কোলাহল মুখরিত স্কুল ঘরের হলরুমটি কানায় কানায় পূর্ণ, কি যেন এক আনন্দ উৎসবে মাতোয়ারা সবাই। ফিসফিস কানাকানি চলছে। ভেন্টিলেটরের ফাঁক গলে সূর্যের সোনালি আলো লাল-নীল বাতির আভা ধারণ করে ছড়িয়েছে সকলের মুখে। কিন্তু মুখে কোনো রা নেই কারো। হবেই বা কি করে? গুরুতর অভিযোগ এসেছে কয়েকজনের নামে। আগে সেই অভিযোগ খণ্ডন হবে তারপর আনন্দ। আজ উৎসব উপলক্ষে স্কুলের শেষ পিরিয়ডটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অতিব্যস্ত কিছু লোক সেখানেও উসখুস করছেন। ধুর! ক্লাস নেই বাড়িতে যাবো তা না, যত্ত সব ন্যাকামো!

রুমের মধ্যখানে চেয়ারে বসে আছেন স্কুলের হেডমিস্ট্রেস সাবিনা ম্যাডাম। তার চারপাশে বসেছেন স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অন্যান্য ম্যাডামগন- শবনম, বন্যা লিপি, শাহরীন এবং আরজু মুক্তা। স্কুলতো নয় যেন নারী শাসনের কারখানা। কড়াকড়িতো হবেই! প্রত্যেকের হাতে বেতখানা করে রয়েই গেছে। ক্লাস শেষে সবাই সোজা এখানে এসেছেন যে! আজ বিচার বসেছে, রায় হবার পরে এরা প্রত্যেকে অপরাধীকে সাজা দেবার জন্য প্রস্তুত!!

অভিযোগ হচ্ছে সোনেলার প্রেমে পড়েছেন অনেকেই। স্কুলের মুখপাত্র ইঞ্জা দাদা এনেছেন এই গুরুতর অভিযোগ। বোঝাই যাচ্ছে হিংসা হচ্ছে কারও কারও বলেই এসব অভিযোগ। যারা প্রেমপত্র লিখতে পারেননি তারাই এইসব করেছে বলে স্কুলে মলম পার্টি শব্দের উদ্ভাবক নাজমুল হুদার ধারণা। প্রেম রসায়নে গড়া রক্তমাংসের মানুষ প্রেমে পড়বেই, এটা আবার বিচারের কি হলো? কিন্তু না, ওই যে হিংসুটে তারা বিচার দিয়েছে!

কাঠগড়ায় আজ দাঁড়াবে জনাকয়েক। তবে তারা কারা তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছেনা। বেশীরভাগ উপস্থিতি প্রেমপত্র লেখকদের পক্ষে। তাদের মতে যারা লেখেননি তারাই নাকি আসল আসামি। কানাঘুষা হচ্ছে সাবিনা ম্যাডামের আশেপাশে বসে থাকা দু'একজনও এর মধ্যে আছেন যারা প্রেমপত্র দেননি। বেশীরভাগ সময়ে তার স্বজনপ্রীতির ছত্রছায়ায় থাকেন তেনারা। তাদের ধরার তালে আছে স্কুলের সিসি ক্যামেরা খ্যাত ছাত্র হৃদয়ের কথা!(এ অদ্ভুত কাব্যিক নাম তার নিজের দেয়া)।

আসামিদের হয়ে আজ এখানে ওকালতি করবেন স্কুলের রেহানা বীথি ম্যাডাম। জাঁদরেল মহিলা! তার হাতে পড়লে আসামিপক্ষ আর প্রতিপক্ষ সে স্যার কিংবা ছাত্র যেই হোক কারোরই রক্ষা নেই।

- এই থামেন সবাই! সাবিনা ম্যাডামের হুংকার! জুরিবোর্ডের সদস্য হেলাল ভাই, আর জিসান সাহেব কই? তাদের ছাড়াতো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করতে পারছিনা। সময়জ্ঞান, উপস্থিতি, হাজিরা বিষয়ে তাদের চিরচেনা সেই অভ্যাস আজও গেলনা। ইঞ্জা ভাই তাড়াতাড়ি ডাকুন তাদের। একটু পরেই ছুটির ঘণ্টা বাজবে। বিচার হবে কখন আর সবাই কেক খাবে কখন?

ইঞ্জা স্যার লোক ভালো। চারিদিকে সাম্যতা বিরাজ করে পা ফেলতে তার সমকক্ষ আর কেউ নেই। সবার আস্থাভাজন শিক্ষক তিনি।

সাবিনা ম্যাডামের গগনবিদারী এহেন চিৎকারে সদা শান্তশিষ্ট মানুষ, স্কুলের শাস্ত্রীয় শিক্ষক নিতাইবাবু ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কাঁচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মাঝখান থেকে বলে উঠলেন- না মানে, তারাতো নাজমুল আহসানের ফাস্টফুডে গিয়েছেন কেক আনার জন্য, আজতো কেকও কাটা হবে!

কেকের কথা শুনে গভর্নিং বডির সবার চোখে মুখে জিহ্বায় পানি আসা তৃপ্তির ঢেকুর উঠলো। যাক কষ্ট করে বসে থাকার পরে কিছু তবারক গলাধঃকরণ হবে তাহলে?

মজিবর স্যার অল্পভাষী শিক্ষক। তিনি ছাত্রদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। তবে প্রেমপত্র বিষয়ক গালগল্পে তিনি কেমন যেন লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বসে আছেন। পিটি শিক্ষক শিপু স্যার হচ্ছেন গোমড়ামুখো মানুষ। অনেকদিন পরে কেক খেতে এসে এসব ঝামেলা তার মোটেই পছন্দ হচ্ছেনা। বিরক্ত বদনে একটু পরপর আঙুল ফোটাচ্ছেন পুটুশ পুটুশ শব্দে।

আফসোস যারা কেক আনতে গিয়েছেন তাদের মিষ্টি খাওয়া বারণ- একথা ভাবতেই স্কুলের লাভার বয় প্রদীপ এবং নাজমুল হুদার চোখেমুখে মিচকি শয়তানি হাসির দেখলো মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজ সব পক্ষের লোক। সময়মতন সে এপাড়ে ওপাড়ে দুই পাড়েই নিজের নৌকা ভেড়ায়।

ভিড়ভাট্টা এসব ভালো লাগছেনা বন্যা লিপি ম্যাডামের কারন পান নেই। শেষ ক্লাস আজকে ছুটি হবে, সাথে কেক কাটার খবর শুনে খুশিতে ডগডগ হয়ে ব্যাগে করে আনা সব পান আগেই খেয়ে নিয়েছেন। তাই নিতাই বাবুকে বললেন- দাদা যারা কেক আনতে গিয়েছেন তাদের জর্দা দিয়ে খিলি পান আনতে বলেন। কেক খাবার পরে মুখে পান না দিলে চলবেনা আমার।

এরমধ্যেই নামকরা ফটোগ্রাফার শামীম ভাই
কামানের নলের মত বিশালাকার ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে হাজির হলেন। উপহার হিসেবে এনেছেন কেককাটা উৎসবের অন্যতম প্রয়োজনীয় বস্তু মোমবাতি। কেকের নাই খবর, মোমবাতি এসে উপস্থিত! স্কুলের কেক কাটা অনুষ্ঠানের ছবি ছাপা হবে পত্রিকায়। যাক ভালোই হবে, কেক কাটা, ছবি তোলা অনুষ্ঠান তাহলে জম্পেশ হবে আজ!

কিন্তু এ যে বিচার বসেছে কাদের যেন? শামীম সাহেব ঘটনার কিছুই আঁচ করতে পারছেননা। তবে ঘটনা যে গুরুতর তা সাবিনা ম্যাডামের মুখ দেখেই আন্দাজ করতে পারছেন।

মমি স্যার মানুষটি ক্যাড়াব্যাড়া সহ্য করেন না। তিনি ভাবছেন এসেছি কেক খেতে এরমধ্যে আবার প্রেমঘটিত বিচার? তিনিও হুংকার দিলেন- সাবিনা ম্যাডাম, যা করার তাড়াতাড়ি শুরু করেন। আনন্দ উৎসবের মাঝে এসব হাংকি-পাংকি ভালো লাগছেনা।

বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন রেহানা বীথি ম্যাডাম। দ্যাখেন সাবিনা ম্যাডাম, সোনেলার প্রেমে পড়েছেন অনেক জন। এর মধ্যে উপস্থিত অনেকেই তাকে নিয়ে প্রেমপত্র লিখেছেন আজ তার জন্মদিনে। একজনের পক্ষে এতগুলো পত্র প্রাপ্তিস্বীকার করা কি সম্ভব? তবুও সোনেলা করেছে, তার সাধুবাদ প্রাপ্য। কিন্তু আমি আজ বলতে চাই, যারা প্রেমপত্র লিখেছেন তারাই কি শুধু সোনেলাকে ভালোবাসেন অন্যরা নয়? আমি মনে করি যারা পত্র লিখেননি তারাই কাঠগড়ায় আসুক। মনের কথা না বললে আমরা কিভাবে বুঝবো তারাও যে সোনেলাকে ভালোবাসেন? সেটা আমরা দেখতে চাই, জানতে চাই। আমি সরাসরি বলতে পছন্দ করি তাই বলছি, জিসান সাহেব কতবড় কেক আনবেন তা এখনো যেহেতু জানিনা তাই স্বজনপ্রিয় অন্যান্যদের কেকের ভাগ দিয়ে নিজের ভাগটি কমাতে চাইনা।

এ কথা শুনে সাবিনা বললেন - আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন রেহানা ম্যাডাম। কেকের ভাগের বিষয়ে আমি বড্ড কড়া। ভাগ অন্য কেউ পাবার প্রশ্নই আসেনা।

শাহরীন বললেন- লেখকগন তারা কি সত্যিই প্রেমে পড়েছেন?

রেহানা- হ্যা, এই যে প্রমান আপনাদের সামনে! বলেই একগাদা প্রেমপত্র দেখালেন।

শবনম বললেন- আমি আর সাবিনা ম্যাডাম নাজমুল আহসানের কাছ থেকে শুনেছি সোনেলাকে নিয়ে লেখা এসব প্রেমপত্র সোনেলা তার সিন্দুকে জমা করেছে।

আরজু - তা নাজমুলের সাথে আপনাদের কোথায় দেখা হলো?

শবনম - তার ফাস্টফুডের দোকানে সাবিনা ম্যাডাম আর আমি, আমরা লজেন্স খেতে গিয়েছিলাম সেখানেই শুনেছি। তবে সোনেলাকে যে সেও ভালবাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনা তা আমরা তা ঠিকই বুঝেছি।

একথা শুনে বন্যালিপি ভাবছেন- কি! আমাকে ছেড়েই চুপিচুপি আপনারা যান সেখানে? আজ খেল দেখাবো কেক খাবার পরে। রাগের মাথায় একখিলি পান মুখে দিলেন।

ওদিকে রেহানা ভাবছেন- আমিতো জানতাম আপনারা টিউশনি করাতে যান! আপনারা একা একা লজেন্স খাবেন আর আমি ওকালতি করবো? মোট্টেও না। আজকের পর থেকে আমি এসব প্রেমপত্র বিষয়ে আর নাই।

পিছন থেকে কে যেন বলে উঠলেন- এখানে কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে? সবাই তাকিয়ে দ্যাখেন তিনি আমাদের মহারাজ খ্যাত সংস্কৃত শিক্ষক এবং কবি- হেলাল স্যার।

পিত্তিজ্বলা রাগ নিয়ে তোপের মুখে সাবিনা ম্যাডাম বললেন- মহারাজ কুতকুত খেলা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এখানে, আপনি খেলবেন? তা এত দেড়ি হলো যে আসতে? হেঁটে হেঁটে আসলেন নাকি জিসান সাহেবের সাথে? এ কথা শুনে অনেকেই হাহা করে কেলিয়ে উঠলেন ঘরের মাঝে। হেলাল স্যার চুপসে গিয়ে চুপচাপ একখানা চেয়ারে বসে পড়লেন।

জিসান স্যার কেক নিয়ে এসেছেন। ইঞ্জা স্যার প্যাকেট দেখে কেকের সাইজ আন্দাজ করতে পারছেননা তবে ক্ষুধায় জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলেন।

আর সাবিনা ম্যাডাম ভাবছেন- ধুর! গোল্লায় যাক বিচার, কেকের ফ্লেভারটা কি যদি জানা যেতো? চকলেট নাকি ভ্যানিলা? শবনম ম্যাডামের দিকে চোখ পড়তেই দ্যাখেন তিনিও কেকের প্যাকেটের দিকে চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছেন! বন্যা ম্যাডাম পান চিবোতে ভুলে গেলেন আর রেহানা ম্যাডাম বড় প্যাকেট দেখে আন্দাজ করতে লাগলেন কেকের সাইজটা কেমন হতে পারে?

এদিকে জিসান স্যার ভুল করে কেককাটা ছুড়ি নিয়ে আসেননি। হাজিরা দিতেও লেট এখন এখন কথাও ভুলে যাচ্ছেন। কি অবস্থা! এখন দেখছেন বিচার বসেছে। আনন্দ উৎসব কি তবে পন্ড হতে যাচ্ছে? ইদানিং অজানা আশঙ্কায় তিনি শঙ্কিত থাকেন সবসময়। নাহ! পরিস্থিতি সামাল দিতেই হবে এক্ষুনি।

এরমধ্যে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো নাজমুল আহসান! তার হাতে কেক কাটা ছুড়ি। কেক খাবার লোভে দোকান বন্ধ করে জিসান স্যারের পিছু পিছু চলে এসেছে সে নিজেও।

জিসান স্যার শিক্ষকদের মধ্যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং চৌকশ ব্যক্তি। অন্যকে দিয়ে কাজ হাসিল করাতে তার জুড়ি নেই। তিনি বললেন- সব শুনে বুঝলাম ভালোবেসে অনেকেই সোনেলাকে চিঠি দিয়েছেন। ভালোবাসা অন্যায় নয়, আমরা সেই প্রেমপত্র গুলি স্কুলের নোটিশ বোর্ডে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবো যাতে সবাই দেখতে পারেন। তবে যিনি প্রেমপত্র পেয়েছেন সেই সোনেলার কোন আপত্তি না থাকলে কেস ডিসমিস করে দিন সাবিনা ম্যাডাম। আর যারা প্রেমপত্র লেখেননি তাদের খোঁজার জন্য নিতাই বাবুকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হোক।

রুমের সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন- ডিসমিস ডিসমিস। মনে মনে একটাই চাওয়া কখন কেক খাবো?

সাবিনা ম্যাডাম বললেন - তবে তাই হোক। আজকে বিচারের রায় হলো যারা প্রেমপত্র লিখেছেন তারা নির্দোষ, আর যারা লেখেননি তারাও দোষী নন তবে কেকের ভাগ তেনারা পাবেননা। মনে মনে ভাবলেল, যাক আজ কেকের ভাগ তাহলে একটু বেশীই পাবো।

ইঞ্জা স্যারের বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে। বললেন, সমাধান যখন হয়েই গেলো - আসেন আসেন কেক কাটি।

মোমবাতি জ্বালালেন নাজমুল নিজেই। এখন কেকে ফুঁ দেবার পালা। কিন্তু সবাই একসাথে ফুঁ দেবে কিভাবে? টাইমিং এর একটা বিষয় আছে! ঠিক হলো যখন স্কুলের ঘণ্টি বাজবে তখনই সবাই ফুঁ দেবে একসাথে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সবাই টেবিলের চারপাশে হুড়োহুড়ি করতে লাগলেন। ভাবখানা এমন, যে আগে ফুঁ দেবে সেই ভাগে বেশি পাবে।

এই হট্টগোলের মাঝেই হঠাৎ করে ঢং ঢং করে বিকট শব্দে ঘণ্টি বেজে উঠল ঠিক আটবার। ঘণ্টি দিয়েছে! ঘণ্টি দিয়েছে! সবাই হিপ হিপ হুড়রে বলে একসাথে ফুঁ উ উ উ উ দিয়ে উঠলেন।

সাবিনা ম্যাডাম তাকিয়ে দেখেন ভ্যানিলা ফ্লেভারের কেকের উপরে জ্বলা মোমবাতিগুলি নিভে গেলেও সবার ফুঁ এর তোড়ে কার যেন হাত লেগে কেকটা উল্টিয়ে পড়ে আছে টেবিলের উপর!

হতভম্ব হয়ে ওঠা হল ভর্তি দর্শক যেন ঠায় দাঁড়িয়ে নির্বাক করুন চোখে কেকখানার দিকে তাকিয়ে আছে। পুর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই অতি আবেগে সবাই একসাথে এতজোরে হাতাহাতি করে ফুঁ দিয়েছেন, মোমবাতির সাথে কেকটাও গিয়েছে উলটে। আহারে! আহারে! উল্টে গেল? এখন কি হবে!

সাবিনা ম্যাডাম বলে উঠলেন- কেক উল্টিয়েছেতো কি হয়েছে? আমরা এই কেকই আঙ্গুল দিয়ে চেটেপুটে খাব সমস্যা নেই। তবে কথা হচ্ছে সময়ের আগেই শয়তানি ঘণ্টি বাজিয়েছে কে? তাকেই আগে পাকড়াও করা হোক!

ধরা হোক! ধরা হোক! বলে হুড়মুড় করে সবাই ছুটে চলেছে ঘণ্টি বাদকের দিকে। তাকে ধরা হবেই আজ। সেই ঘণ্টিবাদককে ধরতে সামনে সামনে ছুটছে প্রদীপ, হুদা, হৃদয়ের কথা আর নাজমুল আহসান। নাজমুলের রাগ তার উপরে সবচেয়ে বেশী। হবেইবা না কেন? ঘণ্টিবাদক ব্যাটা আমার দোকানের কেক সবাইকে আঙুল দিয়ে চেটে খাওয়ালো যে!

এত হৈ হট্টগোল এর মাঝে ফটোগ্রাফার শামীম ভাই এতক্ষন ছবি তুলতে ভুলে গিয়েছেন। তিনিও এখন ঘণ্টি বাদকের পিছে সবার দৌড়ানোর ছবি তুলছেন, নিজেও দৌড়াচ্ছেন। তার ক্যামেরা একশন দেখলে যে কেউ বলেবে তিনি কামান দাগাচ্ছেন!

অথচ হলঘরে উপস্থিত প্রেমপত্র লেখকগনের তারা কেউই জানতেননা, রুমের ভিতরের এই সব কর্মকাণ্ড দরজার ওপাশ থেকে আঁড়ি পেতে শুনছিল এক লোক। সবার সব কথা শুনে মনে মনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠেছিলো- এই তদন্ত কমিটি গঠন কালচার আর গেলোনা! সবাই নিজের দায়ভার এড়ানোর জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। অথচ একটু মাথা খাটালেই তারা বুঝতে পেতেন আজকে যারা হলরুমে উপস্থিত নেই সোনেলাকে তারাই প্রেমপত্র লেখেননি। এটা বোঝার বুদ্ধিও নেই কারও!

তবে ঘণ্টিবাদক লোকটার মন জানে, যারা প্রেমপত্র লেখেননি তারাও সোনেলাকে ভালোবাসে। সবাইতো আর ভালোবাসা লিখে প্রকাশ করেনা। কেউ কেউ মনেমনেও ভালোবাসে, এটা বুঝে নিতে হয়। তাই বলে তারা কেকের ভাগ পাবেনা এই রায় কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না। তাই বুদ্ধি করেই সে আজ সময়ের আগেই পাগলা ঘণ্টি বাজিয়েছে। একবার দু'বার নয়, হট্টগোল পাকানোর জন্য পাক্কা আটবার! সবাই দেখুক ক্যামন লাগে!

চোখে কালা চশমা লাগিয়ে, সোনালি রঙে নিজেকে আবৃত করে রাখা সেই ঘণ্টিবাদক লোকটি এখন দৌড়ের উপরে আছে। এদের কাছে ধরা পড়লে আর রক্ষা নাই! কেক গোল্লায় যাক, জান বাঁচানো ফরজ!

পুনশ্চঃ

আজকের পত্রিকার বিনোদন পাতায় ছবিসহ শিরোনাম বেড়িয়েছে- ঘণ্টি বিড়ম্বনায় সবাই আঙুল দিয়ে খেলো কেক, ঘণ্টি বাদক লাপাত্তা!!

পত্রিকার ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাঁচজন মহিলা সোনালি রঙা একজনের পিছে পিছে বেত হাতে দৌড়াচ্ছেন।

যারা প্রেমপত্র লেখেননি এই খবরে তাদের আফসোসের সীমা রইলোনা। আহা! এত সুন্দর বিনোদনে উপস্থিত হতে না পারার কষ্টে বিভোর এখন তারাও হতভম্ব হয়ে পত্রিকা হাতে চেয়ে আছে ঐ রাস্তার দিকে। বলা যায়না কালো চশমার সোনালি রঙা মানুষটি এদিক দিয়েও আসতে পারে। আমাদের পক্ষ নিয়েছে সে, বড্ড ভালো ছিলো লোকটি!!

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ