এক মুঠো ভালোবাসা (৪৩তম পর্ব)

ইঞ্জা ১৭ মে ২০২০, রবিবার, ০৯:৩৫:৫৫অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

ছায়া তুমি চাও ভালো কথা, কিন্তু এক পার্সেন্টের উপর ভর করে তুমি বাবাকে প্রমিজ করতে পারো না।

দেখো এই মুহূর্তে বাবার জন্য আমার মাথায় যা এসেছিলো তাই বলেছি, কিন্তু এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আমি মা হবো, তোমার সন্তানের মা। 

অনিক মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললো, আচ্ছা হতে পারলে হবে, এখন এ নিয়ে টেনশন করোনা। 

আচ্ছা শুনো, মার কাছে শুনলাম।

কি শুনলে?

সরকার নাকি নোটিস পাঠিয়েছে।

কিসের নোটিস?

এই জায়গাটার এল্টমেন্ট নাকি আগের বিরোধী দল ভুল করেছে, এজন্যই এখন এইটা ফেরত দিতে হবে, বিষয়টা একটু দেখবে?

কি বলছো?

এই নোটিস পাওয়ার পর বাবা ভোর রাতে হার্ট এটাক করে।

চিন্তিত অনিক বললো, আচ্ছা মা কোথায় এখন দেখো তো। 

আচ্ছা যাচ্ছি।

পেলে এদিকে ডেকে নিও। 

ছায়া চলে গেলে অনিক সিগারেট ধরালো। 

 

অনিক ডাকছিলি?

অনিক ওর মার গলা শুনে দ্রুত সিগারেটটা বারান্দা দিয়ে বাইরে ফেলে রুমে এলো।

মা আসো।

অনিকের মা এসে সোফায় বসলো।

মা ছায়া বললো আমাদের এই বাড়িটি নিয়ে কি সমস্যা হয়েছে?

অনিকের মা হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে নোটিসটা দিয়ে বললেন, হাঁরে বাবা, এ নিয়েই তোর বাবার টেনশন। 

মা, বাবাকে বলো চিন্তা না করতে, আমি থাকতে টেনশনের কিছু নেই। 

কি বাবা অনিক, কিসের টেনশন করছো তোমরা, বলতে বলতে রওশনের বাবা আর ছায়া এসে প্রবেশ করলো। 

সালামালেকুম আংকেল, আপনি কখন এলেন? 

আজ চট্টগ্রাম থেকে ফিরে বেয়াইকে ফোন দিয়ে শুনলাম উনি অসুস্থ, তাই চলে এলাম, তা বেয়াইন সাহেবা কি হয়েছে বেয়াইয়ের।

অনিকের মা সব খুলে বলে বললেন, আপনারা বসুন আমি আসছি। 

আমিও আসছি মা, বলেই ছায়া পিছু নিলো। 

তা অনিক কি হয়েছে বাবা? 

 

অনিক নোটিসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, আংকেল এইটা পড়ে দেখলে বুঝবেন। 

উনি নোটিসটা পড়ে বললেন, এতো বড়ই ঝামেলা হয়ে গেলো, নোটিসটা দিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে।

এখন কি করবো আমরা।

আমি যতদূর বুঝি, এই মুহূর্তে তোমার উচিত হাইকোর্ট থেকে একটা স্টে অর্ডার করা, এরপর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিষয়টা নিয়ে দেনদরবার করা। 

আংকেল আমার বন্ধুর বাবা এখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। 

তাহলে আর চিন্তা কি, ওকে ধরে বিষয়টা সেটেল করো পাকাপোক্ত করে। 

ঠিক আছে আংকেল, আমি কথা বলে নিচ্ছি। 

ছায়া এসে বললো, অনিক বাবাকে নিয়ে আসো ডাইনিংয়ে। 

আংকেল চলুন। 

কি দরকার ছিলো, বেয়াইন সাহেব কেন ঝামেলা করতে গেলেন?

অনিকরা ডাইনিংয়ে এসে রওশনের বাবাকে বসিয়ে বললো, আনংকেল আমি একটু বাবার সাথে কথা বলে আসছি, মা ছায়া তোমরা থাকো। 

আচ্ছা যাও বাবা। 

অনিক উপরে চলে গেলো ওর বাবার রুমে। 

 

ওর বাবার কাছে গিয়ে অনিক আস্বস্ত করলো এ নিয়ে চিন্তা না করার জন্য, এরপর নিচে এসে ওর রুমে গিয়ে প্রথমে ওর বন্ধুকে ফোন দিয়ে সব খুলে বললো, বন্ধু বললো, তুই যখন দেশে এসেছিস, তাহলে বাসায় আয় এবং সব কাগজপত্র নিয়ে আসিস, আমি তোকে বাবার সাথে বসিয়ে দেবো।

তাহলে সন্ধ্যা ৭টায় আসবো?

না তুই আটটায় আয়, বাবাকে বলে রাখছি।

ধন্যবাদ বন্ধু, দেখা হবে।

বাই।

ফোন ডিসকানেট করে অনিক সোহেল চৌধুরিকে ফোন দিয়ে সব খুলে বললো, সাথে এও বললো প্লিজ হেল্প করলে খুশি হবো। 

আচ্ছা আপনি চিন্তা করবেন না, এখন যে সচিব মন্ত্রনালয়ে আছে, তাকে আমি ম্যানেজ করছি, পরে যোগাযোগ করবো, রাখছি।

সালামালেকুম।  

অনিক ফোন রেখে ডাইনিংয়ে এসে দেখে সবাই গল্প করছে।

আনংকেল বাবার সাথে দেখা হয়েছে?

হাঁ বাবা, আমি তো প্রথমেই এসে দেখা করেছি বেয়াইর সাথে। 

মা, ছায়া কই?

ও তোর বাবার কাছে গিয়ে বসেছে।

মা কাউকে বলো একটু কফি দিতে।

 

রাতে বাসায় ফিরে অনিক প্রথমে ওর বাবার রুমে গেলো দেখা করতে, বাবা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে কিন্তু উনি জেগে আছেন তা অনিক বুঝতে পারলো, অনিক পায়ের কাছে বসে দুই হাত দিয়ে ধীরেধীরে পা টিপতে লাগলো। 

অনিকের বাবা চোখ খুলে বললেন, তুই এখনো সেই ছোটটি নেই বাবা।

অসুবিধা নেই বাবা, এখন কেমন লাগছে তোমার? 

আমি তো ভালো আছি, তোর কথা বল। 

তুমি সেইভ করোনি কেন বাবা?

অনিকের বাবা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, তোর মা আমাকে বিছানা ছেড়ে উঠতেই বারণ করে দিয়েছে।

ঠিক আছে, একটা প্যাকেট বের করে বাবাকে দিয়ে বললো, এই নাও এইটি তোমার জন্য।

কি এইটা?

রিচার্জেবল সেভিং মেসিন। 

এইটা দিয়ে কি করবো। 

অনিক প্যাকেটটি নিয়ে খুলতে লাগলো, এরপর মেসিনটি অন করে নিজেই বাবাকে সেইভ করে দিতে লাগলো। 

বাবাও ছেলের এই সেভিং উপভোগ করতে লাগলেন, সেইভ শেষ হলে হাত দিয়ে চেক করে বললেন, বাহ বেশ হয়েছে তো, কোথা থেকে আনলি?

আসার পথে বনানীর এক মার্কেট থেকে কিনলাম তোমার জন্য। 

 

কি দরকার ছিলো, অনিকের বাবা বললেন।

এখন তুমি নিজে নিজেই সেইভ করতে পারবে। 

তা কোথায় যেন গিয়েছিলি?

হাঁ গণপূর্তমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। 

কিছু হলো?

উনি সব দেখে উনার সচিবকে সব কপি দিয়ে বললেন দ্রুত ব্যবস্থা নিতে এবং কাজটা যেন অবশ্যই হয় তা দেখতে বললেন।

অনিকের বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কাজটা হবে তো? 

কাজটা হবে অবশ্যই, তবে কিছু খরচাপাতি করতে হবে। 

কত, বলেই অনিকের দিকে তাকালেন।

বাবা তুমি চিন্তা করোনা, আমি চেক দিয়ে এসেছি। 

কত নিলো ওরা?

সচিব সাহেব পঞ্চাশ চেয়েছিলো, আমি দিয়ে দিয়েছি। 

কি বলিস, এতো টাকা কেন? 

তুমি তো জানোই বাবা, এখন যা হবে, তা পাকাপোক্ত ভাবে হবে। 

তুই এতো টাকা খরচা করলি?

বাবা, তুমি এতো চিন্তা করছো কেন, আজ আমি যেখানে আছি তা শুধু তোমার কারণেই, এ শুধু তোমাদের সাপোর্ট করার চেষ্টা মাত্র। 

অনিকের বাবা ছেলেকে কাছে ডাকলেন, অনিক কাছে এগিয়ে বসলে জড়িয়ে ধরলেন আর বললেন, সত্যি তুই আমার লক্ষ্মী ছেলে। 

 

....... চলবে।

ছবিঃ গুগল

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ