এক মুঠো ভালোবাসা (৩৯তম পর্ব)

ইঞ্জা ২ মে ২০২০, শনিবার, ১১:০০:০০অপরাহ্ন গল্প ৪০ মন্তব্য

এক বছর পরঃ

ছায়া গোসল সেরে বের হলো টাওয়াল জড়িয়ে, ঘুমন্ত অনিকের দিকে তাকিয়ে হাসলো, চোখে ওর দুষ্টামি খেলে গেলো, অনিকের পাশে গিয়ে ওর মুখের উপর ঝুকে অনিকের মুখে ভেজা চুল গুলো দিয়ে ভুলিয়ে দিলো, এতেই অনিকের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।

চোখ খুলে বললো, গুড মর্নিং বিউটিফুল। 

ভেরি গুড মর্নিং, সাহেবের ঘুম ভাঙ্গলো? 

তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

অনিকের মনের কুবুদ্ধি বুঝতে পেরে ঝট করে উঠে পড়তে চাইলো ছায়া, অনিক খপ করে ধরে বললো, কই যাও আমার বুলবুলি।

না না এখন ছাড়ো, আমি গোসল করে এসেছি।

তাতে কি, বলেই ছায়াকে এক টানে বুকে নিয়ে নিলো।

এই এইসব ঠিক না, বাবা নিশ্চয় উঠে পড়েছে।

আনকেল যে উঠে নাই তা আমি খুব জানি, বলেই ছায়ার টাওয়েল ধরে টান দিলো।

ছায়া হেরে গিয়ে অনিকের বুকের মাঝে নিজেকে ধরা দিলো। 

দুজনে গোসল সারলো এক সাথে, ছায়া বেরিয়েই দ্রুত কাপড় পড়ে নিয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝেড়ে আঁচড়াতে লাগলো, অনিককে বেরুতে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে বললো, কি না করো তুমি বাচ্চাদের মতো?

অনিক কাছে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পাশে ঝুকে বললো, এতো সুন্দরী বউ থাকলে মাথা আর ঠিক থাকে?

আচ্ছা আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি, তুমি আসো।

যাও আসছি বলে অনিক মাথার চুল আঁচড়ে নিলো, এরপর কম্পলিট স্যুট একটা বের করে পড়তে শুরু করলো।

ওদিকে ছায়া বের হয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়লো ব্রেকফাস্ট রেডি করতে, সেলফোনে রিং হচ্ছে দেখে ছায়া রিসিভ করে হ্যালো বললো।

আমার মা কেমন আছে, অনিকের মার কণ্ঠ।

ভালো আছি মা, আপনি বাবা সবাই কেমন আছেন।

আমরা ভালো আছি, ব্রেকফাস্ট করেছো?

না মা এখন করবো, আপনার ছেলে আসলে করবো। 

আচ্ছা ভালো, তোমার বাবা কেমন আছে? 

বাবা ভালো আছে, আজকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

কেন দেশে আসছেন? 

মা ওখানেই তো সব উনার, আচ্ছা ভালো কথা মা, আপনাদের সবার জন্য কিছু গিফট পাঠাচ্ছি বাবাকে দিয়ে।

মা শুনছেন?

হাঁ শুনছি, আচ্ছা শুনো যে কারণে ফোন দিয়েছি।

জ্বি মা বলুন।

না বলছিলাম কি, বিয়ের তো এক বছর হয়ে গেলো, এদিকে আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি আরও বুড়ো হচ্ছি, তোমাদের সেই খেয়াল আছে?

ছায়া অবাক হয়ে বললো, মা আমি বুঝতে পারিনি?

বলছি তোমাদের প্ল্যানিং কি, কিছু চিন্তা ভাবনা করছো কি?

ছায়া না বুঝে আমতা আমতা করে বললো, মা আপনাদের কিছু লাগবে, অনিককে বলি কথা বলতে?

ওর সাথে তো কথা বলবো, আগে তোমার সাথে বলি।

জ্বি মা বলুন। 

এ বয়সে আমাদের তো আর চাওয়ার কিছুই নেই, শুধু দেখতে চাই নাতি নাতনিদের মুখ।

ছায়া চমকে উঠলো।

কি কিছু বলছোনা যে, নাকি আরও সময় নেবে?

মা, আমি অনিকের সাথে কথা বলি?

একি শুধু অনিকের ব্যাপার, আমি চাই আগামী বছর যেন তুমি মা হও।

চিন্তিত ছায়া বললো, জ্বি মা। 

খুশি হলাম মা, তোমরা প্ল্যানিং শুরু করো, আমি এখন রাখছি, ঘুমাবো।

সালাম। 

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

ছায়া চিন্তিত মনে ব্রেকফাস্ট টেবিলে দিচ্ছে, অনিক এসে জিজ্ঞেস করলো, আনকেল কই আসেননি?

ছায়া চমকে উঠলো দেখে বললো, কি ব্যাপার তোমাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে?

তুমি কি যেন বললে?

বলছিলাম আংকেল কই?

কই বাবা তো এখনো আসেনি, দেখো তো এখনো ঘুম কিনা?

অনিক উঠে গিয়ে দরজা নক করে ভিতরে প্রবেশ করে দেখলো রওশনের বাবা মাত্র ঘুম থেকে উঠলেন।

কি আংকেল আজ কি অসুস্থ লাগছে?

না বাবা, ঘুম একটু গাড়ো হয়েছিলো? 

আচ্ছা আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন, আমরা অপেক্ষা করছি।

আচ্ছা আসছি বাবা।

অনিক বের হয়ে টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট শুরু করলো।

বাবা কি আসছেন? 

একটু সময় লাগবে, মাত্র উঠেছেন। 

ওহ।

তা তুমি কি নিয়ে চিন্তায় ছিলে বললে নাতো?

মা ফোন দিয়েছিলো। 

তাই, তা কি বললো মা। 

যার ভয় করেছিলাম তাই হলো অনিক, বলেই চিন্তিত ছায়া অনিকের দিকে তাকালো।

মানে কি, কিসের ভয় করেছিলে?

মা বললো, উনারা নাতি নাতনির মুখ দেখতে চান, ভয়ার্ত মুখে তাকালো অনিকের দিকে।

অনিকও চিন্তিত হলো, ছায়ার দিকে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা তুমি চিন্তা করোনা, আমি ভেবে দেখছি, বলেই বাকি ডিমটা মুখে দিয়ে উঠে বেডরুমের দিকে এগুলো।

অনিককে রুমের দিকে এগুতে দেখে ছায়াও পিছন পিছন গেলো, ভিতরে প্রবেশ করে অনিকের মুখোমুখি হলো।

আমি, আমি এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম অনিক।

টাইয়ের নটটা ঠিক করতে কর‍তে বললো, এতে ভয়ের কি আছে, বললাম তো আমি দেখছি।

ছায়া অনিকের হাত ধরে ওর দিকে ফিরিয়ে বললো, কিভাবে?

কিভাবে কি, দরকার হলে আমরা বাচ্চা একটা পালক নিবো। 

এতে সমস্যা মিটবে তো অনিক?

কেন মিটবে না?

বাবা মাকে বলতে পারবে যে আমরা বাচ্চা দত্তক নিবো?

তা কেন বলবো, বলবো তোমার বাচ্চা।

এতো সহজ, কোন প্রেগন্যান্ট হলাম না, বাচ্চা হয়ে গেলো?

অনিক চিন্তিত মনে বললো, তাও তো কথা।

তাহলে কি করবো বলো?

অনিক ছায়ার দুই কাঁদে হাত দিয়ে বললো, দেখো সব সমস্যার সমাধান আছে, আমাকে একটু ভাবতে দাও, বলেই ছায়ার ভয়ার্ত কম্পমান ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো, আমি যতক্ষণ আছি ততক্ষণ চিন্তা করবেনা, এখন বিদায় দাও, অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে।

অনিককে বিদায় দিয়ে ছায়া চিন্তিত মনে এগুলো কিচেনের দিকে, রওশনের বাবা বসে আছেন ব্রেকফাস্ট  করার জন্য।

বিয়ের পর উনিও চলে যেতে চেয়েছিলেন অনিকের ফ্যামিলির সাথে, কিন্তু অনিক বললো, এখন যেয়ে কি করবেন, ওখানে তো কেউ অপেক্ষা করে নেই আংকেল, আপনার ছেলে তো এইখানে, ছেলের বউও আছে এইখানে, তাহলে কেন যাবেন?

রওশনের বাবা অনিককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিলেন, এরপর উনি থেকে যান, আজ এক বছর পর উনি দেশে যাচ্ছেন উনার সম্পত্তি গুলো একবার দেখে আসার জন্য, মনে মনে ঠিক করেছেন পারলে কিছু বিক্রি করে তা ছায়ার জন্য রেখে দেবেন এফডি করে।

ছায়া ব্রেকফাস্ট দিয়ে বললো, বাবা আপনি খান, ততক্ষণে আমি আপনার ব্যাগ ঘুঁচিয়ে ফেলি।

ঠিক আছে মা, কিন্তু তোকে এত চিন্তিত মনে হচ্ছে কেন?

কই নাতো, ছায়া হাসতে চেষ্টা করলো।

ঠিক আছে তুমি যাও মা, আমি খেয়ে নিই। 

 

..... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

৪০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ