও আপনার রাজনিতীর শুরুটা হয়েছিল কলেজ দিয়ে কিন্তু আমার প্রশ্ন হল ডায়রীতে সব কিছুই লিখলেন রাজনীতির নীতি কুটনীতি সব কিন্তু সুস্থ ধারার রাজনিতীকে যারা অসুস্থ করে তুলেন তাদের নামের স্থানে ড্যাস ড্যাস দেখা যায় কারো কোন নাম ডায়রীতে উল্লেখ করেনি এর কারন কি?আমি যতটুকু জানি আপনার এলাকার যারা রাজনীতিবিদ তারা খুব ভাল মানুষ জন দরদী কয়েকবারের নির্বাচীত প্রতিনিধি।
জয় অফিসারের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন।
-ডায়রীটা আরেকটু পড়ুন সব পেয়ে যাবেন।
-তা না হয় পড়লাম।আজ  এই পর্যন্তই আরো কিছু জিজ্ঞাসা করতাম কিন্তু আপনার যে শরিরের অবস্থা তাতে আমি মনে করি সর্বো প্রথম আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন।আমি সেই ব্যাবস্থাই করছি।

গত ৬ষ্ঠ পর্ব 

ছবি ফ্রম অনলাইন

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ