সরকার ২৬ টির মতো সরকারী পাটকল বন্ধ ঘোষনা করেছে। পাটকল গুলো ক্রমাগত লোকশান খাচ্ছে বলেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বিএনপি সরকারো আদমজী পাটকল সহ বহু পাটকল, বস্ত্রকল বন্ধ এবং পানির দরে বেসরকারী মালিকের হাতে হস্তান্তর করেছিলো। তখনো আমরা শুনেছিলাম সরকার লোকসান এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের লুঠপাঠ আর শ্রমিকদের কাজে ফাঁকির কারণে, সিবিএ নেতাদের দৌরাত্ম্যে মিল গুলো বন্ধ করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।

বিএনপির আমলেও শ্রমিক সংগঠন এবং বাম সংগঠনগুলো সরকারের সমালোচনা এবং সরকারি আমলাদের লুঠপাঠকে দায়ী করেছিলো। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। সরকারী কর্মকর্তাদের চুরি এবং লুঠপাঠ অবশ্য ই লোকসানের একটি কারণ কিন্তু পুরো কারণ নয়।

আমাদের দেশের রাষ্টায়ত্ত শিল্প গুলো অধিকাংশ ই পুরানো। অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের। এরপরে কিছু আছে জিয়ার আমলের। এরপরে রাস্ট্রিয় পৃষ্ঠোপোষকতায় তেমন কোন শিল্প গড়ে উঠেনি। অতএব এই সব অধিকাংশ শিল্পই হচ্ছে পুরানো এবং আধুনিকতা বর্জিত। অত এব এই মান্ধাত্তা আমলের শিল্প দিয়ে কতোটা লাভ করা যায়, কতোটা লোকসান হতে পারে আর কতোটা চুরি হতে পারে।

একটা উদহারন দেই। নব্ব ই দশকে বিএনপি সরকার দেশের বৃহৎ ভোজ্যতেল কারখানা খুব সস্তায় বেসরকারী মালিকানায় দিয়ে দেন। সরকারী ব্যবস্থাপনায় এই মিলটি বছরে প্রায় আট কোটি টাকা লভ্যাংশ বিতরন করতো। আর প্রায় তিনকোটি টাকা কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং সিবিএ চুরি করতো। বেসরকারী করার প্রথম বছরে লাভ হলো এক কোটির মতো। চুরি নেই বললেই চলে। দ্বিতীয় বছরে লোকসান। এইভাবে চতূর্থ বা পঞ্চম বর্ষেই ধুকে ধুকে চলে বন্ধ। ঋণ খেলাপী এবং কেস কাবারী।

শিল্প কারখানায় এফিসিয়েন্সী বলে একটা কথা আছে। এই  এফিসিয়েন্সী ডিপেন্ট করে শ্রমিকের দক্ষতা, আগ্রহ আর মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতার উপর। বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্পের উন্নয়নের পিছনে এই তিনটা খুব গুরত্ব পুর্ণ ভুমিকা রেখেছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস এখন পি এম পি (পার মিনিট প্রডাক্টিভিটি) রেটে উৎপাদন করে থাকে। অন্য দিকে রাষ্ট্টায়ত্ত কল কারখানায় একজন শ্রমিকের প্রডাক্টিভিটি রেট কত এ সম্পর্কে শ্রমিক তো জানেই না। শ্রমিক নেতারাও জানেন না। শুধু তাই নয় কারখানার লোকসান নিয়ে যারা সমালোচনার তীর শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের উপর চাপিয়ে বড়ো বড়ো আর্টিকেল লিখেন তারাও জানেন না।

আমাদের দেশের শিল্পগুলোতে এফিশিয়েন্সী রেট বাড়ানোর জন্য শ্রমিক নেতারা বা বাম নেতারা কোনদিনো বলেন না। আমাদের কারখানা গুলোতে উৎপাদনের অপটিমাম ক্যাপাসিটি কতো, আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা এই অপটিমাম লেবেলের কতো ভাগ পুরন করতে পারেন। এবং কেনো পারেন না এই,ব নিয়ে কোনদিন কথা বলেন না, বা বলতে চান না বা বলার মতো জ্ঞান  রাখেন না।

গৎ বাধা বুলি আউরিয়ে সরকারের সমালোচনা করে কোন লাভ হবে না। কারণ বামেরা যখন ক্ষমতায় যেতে চায় তাদেরকেও কিন্তু একি ঝামেলা  পরতে হবে।

আরেকটি উদহারন দেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রতি টন ইক্ষুতে চিনি উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ কেজি। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ৬ থেকে ৮ কেজি। এই পার্থক্য এটা হলো মেশিনের কার্যকারিতা, সিস্টেম লস, চুরি, অদক্ষতা আর শ্রমঘন্টার অপচয় থেকে।

এক কারখানায় ৫০০ শ্রমিক কাজ করলে দিনে যদি দুইবার বাথরুম যায় এবং প্রতিবার তিন মিনিট সময় ব্যায় করে তাহলে প্রতিদিন ৫০০ * ৩ মিনিট = ১৫০০ মিনিট অর্থাৎ ২৫ মানুষ ঘন্টা ব্যায় হয় বা শ্রম ঘন্টা নষ্ট হয়। এটা শুধু বাথরুম জনিত কারণ। এর সাথে আছে চা, পান সিগারেট, গল্প গুজব টিফিন টাইমের সময় পার করে কাজ শুরু করা। এসব কারণেও প্রচুর শ্রমঘন্টা ব্যয় হয়। যা থেকে প্রতিদিন উৎপাদনের লোকসান অর্থাৎ কারখানার লোকসান হয়।

কারখানার লোকসান এবং কারখানা বন্ধ কোন সুস্থ্য মানুষ চাইতে পারে না। কিন্তু কেনো এই লোকসান, কেনো এই বন্ধ এব্যাপারে যারা সোচ্চার তারা এই বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করুন, ভাবেন, এবং সমাধান বের করুন।

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ