গুমোট আকাশ

ছারপোকা ৫ জানুয়ারি ২০১৫, সোমবার, ০৮:১১:৩৫অপরাহ্ন গল্প ১৬ মন্তব্য

মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন
গুলো মুহুর্তের মধ্যেই মন খারাপ
করে দেয় ফাহিমের । অহনা ফাহিমের জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর তার
হাসিমুখটা যেন চলে গেছে । তার পর থেকে আর ফাহিম কে প্রাণ
খুলে হাসতে দেখেনি কেউই ।অহনার মাঝেই পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পেয়েছিল
ফাহিম। ভালবাসার অপার সাগরে
সর্বদা ডুবে থাকত ফাহিম ।আজকাল দিনকাল ভাল যাচ্ছেনা ফাহিমের । গতকাল থেকেই ফাহিমের অহনার কথা খুব মনে পড়ছে।অহনার কথা বলা হাসি সবকিছুই খুব ভাল লাগতো ফাহিমের ।আর যে জিনিসটি বেশী ভাল লাগতো তা হলো ওর
মধ্যে লুকিয়ে থাকা ছেলেমানুষি আর অসম্ভব সুন্দর দুটি চোঁখ। মনে হতো এই দুটি চোখে চোখ রেখেই হয়তো অনন্তকাল
পাড়ি দেওয়া যায়। অহনার সাথে ফাহিমের প্রথম দেখা হয়
মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় । ফাহিম ও ঐদিন ভর্তি হতে এসেছিলো । এরপর আস্তে আস্তে পরিচয় দুইজনেরই।কিছুদিন পরেই
মেডিকেলে ক্লাস শুরু হয় দুইজনে একই শিফট এ পড়ে এতে ঘনিষ্টতা আরো বেড়ে যায় । একজন কে ছাড়া আরেকজন অচল
মনে হয় তাদের ।পরস্পরকে পাওয়ার আকুলতার দুর্বার আকর্ষনে তাদের মধ্যে জেগে উঠে ভালবাসা নামক
বস্তুটি ।১ বছরে কখন যে মনের
টানে গভীড়তা বাড়িয়ে কাছাকাছি চলে এসেছে সেটা ওরা বুঝতেই
পারেনি। দুইজনে এ দুইজনকে খুব
ভালবাসতো মাঝেমধ্যে ঝগড়া বেঁধে যেতো কে কাকে বেশি ভালবাসে এই নিয়ে ।
ফাহিম অনেকটা অগোছালো ছিল কিছু না বলে মাঝ রাতে অহনার
হোস্টেলের সামনে ফুল
নিয়ে এসে প্রপ্রোজ করা,শ্রাবন
সন্ধ্যায় পাশাপাশি হাঁটা, ঝুম
বৃষ্টিতে ভেজা , পূর্নিমা রাতে হাতে হাত রেখে চাঁদ দেখা ।
খামে করে চিঠি দেয়া ।এসব
পাগলামী করতো সারাদিন ।
ফাহিমের অসুখ হলে অহনা সারা রাত না ঘুমিয়ে কাটাতো আর একটু পর পর কল দিয়ে খোঁজ নিতো । রান্না করে খাবার
দিয়ে আসতো নিজ হাতে খায়িয়ে দিতো । ছুটির দিনগুলোতে ঘুরতে বের হতো ।
পুরো শহর ঘুরতো রিকশা দিয়ে ।নদীর পাড়ে বসে থাকা ।নৌকা ভ্রমন । অনেক
ভাল সময় কাটছিল ওদের। অনেক দিন যাবত
ঘুরতে যাওয়া হয়নি ফাহিম আর অহনার ।ব্যস্ত শহর ভাল লাগে না অহনার । তাই এখন আর তেমন বের ও হয় না ব্যস্ত শহরে । আজ হরতাল ব্যস্ত শহর টা অনেক ফাঁকা তাই ঠিক করলো অহনা আজ ঘুরতে বের হবে তাই
ফাহিম কে ফোন দিয়ে নিউমার্কেটের সামনে আসতে বলে ।ফাহিম বের হলো বাসা থেকে আজ সারাদিন ঘুরবে পুরো শহর ।ফাহিম অহনা কে ফোন
দিলো তুমি কোথায় অহনা ?

--এইতো মাত্র সিএনজি তে উঠলাম । কোনো রিকশা পাচ্ছি না একটা সিএনজি
পেলাম মাত্র ।তুমি কোথায় ?

--আমি নিউমার্কেটের
সামনে দাঁড়িয়ে আছি ।

--আচ্ছা আমি আসতেছি ।এই বলেই ফোন রেখে দিলো ।

অনেকক্ষন হয়ে গেলো অহনার আসার কোন নাম গন্ধই নেই ।এতক্ষন তো লাগার কথা না।
হঠাত্ নিউমার্কেটের একটু
দূরে জোরে চিত্কার শুনা যাচ্ছে অনেক লোক দৌড়ে পালাচ্ছে ।
ফাহিম সামনে এগিয়ে গেলো
নিজের চোখ কে বিশ্বাস
করাতে পাচ্ছে না ।
একটা সিএনজি আগুনে পুড়ছে ।
দৌড়ে গেলো ফাহিম সিএনজির
কাছে গিয়ে ভিতরে ঢুকার
চেষ্টা করছে কিন্তু
পারছে না আগুনে ছারখার
অবস্থা বাইরে একটা হাত ব্যাগ পেল যেটা অহনাকে দিয়েছিলো ফাহিম । ফাহিম
জ্ঞান হারালো আর যখন হুঁশ
ফিরলো তখন সে আবিষ্কার
করলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে । অহনা চিরতরে ফাহিমের কাছ থেকে হারিয়ে যায়।দুর্ঘটনার পর ফাহিম আর দেখতে পায়নি অহনা কে ।শুধু
ওর হাতব্যাগ টা পেয়েছিল। হাতব্যাগ টায় অহনার গায়ের গঁন্ধটা শুঁকতে যেয়েও
বার বার ব্যর্থ হয়েছে ফাহিম।বুকের
ভেতরটাতে মনে হচ্ছিল অনেক টন ওজনের পাথর চেপে রেখেছে।এত ওজন
দুঃখগুলোর। কতবার যে জ্ঞান
হারিয়েছে সেটা সঠিক মনে নেই ফাহিমের ।
অহনা কে হারিয়ে ফাহিম একদম পাগল প্রায় হয়ে যায়। ওর মেডিকেলের
পড়াটা বন্ধ হয়ে যায় ।এখন ও
নিজেকে ঠিকভাবে সামলিয়ে উঠতে পারেনাই ফাহিম ।তারপরে ও নিজেকে গোছানোর
চেষ্টা শুরু করে ফাহিম।কিন্তু
যখনি অহনার কথা মনে পড়ে তখনই ফাহিমের আকাশটা গুমোট হয়ে আসে। মেঘ এসে ভিড়ে ফাহিমের আকাশে। হয়ত
বৃষ্টি হবে।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ