গরম দ্যা হট

রোকসানা খন্দকার রুকু ২০ জুলাই ২০২২, বুধবার, ০২:৪৩:৫৩অপরাহ্ন রম্য ১৩ মন্তব্য

শ্রাবনের আকাশ অঝোরে টপটপ করবে। তা হচ্ছে না। যে ক'ফোঁটা পড়ছে তা ধুলোময় শুষ্ক রাস্তা- ঘাট তৃষ্ণার্ত প্রেমিকের মতো ঠোঁট লাগিয়ে শুষে নিচ্ছে। ধোয়াময়, ভ্যাপসা একটা অবস্থা।

সিডিউল টাইমে লোডশেডিং হবার কথা কিন্তু ১২০ মিনিটে যেন ১ ঘন্টা হয়ে গেছে। দিনে রাতে হিসেবের বাইরে লোডশেডিং। সামনে কি হবে তা ভেবে আতংকিত হচ্ছি। তবে যা হবে মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।

আমি অবশ্য বেশ কুল আছি। গরম পানিতে শাওয়ার সেরে ছেলেকে নিয়ে লটকন খেতে বসেছি। ছেলে বলে উঠলো- থালাদিন থুদু থাও কেন? আমার থাতে এততু থেল।

- কৈ বাবা, খাই। আচ্ছা তোমার খেলনা নিয়ে আসো, খেলি।

মোটা হওয়ার এই এক জ্বালা কিছু খাইলেই লোকের চোখে লাগে। ছেলের সাথে খেলার ফাঁকে ফোনের কাজটা সেরে ফেলা যায়। আমার দুটো ফোনের একটাও আজকাল বাজে না। শীতকালের চেয়ে গরমে বোধকরি লোকজন কেউ কারো খোঁজ- খবর কমই নেয়। নাকি আমার খোঁজ কেউ নেয় না কে জানে। আমি অবশ্য নিয়ম করেই সবার খোঁজ নেই।

 

রেজওয়ানা কবিরকে ফোন দিলাম। তাহার ফোন বলে দুঃখিত। বাধ্য হয়ে আজাদকেই ফোন দিতে হল। পরপর বিজি বিজি বলেই যাচ্ছে। বুঝতে বাকি রইলো না লাইন ব্যস্ত নয়, আমারে ব্লক মেরেছে। কেন ব্লক মারলো তা পরে বলছি।

 

এবার ফোন দিলাম তাকে যিনি বলেন আমি নাকি তার খুব ভালো বন্ধু, আমি অবশ্য বলি না। কারণ তিনি বরাবর আমার সাথে চিট করেন। অনেককিছুই আমাকে বুঝে নিতে হয়। আমি রাগ করি কিন্তু দায়িত্ব থেকে সরে আসি না। তিনি অসুস্থ তাকে ফোন দিয়ে সালাম দিলাম।

- হা হা হা হা সালাম দিচ্ছ কেন?

- সালাম অর্থ শান্তি। এসময় তো তাই চাওয়া উচিত। খারাপ কিছু তো না।

- আবার হাসি, না ভাই তোমার সালামে সমস্যা আছে। মনে হচ্ছে মজা নিচ্ছ কিংবা মশকরা করছো। কোন একটার গন্ধ পাচ্ছি।

মনে হল বর্তমানে তিনি ভীষন ফুরফুরে মেজাজে আছেন নতুবা সন্দেহ বাতিক মন তার অট্টহাস্যের কারন হতে পারে। তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে সালাম ঠিকঠাক ছিল কিন্তু কাজ হলো না। তিনি হেসেই যাচ্ছেন।

 

জামাই কোথায়, কেমন, কি করছে জানা দরকার। তাকেও ফোন দিয়ে সালাম দিলাম। সালামের উত্তর না দিয়ে বললেন,

- আরে, রাখো তো তোমার সালাম। কাজ করছি বালুতে, চরের গরমে পা জ্বলে যাচ্ছে। তার উপর পাফপ্যান্ট পরছি। এতো তাপ পুরো গায়ে মনে হয় ফোসকা পড়বে।

হালকা করে বললাম, - বৃষ্টি হয়েছে, গরম সামান্য কমেছে তো!

- ধুর, বৃষ্টি। এতো তাপ, এতো তাপ। ও তোমাকে আর বলে কি হবে, তোমার তো গরমই নাই, এই গরমেও গরম পানি দিয়ে গোসল করো। কাজ কাম নাই রান্না করো, খাও আর ১২ ঘন্টা ঘুমাও। ইউজলেস ফোন হাতে নিয়ে থাকো। কথা সত্যই।

রাগে আমার অল্পের জন্য লটকন গলায় আটকালো না। আমি বতমানে ফ্রিজের মতো ঠান্ডা দেশে আছি। ভদ্রলোক বরারব অফিসের ফ্রাসটেশান আমার উপর ঝারেন। তার দুধে- আলতা সুন্দরী বস এই গরমে ফিল্ডে কাজে পাঠিয়েছেন। সুন্দরীকে তিনি ফেলতে পারেন নি। হয়তো সে সময় হেসে কুটি কুটি হয়ে ধন্যবাদসহ বেড়িয়ে এসেছেন। এখন আমাকে ঝারার জন্য ওত পেতে ছিলেন। তবে বেচারা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলো। গাইবান্ধা কাছেই ছিল। আমিও আর তাকে ডাকছি না, এই গরমে রান্নাও করছি না।

 

বাড়ির সহকারী খলিল ভাইও আজ সকালে আসেনি। কিছুক্ষণ আগে এলো। ভাবলাম এরে একটা সালাম দেই দেখি কি রিএকশ্যান হয়? সবার কাছে তো বকা খেলাম।

খলিল ভাই সালামের উত্তর না দিয়ে বলে- বুবু জ্বর আসছে নাকি!

কি আশ্চর্য! সবার দেখি একই অবস্থা। খসখস করে উঠছে। অগত্য অনন্ত ভাইয়ার ' দিন দ্যা ডে' নিয়া আসছি ওটাই ভরসা। ভাবছি দেখেটেখে সুন্দর একটা রিভিউ লিখে ফেলবো।

তো শেষ করি, রেজওয়ানার আজাদ কেন ব্লক করলো তা দিয়ে। দুদিন আগে ফোন দিয়েছিলাম ১১ টার দিকে বোন জামাইয়ের খবর নিতে।

ফোন ধরেই তিনি শুরু করলেন- তোমার নবাবজাদী তো এখনও ঘুমায়। এতোবেলা হল, রান্না না করুক। এই গরমে কি রান্না করলাম তা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করবে। তাও ওঠে না। ওর পরিবারের লোকজনও বা কেমন ছ্যাচড়া। মেয়েকে শিক্ষা দেয় নাই, শাসন নাই। ইচ্ছে করে সবগুলারে এক এক করে ব্লক মারি। আর এটার পাছায় একটা শট লাগাই।

আমি বেশ শান্ত গলায় বললাম- আজাদ, তুমি কি আমারে বকা দিলা?

- না আপু, ছি! ছি! কি যে বলো না। তোমাকে কেন বকা দিব। তোমার আর কি দোষ!

এ সময় গলা শোনা গেল- বাবু কই তুমি?

- এইতো বাবা, আপু ফোন দিয়েছে কথা বলি। তুমি হাতমুখ ধোও খাবে না। তোমার আবার কলেজও তো আছে।

আচ্ছা আপু, রেজওয়ানা উঠেছে। এখন আমরা খাবো। ভালো থেক, আসসালামু আলাইকুম!!!

ছবি- নেটের।

0 Shares

১৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ