কথোপকথন-৫

ফজলে রাব্বী সোয়েব ৭ মে ২০২৩, রবিবার, ০৪:৩৪:২৪পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২ মন্তব্য

কথোপকথন- ৫

----ফজলে রাব্বী সোয়েব

-----৭ মে,২০২৩ ভোর ৪.২৮...

রাতুল ও মৌ।বসে আছে পাশাপাশি। আজ হয়তো তাদের শেষ দেখা। মৌ এর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ছেলে সরকারী চাকুরীজীবি।১০ বছরের সম্পর্কের ইতি টানা হবে আজ।অনেকটা সময় পিন পতন নীরবতা। সেই নীরবতা ভেঙ্গে প্রথম কথা বললো রাতুল।

রাতুল- যাক খুব ভাল একটা কাজ হয়েছে। একটা ভাল জায়গায় তোমার বিয়ে ঠিক হলো। তোমার জীবন এখন নিরাপদ।

মৌ- আর পারলাম না। হেরে গেলাম বাস্তবতার কাছে। প্রত্যেক বাবা মা ই চায় তার মেয়ে ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।

রাতুল- তার মানে আমার সাথে বিয়ে হলে তুমি অসুখী থাকতে?

মৌ- তা বলিনি।  কিন্তু তোমাকে এটাও বলেছি, আমার বাবা মা সরকারী চাকুরীজীবি দেখেই আমাকে বিয়ে দেবে। তুমি তো কখনো চেস্টাও কর নি।

রাতুল- চেস্টা করলেও কি পেতাম? আমি কখনো একাডেমিক পড়াশোনায় মেধাবী ছিলাম না। চেষ্টাটা বৃথা হতো। তোমাকে শেষ পর্যন্ত হারাতাম ই।মাঝখান দিয়ে আমার কষ্টটাই বৃথা হতো।

মৌ- জীবনে কোন ব্যাপারে কখনই তুমি সিরিয়াস ছিলে না।যদি হতে, আমাকে পেতে।

রাতুল- আমি তো এমনই। সিরিয়াসনেস কি জিনিস, সেটা আমারে মগজেই কখনো ঢোকে নি, হবো কী করে?

মৌ- এ জন্যই তো হারালে আমাকে।

রাতুল- আচ্ছা আমি যদি সিরিয়াস হওয়ার পর ও একটা সরকারী চাকরী না পেতাম, তখনো কী তুমি আমার হতে?

মৌ- কল্পনার জগত আর বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। তুমি সমসময় কল্পনার জগতেই থেকেছো, বাস্তবের মুখোমুখি কখনো হও নি। সবসময়, সব কিছু হেসে উড়িয়ে দিয়েছো।

রাতুল- এই আমাকেই তো তুমি ভালবেসেছিলে।

মৌ- হম। ঘোরে ছিলাম। এখন ঘোর ভেঙ্গে গেছে।

রাতুল- থাক, বাদ দাও। আর যতটুকু সময় তুমি আমার পাশে আছ, অন্য কথা বাদ দিয়ে একটু নিজেদের মত করে সময় কাটাই। এসব কথা আর ভাল লাগছে না। আইসক্রিম খাবে?

মৌ- হম। খাবো।

রাতুল আইসক্রিমের অর্ডার করলো। আর নিজে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরালো। মৌ এর সামনে সে কখনো সিগারেট খায় নি। আজই প্রথম। মৌ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রাতুলের দিকে। রাতুল বিষয়টা খেয়াল করলো।

রাতুল- জানো মৌ। আমাদের ভালোবাসাটা না এই সিগারেটের মত। এতদিন পুড়েছি দুজন একসাথে, নিকোটিন শেষ হয়ে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হবে, পায়ের তলায় পিষে আগুণ নিভিয়ে ফেলা হবে, ঠিক যেমন আমাদের ভালোবাসাটাও আজ শেষ হয়ে যাবে। পার্থক্য শুধু এটুকুই থাকবে, সিগারেটের শেষাংশটা হবো আমি, একা, এখানেই পড়ে থাকবে, থাকবে না শুধু তুমি।

মৌ- হয়তো তোমার কষ্ট হবে কিছুদিন, পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমিও ভাল থাকবে।

রাতুল- একটা মানুষ যখন আরেকটা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন তার ভেতরটায় কিন্তু সে নিজে থাকে না। থাকে ওই অভ্যাসে পরিণত হওয়া মানুষটাই। পরম নিশ্চিন্তে ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দিয়ে থাকার পর হঠাৎ যখন দেখবো সমুদ্রের সব পানি উবে গিয়েছে আর আমি মুখ থুবড়ে পড়ে আছি বালুর ভেতর, জানি না তখন আমার কী হবে! এই দশটা বছর তিল তিল করে মহীরূহ তৈরী করা ভালোবাসার এক মহাপ্রয়াণ ঘটতে চলেছে ক্ষণিকের কালবোশেখী ঝড়ে।হা হা হা হা....

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো রাতুল।

মৌ- আজ আমি উঠবো। তোমার সাথে আজই আমার শেষ দেখা। ভবিষ্যতে দেখা হোক আর চাই না।ভাল থেকো।

রাতুল- তুমিও ভাল থেকো।

পাথরচাঁপা কষ্ট নিয়ে মৌ এর চলে যাওয়া দেখছে রাতুল। মৌ একটিবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকালো না। মিনিট দশেক পাথরের মত বসে থেকে হাতে থাকা খামটি খুলে চিঠিটা হাতে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো রাতুল। এক টানে ছিড়ে ফেললো সেই চিঠিটা। শুয়ে পড়লো সবুজ ঘাসের ওপর আর বিশাল আকাশটা দেখতে লাগলো।

প্রশাসন বিভাগের ছেড়া নিয়োগপত্রটা পড়ে রইলো ওদূরে।

0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ