ছেলেঃ কেমন আছেন?

মেয়েঃ ভালো। আপনি?

ছেলেঃ এখনো বুঝতে পারছি না। ঘোরে আছি।

মেয়েঃ কেন?

ছেলেঃ প্রথম দেখা হলো আমাদের। হৃদপিণ্ড ঢিব ঢিব করছে। মনে হচ্ছে অপরিচিত কারো সাথে দেখা করতে এসেছি। ফোনে কথা বলার সময় কখনো এমন লাগেনি।

মেয়েঃ চলুন ডাক্তারের কাছে। হার্ট বিট টা মেপে দেখি।

ছেলে (একটু হেসে)ঃ তার আর দরকার হবে না। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে আপনার কথার জাদুতে।

মেয়েঃ লজ্জা দিচ্ছেন? যদি ৩০ মিনিট কথা হয়, তার ২৮ মিনিটই তো আপনি বলেন।

ছেলে (আবারো হেসে)ঃ এবার তো লজ্জায় আমাকে ফেলে দিলেন। আচ্ছা, আমি যখন কথা বলি, তখন কি আপনি স্টপ ওয়াচ চালু রাখেন?

মেয়ে (হেসে দিয়ে)ঃ আরে নাহ। সময় আমি পরিমাপ করতে পারি অনুমানে। মনুষ্য ঘড়ি বলতে পারেন আমাকে।

ছেলেঃ বাহ। কি চমৎকার উপাধি দিলেন নিজেকে! এর জন্যই আপনার সাথে কথা বলতে এত ভাল লাগে। উপস্থিত বুদ্ধিতে আপনি অনন্য সাধারণ।

মেয়ে (স্মীত হেসে)ঃ তেলের দাম কি কমেছে জনাব?

ছেলেঃ আমি তেল পছন্দ করি না। তবে যার যে প্রশংসা প্রাপ্য তা করতেও কার্পণ্য করি না।আচ্ছা, একটা বিষয় খেয়াল এলো হঠাৎ। আমরা একজন আরেকজনকে 'আপনি' বলে সম্বোধন করছি কেন? ফোনে ত তুমিই বলতাম। আমি নার্ভাস, তুমি তো নও।

মেয়েঃ হয়তো আপনার নার্ভাসনেসের সংক্রমণ ঘটেছে আমার মাঝে!

ছেলেঃ হম। হতেই পারে। চলো, রিক্সায় ঘুরি দুজনে।

মেয়েঃ ছোট শহর।  যদি পরিচিত কেউ আমাদের দেখে ফেলে।

ছেলে (একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে)ঃ ওহ! থাক তাইলে।

মেয়েঃ রাগ করলে? বোকা ছেলে। চলো, দেখি কত ঘুরতে পারো।

.…......................

৩০ মিনিট যাবৎ দুজনে রিক্সায় ঘুরছে।কিন্তু কেও কারো সাথে কথা বলছে না। মেয়েটাই প্রথম বলে উঠলো।

মেয়েঃ জনাব, বোবা হয়ে গেলেন নাকি? কথা নেই যে।

ছেলেঃ তোমার পারফিউমের কী যে এক অদ্ভুত গন্ধ! চুলের গন্ধটাও মাতাল করা। সেগুলোই অনুভব করছিলাম।

মেয়ে (অল্প হেসে)ঃ আহা। তোমার নাক যে নষ্ট হয়ে গেছে সে খেয়াল কী আছে?

ছেলেঃ নষ্ট হবে কেন। আমি তো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছি এখনো।

মেয়েঃ থাক, হয়েছে। আচ্ছা, এভাবে কোন নারীর সাথে রিকশায় ঘুরেছো কখনো?

ছেলেঃ নাহ। এই প্রথম। আমি এই একটা ব্যাপারে ছোটবেলা থেকেই ভীতু।খুব ভয় পেতাম মেয়েদের সাথে কথা বলতে। শুধু তুমিই ব্যতিক্রম। প্রথম যেদিন কথা হলো তোমার সাথে, মনে হলো আমার নার্ভাসনেস বলতে কিছু নেই, নিমিষেই হাওয়া।আর আজ মনে হচ্ছে প্রথম দেখা।

মেয়েঃ তা বুঝেছি জনাব। আচ্ছা রিক্সায় এত জায়গা থাকতে তুমি জড়সড় হয়ে বসেছো কেন? আরাম করে বসো।

ছেলেঃ নার্ভাসনেসের কারণে।

মেয়েঃ থাক হয়েছে। আর নার্ভাস হওয়ার দরকার নেই। এইযে রিকশাওয়ালা ভাই। হাইওয়ে রাস্তায় চলুন।

...........

ছেলেঃ আজকের আবহাওয়াটা সুন্দর না? স্নিগ্ধ আকাশ, ঝিরিঝিরি বাতাস, রাস্তার দুই পাশেই মনোমুগ্ধকর সবুজ, পাখির কোলাহল...সব মিলিয়ে প্রকৃতিটাকে মনে হচ্ছে একদম আপন। তাই না?

মেয়েঃ বাহ। এত সুন্দর করে বলতে পারো তুমি? তোমার কথায় মুগ্ধ হলাম। আরে, এতক্ষণ খেয়াল করি নি, আমার দেয়া পান্জাবিটা পড়েছো! খুব খুশী হলাম। আমার পড়া শাড়িটা কি চিনতে পেরেছো?

ছেলেঃ আরে! খেয়ালই করি নি। ধন্যবাদ। আমার দেয়া শাড়িটা পড়ার জন্য। একদম প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছো তুমি৷ মুগ্ধ হলাম।

মেয়েঃ থাক, হয়েছে। আমার দিকে এখন একটু তাকাও।

ছেলেঃ কেন?

মেয়েঃ আহা, তাকাও তো। পলক ফেলবে না। আমার চোখের দিকে তাকাও।

ছেলেঃ তাকাচ্ছি, তবে ভীষণ নার্ভাস লাগছে।....

বাহ। কি সুন্দর চোখ তোমার। এমন সুন্দর চোখ কখনো আগে দেখিনি। আবারো মুগ্ধ হলাম। তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। বলবো।

মেয়েঃ আমি জানি, তুমি আমাকে কিছু একটা বলতে চাও। আর দেরী করো না তো। বলে ফেল।

ছেলেঃ আবারও নার্ভাস হয়ে যাচ্ছি। বুকের ভেতর কেমন জানি করছে।

মেয়ে(শক্ত করে ছেলের হাত দুটো ধরে)ঃ নাও। এবার বলো। আর নার্ভাস লাগবে না। আমি অধীর আগ্রহে তোমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি গত একটি বছর।

কথা শেষ না হতেই হঠাৎ একটা শব্দ হলো। তিনটি দেহ ছিটকে পড়লো তিনদিকে। রক্তে রঞ্জিত হলো রাজপথ, দুটো দেহ নড়ছে না। ছেলেটি কোন ক্রমে হামাগুড়ি দিয়ে মেয়েটির কাছে এলো। মেয়েটি নেই। মেয়েটির মাথাটা বুকের কাছে নিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।

ছেলে (কিছুক্ষণ কাঁদার পর) ঃ ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে ফাঁকিবাজ মেয়ে। আমার কথাটাও শুনলে না। জানো আজ তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।আমাদের স্বপ্নের কথা বলতে এসেছিলাম। আমায় ফাঁকি দিয়ে তুমিই চলে গেলে স্বপ্নের দেশে। যেখানেই যাও, আমি আসছি তোমার কাছে, তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে।

........

তিনটি মৃত মানুষ পড়ে আছে। ছেলেটি মেয়েটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে না ফেরার দেশে চলে গেলো....

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ