কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লী পৌছলাম, চার ঘন্টা পর পুরাতন দিল্লী থেকে জম্মুর ট্রেন শালিমার এক্সপ্রেসে চড়তে হবে। সুতরাং চার ঘন্টা সময় হাতে পেলাম দিল্লী দেখার জন্য। হাসান ভাইয়ের পরামর্শে মুক্তার ভাইয়ের চেনা পথে আমরা ছুটে চললাম মেট্রোতে। শুক্রবার থাকায় ভাবছিলাম দিল্লী জামে সমজিদে জুমার নামাজটা আদায় করবো, দিল্লী শহর থেকে ১৪ কিলো মিটার দক্ষিণের কুতুব মিনার দেখার পর দিল্লী জামে মসজিদে যাওয়ার আর সময় হয়ে উঠেনি, সোজা শালিমার এক্সপ্রেস। তো স্বল্প সময়ে কুতুব মিনারকে যেটুকু দেখতে পেরেছিলাম তা নিয়েই আজকের ছবি ব্লগ।
কুতুব মিনার দিল্লী শহর থেকে ১৪ কিলো মিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি বিজয়স্তম্ভ। এটি মুসলমানদের ভারত বিজয়ের স্মারক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাত শ বছর ধরে। সুলতান মুহাম্মদ ঘুরির সেনাপতি ও প্রতিনিধি কুতুব-উদ-দিন আইবেক ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে চৌহান রাজা পৃথ্বিরাজকে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পরাজিত করেন। এ বিজয়ের অব্যাবহিত পরে তিনি দিল্লী অধিকার করে কুওয়াতুল ইসলাম নামে একটি মসজিদ এবং এর সংলগ্ন একটি মিনার নির্মাণ করেন। এ মিনারটি ভারতবর্ষের মুসলিম ঐতিহ্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে নির্মিত কুতুব মিনার ভারত বর্ষের সর্বোচ্চ টাওয়ার। এর উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। মিনারের অভ্যন্তরে উপরে উঠার সিঁড়ি রয়েছে ৩৭৯ টি। নিচের দিকে মিনারের আয়তন ১৪.৩ মিটার এবং উপর দিকে ব্যাস ২.৭৫ মিটার।
(২) টিকেট কেটে প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকে পড়লাম আমরা সবাই।
(৩) প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকেই হাতের বামে এমন সুন্দর সমতল মাঠ, তারপরেই রয়েছে ঐতিহাসিক কুতুব মিনার।
(৪) নিম পাতার ফোকর দিয়ে দেখা যাচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত সেই কুতুব মিনার।
(৫) এর আশে পাশে আরও বেশ কিছু প্রচীন এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যারা একত্রে কুতুব কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত। এই কমপ্লেক্সটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাবদ্ধ হয়েছে এবং দিল্লীর অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এটি।
(৬/৭) ঢোকার মুখেই আমাদেরকে স্বাগত জানালো কিছু কাঠ গোলাপ ও অন্য নাম না জানা ফুলেরা।
(৮) গাছের পাতার ফাঁকে বসে থেকে থেকে ডেকে উঠছিলো কয়েকটি টিয়া পাখি।
(৯) কুতুব মিনারের পাশেই আরো একটি অসমাপ্ত মিনার।
(১০/১১) ইলতুৎমিস এর সমাধি।
(১২/১৩) মধ্যযুগীয় স্থাপনা এবং ধ্বংসাবশেষগুলোর কিছু ছবি।
(১৪) কুতুব মিনারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মনোরম একটি কমপ্লেক্স। ১০০ একর জমির উপর স্থাপিত এ কমপ্লেক্সে রয়েছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ, আলাই মিনার, আলাই গেট, সুলতান ইলতুৎমিশ, সুলতান গিয়াস উদ্দীন বলবন, সুলতান আলাউদ্দিন খলজী ও ইমাম জামিনের সমাধি ও লৌহ পিলার। কিন্তু এগুলোর মধ্যে কোনটা যে কি তা জানার মতো সময় হয়ে উঠেনি।
(১৫/১৬) প্রাচীন ভারতীয় লৌহকারদের দক্ষতার এক অসাধারণ নিদর্শন দিল্লির কুতব কমপ্লেক্সে অবস্থিত এই লৌহ পিলার। মনে করা হয়, ১৬০০ বছর আগে তৈরি করা হয় এই লৌহ স্তম্ভটি। স্তম্ভটির উচ্চতা মোট ২৩ ফুট, আট ইঞ্চি, যার মধ্যে তিন ফুট আট ইঞ্চি রয়েছে মাটির নীচে। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এত বছর পরেও একটুও জং ধরেনি এই স্তম্ভে। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এখানে ব্যবহৃত উন্নতমানের লোহা এবং তার বিজ্ঞানসম্মত নির্মাণ কৌশলের কথা। পাশাপাশি আরও অনেক তথ্যও তুলে ধরেছেন তাঁরা। এই স্তম্ভের প্রাচীনতম লিপিটি সংস্কৃত ভাষায়, ব্রাহ্মীলিপিতে খোদিত রয়েছে স্তম্ভের গায়ে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, এর মধ্যে প্রাচীনতম লেখাটি গুপ্ত রাজাদের রাজত্বকালে। এই লিপিটির তথ্য অনুসারে স্তম্ভটি উত্সর্গ করা হয়েছে ভগবান বিষ্ণুকে।
(১৭/১৮) লোহিত বেলে পাথর দিয়ে তৈরি কুতুব মিনারের গাত্রে আকর্ষণীয় ক্যালিওগ্রাফীতে উৎকীর্ণ রয়েছে পবিত্র কুরআনের আয়াত। এছাড়া মিনারের প্রাচীর গাত্র নানা প্রকারের অলঙ্করণ দ্বারা শোভিত। ভারত বর্ষের প্রথম মুসলিম শাসক ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান কুতুব উদ্দিন আইবেক কুতুব মিনারের গোড়া পত্তন করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে ১ম ও ২য় তলা নির্মিত হয়। পরবর্তী সময়ে (১২১১-৩৬) সুলতান শামসুদ্দিন ইলতুৎমিশের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মিনারের ৩য় ও ৪র্থ তলা এবং শেষে সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের হাতে ৫ম তলা নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ঐতিহাসিকদের অভিমত হচ্ছে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ-এর মুসল্লিদের সুবিধার্থে আযান দেওয়ার জন্য কুতুব মিনার ব্যবহৃত হতো। ১ম তলা হতে আযান দেয়া হতো নিয়মিত। সর্বাধিক উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে এটাকে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহারের উপযোগিতা লক্ষণীয়।
ভূ কম্পনের কারণে কুতুব মিনার বেশ কবার বিধ্বস্ত হলেও মুসলিম শাসকবর্গ পুন নির্মাণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নিতে বিলম্ব করেননি। ১৫০৫ সালে উপরের ২টি তলা ভূ কম্পণের কারণে বিধ্বস্ত হলে সুলতান ইলতুৎমিশ পুননির্মাণের উদ্যোগ নেন। ১৭৯৪ সালে ভূমিকম্পের ফলে এর কিয়দাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সুলতান সিকান্দর লোদী এর সংস্কারের ব্যবস্থা করেন।
(১৯) এখানে কিন্তু আমি 😀
(২০) ফিরে আসার সময় কুতুব মিনার এভাবেই আমার ক্যামেরায় বন্দি হয়েছিল।
৩২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
পুরোন স্থাপনার প্রতি টান আবার অনুভব করলাম
এই শীতের সকালে।
কামাল উদ্দিন
ঐতিহাসিক স্থান বা স্থাপনাগুলোর প্রতি আমিও একটা বিশেষ টান অনুভব করি সব সময়। শত বছর আগের ইতিহাসকে ছুয়ে দেওয়াতে অন্য রকম একটা শিহরণ খেলা করে শরীরে……….শুভ সকাল।
রেহানা বীথি
দারুণ সৌভাগ্য আপনার, এমন ঐতিহাসিক স্থাপনার মুখোমুখি হয়েছেন।
খুব ভালো লাগলো আপনার সুন্দর পোস্টটি।
কামাল উদ্দিন
আমিও তাই বলি আপু, সত্যিই আমি অনেকের চেয়ে ভাগ্যবান।
অনন্য অর্ণব
ইতিহাস ঐতিহ্যের সমারোহ। ভালো লাগলো খুব।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, ভালো থাকুন সব সময়।
তৌহিদ
জানেন, আমার কুতুবমিনার দেখার খুব ইচ্ছে! শুধুমাত্র সময়ের অভাব আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে।
ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
সময়ের অভাবে যে কতো কিছু দেখা বাকী থেকে যাচ্ছে তৌহিদ ভাই। তবে ইচ্ছে থাকলে কোন না কোন ভাবে এক সময় হয়েই যায়, আশা করছি কুতুব মিনারও আপনার দর্শন পেয়ে যাবে কোন একদিন।
ইসিয়াক
অসাধারণ লাগলো ছবিগুলো্ । আপনার ছবি তোলার হাত কিন্তু চমৎকার ।
এ যাত্রায় কি আপনি একাই ছিলেন?
কামাল উদ্দিন
আমি কখনো একা ভ্রমণ করিনা ভাইজান। এ যাত্রায় আমরা ৭ জন ছিলাম।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ , শুভেচ্ছা সতত ।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা মহী ভাই
রেজিনা আহমেদ
ছবিগুলো খুব সুন্দর ভাবে লেন্স বন্দী করেছেন, এবং লিখেছেন খুব যত্ন নিয়ে, শুভকামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা ইতিহাস ঐতিহ্যের সমারোহ।লেখা গুলোও চমৎকার,
পুরোন স্থাপনার প্রতি টান অনুভব করলাম,
ভালো লাগলো দাদা,
আপনিতো ভাগ্যবান দাদা, আপনার আগামী ভ্রমণ যাত্রা শুভ হোক শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকুন সব সময়।
নিতাই বাবু
না জানা অনেককিছুই জানা হয়ে গেল! আপনার এই পোস্টের আগে সত্যি এ বিষয়ে কিছুই জানা ছিল না। তো এখন, কুতুব মিনার লিখে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে এর ভিডিও দেখতে হবে। আমার আবার এসব পুরোনো স্মৃতিগুলো দেখতে এবং জানতে খুবই ভালো লাগে।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
কামাল উদ্দিন
আপনার মনটা আমার সাথে খুব মিলে যায় দাদা, তাইতো বলি আপনার সাথে বসে এক কাপ চা খেতে চাই।
নিতাই বাবু
তা একসময় হয়েই যাচ্ছে বলে মনে হয় শ্রদ্ধেয় দাদা। অপেক্ষায় আছি!
কামাল উদ্দিন
আমিও
জিসান শা ইকরাম
মোটামুটি সবই জানাহলো কুতুবমিনার কম্পলেক্স এর, আপনার সৌজন্যে।
ধন্যবাদ এমন পোস্টের জন্য।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন ইকরাম ভাই
সুপায়ন বড়ুয়া
কুতুব মিনারের ইতিবৃত্ত তুলে আনলেন আপনার
লেখনী ও ছবিতে।
খুব ভাল লাগলো।
শুভ কামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপার জন্যও রইল আন্তরিক শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ইতিহাস জানার সাথে দেখাও হলো আপনার সৌজন্যে । ধন্যবাদ আপনার ছবি ব্লগ এর জন্য। শুভ কামনা
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, শুভ সকাল
পর্তুলিকা
ইতিহাসের দরজা খুলে দিলেন। ছবি গুলো খুবি সুন্দর।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু
মাহবুবুল আলম
আপনার ভ্রমন কাহিনীগুলো সত্যি সুন্দর! শুভেচ্ছা রইলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ বড় ভাই, আপনার প্রতিও রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা
শান্ত চৌধুরী
সুন্দর উপস্থাপন
শুভ কামনা সতত …
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ শান্ত ভাই, ভালো থাকুন, সব সময়।