এক মুঠো ভালোবাসা (৩৬তম পর্ব)

ইঞ্জা ২২ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ০৯:১৯:৩৭অপরাহ্ন গল্প ২০ মন্তব্য

তুমি একা থাকতে পারবে তো বন্ধু, আফরিন জিজ্ঞেস করলো।

হাঁ অসুবিধা নেই।

আগামীকাল সকালে মা আসবেন দেখতে, এখনি আসতে চেয়েছিলেন, আমিই বারণ করলাম।

ভালো করেছো, লেভিন তুমিও যাও।

আচ্ছা ওর হাসপাতালের খরচার জন্য অনিকের মা বাবাকে চিন্তা করতে না করো, অফিস থেকেই দেওয়া হবে, ইংরেজিতে লেভিন বললো।

না লেভিন, ওর যাবতীয় খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করছে, তুমি চিন্তা করোনা।।

ওহ দ্যাটিস গুড।

আচ্ছা চলো তোমাদেরকে এগিয়ে দিয়ে আসি।

না না দরকার নেই, তুমি বরঞ্চ অনিকের দিকে খেয়াল রেখো, কোন জরুরী প্রয়োজনে আমাকে কল করো।

ঠিক আছে।

চলো আরেকবার অনিককে দেখে যায়।

চলো, বলেই ছায়া ওদেরকে নিয়ে কেবিনে এলো, অনিক জুলন্ত এক পা নিয়ে গভীর ঘুমে অচেতন।

লেভিন অনিকের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, বন্ধু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো, এরপর বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।

ছায়া ওদেরকে বিদায় জানিয়ে রুমে প্রবেশ করতে যাবে সেই সময় সেলফোন বাইব্রেট করে উঠলো, ছায়া রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে অনিকের মা জিজ্ঞেস করলেন, ছায়া কোন অসুবিধা হচ্ছে নাতো?

না আন্টি, ও ঘুমুচ্ছে। 

তুমি কিছু খেয়েছো।

হাঁ খেয়েছি, আপনারা খেয়েছেন?

হাঁ এই মাত্র খেয়ে উঠলাম, তুমি সোফায় শুয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করো।

ঠিক আছে আন্টি।

রাখছি।

সালামালেকুম।

ওয়া আলাইকুম সালাম। 

 

ছায়া রুমে প্রবেশ করে দেখতে পেলো নার্স নতুন একটা স্যালাইন লাগাচ্ছে। 

ছায়া অনিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, জিজ্ঞেস করলো, ও কখন জাগবে?

ওকে কম ডোজের ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে, সকালের মধ্যেই ঘুম থেকে জাগবে।

ঠিক আছে।

নার্স চলে গেলে অনিকের বেডে বসলো ও, মাথায় হাত ভুলিয়ে দিলো একবার।

এরপর উঠে গিয়ে ভেন্ডর মেসিন থেকে এক কাপ কফি নিয়ে এসে সোফায় বসে চুমুক দিলো।

মনে মনে ভাবছে, আচ্ছা ওতো একাই একশো ছিলো, ইউনিভার্সিটিতে একবার ওর বিপক্ষের ছেলেরা ঘিরে ধরেছিলো মারার জন্য, ও নিজেই সব গুলোকে পিঠিয়ে ছিলো, ছেলে গুলো সেদিন মার খেয়ে পালিয়ে বেঁচে ছিলো, তাহলে কিডন্যাপাররা কিভাবে ওকে ধরে নিয়ে গেলো?

নাকি ও বাধায় দেয়নি সেদিন, নাকি ছায়ার উপর রাগ করেই সে আত্মসমর্পণ করেছিলো?

কাপে শেষ চুমুক দিয়ে পাশের টেবিলে রেখে ছায়া শুয়ে পড়লো।

 

তোমার জন্যই আজ আমার এই অবস্থা, আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি, শুধুই তো ভালোবেসে ছিলাম।

শোনো না আমার কথা, আমি চাইনা আমার সমস্যা তোমার ঘাড়ে আসুক, এতে তোমার ক্ষতি হবে অনিক।

নাহ আমি কোন কথা শুনতে চাইনা, এরচেয়ে আমার মরে যাওয়ায় শ্রেয়, বলেই অনিক ছাদ থেকে লাফ দিলো।

না না না অনিক করে চিৎকার দিয়ে ধরফর করে উঠে বসলো ছায়া, থরথর করে কাঁপছে, এক সময় ধাতস্থ হয়ে তাকালো অনিকের দিকে, অনিক ঘুমে অচেতন, দুঃস্বপ্নটা দেখেই ছায়া আতংকিত হয়ে গেলো, পাশে রাখা ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো, বোতলটা রেখে চোখ মুছলো, চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।

ছায়া উঠে গিয়ে অনিককে চেক করলো, পাশে রাখা ইমারজেন্সি মেসিনটা বিরাম দিয়ে টুট টুট শব্দ করছে, ছায়া অনিকের পাশে বসে ওর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো অনিকের দিকে, আজ অনেক নির্মল লাগছে অনিককের মুখ খানা।

 

চোখ ভর্তি করে জল বয়ে যেতে লাগলো ছায়ার দুই গালে, বললো, অনিক সত্যি আমি দুঃখিত, আজ তোমার এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী, সেদিন তোমাকে না ডাকলে হয়ত আজ এই দিন দেখতে হতোনা।

আমি জানিনা আমার এই পাপের শাস্তি কি হবে, তুমি চেয়েছিলে এক মুঠো ভালোবাসা, কিন্তু আমি মুখ ফুটে বলতে পারছিনা যে আমি কতটা তোমাকে ভালোবাসি, আমার ইচ্ছে হয় তোমাকে মুঠো মুঠো ভর্তি করে ভালোবাসা দিই, কিন্তু কি করে বলি তোমাকে, তুমি জানোনা আমার অপারেশনের পর আমি আর মা হতে পারবোনা, মাত্র ওয়ান পার্সেন্টের উপর ভরসা করে আমি তোমার সারা জীবনটা নষ্ট করতে চাইনা বলেই আমি সরে যেতে চাই কিন্তু সত্যি বলছি, আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি বলেই আমি চলে যেতে চাই।

তাহলে ভালোবাসলে কেন?

ছায়া চমকে উঠে অনিকের দিকে তাকালো, অনিক ওর দিকে তাকিয়ে আবার বললো, তাহলে ভালোবাসালে কেন?

আমি আমি ডাক্তারকে ডেকে আনছি, তোতলালো ছায়া।

না এখন না, আগে বলো, আমার প্রতি কি এতটুকু বিশ্বাস নেই?

তুমি আমাকে চিন্তে পারছো, ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

না চেনার কি আছে? 

 

তুমিও আমাকে ভালোবাসো, তুমি মা হতে পারবেনা তো অসুবিধা কি আছে?

আমি ডাক্তারদের ডাকি।

না, আগে বলো, তোমার অপারেশন হয়েছে তা আগেই বলেছিলে, এতেও আমি ধমে যায়নি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, এইটাতে তোমার বিশ্বাস নেই?

ছায়া মাথা নিচু করে আছে।

ছায়া, আমার তোমাকে দরকার, কোন বাচ্চার নয়, এছাড়া এই পৃথীবিতে অনেক বাচ্চা এতিম হয়ে আছে, দরকার হলে তাদের কয়েকটাকে এনে বলবো তোমাকে মা ডাকতে।

ছায়া অবাক হয়ে তাকালো অনিকের দিকে।

ছায়া আমি তোমাকে চাই, তোমাকেই ভালোবাসি তা বুঝোনা কেন? 

বুঝি, মাথা নিচু করে জবাব দিলো ছায়া।

তাহলে বলো আমাকে আর ছেড়ে যাবেনা?

ছায়া চুপ করে রইলো।

কি যাবে নাতো?

না যাবোনা।

এদিক আসো। 

আছি আমি।

না আমার বুকে আসো।

ব্যাথা পাবে।

আসো বলছি।

ছায়া অনিকের বুকে মাথা রাখলো।

আই লাভ ইউ ছায়া।

ছায়ার দুচোখের পানি ঝড়ে পড়লো অনিকের বুকে। 

 

ডাক্তার এসে অনিককে চেক করে গেলো, ওরা খুশিই হলো ওর রিকভারি দেখে, কিছু টেস্ট করতে দিয়ে বিদায় নিয়ে গেলো। 

তোমার কখন ঘুম ভেঙ্গেছে, ছায়া জিজ্ঞেস করলো।

তুমি যখন কথা বলছিলে তখন।

কই খেয়াল করলাম না।

তুমি তো তোমার খেয়ালেই ছিলে। 

তোমার নাকি স্মৃতি হারিয়ে গেছে, কাউকে চিন্তে পারছিলে না?

কে বললো?

ডাক্তাররা বলেছে, আনকেল আন্টিকে নাকি চিন্তে পারোনি?

কি বলো, আমার তো তেমন কিছু মনে আসছেনা?

আমি আন্টিকে ফোন দিচ্ছি, সকাল সাতটা বাজে, নিশ্চয় এতক্ষণে ব্রেকফাস্ট করছে।

ছায়া রিং করলে অনিকের মা প্রথম রিসিভ করলেন, হ্যালো ছায়া, অনিক কেমন আছে?

আন্টি অনিক জেগেছে।

ও কেমন আছে?

আন্টি ও আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে, কথা বলবে নাকি, নিন কথা বলুন, বলেই ছায়া অনিকের কানে ফোন ধরলো।

মা তুমি কেমন আছো, বাবা কই?

 

...... চলবে। 

 

ছবিঃ গুগল। 

 

জনস্বার্থেঃ

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ