জয় তার এলাকার কলেজ বন্ধুদের সাথে করে চোখের সামনে অত্যাচারিত মহিলাটির পাশে গিয়ে দাড়ালেন।একেতো শীতকালের মৃদু ঠান্ডা বাতাস  তার উপর বৃদ্ধার বয়স অনুমানিক পঞ্চাশ পঞ্চান্ন হবে তাই তার হাত পা থর থর করে কাপছিঁল-যেন অভাবের ভারে বয়স দৌড়ে পালায়।
বৃদ্ধাকে একটি গাছে পিছনে হাতমুরি দিয়ে বেধেঁ রেখে মাতাব্বর করম উদ্দিন শাসাচ্ছেন।
-এই বুড়ি তোরে না কইছি তুই তোর বাড়ী ছাইড়া চইলা যাবি...এহনো যাছ নাই কে?
-কেমনে যাইমু এটা যে আমার স্বামীর শেষ সম্ভল।
-কেন!যেমনে তোর জা জেডাসরা গেছে তেমনিই যাবি...আরো টেকা লাগলে ক'স না আমি দিমুনে তবুও তোর ভগবানের দোহাই লাগে তুই চইলা,তুই গেলে আমি এহানে বিরাট দালান তুলমু।
বৃদ্ধার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বেরুচ্ছে না।সে কেবল ছোট শিশুর ন্যায় আশ্চর্য হয়ে মাতাব্বরের অমানবিক কথাগুলো শুনতে লাগল।এ দিকে মাতাব্বরের মাথা গরম।দু'পা পিছনে পায়চারি করে হঠাৎ বৃদ্ধার দিকে রাগান্নিত হয়ে এসে এক হাতে বৃদ্ধার মুখ চেপে ধরল।
-ক' কসনাকে আজই চইলা যাবি-একদম বহু দুরে।
জয় ও তার বন্ধুরা এমন দৃশ্য দেখা মাত্র ঘনটাস্থলে মাতবরকে শাসাল।
-একি করছেন!এটা কিন্তু ঠিক নয়।
মাতাবর বৃদ্ধা হতে সরে এসে জয়কে দেখতে লাগল তার আপাতমস্তক।অতপর।
-তুমি কেড়া?তুমি ঐ যে স্বামী ছাড়া ফুলীর পোলা না।তা তুমি আমার কামে বাধা দাওকে?তুমি চিনতো আমায়,আমি কেডায়?
-আপনারে চিনে না এ গায়ে একজনও নাই-কুকামের লোককে সবাই চিনে ভাল মানুষরে মানুষ চিনে কম।
জয়ের সহ পাঠিরা মাতাব্বরের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই তাকে বন্ধন মুক্ত করল।মাতাব্বর একটু নাখোশ হয়ে তার চেলাদের নিয়ে চলে গেল।যাবার বেলায় বলে গেল-দেইখা লমু তরে।সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরেক মুরুব্বি জয়দের বাহবা দিয়ে বলল।
-বাবারে,তোমরা কারা আমি ঠিক জানি না তয় তোমাগো ভগবান ভাল করুক এই প্রার্থণা।তোমরা আজ দেশের মাকে বাচালে।
মুরুব্বির কথায় কেমন যেন এক রহস্য ঘরা।জয় বলল।
-দাদু সব বুঝলাম দেশের মাকে বাচালাম এটাতো বুঝলাম না।
মুরুব্বির দু'চোখ বেয়ে অশ্রু প্রবাহিত।এরই মধ্যে পাশের বাড়ীর ঘর হতে ভেসে এলো একটি কণ্ঠ অতপর একটি  '৭১ এ অগ্নিঝরা গান।
-ঐ যে শুনতে পাচ্ছ!বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।বঙ্গবন্ধু পাষানদের বন্দী হতে মুক্ত করেছিলেন আমাদের এই স্বদেশকে ঠিকই কিন্তু নিজ দেশের রাজাকার সহযোগীদের অত্যাচার হতে আমাদের মুক্ত করতে পারেননি,পারেননি অসাম্প্রদায়ীক বাংলা গড়তে!কারন আমরা হিন্দু ,এ দেশের মুসলমানরা অনেকেই আমাদের এখনো মেনে নিতে পারেননি।
অথচ!আজ এই পচিশেঁ মার্চ মধ্যরাতে-এই যে দেশের মাকে দেখছো,তার স্বামীকে তার ভার্সিটি পড়ুয়া একমাত্র সন্তানকে হরিয়েছেন চিরতরে-কারন পাকিদের বন্দুকের নলের ডগায় দাড়িয়েও বলেছিলো "জয় বাংলা"।সেই রাতেই পাকিদের গুলিতে প্রান দিতে হয়েছিল বাপ বেটাকে এক সাথে।তারপর!তারপর ত্যাগের এখানেই শেষ নয়!দেশ স্বাধীনের লড়াইয়ে - এখানে!এ গ্রামকে ভালবেসে আকড়েঁ থাকা তার গ্রামটিকে জ্বালিয়ে দিতে হুমকি দিল রাজাকার আলবদররা নতুবা এ গ্রামকে বাচাতে তার ঘরে দুজন যুবতী মেয়েকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।রাজাকাররা যখন এ প্রস্তাব পেশ করে তখন এই বাংলার মা,এক মুহুর্তও দেরী করেনি সিদ্ধান্ত জানাতে-স্বদেশের মায়ায় পুরো গ্রামটিকে আগুনের হাত হতে রক্ষা করতে বলি দিল তার রক্তের অতি আদুঁরে মেয়ে দুটোকে।অথচ স্বাধীনের পর এই তাদেরকেই যুগে যুগে এমন সব দেশদ্রোহী ভূমিদস্যু মাতাব্বরের কারনে ছাড়তে হল তাদের পৈর্তিক ভিটে মাটি-সাজাঁনো সংসার ভেঙ্গে চলে যেতে হল ঐপাড়ে ভারতে।অবশিষ্ট এই বুড়ো মাকেও তাড়িয়ে দিতে দিনের পর দিন চলছে তার উপর অমানবিক নির্যাতন।আমরা এ দেশে সংখ্যায় কম বলে কেউ আমাদের পক্ষ নেয় না কেউ শুনে না আমাদের চাপা কান্না-না রাষ্ট্র না সমাজ।

বৃদ্ধ লোকটির কথাগুলো শুনে মাথা নীচু করে জয়ের দল।কি বলবে তাদের।কিভাবে শোধ করবে তাদের স্বাধীকার আন্দোলনের ত্যাগের ঋণ।এটাই কি প্রাপ্য ছিলো তাদের।বৃদ্ধাকে বুকে জড়িয়ে জয় অশ্রুসিক্ত হল।মনে মনে ধিক্কার দিল এ দেশের ঘূণে ধরা সমাজ ব্যাবস্থাকে।কেন এমন হয় কেনই বা দেশ মাতা'রা এভাবে নীরবে কেদেঁ যাবেন।কেউ কি নেই যারা এদের নুন্যতম খোজঁ খবরটি রাখবেন।ক্ষমতার ডালপালায় সবিই কি স্বার্থবাদী হারামজাদা?সময় এসেছে,"বদলে দেবার,বদলে যাবার"।সেই প্রত্যয়ে এবার জয় প্রথমে কলেজ থেকে শুরু করবেন তার মিশন বদলে যাবার বদলে দেবার।

চলবে..

ঘূণে ধরা সমাজের ফুলীর সন্তানেরা ৫ম

0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ