এক মুঠো ভালোবাসা (৩৫তম পর্ব)

ইঞ্জা ২০ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ০৯:৪৭:১২অপরাহ্ন গল্প ১৪ মন্তব্য

হাসপাতালে পোঁছেই ছায়া খবর নিলো কোন কেবিনে দেওয়া হয়েছে অনিককে, ছায়া ওর শ্বশুরকে নিয়ে সেই কেবিনের দরজায় গিয়ে নক করলে অনিকের বাবা দরজা খুলে ধরলেন।
আনকেল অনিক নাকি জেগেছে?
এসো মা আগে ভিতরে আসো, অনিকের বাবা ছায়াদেরকে ভিতরে যাওয়ার জন্য দরজা খুলে ধরলেন।
ছায়া দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অনিকের বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, অনিক ঘুমাচ্ছে দেখে ফিরে তাকালো অনিকের মার দিকে, আন্টি ও না জেগেছিলো?
অনিকের মা এগিয়ে এসে ছায়াকে সরিয়ে নিয়ে গেলো এক সাইডে এরপর বললেন, ও জেগেছিলো কিন্তু সবাইকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাচ্ছিলো, ওর বাবাকে বললো কে উনি?
কি বলছেন, তাহলে কি হবে এখন?
ডাক্তার বললো ওকে নাকি ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছে, এই জন্য সাময়িক সমস্যা হয়েছে।
কি ইলেকট্রিক শক কেন দেবে, ছায়া উদ্বীগ্ন হলো।
এখন আবার ওকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে, ডাক্তার বললো ও দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে।
এতক্ষণ রওশনের বাবা শুনছিলেন কথা গুলো, উনি জিজ্ঞেস করলেন, ওকে রিলিজ কবে দেবে কিছু বলেছে?
না এখনো কিছু বলেনি।

ছায়া কিছুক্ষণ অনিকের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, অনিকের বাবার ডাকে ফিরে তাকালো, অনিকের বাবা ইশারা করে ডাকাতে এগিয়ে গেলো।
তুমি কি মা আজকেও রাতে থাকবে?
হাঁ আনকেল, আমি সব নিয়ে এসেছি?
কি খাবে বলো, এনে দিই।
না আনকেল, আমি সব নিয়ে এসেছি, ঐ যে ব্যাগে সব আছে।
ঠিক আছে, তাহলে আমরা আজকে যায়, সকালে চলে আসবো।
ঠিক আছে, বাবা আপনি মেডিসিন গুলো ঠিক মতো খাবেন, আন্টি আমি রান্না করে রেখে এসেছি, শুধু ভাতটা করে নিতে হবে।
অনিকের মা এগিয়ে এসে ছায়ার কপালে চুমু খেয়ে বললেন, দোয়া করি মা যেন জীবনে সবসময় হাসি খুশি থাকিস।
ছায়া হাসার চেষ্টা করলো।
অনিকের মা এবং বাবা এগিয়ে গেলেন অনিকের বেডের ধারে, দুজনেই একে একে অনিকের কপালে চুমু খেলেন, এরপর সবাই বেরিয়ে গেলেন বাসার উদ্দেশ্যে।

ছায়া এগিয়ে গিয়ে অনিকের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো, অনিকের হাত পায়ের প্রতিটি আঙ্গুলেই ব্যান্ডেজ বাঁধা, সাথে বুকের, পেটের বিভিন্ন জায়গাতে ব্যান্ডেজ না থাকলেও মেডিসিন লাগানো।
ছায়া বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অনিকের বেডে বসলো, একটা পায়ে প্লাস্টার করা আছে অনিকের, সেইটাতে হাত বুলালো, সেলফোনে রিং হচ্ছে শুনে ছায়া উঠে গিয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রিসিভ করলো।
হ্যালো ছায়া, অনিক কই, আইসিইউতে দেখছিনা, আফরিনের কণ্ঠে উৎকন্ঠা।
ছায়া ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে বললো, আফরিন ওকে আজ দুপুরের পরে কেবিনে দিয়েছে, ছয় তলায় চলে আসো, আমি অপেক্ষা করছি।
ঠিক আছে আসছি।
ছায়া হাত ঘড়িতে সময় দেখলো, রাত দশটা।
আফরিন আর লেভিনকে আসতে দেখে ছায়া এগিয়ে গেলো।
কি খবর, কেমন আছে ও, লেভিনের প্রশ্ন। (ইংরেজিতে)
ভালো আছে বলেই কেবিনে দিয়েছে, কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কি কি হয়েছে আবার, তোতলালো আফরিন।
ডাক্তার বললো, ওকে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়েছিলো।
মানে কি?
কিডন্যাপাররা দিয়েছিলো।
তো?
ও এখন কাউকে চিনতে পারছেনা।
তাহলে এখন কি হবে?
চিন্তা করোনা, এইটা সাময়িক, ঠিক হয়ে যাবে।

চলো ওকে দেখে আসি, লেভিন বললো।
ছায়া ওদেরকে নিয়ে রুমে ফিরে এলো, লেভিন আর আফরিন অনিকের পাশে গিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো, এরপর বেরিয়ে এলো রুম থেকে।
কত বড় অমানুষ ছিলো ওরা, কিভাবে যে টর্চার করলো, আফরিনের চোখে পানি।
ওরা চায়নিজ মাফিয়া ছিলো, লেভিন বললো।
ছায়া আর আফরিন অবাক হয়ে তাকালো লেভিনের দিকে।
তোমরা ও ভাবে তাকাচ্ছো কেন, অনিক আমি দুজনই জানতাম কিন্তু ওরা ওকে কিডন্যাপ করবে বুঝতে পারিনি, লেভিনের সরল উত্তর।
তুমি আমাদের আগে জানাওনি কেন, জানালে আমরা নিশ্চয় অনিককে প্রটেক্ট করার ব্যবস্থা করতাম, আফরিন রাগান্বিত হলো।
লেভিন ঠোঁট বাকিয়ে বললো, কচু করতে, ওকে বাংলাদেশের টপ মোস্ট স্পাই এজেন্টরা প্রটেকশন দিচ্ছিলো, ওরাই কিডন্যাপ আটকাতে পারে নাই।
ওরা প্রটেকশন দিচ্ছিলো তুমি কি ভাবে জানতে?
সোহেল চৌধুরিই বলেছে আমাকে।
ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কোন সোহেল চৌধুরি, বাংলাদেশ এম্বেসির প্রেস মিনিস্টার?
প্রেস মিনিস্টার নয় সে, সেও একজন স্পাই, ওরাই উদ্ধার করেছে অনিককে।
ছায়া অবাক হয়ে গেলো।

রাতে কি কেউ থাকবে এইখানে, আফরিন জিজ্ঞেস করলো।
হাঁ আমি আছি, জবাবে ছায়া বললো।
তাহলে আমিও থাকি?
না না, আজকে আমিই থাকি, দুজনই থাকার দরকার কি, তুমি নাহয় অন্যদিন থেকো, তা লেভিন কই গেলো?
জানিনা, বললোনা একটু বেরুচ্ছে।
হুম, আসো ওয়েটিংরুমে বসি, বলেই আফরিনকে নিয়ে ওয়েটিংরুমে এসে বসলো।
তুমি কান্না করেছো?
ছায়া মাথা নিচু করে বসে রইলো, এক সময় চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
ছায়া, তুমি ওকে ভালোবাসো?
ছায়া চোখ তুলে তাকালো আফরিনের দিকে, চোখ ভর্তি জল গড়িয়ে পড়লো দুই গাল বেয়ে।
আফরিনের বুক থেকে বড় নিশ্বাস বেরিয়ে এলো, বললো, চিন্তা করোনা ও ঠিক হয়ে যাবে, আফরিন ছায়ার হাতটা টেনে নিলো নিজের হাতে।
লেভিনকে আসতে দেখে ছায়া চোখ মুছে নিলো হাত দিয়ে।
তোমরা এখানে, আমি আরো রুমে গিয়ে দেখি তোমরা নেই, ছায়ার দিকে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো, নাও কিছু কেবাব (কাবাব) নিয়ে এলাম বলেই একটা প্যাকেট আফরিনকে দিয়ে নিজেরটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।
তুমি এগুলো আনতে গেলে কেন, আমি নিয়ে এসেছিলাম।
ওগুলো থাক পরে খেও, এখন এগুলো খাও, আমার খুব খিদে লেগেছে।

....... চলবে।

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ