এক মুঠো ভালোবাসা (৩৮তম পর্ব)

ইঞ্জা ৩০ এপ্রিল ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১১:১০:৩২অপরাহ্ন গল্প ২৭ মন্তব্য

তিন মাস পরঃ

আজ পুরা ফ্ল্যাট জুড়ে হৈচৈ নাচ গানে ভরপুর, আজ অনিক এবং ছায়ার মেহেন্দি, অনিকের দি ভাই বোন এসে পড়েছে দেশ থেকে, আফরিনের মন খারাপ থাকলেও ওর মা বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে এসেছে, এদিকে লেভিন, ওর ওয়াইফ, মামা লুসিও হাজির।

অনিক লেভিনের জন্য পাঞ্জাবি আনিয়েছে, ওদিকে ছায়া আনিয়েছে আফরিনের জন্য লেহেঙ্গা।

অনিকের মা বাবা এবং ছায়ার শ্বশুরও মহা খুশি, অনিকের মা ও আফরিনের মা মিলে রান্না করছেন আগত সবার জন্য, অনিকের বাবা আর রওশনের বাবা মিলে আজকের জন্য বাজার সদাই করেছেন, এখন উনারা নিজেদের ভাই সাহেব ডাকেন না, বেয়াই ডাকেন। 

উনাদের আনন্দ আজ দুই কান ছুঁয়েছে, উনারা দুজনেই চেয়েছিলেন বিয়ে দেশে হোক কিন্তু অনিক না করেছে, কারণ দেশের মানুষের না না প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাই না অনিক ছায়া।  

অনিকের প্লাস্টার খুলেছে এক মাস আগে, অনিকের) এখন হাটতে সমস্যা হয়না, সব ঝামেলা মিটিয়েই বিয়ের  পিড়িতে বসা হচ্ছে ওর।

বিকেলেই অনিক আর ছায়াকে ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসানো হয়েছে মেহেন্দি দেওয়ার জন্য, ছায়ার অনেক অনুরোধে আফরিন রাজি হয়েছে অনিককে মেহেদি লাগাতে, ছায়াকে নিয়েছে অনিকের ছোটো বোন সায়মা, লেভিনের ওয়াইফ যতটা না অবাক, ততটাই উত্তেজিত বাঙালি বিয়ে দেখার জন্য।

মুরুব্বিরা একে একে অনিক ছায়াকে হালকা হলুদ লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টি মুখ করালো, মামা লুসি অনিককে একটু আদর করে ছায়াকে ব্লেসিংস দিলো, সাথে কপালে চুমু দিলো।

অনিক মাই সান, আমি সত্যি খুশি যে তুমি বিয়ে করছো তোমার স্বপ্নের রাজকন্যাকে, সত্যি ও অনেক প্রেটি, মামা লুসি বললো।

অনিক মিষ্টি হেসে বললো, মামা তুমিই তো বলতে বিয়ে করার জন্য, এখন তুমি খুশি তো?

অনেক খুশি, বলেই হে হে হে করে মামা লুসি হাসতে লাগলো।

ছলছল চোখে আফরিন মাথা নিচু করে মেহেদি লাগিয়ে চলেছে অনিকের হাতে, হটাৎ এক ফোটা পানি অনিকের হাতে পড়াতে অনিক চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার আফরিন?

আফরিন আলতো করে পানিটা মুছে নিয়ে বললো, চোখটা জ্বলছিলো, তাই হয়ত লিক করেছে।

অনিক হেসে দিয়ে বললো, আমি তো ভাবছিলাম তুমি কাঁদছো?

ছায়াও অবাক হয়ে তাকালো আফরিনের দিকে, আফরিনের চোখের জল চোখ এড়ালোনা ছায়ার।

আফরিন হেসে বললো, আমার বান্ধবীর বিয়ে, সেই খুশিতে আমি কি আনন্দাশ্রুও করতে পারবোনা, কি শুরু করেছো অনিক?

দেখো, কাল থেকে তুমি হচ্ছো আমার অফিশিয়াল শ্যালিকা, এই খুশিতে তো তুমি হাসতে পারো নাকি?

শ্যালিকা মানে, আফরিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

মানে হলো, আমার বউয়ের বান্ধবী  বা বোনকে বাংলাদেশে শ্যালিকা বলে, means half wife বলেই অনিক হাসতে লাগলো।

সত্যি তাই, একটা ফুল পাচ্ছো তো ঐটায় নিয়ে থাকো তুমি, আমি হাল্ফ বুঝিনা, হলে কারো ফুল ওয়াইফ হবো। 

অনিক আরেক দফা হো হো হো করে উঠলো। 

মেহেন্দি প্রোগ্রাম শেষে অনিক উঠে গেলো গোসল করতে, অনিকের মা গেস্টদের খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো, সত্যিকার অর্থে আজকেই বেশি আনন্দ উনার, ছেলে এতো বছর পর বিয়ে করছে, এতেই উনার আনন্দ, উনি গিয়ে অনিকের বাবা আর বেয়াইকে খেতে ডাকলে, অনিকের বাবা বললেন আগে গেস্টরা খেয়ে নিক, আফরিন কই?

ও তো ছায়ার সাথে গিয়েছে।

তাহলে ডেকে নাও, ওদেরকে খাইয়ে দাও, বেয়াই আর আমি একটু ড্রিংক্স করবো, অবশ্য বেয়াই অল্পই খাবেন, কি বেয়াই চলবে তো?

অবশ্যই বেয়াই, আজকে সেলিব্রেশন না করলে কখনো করবো।

লেভিনকে আসতে দেখে অনিকের বাবা জিজ্ঞেস করলেন ইংরেজিতে, লেভিন তুমি কি ড্রিংক্স নেবে।

সিউর, আগে অনিক আসুক, (ইংরেজিতে) লেভিন জবাব দিলো। 

ও চলে আসবে, আমরা স্টার্ট করি, বলেই উনি ব্লাক লেভেলের বোতল থেকে তিন জনের জন্য ঢেলে নিয়ে সবাই পান করা শুরু করলো, কিছুক্ষণের মধ্যে অনিক যোগ দিলো সবার সাথে কিন্তু মাত্র এক পেগ খেয়ে উঠে গেলো গেস্টদের দেখার জন্য। 

পরদিন সকাল দশটার সময় অনিক ছায়াকে নিয়ে সবাই স্থানীয় মসজিদে গেলো আকদ করার জন্য, আগে থেকেই মসজিদ কমিটিকে বলে রাখা হয়েছিলো।

অনিককে নিয়ে ওর বাবা মা এবং ওর ভাই বোন বসেছে, উল্টো পাশে ছায়াকে নিয়ে রওশনের বাবা, আফরিন এবং ওর মা বসেছে।

এক সময় হজুর বিবাহ পড়ানো শুরু করলেন, বর বধুর কবুল নামা নিয়ে মুনাজাত করলেন।

আকদ শেষ হলে একে অপরকে সবাই মুবারক বাদ জানিয়ে রওনা হয়ে গেলো রেজিস্টার অফিসে।

রেজিস্টার অফিসে অপেক্ষমাণ ছিলো লেভিন, গাড়িতে করে অনিকরা পোঁছুলে লেভিন সবাইকে নিয়ে রেজিস্টার অফিসে গেলো বিয়ে রেজিস্ট্রি করার জন্য, লেভিন আগেই যাবতীয় ফিস প্রদান করে রেখেছিলো, ফলে রেজিস্ট্রি শেষ করতে বেশি সময় লাগলো না ওদের। 

রেজিস্টার অফিস থেকে বেরিয়েই সবাই রওনা হয়ে গেলো অনিকের বাসার উদ্দেশ্যে, অনিক ছায়া দুজনেই পাশাপাশি বসেছে, অনিক বললো, ছায়া তুমি খুশি তো?

ছায়া মিষ্টি এক হাসি উপহার দিলো।

এর আগে আফরিন রেজিস্টার অফিস থেকে বেরিয়েই বললো, আমার শরীরটা ভালো লাগছেনা, তোমরা যাও, আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।

কি বলো, বাসায় চলো, ছায়া বললো।

না বন্ধু, আমি আমার দ্বায়িত্ব শেষ করেছি, এখন তোমার শুরু, অনিক আমার বন্ধুকে খেয়াল রাখবে, আমি আসি।

তুমি গেলে আমাদের ভালো লাগতো, অনিক বললো।

না এখন না, তোমরা হানিমুন শেষ করে আসো, এরপর দেখা হবে, আমি সব রেডি করে লেভিনের কাছে দিয়েছি, ছায়া জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো, অনিককে বলো, ভালো থেকো, বাই।

আফরিন ওর মাকে নিয়ে ওদের গাড়িতে করে চলে গেলো, আফরিনের মা ড্রাইভ করছেন, কারণ ও গাড়িতে উঠে অঝোর ধারায় ভিজতে লাগলো। 

আফরিন, তুমি এতো কান্না করলে হবে, অনিক তো,  ভালো বাসতো না, তুমিই ওর প্রেমে পড়েছিলে, তুমিই তো বললে ও অনেক আগে থেকেই ছায়াকে ভালো বাসতো।

মা আমাকে শান্তিতে কাঁদতেও দেবেনা?

আচ্ছা তুই কেঁদে কেটে মনটা হাল্কা কর।

মনে মনে বললেন, আমার মেয়ে তার প্রথম প্রেমকে হারালো, কাঁদবেই তো। 

 

...... চলবে। 

ছবিঃ গুগল। 

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ