কেমন আছিস তুই ? সিরিজ কবিতা-১

সীমান্ত উন্মাদ ৭ মে ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:২৯:১৯অপরাহ্ন কবিতা ১৪ মন্তব্য

কিছু কথাঃ সোনেলার জন্য সীমান্ত উন্মাদের সিরিয়াস কবিতা সিরিজ আজ থেকে সোনেলার সব সহ ব্লগারদের জন্য। এতোদিন শুধু হাসিয়েছি বাঁ হাসানোর চেষ্টা করেছি, দেখি আজ থেকে কাঁদাতে পারি কিনা??

রাত জাগা পাখির পালক
খসে পড়ে মাটির ধূসর বিছানায়
সেখানে কি জোৎস্না ঝরে, অবিরত ??
আশ্বীনের আকাশের মত-
স্যঁত স্যঁতে তোর মুখের কাফন!
ধূপ-কর্পূরের ঝাঁঝালো গন্ধে
বিভৎস নির্জন এক ঘর,
“আদিম স্বত্তার মত একা”
তবে কেন লাশ হলি বল ??

চোখের ছায়ায় নেচে উঠে;
নোনা জলের জোয়ার,
চোখের আড়ালেই রাখি তারে
যেন কিছুই হয়নি!
অবধারিত ছিল-অস্পৃশ্য নিয়তির হাতে,
ভাটার উল্টো পথে পাড়ি দিয়েছিলি
অনেক পথ, তোর মনে আছে ?
তবে আজ কেন এ হেঁয়ালি!!
আট ঘন্টা কি খুব বেশি সময় ?

সায়াহ্নের নৌকা ভীড়ে, সময়ের বন্দরে-
লাগামহীন সময়ের মাঝে খুব তাড়াহুড়ো তোর!
গোধূলী বেলার আগেই তাই ডাক এসেছে-
আপন কূলায় ফেরার।

বাম পাঁজরের ক্ষত চীহ্ন চেপে
চীৎকার করে এক শোকার্ত জননী
কি নিষ্ঠুর তুই!! ফিরেও দেখলিনা।
এক বিষন্ন পিতার দৃষ্টি জুড়ে
নূড়ি পাথরের খস খসে পথ
দীগন্তের চেয়ে দূরে-
পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ
এ ভারি অন্যায়!!

বয়ে যায় রক্তের স্রোত
অলিন্দ নীলয়ে;
চেয়ে থাকি আকাশের দিকে
ক্ষুধার্থ হৃদয়ে।

যদি কোন দিন ভূল করে হলেও
উড়ে আসিস, আমাদের আঙ্গীনায়
অতিথী পাখির মত-
সেই পর্যন্ত ভাল থাকিস।।

উৎসর্গঃ

রবিন যে ছিল আমার খুব কাছের বন্ধু, একান্ত আপন এবং আমার গান, কবিতা, ছড়া, গীটার শিক্ষা, আবৃত্তি, বিতর্ক করতে পারার অনুপ্রেরনার অন্যতম উৎস। যার মৃত্যু হয় এক ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনায় ২০০৭ সালের এই দিনে। সাথে ছিলাম আমিও, নিয়তির খেলায় বেঁচে যাই আমি কিন্তু হারিয়ে ফেলি চিরতরে আমার বন্ধুকে। আমার এই কবিতাটি তাঁকে উৎসর্গ করেই লিখা।

অচেতন অবস্থায় যখন প্রায় ৩ মাস হাসপাতালের বিছানায় শুয়েছিলাম, যখন ফিরে আসি বাস্তব জীবনে, তখন জানতে পারিনি কি হারিয়েছি। সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পর নিজেকে যে একা আর ক্ষত-বিক্ষত মনে হয়েছে, যা আজো বয়ে বেড়াচ্ছি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। এখনো মনে পড়ে আজ থেকে ১২ বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল গীটার ফ্যাসটিবলে আংশগ্রহন করতে যাবো, কিন্তু কেন জানি নিজের ভীতর ভয় কাজ করছিল, মনে মনে ভাবছিলাম পরদিন প্রতিযোগিতায় আংশগ্রহন করবো না। রবিন তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আমি ঢাকায়।বিকেল ৩ টায় ফোন করল আমাকে (আমি তখন টিএসসিতে আড্ডা মারছিলাম, গীটার প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে) ফোন করেই বলল কিরে তুই বাইরে কেন? তোর না কাল কম্পিটিশন আছে, আমি প্রতিউত্তরে বললাম, দোস্ত কেমন জানি লাগছে আমি আংশগ্রহন করবো না। সাথে সাথে ও বলল কি সমস্যা বল আমি বললাম জানিনা। রবিন উত্তরে বললঃ আমিও কিছুই শুনতে চাইনা, তুই প্র্যাকটিস করবি এবং কাল প্রতিযোগিতায় যাবি, বলে ফোনটা রেখে দিল। এদিকে আমি আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরলাম, রাত ১০ টায়। ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলাম, ঠিক রাত যখন বারোটা আমাকে আবারো রবিনের ফোন, রিসিভ করতেই বলল দরজা খোল, আমি দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলাম ও দাঁড়িয়ে আছে। সেই রাতে, সারাটা রাত আমি প্র্যাকটিস করেছি আর ও একটু পর পর আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে আর চা বানিয়ে খাইয়েছে। এবং বিকেলে আমার সাথে ফ্যাসটিবলে গিয়েছে, হাঁ আমি প্রথম হইনি সেবার হয়েছি দ্বিতীয়, কিন্তু তাও হতে পারতাম না যদি ও না আসত। এমন অনেক মন খারাপের সময় ওকে পেয়েছি আমার পাশে। আজ শাররীক ভাবে ও নেই কিন্তু আমার কাছে চিরদিন আমার স্বত্বার একটা অংশ হয়েই আছে।

হাঁ, রবিন যে ছিল আমার কাছের একান্ত আপন বন্ধু।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ