গতবার বলছিলাম ক্যান্টন ফেয়ার ঘুরে ঘুরে দেখার বিষয়ে, এই ঘুরাঘুরি অবস্থায় আমার অবস্থা টাইট, পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে, শুরু করলাম বসাবসি, যেই কাউন্টারে যায় সেই কাউন্টারে গিয়ে বসে পড়ি, কিছুক্ষণ বসে আবার হাটা, কিছু দূর এগিয়েই অবাক হলাম, বিভিন্ন কাউন্টারে রাখা হয়েছে ইট বানানোর মেসিন, কত ধরণের ইট যে বানানো যায় তার নমুনা রাখা, কোনটা মাটির তো কোনটা সিমেন্ট ব্লক আবার কোনটা সিরামিক্সের, ওদের কাছ থেকে কিছু ক্যাটালগ নিয়ে এগুলাম, মানুষ জনকে জিজ্ঞেস করে করে কোথায় গাড়ীর শো হচ্ছে, সবাই দেখিয়ে দিলো সামনে এগিয়ে গেলেই বিল্ডিংয়ের বাইরে যাওয়া যায়, যেখানে চলছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত গাড়ীর শো, আমরা এগিয়ে গেলাম গাড়ীর শোর উদ্দেশ্যে, বেরিয়ে এসে আবার অবাক হওয়ার পালা, গাড়ীর শো এতো বড় হতে পারে না দেখলে বুঝতামনা, বড় প্রাইম মোভার থেকে শুরু করে ছোট ব্যাটারি চালিত তিন চাকার গাড়ী সহ সবই আছে।
আমরা প্রথমেই খুঁজে বের করলাম ইস্টেফেনদের কাউন্টার, যেখানে সাজানো আছে ডংফেং ছোট জাতের গাড়ী।
কোম্পানির জিএম আমাদের সাদরে বরণ করে নিয়ে আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উনাদের প্রডাক্টস দেখালেন, আমরা কিছুক্ষণ থেকে কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে বেরিয়ে এলাম কিছু খাওয়ার উদ্দেশ্যে, খুব কাছেই খাওয়ার স্টল ছিলো, দুজনে গিয়ে বসলাম, আমাদের পিছ পিছ ইস্টেফেন এসে বসলো আমাদের সাথে, আমাদেরকে বসিয়ে নিজেই গেলো খাবার আনতে, কিছুক্ষণ পর ঝাল নুডলস, ভয়লড সিজনাল ভেজিটেবেল, গ্রিল্ড আনারস, কলা নিয়ে এলো।
খাবার সময় বুঝতে পারলাম আমাদের কত বেশি খিদে লেগেছিলো, বুঝতে পারছিলাম পেটে রাক্ষস পড়েছে।
খাওয়া সেরে আমরা দুইজন সিগারেট ধরলাম এবং বাংলায় প্ল্যান করলাম (ইস্টেফেন বুঝতে না পারার জন্য) দুজনে ইস্টেফেনকে বিদায় করে কিছু অন্য ধরণের গাড়ীর খোঁজ করবো।
কিছুক্ষণ পর দুজনে গেলাম বিভিন্ন গাড়ীর খোঁজে, খুঁজে পেতে কয়েকটা কাঙ্ক্ষিত গাড়ী কোম্পানির খোঁজ পেলাম, তাদের কন্টাক ইনফরমেশন নিয়ে প্ল্যান করা হলো আমি হুবাইতে (মোটর সিটি) যাবো, সেখানে ওদের সাথে আমাদের এগ্রিমেন্ট করে আসবো (সে এক অন্য কাহিনী)।
এরপর খুঁজলাম প্রাইম মোবারের ফ্ল্যাট বেড (পিছনের লম্বা ট্রলিটা), তাও পেয়ে গেলাম একটু হাটাহাটি করতেই, সেখানে কিছুক্ষণ বসে কথাবার্তা শেষ করে ফিরে এলাম ইস্টেফেনদের কাছে, ওরা তখন সব কিছুই ঘুচাচ্ছে সময় শেষ হয়ে আসাতে, আমরা ওদের থেকে বিদায় নিলাম, এরর আগে জেনে নিলাম আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে কিভাবে হোটেলে ফিরবো।
আমরা ওদের নির্দেশিত পথ ধরে এগিয়ে চললাম ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশ্যে, স্টেশনে পোঁছেই টিকেট কাটলাম, এরপর ট্রেন আসলেই উঠে গেলাম, ট্রেনে প্রচুর ভীর, সবাই মেলা থেকে ফিরছে, কিছুক্ষণ পরপর স্টেশনের ঘোষণা আসছে আর ট্রেন থামছে, প্যাসেঞ্জার নামছে।
মিনিট পনেরো বিশ পর আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্টেশন আসলে দুজনে নেমে এসে স্টেশন থেকে বেড়িয়ে এলাম, আমাদের হোটেলের লাগোয়া স্টেশন।
রুমে ফিরে এসে আমি জুতা মোজা খুলেই বেডে চিৎপ্টাং, পায়ে আর শক্তি পাচ্ছিনা, সিইও সাহেবকে বললাম আপনি ফ্রেস হয়ে আসার সময় বাথটাবে গরম পানি ছেড়ে দিয়েন, গরম পানিতে কিছুক্ষণ পুরা শরীর চুবিয়ে রাখবো ব্যাথা নিরাময় করার জন্য।
উনি বেরুলে আমি গেলাম বাথরুমে, এর আগে সিইও বেরিয়ে গেলেন কিছু খাবার আর ফ্রুটস আনতে, বুঝে গেছেন আজ আর আমি রুম থেকে নড়বোনা।
আমি গোসল শেষে রুমে এসে শুয়ে রইলাম, পুরা শরীর বিশেষ করে পা দুইটার ব্যাথায় কোঁ খাঁ করছি, ঘন্টা খানেক পর সিইও সাহেব এলেন খাবার নিয়ে, কেএফসি থেকে চিকেন বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মেসড পটেটো, উনার জন্য ফ্রাইড রাইস উইত বিফ (কারি টাইপের), সাথে আধা কেজির মতো চেরি টমেটো আর এক ডজন ফ্রেস সবুজ কমলা।
খাওয়া শেষে চেরি টমেটো খেলাম, কমলা ছুলতে গিয়ে বুঝলাম এই কমলা কতো ফ্রেস, এর খোশা ছুলতেই কষ্ট হচ্ছে এতোই টাইট হয়ে চেপে রয়েছে।
পরদিন সিইও গেলেন মেলায়, আমি মাফ চেয়ে নিলাম পায়ে ব্যাথার অজুহাতে, উনি ফিরলেন সন্ধ্যায়।
ঘন্টা দেড়েক পর এলো ইস্টেফেন, আজ মেলা শেষ হয়ে গেছে, ভোর রাতের ফ্লাইটে ওরা ফিরে যাচ্ছে চংকিং, আমরা আগামীদিন বিকালে ফিরবো বাংলাদেশে, কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে সে বিদায় নিলো।
সমাপ্ত।
১৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আবার সমাপ্ত!!
ভাই পাইছেনডা কী!!
এত সামান্য লিখেই ঘণ্টি বাজাচ্ছেন!!
মানি না মানব না।
ইঞ্জা
সরি ভাই কমেন্ট করতে একটু দেরিই হলো, আসলে চায়নার বিভিন্ন শহরে ঘুরার অভিজ্ঞতা আমার হলেও কিন্তু তা অল্প সময়ের জন্য, ফলশ্রুতিতে লেখা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মৌনতা রিতু
খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললেন ভাইজু। আর একটা শুরু করুন। কিছুটা মাইন্ড ফ্রেশ হোক। ভালো থাকুন ভাইজু।
ইঞ্জা
সরি আপু একটু দেরি করেই কমেন্ট করছি।
আমার চায়নাতে অনেক সিটি ঘুরার অভিজ্ঞতা থাকলেও তা সল্প সময়ের জন্য, ফলশ্রুতিতে আমার লেখাও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
মায়াবতী
ইঞ্জা ভাই আফনে এই লেখা গুলার এতো যলদি খালি ইতি টানেন কেনো ! পড়া শুরুর আগে ই শেষ কইরা দেন ! ধুর …
ইঞ্জা
সরি আপু, যতটুকু ভ্রমণ থাকে ততটুকুই লিখি, দোয়া রাখবেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া এটা ঠিক না।
এবারে নতুন লেখা চাই।
তরুণ ফিরেছে চায়না থেকে। মনে হচ্ছে আগামী বছর যাওয়া হবে। 😀
ওহ মজার কথা শুনুন ভাইয়া। তরুণ ফোনে আমার মামনিকে বলছিলো, “মামনি আমি যদি নীলার মতো লিখতে পারতাম, এতোদিনে কয়েক খন্ড ভ্রমণ কাহিনী লেখা হয়ে যেতো।” আর তরুণের শাশুড়িও উৎসাহ দিচ্ছে, “তরুণ তুমিও লিখতে পারবে। লিখে ফেলো এই যে বলছো, ঠিক এভাবেই সহজ ভাষায়।” 😀
ইঞ্জা
আপু আমি ব্যবসায়ীক কাজে ভ্রমণ করি তাও অল্প সময়ের জন্য, ফলশ্রুতিতে আমার লেখা অল্প হয়।
জিজু যদি আপনাদের চায়না নিয়ে যান তাহলে অবশ্যই গ্রেটওয়াল দেখে আসবেন, আমি এতোবার গেলাম কিন্তু গ্রেটওয়াল দেখতে পারলামনা। ;(
জিজুকে মামনীর মতো করে উৎসাহ দিন আপু, উনি নিশ্চয় পারবেন। 😀
তৌহিদ ইসলাম
দাদাভাই, প্লিজ লাগে ভ্রমন কাহিনী আরো লিখুন। অল্পতেই লেখা শেষ করে দেন, মন মানে না ভাই। দারুন ছিলো প্রতি পর্ব।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, আগামীতে বড় লেখা নিয়ে আসছি।
মোঃ মজিবর রহমান
শুরু যখন আছে শেষও আছে। আবার নতুন পর্ব হোক।
ভাইজান, সিমেন্ট দিয়ে ইট বানান মেশিনের দাম কত?? মনে বা জানা আছে কি??
ভাল থাকুন। -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, ইটের খবর আমার চাইতে জিসান ভাইজান ভালো বলতে পারবেন। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
ওকে ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
শুভকামনা
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
আবারো ভ্রমনের নতুন কোন অভিজ্ঞতা শুনতে চাই। -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, খুব শিগ্রই পাবেন আশা করছি।
রেজওয়ান
ফেসবুকেও পড়েছি এখানেও ২য় পার্ট পড়ে নিলাম (3 নতুন গল্পের অপেক্ষায় রইলাম -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ রেজওয়ান, আশা করি দ্রুতই পাবে।